পার্কিং না রেখে মেগা শপিং সেন্টার, জলাভূমিতে পুলিশ প্লাজা by ফিরোজ মান্না
ন্যাশনাল শূটিং ফেডারেশনের কার পার্কিং না রেখে মেগা শপিং সেন্টার ও কনভেনশন হল নির্মাণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। রাজউক শূটিং ফেডারেশনের বিরম্নদ্ধে নোটিস জারি করা হয়েছে।
নোটিস মোতাবেক কাজ না হলে কঠোর পদৰেপ নেবে রাজউক। রাজউক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী নূরুল হুদা জনকণ্ঠকে বলেন, আগামী সপ্তাহের মধ্যে শূটিং ফেডারেশনে ম্যাজিস্ট্রেট পাঠানো হবে। আইনবহির্ভূত নির্মাণ হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর পদৰেপ নেয়া হবে। আইনের উর্ধে কেউ নন। সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে বদ্ধপরিকর। একইভাবে পুলিশ পস্নাজা কনকর্ড ভবন নির্মাণের ব্যাপারে যে অনিয়ম হয়েছে সে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে।সূত্র জানিয়েছে, শূটিং ফেডারেশনের দু'টি কনভেনশন হলের প্রতিটিতে এক হাজার জন করে মানুষ এক সঙ্গে মিটিং করতে পারবে। এই এক হাজার মানুষের মধ্য থেকে যদি ২শ' জন মানুষ গাড়ি নিয়ে মিটিংয়ে যোগ দেন তাহলেই গোটা এলাকা যানজটে আটকে যাবে। আবার এখানেই করা হচ্ছে মেগা শপ। মেগা শপে প্রতিদিন যে পরিমাণ মানুষ কেনা কাটা করতে আসবে তাতেও বিরাট যানজটের সৃষ্টি করবে। শূটিং ফেডারেশনের পাশেই নির্মাণ করা হচ্ছে পুলিশের মার্কেট। ভবিষ্যতে এই দু'টি মার্কেট পুরো গুলশান এলাকার দুঃখ হিসেবে দেখা দেবে। এমননিতেই ঢাকা মহানগরী যানজটের কারণে নাকাল হয়ে পড়েছে। গুলশানে এমন মার্কেট চালু হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠবে।
পরিবেশ ও জলাধার সংরণ আইনের তোয়াক্কা না করে গুলশান লেকের পাশে জলাভূমি ভরাট করে প্রায় ৫০ কোটি টাকা মূল্যের ৫৯ কাঠা (২ দশমিক ৯৭ বিঘা) জমি পুলিশ ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টকে বরাদ্দ দিয়েছে রাজউক। বিজয় সরণির র্যাংগ্স ভবন ভেঙ্গে এই লেক ধরেই সরকার বাড্ডা সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্প হাতে নিয়েছে। অথচ জলাভূমি ভরাট করে সেখানে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে ১৬ তলা বিশিষ্ট 'পুলিশ পস্নাজা কনকর্ড' নামে একটি বাণিজ্যিক ভবন। ২০১০ সালে এর নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান কনকর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান কনকর্ড রিয়েল এস্টেটের কর্মকর্তারা দাবি করেছেন এটাই হবে ঢাকার বুকে বিদেশী ধাঁচের সুযোগসুবিধাসম্পন্ন সবচেয়ে আধুনিক শপিং কমপেস্নক্স।
সরেজমিন গিয়ে জানা গেছে, ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি রাজউক গুলশান লেকের উত্তর সীমানার জলাভূমির এই জমিতে পুলিশ ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টকে ১৬তলা বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেয়। গুলশান শূটিং ফেডারেশনের পাশে নির্মাণাধীন এই বাণিজ্যিক ভবনের হোল্ডিং 'গুলশান মডেল টাউন ১৪০ নম্বর সড়কের ২ নম্বর পস্নট।' পুলিশের কনসালটেন্সি ফার্ম 'ইঞ্জিনিয়ার্স এ্যান্ড কনসালটেন্ট বাংলাদেশ লিমিটেড'-এর তত্ত্বাবধানে কনকর্ড ডেভেলপার লিমিটেড কোম্পানিস গত বছরের ১০ ডিসেম্বর নির্মাণ কাজ শুরম্ন করেছে। পুলিশের আইজি নূর মোহাম্মদ সেদিন এই কমপেস্নক্সের ভিত্তিপ্রসত্মর স্থাপন করেন। বর্তমানে নামফলক টিনের বেড়া দিয়ে ঘিরে চলছে পুলিশ পস্নাজা কনকর্ডের নির্মাণ কাজ। ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের (গুলশান শাখা) গৃহায়ন বিনিয়োগের আওতায় নির্মাণ কাজে বিনিয়োগ করা হয়েছে। কনকর্ডের ৫ প্রকৌশলীর তত্ত্বাবধানে নির্মিত ভবনে আড়াই শ' শ্রমিক দিনরাত নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। পুরো ১৬তলা ভবন নির্মাণের পর পুলিশ ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ৬০ ভাগ এবং নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান কনকর্ড পাবে ৪০ ভাগ অংশ পাবে। এই ভবনের নকশা এবং পরিকল্পনার সময়ই দু'পরে মধ্যে ভাগাভাগির এমন চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে বলে খবর মিলেছে।
