পরিবেশ দূষণের বিরুদ্ধে অভিযান বন্ধ হচ্ছে ॥ পরিচালক প্রত্যাহার- সাফল্য দেখিয়েছে এনফোর্সমেন্ট কার্যক্রম
বন্ধ হয়ে যাচ্ছে পরিবেশ অধিদফতরের অধীনে পরিচালিত এনফোর্সমেন্ট কার্যক্রম। ফলে এর সঙ্গে বন্ধ হয়ে যাবে শিল্প দূষণসহ সকল প্রকার দখল ও দূষণের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযান।
গত চার বছর ধরে পরিবেশ অধিদফতরের এনফোর্স কার্যক্রমের আওতায় পরিবেশ দূষণের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালিত হয়ে আসছে। কিন্তু সম্প্রতি পরিচালক মুনীর চৌধুরীকে বদলির আদেশ দেয়া হয়েছে। পরিবেশ অধিদফতরের একটি সূত্র জানিয়েছে, পরিবেশ অধিদফতর থেকে মুনীর চৌধুরীকে প্রত্যাহার করে নেয়া হলে এনফোর্সমেন্টের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে বন্ধ হয়ে যাবে দখল দূষণের সঙ্গে জড়িত সকল প্রকার অভিযান। জানা গেছে, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে মুনীর চৌধুরী তাঁর নতুন কর্মস্থলে যোগ দেবেন।বিগত কয়েক বছর ধরে পরিবেশ দূষণের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে ব্যাপক সাফল্য দেখিয়েছে পরিবেশ অধিদফতরের এনফোর্সমেন্ট কমিটি। এর প্রধান দায়িত্বে ছিলেন অধিদফতরের পরিচালক মুনীর চৌধুরী। এজন্য সরকারী বেসরকারী প্রভাবশালী মহল তাঁর ওপর দারুণ নাখোশ ছিল। তাঁর নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানে কয়েক শ‘ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান করে ১শ’ কোটি টাকার বেশি জরিমানা করা হয়। দেশের ইতিহাসে পরিবেশ দূষণের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযানের ঘটনা আগে কখনও নেয়া হয়নি। এনফোর্সমেন্টের পক্ষ থেকে দখল দূষণ ও নদী ভরাটের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক অভিযান পরিচালনা করে তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রভাবশালী কোন মহলকেও ছাড় দেয়া হয়নি। এমনকি সরকারী কোন প্রতিষ্ঠান পরিবেশ দূষণ ও দখলের সঙ্গে জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বছরের পর বছর ধরে চলতে থাকা শিল্প দূষণের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর পরিবেশ দূষণের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে অধিদফতরের পক্ষ থেকে গঠন করা হয় এনফোর্সমেন্ট কমিটি। প্রথম থেকেই এর প্রধানের দায়িত্বে ছিলেন অধিদফতরের পরিচালক মুনীর চৌধুরী। গত ৪ বছর ধরে তিনি নিয়মিত দূষণকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেছেন। এমনকি কোন কোন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কয়েক কোটি টাকা জরিমানা করেছেন। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে ডাইং, ওয়াশিং, টেক্সটাইল কারখানা, স্টিল, রি-রোলিং মিল, ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ, সিএনজি স্টেশন, পোল্ট্রি ফিড কারখানা, পুকুর জলাশয় ভরাট, কেমিক্যাল ও রাবার কারখানা। কোন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে গুরুতর পরিবেশ দূষণের অভিযোগ থাকলে তা যাচাইবাছাই করে তাৎক্ষণিকভাবে অভিযান পরিচালনা করা হতো।
পরিবেশ অধিদফতরের অধীনে এনফোর্সমেন্ট কমিটি গঠন করার পর এ কমিটি ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় এ অভিযান পরিচালনা করে। ঢাকা মহানগর, ঢাকা জেলা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী, রংপুর, টাঙ্গাইল, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরগুনা, ঝালকাঠি, কিশোরগঞ্জ, চট্টগ্রাম, সিলেট, ফেনী, ফরিদপুর, মাদারীপুর, নড়াইল, মানিকগঞ্জ, নীলফামারী, হবিগঞ্জ, রাঙ্গামাটি, কক্সবাজার, মৌলভীবাজার জেলায় এ অভিযান চালানো হয়। বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু, শীতলক্ষা নদী দূষণসহ ঢাকা, সাভার, গাজীপুর ও টঙ্গী এলাকায় অবস্থিত একাধিক শিল্প প্রতিষ্ঠানকে এনফোর্সমেন্ট কার্যক্রমের আওতায় জরিমানা করা হয়। এছাড়া নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিনের ব্যবহার, হাসপাতালগুলোতে মেডিক্যাল বর্জ্যরে বিরুদ্ধে এবং বায়ু দূষণের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান চালানো হয়। দেশের বিভিন্ন স্থানে অবৈধ ইটভাঁটির বিরুদ্ধেও একাধিক অভিযান পরিচালনা করে এনফোর্সমেন্ট কমিটি। বিশেষ করে কৃষিজমি নষ্ট করে যেসব ইটভাঁটি তৈরি করা হয় তা অভিযানের মাধ্যমে বন্ধ করে দেয়া হয়। এ অভিযানের ফলে যততত্র ইটভাঁটি স্থাপনও অনেক কমে আসে।
সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী প্রতি জেলায় পরিবেশ আদালত বাস্তবায়ন না হওয়ায় এনফোর্সমেন্টের অধীনে এ কার্যক্রম পরিচালিত হতো। নদীতে বর্জ্য ফেলা, কৃষিজমি ধ্বংস করে ইটভাঁটি তৈরি, নদীতে অবৈধ বাঁধ দিয়ে পানিপ্রবাহ বন্ধ করা, নদী ভরাট, পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করে বহুতল ভবন নির্মাণ, পাহাড় কেটে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটানো, বায়ু দূষণ ঘটিয়ে জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি সাধন, অবৈধ বালি উত্তোলন, অসহনীয় শব্দ দূষণ ঘটিয়ে জন দুর্ভোগ সৃষ্টি করাসহ বিভিন্ন পরিবেশ দূষণের অভিযোগে এসব প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে জরিমানা আদায় করা হয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ অধিদফরের ছাড়পত্র না থাকায় জরিমানা করা হয়।
No comments