জুলাইয়ে চালু হচ্ছে না বৃত্তাকার নৌপথে ওয়াটার বাস- লালফিতায় আটকা by রশিদ মামুন
আগামী জুলাইয়ে রাজধানীর চারপাশে বৃত্তাকার নৌপথে ওয়াটার বাস চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। বৃত্তাকার নৌপথ চালুর প্রধান বাধা কম উচ্চতায় (ভার্টিক্যাল) এবং দুই পিলারের মধ্যকার কম ফাঁকা (হরাইজন্টাল) রেখে নির্মিত ১৪ ব্রিজ ভেঙ্গে ফেলার জন্য নৌমন্ত্রণালয় থেকে সংশিস্নষ্ট কর্তৃপকে চিঠি দেয়া হলেও এখনও তারা কোন পদপে নেয়নি।
ব্রিজ ভাঙ্গা এবং প্রতিস্থাপন বিষয়টি সময় ও অর্থসাপে হওয়ায় এত কম সময়ে সিদ্ধানত্ম গ্রহণ সম্ভব নয় বলে মনে করা হচ্ছে।নৌ মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, গত ডিসেম্বরে রাজধানীর চারপাশের নদীগুলোর ওপর নির্মিত ব্রিজগুলো ভাঙ্গার বিষয়ে কার্যকর পদপে গ্রহণের বিষয়ে সংশিস্নষ্ট কতর্ৃপকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কিন্তু ব্রিজ ভাঙ্গার পর নতুন করে প্রতিস্থাপন করার বিষয়টি ওই চিঠিতে স্পষ্ট করা হয়নি। এ ছাড়া এখন যাঁরা ব্রিজগুলো ব্যবহার করছেন তারা কি উপায়ে নদী পারাপার করবেন সে বিষয়টিও বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে।
সড়ক এবং জনপথ বিভাগের এক উর্ধতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, একটি সমস্যা নিরসন করতে গিয়ে নতুন সমস্যা সৃষ্টি করার মানে নেই। এজন্য সিদ্ধানত্ম নেয়ার আগে ভেবেচিনত্মে নেয়া যুক্তিযুক্ত বলে তিনি মনে করেন। ব্রিজগুলো ভাঙ্গার আগে নতুন করে ওসব এলাকায় ব্রিজ প্রতিস্থাপন জরম্নরী জানিয়ে তিনি বলেন, এটি অর্থ এবং সময়সাপে বিষয়, হুট করে ভেঙ্গে ফেলা সম্ভব নয়। অন্যদিকে রেলওয়ে নির্মিত দু'টি সেতু উঁচু করা সম্ভব নয় বলে নৌমন্ত্রণালয়কে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করার অনুরোধ করা হয়েছে।
সূত্রমতে, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোঃ আলাউদ্দিনকে আহবায়ক করে বিআইডবিস্নউটিএ, এলজিইডি, সওজ এবং সংশিস্ন-ষ্ট দফতরের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি এসব এলাকা পরিদর্শন করে মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে, যে চারটি ব্রিজ রয়েছে তা উঁচু করা, অন্যান্য ব্রিজ ভেঙ্গে ফেলা এবং রেলওয়ে নির্মিত ব্রিজগুলোর ৰেত্রে বিকল্প এলাকায় নৌ ল্যান্ডিং স্টেশন নির্মাণ করা যেতে পারে।
সংশিস্ন-ষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার চারদিকে প্রবাহিত বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু, শীতল্যা ও টঙ্গী নদী তৃতীয় শ্রেণীর নৌপথ। নিয়মানুযায়ী এ নৌপথের সবের্াচ্চ পানি সীমায় ভার্টিক্যাল ও হরাইজন্টাল কিয়ারেন্স স্ট্যান্ডার্ড মান যথাক্রমে ৭ দশমিক ৬২ মিটার (২৫ ফুট) ও ৩০ দশমিক ৪৮ মিটার (১০০ ফুট) থাকা প্রয়োজন। কিন্তু স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর, সড়ক ও জনপথ অধিদফতর এবং বাংলাদেশ রেলওয়ে ব্রিজ নির্মাণের আগে এ দিকটি বিবেচনায় নেয়নি। যা এখন বৃত্তাকার নৌপথে ওয়াটার বাস চালু করার ৰেত্রে এখন বড় বাধা হিসেবে দেখা দিয়েছে।