প্রকল্পের এক কর্মকর্তা বলেন, ঢাকার সবচেয়ে আধুনিক এই বাণিজ্যিক ভবনটি এক্সকুসিভ শপিং এ্যান্ড অফিস কমপেস্নক্স হবে। ১৬তলার ভবনের নিচের ৩তলা বেজমেন্ট, ৫তলা পর্যনত্ম শপিং মল এবং এর ওপরের ফোরগুলোতে থাকবে বাণিজ্যিক অফিস। ভবনের সামনে দোতলা অফিস রম্নমে বসে দোকান এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ফোর বিক্রির কাজ করছে কনকর্ড। গড়ে ২০ থেকে ৪০ হাজার টাকায় প্রতি স্কয়ার ফিট বিক্রি হচ্ছে। সেখানে বসেন পুলিশের কনসালটেন্সি ফার্মের এক সদস্য। এখানকার কর্মকর্তারা জানান, লেকঘেঁষা এই জমি পুলিশের কেনা। জলাভূমি ভরাট করে এই ভবন নির্মাণ হচ্ছে না। ভবন নির্মাণের আগেই এটি ভরাট ছিল। তবে তখনই কনকর্ডের এক কর্মকর্তা বলেন এর আগে এই জমিতে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের ময়লা-আবর্জনা ফেলত। ময়লা-আবর্জনা ফেলেই গুলশান লেকের উত্তর কর্নারের রাসত্মাঘেঁষা জলাভূমি ভরাট করা হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিবেশবিদরা বলেন, এই জলাভূমি সংরণ করা নিয়ে অনেক আন্দোলন হয়েছে। আড়ং, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের পর এবার জলাভূমি ভরাট করে নির্মাণ হচ্ছে পুলিশের বাণিজ্যিক ভবন। এই ভবন নির্মাণ কোনভাবেই কারও কাম্য নয়। এতে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে। এই জাতীয় ইসু্য নিয়ে সবার একযোগে এগিয়ে আসা উচিত। তা ছাড়া এই জমিটি বিরোধপূর্ণ। একজন শিল্পপতির সঙ্গে এই জমি নিয়ে সরকারের বিরোধ চলছিল। জমি থেকে সাধারণ মানুষকে উচ্ছেদ করে পুলিশকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যারা সরকারে থাকে তারাই অনিয়ম করে। আইন রাকারী পুলিশই আইন মানছে না। পরিবেশ আইন ও জলাধার সংরণ আইন অমান্য করে পুলিশের এই বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
কনকর্ডের মার্কেটিং বিভাগের এক কর্মকর্তা জলাভূমি ভরাট করে মার্কেট নির্মাণ প্রসঙ্গে বলেন, জমিটি পুলিশের। এর বাইরে তার কিছু জানা নেই।
রাজউক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী নূরম্নল হুদা বলেন, দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করার জন্য যে কোন অনিয়মের বিরম্নদ্ধে অবস্থান নেয়া হবে। জোট সরকারের আমলে একজন মন্ত্রীর স্বার্থ রৰার জন্য পুলিশকে গুলশান এক নম্বরে লেকের জায়গা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। রাজারবাগে দেয়া পুলিশের জায়গাটি তিনি নিজের নামে বরাদ্দ নিয়েছেন। এটা খুবই অন্যায়। অন্যায় কাজকে কোনভাবেই সমর্থন করা যায় না। ন্যাশনাল শূটিং ফেডারেশন পার্কিং না রেখে যে মেগা শপ নির্মাণ করছে তার বিরম্নদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ইতোমধ্যে নোটিস জারি করা হয়েছে। কার পার্কিং না থাকলে এই এলাকা যানজটে অচল হয়ে পড়বে। এক দিকে শূটিং কাবের মেগা শপ ও কনভেনশন হল, অন্যদিকে পুলিশ মার্কেট। এই দুই প্রতিষ্ঠানের কারণে এই এলাকায় ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি করবে।
এদিকে পরিবেশবিদরা বলেন, বরাবরই জলাশয় দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের কথা সোচ্চার কণ্ঠে হয়। কিন্তু কোন সময় এর বিরম্নদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয় না। এই রাজউকই জলাভূমি বরাদ্দ দিয়েছে পুলিশ ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টকে। অনেক আগে থেকেই এই খালি জমিতে বসত্মিঘর ছিল। বসত্মিগুলো খালি করে জোট সরকারের সময় পুলিশ ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টকে জমি বরাদ্দ দেয়া হয়। পুলিশের পৰ থেকে বলা হয়েছে, লেকের সঙ্গে লাগানো সরকারী জমি পুলিশ ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সেই জমিতে চলছে ভবন নির্মাণের কাজ।
No comments