সফরসঙ্গী স্ত্রী বা স্বামীও একই ভাতা পাবেন- মন্ত্রী-সাংসদদের ভ্রমণ ভাতা ৪০% বাড়ল by ফখরুল ইসলাম

জাতীয় সংসদের স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রী, সাংসদ, সচিবসহ শীর্ষস্থানীয় সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণের প্রতিদিনের ভাতা শ্রেণীভেদে সর্বোচ্চ ১৬ হাজার (১৯৬ ডলার) থেকে সর্বনিম্ন সাত হাজার (৮১ ডলার) টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। বৃদ্ধির হার ৪০ শতাংশ।


একই সঙ্গে বিশেষ ব্যক্তিদের পকেট ভাতাও দুই হাজার টাকা বাড়ানো হয়েছে। রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে বিদেশে ভ্রমণকালে তাঁরা যে হারে ভাতা পাবেন, তাঁদের সফরসঙ্গী স্ত্রী বা স্বামীকেও একই হারে ভাতা দেওয়া হবে।
ভ্রমণভাতা ও সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে মার্কিন ডলারে। ব্যয় বাড়ানোর কারণ হিসেবে বিশ্বব্যাপী জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ার যুক্তি দেওয়া হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যয় নিয়ন্ত্রণ অনুবিভাগ গতকাল রোববার এ বিষয়ে গ্যাজেট প্রকাশ করেছে। এই সিদ্ধান্ত গত ১ অক্টোবর থেকে কার্যকর করা হয়েছে।
জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞা প্রথম আলোকে বলেন, ‘জীবনযাত্রার ব্যয় ও বিদেশে হোটেল ভাড়া অনেক বেড়েছে। তাই এই বৃদ্ধি যৌক্তিক।’
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জালাল আহমেদ বলেন, আগের প্রজ্ঞাপনটি ২০০১ সালের। বাস্তবতা বিবেচনা করেই এ ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। তিনি বলেন, ১১ বছরের মাথায় বিদেশ ভ্রমণের ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হলো।
তবে সরকারি প্রজ্ঞাপনে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সতর্ক করে দিয়ে বলা হয়েছে, সরকারি খরচে বিদেশে ভ্রমণ-সংক্রান্ত বিষয়ে অনেক ক্ষেত্রেই অনিয়ম দেখা যায়। সবচেয়ে বেশি অনিয়ম হয় যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া বিদেশ ভ্রমণের প্রস্তাব উপস্থাপনের ক্ষেত্রে। বিদেশে কাজের বাইরে অন্য কোথাও বেড়াতে যেতে চাইলে সরকারের অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু অনেকেই তা অনুসরণ করেন না। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ বা সংস্থার কাছ থেকে অনুমোদন নেওয়ার সময় বরাদ্দকৃত অর্থ ও প্রকৃত ব্যয়ের পরিমাণ এবং নির্ধারিত সফরের ব্যয় নির্বাহের জন্য প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রার পরিমাণ উল্লেখ করার ক্ষেত্রেও নিয়ম মেনে চলেন না অনেকে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও স্পিকার থেকে নিচের দিকে তিন বাহিনীর প্রধান ও মুখ্য সচিব পর্যন্ত সবাই সরকারি খরচে বিমানের প্রথম শ্রেণীতে ভ্রমণ করবেন।
সাংসদ, অ্যাটর্নি জেনারেল, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, বিভিন্ন কমিশন ও সংস্থার চেয়ারম্যান, সিটি করপোরেশনের মেয়র, তিন বাহিনীতে মেজর জেনারেলের পদমর্যাদার ব্যক্তি, কৃষি ব্যাংকসহ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন চার ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকেরা বিজনেস শ্রেণীতে ভ্রমণ করতে পারবেন।
