গার্মেন্টকর্মী জুয়েল হত্যা- মামলার অগ্রগতি নেই, তদন্তে পুলিশের গড়িমসি by মোঃ ওমর ফারুক
লাশ উদ্ধারের পর মামলা দায়েরের ৪ মাস ১৩দিন পার হয়ে গেছে। কিন্তু সাভারে গার্মেন্টকর্মী মনিরুল ইসলাম জুয়েল হত্যা মামলার কোন অগ্রগতি হয়নি। হত্যা মামলার কোন সঠিক তথ্যও উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। সবকিছু যেন চলছে ঢিমেতালে।
এভাবে মামলা দায়েরের পরও আসামি গ্রেপ্তার না হওয়াসহ মামলার কোন কুলকিনারা না হওয়ায় প্রায় প্রতিদিনই বেড়ে চলেছে অপহরণ, খুন এবং লাশ গুমের ঘটনা।প্রশাসনের নীরবতা এবং অসহযোগিতায় সাভার এখন অপহরণের নগরীতে পরিণত হয়েছে। সবকিছু জেনেও না জানার ভান করছে পুলিশ এমন অভিযোগ রয়েছে।
অন্যদিকে হত্যা মামলার আসামিরা গ্রেফতার না হওয়ায় এলাকার সাধারণ মানুষসহ ব্যবসায়ী, ছাত্র-ছাত্রী ও আত্বীয়স্বজন সকলেই দিন কাটাচ্ছে অজানা আতঙ্কে। ঘর হতে বের হয়ে আবার ঘরে ফিরতে পারবে কি না সেই সন্দেহই তারা করে বেড়াচ্ছে সাভারবাসীকে।
উল্লেখ্য গত ১৩/০৮/১২ইং তারিখে গার্মেন্টকর্মী মনিরুল ইসলাম জুয়েল তার কর্মস্থল থেকে বের হয়ে আর বাসায় ফেরেনি। অনেক খোঁজাখুঁজির পর সাভারের বিরুলিয়া ব্রিজের পুর্ব পাশের প্রিয়াঙ্কা স্যুটিং জোনের সামনে থেকে নিখোজের ২ দিন পর গার্মেন্টকর্মী মনিরুল ইসলাম জুয়েলের লাশ উদ্ধার করে সাভার মডেল থানা পুলিশ। এ ঘটনায় নিহত জুয়েলের বাবা শামসুল হক বাদী হয়ে সাভার মডেল থানায় ১৫/০৮/১২ ইং তারিখে হত্যা মামলা (নং-৪৮) দায়ের করেন।
পুলিশ জানায়, তাকে গুলি করে হত্যার পর লাশ গুম করার জন্য মৃতদেহটি ফেলে রেখে গেছে দুর্বৃত্তরা।
জুয়েল আশুলিয়ার কাঠগড়া দূর্গাপুর এলাকার আঃ সোবাহানের বাসায় পরিবার নিয়ে ভাড়া থাকতো। সেখান থেকে পশ্চিম গাজীপুরায় পদ্মা বায়িং হাউজে প্রোডাকশন কো-অর্ডিনেটর পদে চাকরির সুবাদে প্রতিদিন যাতায়াত করতেন।
হত্যা মামলা দায়েরের ১ মাস পর মোঃ ফারুক (৩০) নামে এক আসামিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ফারুক কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার থানার পদ্মাকোট এলাকার আব্দুল কাদেরের ছেলে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আশুলিয়ার কাঠগড়া দুর্গাপুর এলাকার হাজেরা বেগমের ভাড়াটে বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ফারুককে আটক করে হত্যা মামলার আসামি হিসেবে আদালতে পাঠানো হয়। তবে আদালত থেকে আসামি রিমান্ডে আনার পরও হত্যাকাণ্ডের কোন তথ্য উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। এরপর নিহত জুয়েলের স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন, অফিসিয়াল বস রঞ্জু আহমেদ ও নুরআলমকে আটক করলেও কোন তথ্য উদঘাটন করতে না পেরে তাদেরকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।
এ বিষয়ে মামলার বাদী শামসুল হক বাংলানিউজকে জানান, পুলিশ আমাকে সহযোগিতা করছেনা। আমি নিজের টাকা খরচ করে প্রাইভেটকার ভাড়া করি। এরপর তাদের সঙ্গে থেকে পশ্চিম গাজীপুরার পদ্মা বায়িং হাউজ থেকে সন্দেহভাজন আসামি নুরআলমকে ধরিয়ে দেই। পরে নুরালমের কথামত রঞ্জু আহমেদ নামে আরও ১ জনকে আটক করে পুলিশ। তবে থানায় আনার পর মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে রঞ্জু আহমেদকে ছেড়ে দেয় এবং নুরআলমকে আদালতে পাঠানো হয় বলে অভিযোগ করেছেন শামসুল হক।
