চরাচর-চা শ্রমিকের বিয়ে by বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন
কত জাতির বাস রে ভাই কত জাতির বাস/শত বছর গত হইল, তবু রইলাম খাস। আক্ষেপের কথাগুলো এ দেশেরই কিছু মানুষের। প্রায় ১৫০ বছর ধরে তারা এই ভূখণ্ডে বাস করেও নিজেদের ভাবে পরবাসীর মতো।
তাদের জীবনধারণ, উৎসব-উল্লাসও মূলস্রোতের মানুষের সঙ্গে কিছুটা আলাদা। তারা চা শ্রমিক। কত জাতির মানুষ ওরা!
মুণ্ডা, সাঁওতাল, কাহার, গোয়ালা, খরিয়া, হাজরা, তাঁতি, রবিদাস, বাউরি, কৈরি, বুরার্জি, নায়েক, কন্দ, অমলিক প্রভৃতি জাতিগোষ্ঠী। ধারণা করা হয়, বর্তমানে বাংলাদেশের ১৬০টি চা বাগানে জনসংখ্যা প্রায় ১০ লাখের কাছাকাছি। চা শ্রমিকদের প্রায় সবাই সনাতন ধর্মের অনুসারী। কয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া তাদের আচার-সংস্কার অনেকটাই পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে। বিয়ের রীতিনীতি তাই সনাতন ধর্মের মতো হওয়ার কথা। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সাধারণ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিয়ের মতো নয় তাদেরগুলো।
চা শ্রমিকদের মধ্যে বেশির ভাগই স্বজাতির মেয়ের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে লক্ষ করা যায়। তাদের সমাজে বিয়ে অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা ও নৃত্যের আয়োজন করা হয়। তাদের বিবাহ অনুষ্ঠানে ঝুমুর নাচ, কাদাখেলা এবং রংখেলা উল্লেখযোগ্য। তা ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে বিয়ে উপলক্ষে টিভি, ভিসিআর কিংবা হিন্দি ছবি দেখেও আনন্দ করা হয়।
সাঁওতাল চা শ্রমিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে স্বগোত্রীয় বিবাহ নিষিদ্ধ হলেও মাতৃগোত্রীয় বিবাহপ্রথা প্রচলিত। এ সমাজের বিধবাকে বিবাহ করা চলে। সাঁওতাল মেয়েরা একসঙ্গে স্বামীর অন্য ভাইদের বিয়ে করতে পারে। তবে আধুনিক সাঁওতাল সমাজে এ প্রথা বিলুপ্তির পথে। মুণ্ডা মেয়েরা খরিয়া ছেলেদের বিয়ে করতে পারে। খরিয়া সমাজে বিধবা বিবাহ প্রচলিত। খরিয়া বিধবা মেয়েরা মৃত স্বামীর ছোট ভাইকে বিয়ে করে সংসার করতে পারে। খরিয়াদের স্বগোত্র বিবাহ নিষিদ্ধ। তাদের সমাজে মাঘ মাসে বিবাহ প্রশস্ত এবং মেয়েকে মূল্য হিসেবে অর্থ দেওয়ার বিধান রয়েছে। ঘাসি চা শ্রমিক উপজাতির মধ্যে বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ ও বিধবা বিবাহের প্রথা প্রচলন রয়েছে।
গন্দ বা রাজগন্দ চা শ্রমিক সমাজে স্বগোত্র বিবাহ নিষিদ্ধ, তবে বিধবা বিবাহ প্রচলিত। তাদের সমাজে বোনের ছেলের সঙ্গে ভাইয়ের মেয়ে এবং ভাইয়ের মেয়ের সঙ্গে বোনের ছেলের বিবাহ প্রচলিত। যদি কোনো শ্রমিক অপর কোনো একজন মহিলা শ্রমিককে বিয়ে করতে চায়, তবে সে মহিলাকে তার বাড়িতে নিয়ে রাখতে পারে- পরবর্তী সময়ে তাকে বিয়ে করবে এই শর্তে। মা-বাবার বিয়ে হয়নি অথচ তাদের ছেলেমেয়ে রয়েছে একাধিক। তাদের অবিবাহিত দাম্পত্য জীবনে কোনো সমস্যা দেখা দেয় তখনই, যখন বিয়ের আগেই তাদের কোনো মেয়েসন্তান জন্ম নেয়। মেয়েসন্তানটির বিয়ের বয়স হলে মা-বাবার বিয়ে না দিয়ে মেয়ের বিয়ে হবে না। এ ক্ষেত্রে মেয়ের বিয়ের আগেই তার মা-বাবার বিয়ের পর্বটি সমাপ্ত করতে হয়।
সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমী একটি বিষয় হলো নাইডু সমাজ। 'ভাগ্নি'কে বিয়ে করার প্রথা তাদের চালু রয়েছে। চা শ্রমিক জনগোষ্ঠী পুরুষরা আপন ভাগ্নিকে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করতে পারে। এ অদ্ভুত বিষয়টি অবশ্য অন্য কোনো সমাজে চালু নেই।
বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন
মুণ্ডা, সাঁওতাল, কাহার, গোয়ালা, খরিয়া, হাজরা, তাঁতি, রবিদাস, বাউরি, কৈরি, বুরার্জি, নায়েক, কন্দ, অমলিক প্রভৃতি জাতিগোষ্ঠী। ধারণা করা হয়, বর্তমানে বাংলাদেশের ১৬০টি চা বাগানে জনসংখ্যা প্রায় ১০ লাখের কাছাকাছি। চা শ্রমিকদের প্রায় সবাই সনাতন ধর্মের অনুসারী। কয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া তাদের আচার-সংস্কার অনেকটাই পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে। বিয়ের রীতিনীতি তাই সনাতন ধর্মের মতো হওয়ার কথা। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সাধারণ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিয়ের মতো নয় তাদেরগুলো।
চা শ্রমিকদের মধ্যে বেশির ভাগই স্বজাতির মেয়ের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে লক্ষ করা যায়। তাদের সমাজে বিয়ে অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা ও নৃত্যের আয়োজন করা হয়। তাদের বিবাহ অনুষ্ঠানে ঝুমুর নাচ, কাদাখেলা এবং রংখেলা উল্লেখযোগ্য। তা ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে বিয়ে উপলক্ষে টিভি, ভিসিআর কিংবা হিন্দি ছবি দেখেও আনন্দ করা হয়।
সাঁওতাল চা শ্রমিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে স্বগোত্রীয় বিবাহ নিষিদ্ধ হলেও মাতৃগোত্রীয় বিবাহপ্রথা প্রচলিত। এ সমাজের বিধবাকে বিবাহ করা চলে। সাঁওতাল মেয়েরা একসঙ্গে স্বামীর অন্য ভাইদের বিয়ে করতে পারে। তবে আধুনিক সাঁওতাল সমাজে এ প্রথা বিলুপ্তির পথে। মুণ্ডা মেয়েরা খরিয়া ছেলেদের বিয়ে করতে পারে। খরিয়া সমাজে বিধবা বিবাহ প্রচলিত। খরিয়া বিধবা মেয়েরা মৃত স্বামীর ছোট ভাইকে বিয়ে করে সংসার করতে পারে। খরিয়াদের স্বগোত্র বিবাহ নিষিদ্ধ। তাদের সমাজে মাঘ মাসে বিবাহ প্রশস্ত এবং মেয়েকে মূল্য হিসেবে অর্থ দেওয়ার বিধান রয়েছে। ঘাসি চা শ্রমিক উপজাতির মধ্যে বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ ও বিধবা বিবাহের প্রথা প্রচলন রয়েছে।
গন্দ বা রাজগন্দ চা শ্রমিক সমাজে স্বগোত্র বিবাহ নিষিদ্ধ, তবে বিধবা বিবাহ প্রচলিত। তাদের সমাজে বোনের ছেলের সঙ্গে ভাইয়ের মেয়ে এবং ভাইয়ের মেয়ের সঙ্গে বোনের ছেলের বিবাহ প্রচলিত। যদি কোনো শ্রমিক অপর কোনো একজন মহিলা শ্রমিককে বিয়ে করতে চায়, তবে সে মহিলাকে তার বাড়িতে নিয়ে রাখতে পারে- পরবর্তী সময়ে তাকে বিয়ে করবে এই শর্তে। মা-বাবার বিয়ে হয়নি অথচ তাদের ছেলেমেয়ে রয়েছে একাধিক। তাদের অবিবাহিত দাম্পত্য জীবনে কোনো সমস্যা দেখা দেয় তখনই, যখন বিয়ের আগেই তাদের কোনো মেয়েসন্তান জন্ম নেয়। মেয়েসন্তানটির বিয়ের বয়স হলে মা-বাবার বিয়ে না দিয়ে মেয়ের বিয়ে হবে না। এ ক্ষেত্রে মেয়ের বিয়ের আগেই তার মা-বাবার বিয়ের পর্বটি সমাপ্ত করতে হয়।
সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমী একটি বিষয় হলো নাইডু সমাজ। 'ভাগ্নি'কে বিয়ে করার প্রথা তাদের চালু রয়েছে। চা শ্রমিক জনগোষ্ঠী পুরুষরা আপন ভাগ্নিকে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করতে পারে। এ অদ্ভুত বিষয়টি অবশ্য অন্য কোনো সমাজে চালু নেই।
বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন
No comments