বিশেষ ও সাধারণ পর্যায়ভুক্ত ব্যক্তি: পদমর্যাদা অনুযায়ী ভ্রমণভাতা নির্ধারণে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ‘বিশেষ পর্যায়’ ও ‘সাধারণ পর্যায়’ নামে দুটি শ্রেণী করা হয়েছে। আর বিশ্বের দেশগুলোকে ভাগ করা হয়েছে তিনটি শ্রেণীতে: গ্রুপ-১, গ্রুপ-২ ও গ্রুপ-৩।
বিশেষ পর্যায়ভুক্ত ব্যক্তিদের দুটি ভাগ করা হয়েছে। এক ভাগে রয়েছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ও প্রধান বিচারপতি এবং কেবিনেট মন্ত্রী, ডেপুটি স্পিকার ও কেবিনেট মন্ত্রীর পদমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি।
অন্য ভাগে রয়েছেন প্রতিমন্ত্রী, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনার, উপমন্ত্রী ও অনুরূপ পদমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, মুখ্য সচিব, তিন বাহিনীর প্রধান, সাংসদ, রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনার।
সাধারণ পর্যায়ভুক্ত ব্যক্তিদের চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম ভাগে থাকবেন তাঁরা, যাঁদের মূল বেতন ৩৫ হাজার ৬০০ টাকার বেশি। ২০ হাজার ৩৭০ টাকা থেকে ৩৫ হাজার ৬০০ টাকা, নয় হাজার ৭৪৫ টাকা থেকে ২১ হাজার ৬০০ টাকা এবং নয় হাজার ৭৪৫ টাকার কম মূল বেতনভুক্তরা পর্যায়ক্রমে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ ভাগে পড়বেন। সরকারি প্রতিনিধিদলের বেসরকারি সদস্যরাও সাধারণ পর্যায়ে থাকবেন।
দেশের শ্রেণী: গ্রুপ ১-এর মধ্যে ৩০টি দেশের নাম নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। এগুলো হচ্ছে: জাপান, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, হংকং, বাহরাইন, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, ইরান, কুয়েত, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, মেক্সিকো, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, ইতালি, সুইডেন, জার্মানি, গ্রিস, নেদারল্যান্ড, পর্তুগাল, স্পেন ও তুরস্ক। এ ছাড়া রয়েছে ইউরোপ, ওশেনিয়া, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার অন্যান্য দেশ।
গ্রুপ ২-এ রয়েছে: ভারত, পাকিস্তান, মিয়ানমার, মালদ্বীপ, উজবেকিস্তান, জর্ডান, ইরাক, লেবানন,ফিলিপাইন,থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, কেনিয়া, মরিশাস, সুদান, সিয়েরা লিয়ন, দক্ষিণ আফ্রিকা, মিসর, লিবিয়া, মরক্কো এবং আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশ।
গ্রুপ ৩-এ রয়েছে: নেপাল, ভিয়েতনাম, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান এবং এশিয়ার অন্যান্য দেশ।
কে, কত পাবেন: স্পিকার ও প্রধান বিচারপতি গ্রুপ-১ ভুক্ত দেশের ক্ষেত্রে হোটেল ভাড়া ও নগদ ভাতা মিলিয়ে পাবেন দৈনিক ৬৮৭ ডলার। আগে এই ভাতার পরিমাণ ছিল ৪৯১ ডলার। মন্ত্রীরা আগের ৩৯১ ডলারের জায়গায় পাবেন ৫৪৭ ডলার। গ্রুপ-৩ ভুক্ত দেশের ক্ষেত্রে তাঁরা পাবেন ১৮০ থেকে ২৮৩ ডলার। আগে ছিল ১৩১ থেকে ২০২ ডলার।
তবে কোনো দেশে কারও অবস্থান যদি ২০ রাতের বেশি হয়, পরবর্তী দিনগুলোতে তিনি দৈনিক ভাতা ১০ শতাংশ হারে কম পাবেন। ৪০ রাতের বেশি হলে কম পাবেন ১৫ শতাংশ হারে।
এই ভাতা বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আকবর আলি খান প্রথম আলোকে বলেন, কোন দেশের মূল্যস্ফীতি কত বেড়েছে, তা তাঁর জানা নেই। তাই কোনো মন্তব্য করতে পারছেন না।

No comments

Powered by Blogger.