তিনি আরও বলেন, মামলার করার কয়েকদিনে আমি বুঝতে পেরেছি নুরআলম এবং রঞ্জু আহমেদ জুয়েল হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, রঞ্জুর সঙ্গে জুয়েলের ব্যবসায়িক বিরোধ হলে রঞ্জু জুয়েলকে হুমকি দিয়ে চাকরি ছেড়ে চলে যেতে বলে। বিষয়টি জুয়েল মারা যাওয়ার দেড় মাস আগে নুরআলমের কাছে জানিয়েছিল বলে স্বীকার করেছে নুরআলম। তাই নুরআলমের কথা অনুযায়ী বোঝা যায় রঞ্জু আহমেদ জুয়েলকে হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত।
তিনি অভিযোগ করেন, পুলিশের চাহিদা অনুযায়ী টাকা দেওয়ার পরও তারা আমাকে সহযোগিতা করছেনা। উল্টো মোটা অঙ্কের টাকা খেয়ে আসামি রঞ্জুকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। তাই পুলিশের দ্বারা সুষ্ঠ বিচার পাব না মনে হওয়ায় এ বিষয়ে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এ ব্যাপারে মামলা তদন্ত কর্মকর্তা সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শহিদুল ইসলাম সর্দ্দারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলানিউজকে জানান, নিহতের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের কল লিস্ট উঠানো হয়েছে। ময়না তদন্তের রিপোর্টও আমাদের হাতে এসে পৌঁছেছে। এঘটনায় সন্দেহজনকভাবে কয়েকজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে। তবে মামলা তদন্তধীন উল্লেখ করে মামলার কোন অগ্রগতি নেই বলেও স্বীকার করেন ওই তদন্ত কর্মকর্তা।
টাকার বিনিময়ে রঞ্জু আহমেদকে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এই প্রতিবেদককে বিষয়টি নিয়ে সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি)সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দিয়ে বলেন, রঞ্জুকে আমিই ধরেছিলাম, ওসি সাহেবের নির্দেশে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, জুয়েল এবং তার বস রঞ্জু আহমেদ দু‘জন মিলে কারখানার জুট কাপড়ের ব্যবসা করতো বলে জানা গেছে। বিষয়টি নিয়ে তদের মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরে ঝামেলা চলায় রঞ্জু আহমেদ জুয়েলকে চাকরি ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য হুমকি দেয়। বিষয়টি জুয়েল নূরআলমকে জানালে নুরআলম জুয়েলের কাছে ১ লাখ টাকা চেয়ে বলেছিল আমাকে টাকা দিলে তোর কিছু হবেনা। তবে এই কারণে হত্যাকাণ্ড নাও হতে পারে। রঞ্জু যে জুয়েলকে মার্ডার করেছে তারও কোন প্রমাণ নেই। তাই কারও মৌখিক কথার ভিত্তিতে কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়না বলেও জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।
এ ব্যাপারে সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, কারখানার পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠায় পরিস্থিতি সামাল দিতে গাজীপুরের ওসির সঙ্গে পরমার্শক্রমে রঞ্জু আহমেদকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। যদি মামলার বাদী তার বিরুদ্ধে কোন লিখিত অভিযোগ কিংবা সাধারন ডায়েরি করে তাহলে তাকে পুনরায় গ্রেপ্তার করে আনা হবে। মামলার বিষয়ে আমাদের তদন্ত চলছে। আসামিও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
No comments