ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্সে পরিবর্তন স্বাগত জানাচ্ছে আইনজ্ঞরা- হাইকোর্টের রায় by বিকাশ দত্ত
হাইকোর্ট ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্স অবৈধ ঘোষণার পর প্রশাসন এবং বিচার বিভাগে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। এই রায়কে কেউ কেউ যুগানত্মকারী হিসেবে গণ্য করলেও আরেক অংশ এটাকে মেনে নিতে পারছে না।
আইন বিশেষজ্ঞদের মতে এই রায় সঠিক ও যথার্থ হয়েছে। পাশাপাশি সরকারকে বিচার বিশেস্নষণ করে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সুরাহা করতে হবে। যেহেতু বিষয়টি স্পর্শকাতর। শোনা যাচ্ছে সরকার এই রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করবে। যদিও আইনমন্ত্রী ও এ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন এখনও সিদ্ধানত্ম হয়নি। আলাপ-আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। বৃহস্পতিবার বিচারপতি রিফাত আহম্মেদ ও বিচারপতি মোঃ মইনুল ইসলাম চৌধুরী দ্বৈত বেঞ্চ ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্ট অবৈধ ঘোষণা করে রায় প্রদান করে। রায় ঘোষণা কর ৮টি দিকনির্দেশনা দেয়া হয়। নির্দেশনাগুলোর মধ্যে রয়েছে, নতুন ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্টের প্রথমেই সব সাংবিধানিক কাজ গুরম্নত্ব অনুসারে রাখতে হবে। জেলা জজদের পদ সংবিধানের উলিস্নখিত পদ হওয়ায় সাংবিধানিক পদগুলোর পর পরই তাঁদের স্থান হবে। জেলা জজ পদমর্যাদার সমসত্ম পদ ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্সে জেলা জজদের সঙ্গে ক্রমানুসারে রাখতে হবে। সংবিধানের প্রদত্ত সংজ্ঞা অনুযায়ী যেহেতু জেলা জজ বলতে অতিরিক্ত জেলা জজকেও বোঝায় সেহেতু অতিরিক্ত জেলা জজ, চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এবং চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটদের জেলা জজদের পরে ক্রমানুসারে রাখতে হব। এর পরের ক্রমিকে তিন বাহিনীর প্রধানকে রাখতে হবে। সরকারের সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তারা এর পর থাকবেন।হাইকোর্ট এই রায় ঘোষণার পর দেশের প্রশাসন এবং বিচার বিভাগে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। আইন বিশেষজ্ঞগণ এই রায়কে ভালভাবেই দেখছেন। যদিও কেউ কেউ বলছেন, এর ফলে জনপ্রশাসনে ৰোভের সঞ্চার হবে। প্রশাসন বিৰুব্ধ হয়ে উঠলে সরকার চালানো মুশকিল হয়ে যাবে। সরকারকে এখন সংশিস্নষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলেই বিষয়টি সুরাহা করতে হবে। এদিকে হাইকোর্টের রায়ের বিরম্নদ্ধে সরকার আপীল করবে এমন কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেছেন, আপীল করা হবে কিনা, এখনও আইন কর্মকর্তারা আমাকে জানায়নি। জানালেই বলতে পারব। আলাপ-আলোচনা করেই এ ব্যাপারে সিদ্ধানত্ম গ্রহণ করা হবে। এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জনকণ্ঠকে বলেছেন, সরকার চাইলে আপীল করা হবে। এখনও এ বিষয়ে আলোচনা হয়নি।
আপীল বিভাগের সাবেক বিচারপতি মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী বলেছেন, সংবিধানে রাষ্ট্রের পরিচালিত মূলনীতির একটি হচ্ছে নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে পৃথক করতে হবে। এখন সে মতে করাও হয়েছে। এই প্রেৰাপটে হাইকোর্টের রায় সঠিক এবং যথার্থ হয়েছে। জেলা জজরা তিন বাহিনীর প্রধানের ওপরে থাকবেন। বাংলাদেশের সংবিধানে নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ এবং জাতীয় সংসদে যে নক্সা দেয়া হয়েছে তার সঙ্গে এই রায়টি পুরোপুরি মিলে যায়। সেজন্য ভবিষ্যতে কোন প্রশ্ন ওঠার সম্ভাবনা নেই।
সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. এম জহির বলেছেন, এই রায়ের ফলে জুডিশিয়ারিদের সম্মান দেয়া হয়েছে। সংবিধান জজদের সম্মান দিতে পেরেছে। এতে আমরা খুশি। মাযদার হোসেন মামলার রায় মোতাবেক জেলা জজদের এই সম্মান দেয়া হয়েছে। সরকার আপীল করবে। আপীলে কী হয় তার ওপরই পরিস্থিতি নির্ভর করছে। তিনি বলেন, হাইকোর্টের রায়টি যুগানত্মকারী। মন্ত্রী-এমপিরা কাজের ৰেত্রে যেমন স্বাধীন তেমনি বিচারকরাও কাজের ৰেত্রে স্বাধীন থাকবেন।
আইন বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক জনকণ্ঠকে বলেছেন, হাইকোর্টের রায় হয়েছে, সরকার সম্ভবত আপীল করবে। ফলে প্রশ্নটির সমাধান জরম্নরী নয়। আপীল শেষ না হওয়া পর্যনত্ম প্রশ্ন অমীমাংসিতই থেকে যাবে। হাইকোর্টের রায়ের আলোকে বলা যায়, এটি একটি জটিল ব্যাপার। বিভিন্ন পদমর্যাদা সম্পন্ন লোকের একজন উপরে যাবে, একজন নিচে থাকবে_ এটা জটিলতা সৃষ্টি করবে। সরকারকে বিচার-বিশেস্নষণ করে সংশিস্নষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সুরাহা করতে হবে। কারণ বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর।
একটি সূত্র জানায়, সাবেক সামরিক শাসক এইচএম এরশাদের সময় যারা কাজ করেছে সেই আমলারা ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্সি তৈরি করেছে। এটা পরবতর্ীতে বিবেচনায় আনা হয়নি। বিভিন্ন সার্ভিসের কথা বিবেচনা না নিয়ে এটা করা হয়। সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং প্রশাসনে অনেক পদ রয়েছে। সেৰেত্রে বিচার বিভাগে শুধু জেলা জজ ও অতিরিক্ত জেলা জজ এ দু'টি সাংবিধানিক পদ রাখা হয়েছে। যা অসাংবিধানিক। এ সমসত্ম বৈষম্যের কারণেই জুডিশিয়াল সার্ভিস আদালতের শরণাপন্ন হয়েছে। বিচারক বিচার কাজের সঙ্গে জড়িত। এটা এক ধরনের স্বাধীন। এটা পুরোপুরি পাবলিক সার্ভিস নয়। তিন বাহিনীর পদ পাবলিক সার্ভিস। উলেস্নখ্য, ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্ম ১৯৮৬-এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস এ্যাসোসিয়েশনের পৰে এ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মোঃ আতাউর রহমান ২০০৬ সালে সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে একটি রিট দায়ের করেন। রিট পিটিশন নং ১১৬৮৫। ঐ রিট দায়েরের ফলে বৃহস্পতিবর হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্সে জেলা জজদের মর্যাদা সরকারের সচিব পদমর্যাদার নিচে দেখানো কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না ঐ মর্মে রম্নল জারি করে।
No comments