সংবিধানের শ্রেষ্ঠত্ব বহাল
সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে দেয়া হাইকোর্টের রায়ের বিরম্নদ্ধে দায়ের করা লিভ টু আপীল খারিজ করে দিয়েছে সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ। আপীল বিভাগের এ আদেশের ফলে হাইকোর্টের রায় বহাল থাকল।
মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি মোঃ তাফাজ্জাল ইসলামের নেতৃত্বে আপীল বিভাগের ছয় বিচারপতির বেঞ্চের আদেশে বলা হয়েছে, কিছু পর্যবেৰণ ও সংশোধনী সাপেৰে লিভ টু আপীল খারিজ করে দেয়া হলো। হাইকোর্টে গত ২০০৫ সালের ২৯ আগস্ট ২২ দফার একটি রায় দেয় বিচারপতি এবিএম খায়রম্নল হক এবং বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীরের সমন্বয়ে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চ। রায়ের উলেস্নখযোগ্য অংশে বলা হয়, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট খন্দকার মোশতাকের রাষ্ট্রৰমতা গ্রহণ সংবিধান বহিভর্ূত এবং বেআইনী। একইভাবে ১৯৭৫ সালের ৬ নবেম্বর বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমের কাছে খন্দকার মোশতাকের ৰমতা হসত্মানত্মর অবৈধ। বিচারপতি সাদাতের রাষ্ট্রপতির ৰমতা গ্রহণ ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ এবং জিয়াউর রহমানকে উপপ্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগও সংবিধান বহিভর্ূত। তাঁদের সব ধরনের ৰমতা প্রয়োগও অবৈধ। সামরিক শাসন জারি সম্পূর্ণ অবৈধ এবং সংবিধান পরিপন্থী। ১৯৭৬ সালের ২৯ নবেম্বর সামরিক শাসন জারির মাধ্যমে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ সংবিধানের সীমা বহিভর্ূত। যারা সামরিক শাসন জারি করেছে তারা অপরাধী ও রাষ্ট্রদ্রোহী। যে কোন সময়ই সামরিক শাসন জারি হোক না কেন সংবিধান হলো সুপ্রীম। শাসন বিভাগ, আইন বিভাগ এবং বিচার বিভাগ সবকিছুই সংবিধানের অধীন। কোন প্রতিষ্ঠানই সংবিধানের উর্ধে নয়। সংবিধান কখনও সামরিক আইনের অধীন হতে পারে না। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর জরম্নরী অবস্থা জারিও অবৈধ।এই রায়ের মধ্য দিয়ে দেশ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ৰেত্রে এক ধাপ এগিয়ে গেল। বাহাত্তরের সংবিধান পুনর্প্রতিষ্ঠায় সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধনের পদৰেপ নিতে দেশবাসী এখন সরকারের কাছে আহ্বান জানাচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ভিত্তিতে প্রণীত সংবিধান পুনর্প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে স্বাধীনতাবিরোধী এবং সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান বন্ধে এ রায় ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করবে বলে জাতির দৃঢ় বিশ্বাস। জাতির জনককে হত্যার পর অস্ত্রের মুখে ৰমতা দখল করে সামরিক স্বৈরাচার বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে দেশের পবিত্র সংবিধানকে ৰতবিৰত করেছিল।
তারই একটি হচ্ছে পঞ্চম সংশোধনী। ওই সংশোধনী বহাল করে সংবিধান থেকে বাদ দেয়া হয়েছিল : জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের জন্য ঐতিহাসিক মুক্তিযুদ্ধ বাদ দিয়ে করা হয়েছিল স্বাধীনতার জন্য ঐতিহাসিক যুদ্ধ; বাঙালী জাতীয়তাবাদ বাদ দিয়ে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ; ধর্মনিরপেৰতা সম্পূর্ণভাবে বাদ দেয়া হয়েছিল এবং সমাজতন্ত্র বাদ দিয়ে অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার অর্থে সমাজতন্ত্র করা হয়েছিল। আনন্দের ব্যাপার হচ্ছে, এ রায়ের ফলে দেশ ১৯৭২-এর সংবিধানে ফিরে যাবে। দেশ আর কখনও সামরিক জানত্মার কবলে পড়বে না। গণতন্ত্র হবে গতিশীল। জাতি হিসেবে বাঙালী আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হিসেবে গণ্য হবে।
No comments