তথ্যপ্রযুক্তিতে পিছিয়ে নেই বাংলাদেশ ৪ বছরে ব্যাপক উন্নয়ন- আউটসোর্সিং করে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করছে তরুণ-তরুণীরা by ফিরোজ মান্না
পশ্চিমা বিশ্ব তথ্যপ্রযুক্তিতে অনেক এগিয়ে থাকলেও বাংলাদেশও তথ্যপ্রযুক্তির দিক থেকে খুব বেশি পিছিয়ে নেই। গত চার বছরে তথ্য প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে তরুণ-তরুণীরা জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন করছে।
তারা তৈরি করছে নতুন নতুন সফটওয়্যার। এই সফটওয়্যারগুলো বিদেশে রফতানি হচ্ছে। আউটসোর্সিং করে ছাত্র-ছাত্রীরা প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করছে। তথ্যপ্রযুক্তি মেলায় তরুণ-তরুণীরা নতুন নতুন প্রোগ্রাম নিয়ে আসছে। এটা দেশের জন্য বড় ধরনের উন্নয়ন বলে মনে করছেন তথ্য প্রযুক্তিবিদরা। ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী সাহারা খাতুন জনকণ্ঠকে বলেন, বিগত চার বছরে আমাদের সরকার যে সফলতা অর্জন করেছে তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ভাষণের মাধ্যমে জনগণের সামনে তুলে ধরেছেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে গোটা দেশ ডিজিটালাজেশন করে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তুলবেন। এমন লক্ষ্য নিয়ে শেখ হাসিনার সরকার কাজ করে যাচ্ছে।তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান বলেন, ইন্টারনেটের কল্যাণে নতুন প্রজম্ম এখন এক দেশের নাগরিক নয়। তারা এখন বিশ্ব নাগরিক। বাংলাদেশের ৬ হাজার তরুণ-তরুণী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই সেক্টরে কাজ করছে। দেশেও বহু তরুণ-তরুণী বিশ্বের বিভিন্ন কোম্পানির কাজ করে যাচ্ছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে স্বাধীন মত প্রকাশ করতে পারছে সাধারণ মানুষ। এটা অত্যন্ত শুভ দিক। মধ্যপ্রাচ্যে মানুষের স্বাধীন মত প্রকাশ হয়েছে ইন্টারনেটের কল্যাণেই। গত তিন বছরে দেশ তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে গেছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে গোটা দেশকে শতভাগ নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হয়েছে। এখন দেশের সব প্রান্ত থেকেই মানুষ সহজেই যোগাযোগ করতে পারে।
তথ্যপ্রযুক্তিবিদ মোস্তফা জব্বার বলেন, দেশে তথ্য প্রযুক্তি উন্নয়নে অনেক মেধাবী রয়েছেন। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ সেক্টরটি উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারবে। বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কর্মসূচীর কারণে সেক্টরটি অনেক দূর এগিয়ে গেছে। গ্রামের মানুষও পিছিয়ে থাকবে না। একজন অশিক্ষিত মানুষ মোবাইল চালাতে জানে। আর একজন ‘স্কুল গোয়িং’ বাচ্চাও এসএমএস লিখতে ও পড়তে পারে। এ কারণেই বলা যায়, পশ্চিমাদের সঙ্গে তাল মেলাতে খুব একটা সময় লাগবে না।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, দেশের ৫৬টি জেলার ২৯৬টি উপজেলায় ফাইবার অপটিক কেবল সংযোগ হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি সেবা তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছে দিতে সরকার ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে। সরকারের নেয়া পাবলিক সার্ভিস ডেলিভারি আউটলেট, কাগজবিহীন ভর্তি পরীক্ষা, পিডিবি ও গ্যাসের বিল পেমেন্ট, ডেমরায় কম্পিউটারাইড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের কলসেন্টার, শিক্ষা পদ্ধতিতে আইসিটি, এসএমএসভিত্তিক ভোটকেন্দ্র সংক্রান্ত তথ্য, হজ ব্যবস্থাপনা, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ফল