সূত্রমতে, লো-হাইটের ব্রিজের নিচ দিয়ে ওয়াটার বাস চলাচল করতে পারবে না। কারণ এ বাসগুলো দ্বিতল নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া এসব রম্নটে নাব্য সঙ্কটও রয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে নদীর গভীরতা কোন কোন স্থানে ১ মিটারেরও নিচে নেমে যায়। এ কারণে ওয়াটার বাস চালুর আগে নদীগুলো ড্রেজিং করতে হবে।
বিআইডবিস্নউটিএ সূত্রমতে, শুকনো মৌসুমে তুরাগ নদীর গভীরতা আশুলিয়া পয়েন্টে ১ দশমিক শূন্য ৫ মিটার, বুড়িগঙ্গায় পাগলা পয়েন্টে দশমিক ৬৯ মিটার এবং শীতল্যায় নারায়ণগঞ্জ পয়েন্টে দশমিক ৭৮ মিটার। আবার বর্ষা মৌসুমে পানি বেড়ে নদীর গভীরতা দাঁড়ায় তুরাগ নদীর আশুলিয়া পয়েন্টে ৫ দশমিক ৫৮ মিটার, বুড়িগঙ্গায় পাগলা পয়েন্টে ৫-৬ মিটার এবং শীতল্যায় নারায়ণগঞ্জ পয়েন্টে ৫ দশমিক ১৫ মিটার।
ব্রিজগুলো হচ্ছে তুরাগ নদীর ওপর মিরপুর ব্রিজ, মিরপুর বেইলি ব্রিজ, বিরম্নলিয়া ব্রিজ, ধউর ব্রিজ ১ ও ২ নম্বর, নইনিচালা ব্রিজ, কামারপাড়া ব্রিজ, টঙ্গী নদীর ওপর টঙ্গী ব্রিজ রোড-১, টঙ্গী ব্রিজ রোড-২, টঙ্গী রেলওয়ে ব্রিজ-১, টঙ্গী রেলওয়ে ব্রিজ-২ এবং বালু নদীতে ত্রিমুখ-রূপগঞ্জ-কালীগঞ্জ ব্রিজ, ইছাপুরা ব্রিজ ও ডেমরা বাজার ব্রিজ। এর মধ্যে বিরম্নলিয়া ব্রিজ, ধউর ব্রিজ ২ নম্বর, নইনিচালা ব্রিজ ও ত্রিমুখ-রূপগঞ্জ-কালীগঞ্জ ব্রিজ ৪টি নির্মাণাধীন। এসব ব্রিজের ভার্টিক্যাল কিয়ারেন্স রয়েছে দশমিক ৯১ মিটার (৩ ফুট) থেকে সর্বোচ্চ ৬.৪০ মিটার (২০ ফুট) পর্যনত্ম। এর মধ্যে ৩টি ব্রিজের উচ্চতা ৪ মিটার থেকে সাড়ে ৬ মিটারের নিচে। বাকিগুলো ৩ মিটারেরও নিচে। আর হরাইজন্টাল কিয়ারেন্স হচ্ছে ১২.১৯ থেকে ২৭.৪৩ মিটার (৪০-৯০ ফুট)। ১৪ ব্রিজের মধ্যে সওজ ৭, এলজিইডি ৫টি এবং রেলওয়ে দু'টি নির্মাণ করেছে।
প্রসঙ্গত রাজধানীর যানজট নিরসনে ঢাকা শহরের চারদিকে বৃত্তাকার নৌপথ চালুকরণ প্রকল্পের আওতায় ৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রথম পর্যায়ে সদরঘাট থেকে আশুলিয়া পর্যনত্ম নৌপথের উন্নয়ন ও ১১ ল্যান্ডিং স্টেশন নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে এ প্রকল্পের (২য় পর্যায়) ৬৭ কোটি টাকা ব্যয়ে আশুলিয়া থেকে কাঁচপুর (ডেমরা) পর্যনত্ম নদী পথ উন্নয়নের কাজ চলছে। সম্প্রতি নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান মন্ত্রণালয়ে এক ব্রিফিংয়ে জানান, আগামী জুলাই মাসে রাজধানীর বৃত্তাকার নৌপথে ওয়াটার বাস চালু করা হবে।
No comments