জঙ্গীরাই নিয়ন্ত্রণ করে ঢাকার ওষুধ বাজার, জাল টাকার ব্যবসা- অজ্ঞান পার্টিও চালায় তারাই, ট্যাবলেট আনে পাকিস্তান থেকে, আছে শতাধিক ফার্মেসি, সক্রিয় ৫শ' সদস্য by গাফফার খান চৌধুরী
দেশী-বিদেশী জঙ্গীরা বাংলাদেশে চোরাচালান, ওষুধ ব্যবসা ও জাল টাকার ব্যবসাসহ নানা ধরনের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। বিশেষত মানুষ অজ্ঞান করে সর্বস্ব কেড়ে নেয়ার কাজে ব্যবহৃত এটিভিএন ট্যাবলেটের ঢাকার বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে দেশী-বিদেশী জঙ্গীরা।
রাজধানীতে অন্তত শতাধিক ওষুধের দোকান রয়েছে জঙ্গীদের। ব্যবসার মূলধন দিচ্ছে লস্কর-ই-তৈয়বা ও একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থা। পাকি লস্কররা পাকিস্তান থেকে এটিভিএন ট্যাবলেট আমদানি করছে। আমদানিকৃত ট্যাবলেট বিক্রি হচ্ছে বাংলাদেশী জঙ্গীদের পরিচালিত নির্দিষ্ট দোকানে। রাজধানীতে গরম যত বাড়ে পাকিস্তান থেকে মানুষ অজ্ঞান করার ট্যাবলেট আমদানিও তত বাড়ে। গরম অসহনীয় পর্যায়ে গেলে বাংলাদেশে থাকা পাকি লস্কর জঙ্গীদের ইনকামও তত বাড়তে থাকে।গোয়েন্দারা বলছে, রাজধানীতে গরম বাড়ছে, সেই সঙ্গে বাড়ছে অজ্ঞান পার্টি ও দেশী-বিদেশী জঙ্গীদের তৎপরতা। তার সঙ্গে পালস্না দিয়ে বাড়ছে পাকিসত্মান থেকে অজ্ঞান করার ট্যাবলেট এটিভিএন আমদানি। গরম বাড়লে এসব ট্যাবলেট শরবত বা ডাবের পানির সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ানো হয় পথচারীদের। কেড়ে নেয়া হয় সর্বস্ব। রাজধানীতে পুরো চক্রের অনত্মত ৫শ' সদস্য সক্রিয় রয়েছে। এ চক্রের সঙ্গে বেশকিছু হকারের যোগাযোগ রয়েছে। এসব হকারের মাধ্যমেই নানা ধরনের খাবারে, শরবতে বা ডাবের পানিতে অজ্ঞান করার এটিভিএন ট্যাবলেট মেশানো হয়। এরপর যাকে খাওয়ানো হবে তাকে চিনিয়ে দেয়ার দায়িত্বও পালন করে হকাররা।
গত ১৮ জানুয়ারি ১০ লাখ জাল ভারতীয় রম্নপীসহ পাকিসত্মানী নাগরিক দানিশ ও সাবি্বর গ্রেফতার হয়। পরে তাদের তথ্য মতে, ২০ জানুয়ারি আরেক পাকিসত্মানী নাগরিক মোহাম্মদ জাহিদকে ৫০ হাজার রম্নপীর ভারতীয় জাল মুদ্রাসহ গোয়েন্দারা গ্রেফতার করে। জিজ্ঞাসাবাদে পাকিসত্মানী নাগরিকরা গোয়েন্দাদের জানায়, বাংলাদেশের সিংহভাগ চোরাচালান নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে পাকিসত্মানের করাচীতে তৈরি জাল বৈদেশিক মুদ্রায়। পাকিসত্মান থেকেই বাংলাদেশে অবস্থানকারী অনত্মত অর্ধশত পাকিসত্মানীর মাধ্যমে এ চোরাচালান নিয়ন্ত্রিত হয়। প্রায় ১০ বছর ধরে বাংলাদেশে চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ করছে তারাই। ব্যবসা থেকে আয়ের একটি বড় অংশ চলে যাচ্ছে বাংলাদেশী জঙ্গীদের কাছে। এসব টাকায় জঙ্গীদের বিদেশে ট্রেনিংয়ের পাশাপাশি দেশে জঙ্গীরা ব্যবসা করে থাকে। এর আগে গত ১২ অক্টোবর টঙ্গী ও গাজীপুর থেকে লস্কর-ই-তৈয়বার সদস্য পাকিসত্মানী নাগরিক সৈয়দ আব্দুল কাইয়ুম আজহারী ওরফে সুফিয়ান, মোহাম্মদ আশরাফ ওরফে জাহিদ ও মোহাম্মদ মনোয়ার আলী ওরফে মনোয়ার গ্রেফতার হয়। গত ৪ নবেম্বর ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসে হামলা চক্রানত্মের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে চট্টগ্রামের লালখান মাদ্রাসা থেকে আনত্মর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বার সঙ্গে সম্পর্কিত ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশের চেয়ারম্যান মুফতি ইজাহারম্নল ইসলামের ছেলে হারম্নন ইজাহার, সুজন ও সাইফুলকে গ্রেফতার করা হয়। সুফিয়ান বাংলাদেশে লস্কর-ই-তৈয়বার সদস্যদের আশ্রয় দেয়া, সদস্য সংগ্রহ ও তাদের পাকিসত্মানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সামরিক ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করত।
এ পর্যনত্ম বাংলাদেশে গ্রেফতার হওয়া পাকিসত্মানী জঙ্গীরা স্বীকার করেছে, লস্কর জঙ্গীদের এদেশে গার্মেন্টস ছাড়াও ওষুধ ও মেডিক্যাল যন্ত্রপাতির ব্যবসা রয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত ছিল। এছাড়া গ্রেফতারের বাইরে থাকা দেশী-বিদেশী, বিশেষ করে পাকিসত্মানী লস্কর জঙ্গীরা ওষুধ চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত। বিশেষ করে পথচারীদের অজ্ঞান করে সঙ্গে থাকা মূল্যবান সামগ্রী কেড়ে নেয়ার কাজে ব্যবহৃত এটিভিএন ট্যাবলেট আমদানি হয় পাকিসত্মান থেকে। বাংলাদেশে এটিভিএন ট্যাবলেটের বাজারও নিয়ন্ত্রণ করে বাংলাদেশে অবস্থানকারী পাকি লস্কর জঙ্গীরা। মিটফোর্ডকেন্দ্রিক এটিভিএন ট্যাবলেট বিক্রি হয়ে থাকে। এসব ট্যাবলেটও বিক্রি হয় বাংলাদেশী জঙ্গীদের পরিচালিত দোকানে। তোপখানা রোডের বড় ওষুধের দোকান তাজ ফার্মেসি গ্রেফতারকৃত লস্কর জঙ্গীদের। লস্কর-ই-তৈয়বার টাকায় ফার্মেসিটি দীর্ঘ দিন ধরে ওষুধের ব্যবসা করে আসছে।
গোয়েন্দারা বলছে, গরম শুরম্ন হওয়ায় অজ্ঞান করার এটিভিএন ট্যাবলেটের আমদানি বেড়েছে। প্রচ- গরমে মানুষের শরবত পানের প্রবণতা বেশি থাকে। এ সুযোগ কাজে লাগায় অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা। দেশের বিভিন্ন জায়গায় থাকা অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা ঢাকায় আসতে শুরম্ন করেছে। এটি একটি বিশাল চক্র। এ চক্রের সঙ্গে নানা পেশাজীবী জড়িত। পাকি লস্কর জঙ্গী ও এদেশী জঙ্গীদের রয়েছে ওষুধ আমদানির বিরাট সিন্ডিকেট। মূলত পাকি লস্কর জঙ্গীরাই পাকিসত্মান থেকে এটিভিএন ট্যাবলেট আমদানি করে থাকে। পাশাপাশি তদারকির দায়িত্বও পালন করে তারা। আমদানিকৃত এটিভিএন ট্যাবলেট বিক্রি হয় নির্দিষ্ট কিছু ওষুধের ফার্মেসিতে। জঙ্গীদের পরিচালিত এ রকম ওষুধের দোকান রাজধানীতে অনত্মত শতাধিক। এসব ফার্মেসির ওষুধ ব্যবসার মূলধন দিয়ে থাকে লস্কর ও এদেশীয় জঙ্গী সংগঠনগুলো। পাকিসত্মান থেকে সাধারণ দু'ধরনের এটিভিএন ট্যাবলেট আমদানি করা হয়। ৫ মিলিগ্রামের হলুদ এটিভিএন ট্যাবলেট। আর সাদা রঙের ১০ মিলিগ্রামের এটিভিএন ট্যাবলেট। হলুদ ট্যাবলেট রঙিন পানীয়ের সঙ্গে এবং সাদা ট্যাবলেট সাদা কোমল পানীয় বা শরবতের সঙ্গে মিশিয়ে বাস, ট্রেন বা লঞ্চ বা বিভিন্ন পাবলিক পেস্নসে বিক্রি করা হয়।
No comments