ন্যায়বিচার নিশ্চিত করাই অগ্রাধিকার হোক- চাঞ্চল্যকর মামলার তদন্ত

চাঞ্চল্যকর ৩২টি হত্যা মামলার তদন্তকাজ ত্বরান্বিত করে এক মাসের মধ্যে অগ্রগতি জানাতে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে—এই সংবাদ থেকে মনে হয় গুরুতর অপরাধের বিচার-প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার ব্যাপারে সরকার তাগিদ বোধ করছে।


তা যদি হয়, তা হলে এটি ভালো খবর, কেননা অপরাধের বিচার বিলম্বিত হলে সমাজে বিচারহীনতার যে পরিবেশ সৃষ্টি হয়, তার ফলে অপরাধ প্রবণতা আরও বৃদ্ধি পায়।
দেশে মামলার সংখ্যাধিক্য পাহাড়ের মতো বিশাল; আদালতে মামলাজটও বিরাট সমস্যা। এমন পরিস্থিতিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘চাঞ্চল্যকর মামলার তদারকি সেল’ নামে প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে অন্তত কিছু মামলার তদন্তকাজ ত্বরান্বিত করার উদ্যোগ বাস্তবিক সদিচ্ছার পরিচায়ক। কিন্তু এই সদিচ্ছার বাস্তবায়ন দেখা যায় কদাচিৎ। আবার দৃশ্যমান সদিচ্ছার পাশাপাশি অদৃশ্য অসদুদ্দেশ্যও যে কাজ করে না, তা-ও নিশ্চিত করে বলা যায় না। পুলিশ বিভাগের মধ্যে ‘জজ মিয়া সিনড্রোম’ প্রকট হয়ে উঠেছে এমন অভিযোগ শোনা যায়। সাম্প্রতিক কালের চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলাগুলোর অন্যতম সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত সম্পর্কে জনমনে জল্পনা-কল্পনার শাখা-প্রশাখা বিস্তৃতির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে তদন্তকারী কর্তৃপক্ষের কারণেই। খোদ সাগর-রুনির পরিবারের পক্ষ থেকেই তদন্ত-প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। শ্রমিকনেতা আমিনুল ইসলাম হত্যারহস্য বিরাট রহস্যই রয়ে গেছে; কিন্তু এটা নিয়েও জল্পনা-কল্পনা আছে। এই হত্যাকাণ্ডটি বহির্বিশ্বে, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের ভাবমূর্তির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হয়েছে। কিন্তু সাগর-রুনি বা আমিনুলের হত্যার ঘটনায় বিচার-প্রক্রিয়া প্রত্যাশিত গতিতে সঠিকভাবে এগোয়নি।
গত শনিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চাঞ্চল্যকর মামলার তদারকি সেলের বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যে ৩২টি মামলার তদন্তকাজের অগ্রগতি এক মাসের মধ্যে জানানোর জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর কয়েকটি নিশ্চয়ই বেশ চাঞ্চল্যকর, এতে সন্দেহ নেই। যেসব হত্যাকাণ্ড সমাজে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে, সেগুলোর তদন্তকাজ অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এগিয়ে নেওয়ার প্রয়াসের কারণ সম্ভবত এই যে, এর দ্বারা সরকার নিজের ভাবমূর্তি কিছুটা হলেও উন্নত করতে চায়।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এসব মামলার তদন্ত দ্রুতগতিতে সম্পন্ন করার নির্দেশ পালন করতে গিয়ে সিআইডি সঠিক ও ন্যায়বিচারের পথেই থাকবে তো? হত্যারহস্য উদ্ঘাটন করা যাচ্ছে না বলে ফের একজন জজ মিয়া ধরে এনে বলির পাঁঠা বানানো হয় কি না? অথবা, যেসব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা তাদের ‘সোর্স’দের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ আছে, সেগুলোকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা হবে কি না? মোদ্দা প্রশ্ন, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করাই এ ক্ষেত্রে সরকারের একমাত্র অগ্রাধিকার কি না?
তা যদি হয়, তা হলে এই মামলাগুলোর তদন্তকাজ ও বিচার-প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করে প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি কার্যকর করার মধ্য দিয়ে আমাদের আইন প্রয়োগ ব্যবস্থার কার্যকারিতা ও সুস্থতার দৃষ্টান্ত স্থাপিত হবে। সমাজে অপরাধ প্রবণতা দমনে সেটার ইতিবাচক প্রভাব হবে বিরাট।

No comments

Powered by Blogger.