প্রকাশ, ট্রেনের টিকেট কেনা, অনলাইন সার্ভিস ট্র্যাকিং সিস্টেম, অনলাইনে ডেইলি মার্কেট প্রাইজ জানা, চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস অটোমেশন, রাজউকের কম্পিউটারাইজেশন এবং ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম, সরকারী, জাতীয় ওয়েব পোর্টাল, আইন বিষয়ক ওয়েব পোর্টাল, দুর্যোগ পূর্বাভাস, ভোটার ডাটাবেজ, পানি ও সামুদ্রিক সম্পদ পরিকল্পনা, কৃষি সম্পদ পরিকল্পনা, এডুকেশন প্ল্যানিং, বাংলাদেশ ব্যাংক অটোমেশন, সড়ক ও জনপদ পরিকল্পনা অটোমেশন উল্লেখযোগ্য। দেশের ৫টি উপজেলায় কমিউনিটি ই-সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে এবং অন্য উপজেলাগুলোতেও ই- সেন্টার স্থাপন করা হবে।
সূত্র জানিয়েছে, পশ্চিমাদের সঙ্গে তাল মেলাতে তথ্য প্রযুক্তিবিদরা কাজ করে যাচ্ছে। গত চার বছরে তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রে দেশ বহু দূর এগিয়ে গেছে। সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ কর্মসূচী, আর জীবনের প্রয়োজনেই মানুষ নিজ উদ্যোগে তথ্যপ্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের এই মাধ্যমে জীবন-জীবিকার অনেক কিছুই জড়িয়ে আছে। তথ্য প্রযুক্তির কল্যাণে বিশ্ব এখন হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। গ্রামের মানুষের কাছেও দিনরাতের পার্থক্যের দেশ আমেরিকার দূরত্ব নেই। দেশের মানুষ এখন নিজেদের বিশ্ব নাগরিক ভাবতে শুরু করেছে। সীমান্তের কাঁটাতার তাদের আটকে রাখতে পারছে না। তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষ অধিকার আদায় করছে। ইন্টারনেটের কল্যাণে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে স্বৈরশাসকবিরোধী আন্দোলন করে তাদের পতন ঘটিয়েছে।
বিটিআরসি জানিয়েছে, গত তিন বছরে টেলিকম সেক্টরে ২৬ ধরনের লাইসেন্স থেকে ৫১৫টি লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। দেশ যুক্ত হচ্ছে সিমিউই-৫ কেবলের সঙ্গে। দ্বিতীয় কেবলটির সঙ্গে যুক্ত হতে পারলে দেশে নির্বিচ্ছিন্ন ব্যান্ডউইথ থাকবে। এর আগে সিমিউ কোন কারণে একটা কেবল কাটা বা বন্ধ থাকলে অন্য কেবলের মাধ্যমে ব্যাকআপ রাখা যাবে। সব দিক চিন্তা করে মন্ত্রণালয় দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার অনুমোদন দিয়েছে। এতে বাড়তি আরও ১৬০ গিগাবাইট ব্যান্ডউইথ যোগ হবে। বর্তমানে দেশে সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে ৪৪ দশমিক ৬ গিগাবাইট ব্যান্ডউইথ(ব্যান্ডউইথ হচ্ছে ইন্টারনেটের একক) দেশে আসছে। বাড়তি ১৬০ গিগাবাইট যোগ হলে দেশে মোট ব্যান্ডউইথ হবে ২০৪ দশমিক ৬ গিগাবাইট।
জানা গেছে, সাফল্য ও ব্যর্থতা নিয়েই তথ্যপ্রযুক্তি খাতের আলোচিত চার বছর কেটেছে। এই বছরগুলোতে ফ্রিল্যান্সাররা বাংলাদেশকে বিশ্বসেরা তৃতীয় আউটসোর্সিং দেশ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল ও থ্রিজি (তৃতীয় প্রজন্ম) মোবাইল ব্যাপকভাবে চালু হলে তথ্যপ্রযুক্তির আরও বহু গুণ উন্নয়ন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের জন্য দেশে অনেক তথ্যপ্রযুক্তির মেলা হয়েছে। সবচেয়ে বড় সম্মেলন হয়েছে-ই-এশিয়া সম্মেলন। এই সম্মেলনে অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিং কাজ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ‘ওডেস্কের চেয়ারম্যান ম্যাট কুপার এবং কম্পিউটার যন্ত্রাংশ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ইন্টেলের প্রেসিডেন্ট জন ডেভিস অংশ নিয়েছিলেন। বেসরকারী পর্যায়ে বড় সাফল্য হচ্ছে ব্যক্তি পর্যায়ে ফ্রিল্যান্সারদের। তাদের কারণেই ওডেস্কের রেটিংয়ে শীর্ষ তিনে উঠে এসেছে ঢাকা শহর।
No comments