মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন- দুই শিবিরই স্নায়ুচাপে

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল মঙ্গলবার। বিশ্বের পরাক্রমশালী রাষ্ট্রনায়ক নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে কোটি কোটি মানুষ। তবে নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান—কোনো শিবিরই নিশ্চিত হতে পারছে না।


ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার দ্বিতীয় মেয়াদে জয় নিয়ে সংশয় ছিল প্রচারণার শুরু থেকেই। রিপাবলিকান প্রার্থী মিট রমনি যে নিশ্চিতভাবে জিতবেন, তাও জোর দিয়ে বলতে পারছেন না তাঁর ঘোর সমর্থকেরাও।
সর্বশেষ জনমত জরিপ অনুযায়ী, দুই প্রার্থীই এখন সমান—৪৮ শতাংশ ভোটারের সমর্থন পাচ্ছেন। তাই দোদুল্যমান ভোটারদের দিকেই চেয়ে থাকতে হচ্ছে তাঁদের। এই দোদুল্যমান ভোটারদের কাছে টানতে শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় এক অঙ্গরাজ্য থেকে আরেক অঙ্গরাজ্যে ছুটে বেড়াচ্ছেন দুই প্রার্থী। এসব অঙ্গরাজ্যে বিভিন্ন জনমত জরিপে ওবামা প্রতিদ্বন্দ্বী রমনির চেয়ে সামান্য এগিয়ে আছেন।
ওবামা গত শনিবার দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য ওহাইও, উইসকনসিন, আইওয়া ও ভার্জিনিয়ায় প্রচারণা চালান। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী রমনি একই দিনে প্রচারণা চালান নিউ হ্যাম্পশায়ার, কলোরাডো ও আইওয়া অঙ্গরাজ্যে।
ওহাইও অঙ্গরাজ্যে ওবামা সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, ‘গত চার বছর আমরা সত্যিকার অর্থেই উন্নতি করতে পেরেছি। এ ধারা অব্যাহত রাখতে লড়াই চালিয়ে যেতে চাই।’ শনিবার ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যে ওবামার প্রচারণায় যোগ দেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন। একের পর এক সভা-সমাবেশে বক্তৃতা করায় গলা ভেঙে গেছে ক্লিনটনের।
অন্যদিকে রমনি নিউ হ্যাম্পশায়ারের সমাবেশে ভোটারদের সুন্দর আগামীর প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি বলেন, ‘দেশের জন্য ভালোবেসে ভোট দিন। যুক্তরাষ্ট্রকে আরও এগিয়ে নেওয়ার সময় এটা।’
যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে হলে মোট ৫৩৮টি ইলেকটোরাল কলেজের মধ্যে কমপক্ষে ২৭০টি জিততে হয়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ওবামা পেয়েছিলেন ৩৬৫টি ইলেকটোরাল ভোট। আর ‘পপুলার ভোট’ পেয়েছিলেন ৫২ দশমিক ৯ শতাংশ। দেশের সাধারণ নাগরিকদের ভোটই পপুলার ভোট। তবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার জন্য পপুলার ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।
এবার বিভিন্ন জরিপ থেকে দেখা যায়, ২০০৮ সালে ওবামাকে সমর্থন করেছিলেন—এমন নির্দলীয় ও দোদুল্যমান ভোটারদের একটি অংশ এখন রিপাবলিকানদের দিকে ঝুঁকেছে। তবে ঘূর্ণিঝড় স্যান্ডি ওবামা যেভাবে মোকাবিলা করেছেন, তাতে উদ্দীপ্ত অনেক মার্কিন নাগরিক।
অন্যদিকে রমনির সমস্যাটা হচ্ছে, তিনি কখনোই রক্ষণশীল রিপাবলিকানদের পছন্দের নেতা নন। তাই রমনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করবেন—এমন কথা জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না।
সাধারণ মার্কিনদের মতে, নির্বাচনের সময় রক্ষণশীল সাজার চেষ্টা করলেও রমনি আসলে রক্ষণশীল নন। ওবামা-বিরোধিতাকারীদের সমর্থন নিয়ে কঠোর প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলা রমনি গভর্নর হিসেবে অনেকটা উদারনৈতিক ছিলেন। তবে রমনির অনেক সমর্থকের অভিযোগ, রক্ষণশীলদের চাপে ব্যক্তি রমনি এখন আর প্রকৃত অর্থে উদারনৈতিক সেই রমনি নেই। বিশ্লেষকদের মতে, রমনি নির্বাচিত হলে পরিস্থিতি হবে ভিন্ন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় রমনিকে ঘন ঘন ডান দিকে তাকাতে হবে। তখন চরম ডান রক্ষণশীলেরা নতুন কোনো বিষয় তাঁর ঘাড়ে চাপান কি না, তা নিয়ে সার্বক্ষণিক উদ্বিগ্ন থাকতে হবে রমনিকে।

No comments

Powered by Blogger.