জঙ্গী তপরতা এবার নাটোরে
জঙ্গীদের তৎপরতা দিন দিন যে বাড়ছে তার একের পর এক প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। সোমবার সকালে রাজধানীর উত্তরায় জেএমবির জঙ্গীরা খুন করেছে তাদের সাবেক এক সহযোগী দলত্যাগী রাশিদুলকে।
এই ঘটনাতেই বোঝা যায় খোদ রাজধানীতেই জঙ্গীরা তৎপর। তারা রাজধানী নগরীতেও প্রকাশ্য দিবালোকে ছুরির কোপ মেরে মেরে মানুষকে খুন করতে পারে। ঐ সোমবার রাতেই ঘটে আরেকটি ঘটনা। জঙ্গীরা তৎপরতা চালায় নাটোরের সিংড়ায়। সেখানকার এক গ্রাম থেকে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতাকে ধরে হত্যা করার জন্য মাইক্রোবাসে করে নিয়ে যাওয়ার পথে জনতা ও পুলিশের হাতে জেএমবির সদস্যরা ধরা পড়ে এবং ঐ নেতাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়। প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, আটক করা ঐ মাইক্রোবাস থেকে হত্যার জন্য ব্যবহারযোগ্য বিভিন্ন ধারালো অস্ত্রও উদ্ধার করা হয়েছে।নিষিদ্ধ ঘোষিত জেএমবি নামের ধমর্ীয় জঙ্গী সংগঠনটি যে তাদের কাজকর্ম বন্ধ করে দেয়নি, একেবারে দিবালোকের মতো পরিষ্কার।
জঙ্গীদের সাম্প্রতিক এসব তৎপরতায় কিছু প্রশ্ন সামনে এসেছে। জঙ্গীদের নিমর্ূল করা এখনও সম্ভব হয়নি, তাদের বিরম্নদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের ধারাটিকে অব্যাহত রাখতে না পারলে তাদের এহেন তৎপরতা বাড়তেই থাকবে এবং বাড়তে বাড়তে একদিন ব্যাপক ধ্বংসাত্মক পর্যায়ে চলে যেতে পারে। জঙ্গীরা রাজধানীতে দিনের বেলায় এক ব্যক্তিকে খুন করে পালিয়ে যেতে পারল কি করে এই প্রশ্ন যেমন উঠতে পারে তেমনি একই সঙ্গে এ প্রশ্নও উঠতে পারে_ যাকে খুন করা হয়েছে তিনি এক সময় যুক্ত ছিলেন ঐ একই জঙ্গী সংগঠনে। কিন্তু পরে নিজের ভুল বুঝতে পেরে দল ছেড়ে ঢাকার এক মসজিদে ইমামতির কাজ নেন এবং এক বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তাঁর নামে একটি মামলাও হয়েছিল এবং এক সময় সে মামলায় তাঁর সাজাও হয়েছিল। তিনি পুলিশের অস্ত্র লুট মামলায় সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি। তিনি জঙ্গী সংগঠনের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করে চলে এসেছিলেন এবং ঐ সংগঠনের কাজকর্মের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেছিলেন। তিনি জেএমবির বিরম্নদ্ধে মসজিদের খুতবায় এবং ওয়াজ মাহফিলে কথা বলতেন এবং ঐ দলের অন্য সদস্যদেরও ঐ পথ ছেড়ে সুপথে আসার আহ্বান জানাতেন। এই তথ্যগুলো কি আইনশৃঙ্খলা কর্তৃপৰের গোচরেই ছিল না? যদি থাকত তাহলে একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামি কিভাবে 'পলাতক' থেকে রাজধানীতে এক মসজিদে ইমামতির পাশাপাশি এক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা চালানোর এক পর্যায়ে জঙ্গী সহকমর্ীদের হাতে খুন হলেন, তাঁর নিরাপত্তারও ব্যবস্থা হয়নি_ সবকিছু ঘটে গেছে সংশিস্নষ্ট কর্তৃপৰের নজরের বাইরে। প্রশ্ন হচ্ছে সাজাপ্রাপ্ত এমন আসামি এভাবে 'পলাতক' থাকে কি করে? দ্বিতীয় প্রশ্ন, জঙ্গী সংশ্রব ত্যাগ করে কোন তরম্নণ সুপথে ফিরে এলে তাদের কি এভাবে খুনই হতে হবে? বিষয়গুলো সংশিস্নষ্ট কর্তৃপৰকে বিশেষভাবে ভাবতে হবে।
সরকার জঙ্গীদের উৎখাতে বদ্ধপরিকর। কিন্তু সে ব্যাপারে কাজ যে হয়নি এখনও অনেক বাকি তা পরিষ্কার হয়ে উঠছে। বলা হয়ে থাকে জঙ্গীদের প্রতি দেশী-বিদেশী বিভিন্ন মহলের মদদ রয়েছে। তাদের উৎখাত করতে চাইলে এই মদদদাতাদেরও খুঁজে বের করতে হবে, তাদের অর্থের উৎসও বন্ধ করতে হবে।
জঙ্গীবাদের বিপদ বড় বিপদ। এ বিপদ থেকে সমাজ জীবনকে মুক্ত রাখতে হলে জনজীবনে শানত্মি ও স্বসত্মি সুপ্রতিষ্ঠিত করতে হলে জঙ্গীবাদকে পুরোপুরি নিমর্ূল করতে হবে, নিমর্ূলের এই কাজটিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। উত্তরা এবং নাটোরের ঘটনায় জড়িতদের কঠোর আইনগত শাসত্মি নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন।
No comments