মার্কিন নির্বাচনে চরমপন্থার ঠাঁই নেই by টমাস এল ফ্রিডম্যান
মঙ্গলবারের নির্বাচন নিয়ে আগাম মন্তব্য করার জন্য দুটি বিষয়ের অবতারণা করা যায়। এর একটি হচ্ছে, আমেরিকার বৃহত্তম ভোটব্লক_ মধ্যডান অথবা মধ্যবাম বিজয়ী হবে; অন্যটি হচ্ছে, নির্র্বাচনের ফল ঘোষণার পর থেকে রিপাবলিকান পার্টির মধ্যে বড়সড় গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে আর ডেমোক্রেটিক পার্টিও ছোটখাটো গৃহবিবাদের সম্মুখীন হবে।
এ ধরনের পরিস্থিতি এড়ানোর জন্যই এই দুই দল মধ্যবাম অথবা মধ্যডানপন্থাকে বরণ করে নিতে বাধ্য। ইতিমধ্যে এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, এবারের নির্বাচন মধ্যডান এবং মধ্যবাম প্রভাবিত, চরমপন্থা প্রভাবিত নয়। মঙ্গলবারের নির্বাচনে যদি মিট রমনি বিজয়ী হন তাহলে ধরে নিতে হবে যে, তিনি টি-পার্টি নির্দেশিত চরম দক্ষিণপন্থি অবস্থান থেকে সরে এসে মধ্যডানে অবস্থান নেওয়ার কারণেই সেটা ঘটে থাকবে। ওবামা যদিও অনেক আগে থেকেই সিম্পসন-বোয়েলস ঘাটতি হ্রাস পরিকল্পনা অনুযায়ী মধ্যবামপন্থায় ফিরেছেন এবং এর সুফলও পাচ্ছেন, রমনি কিন্তু মধ্য অবস্থান বিলম্বে গ্রহণ করার কারণে নিজের মধ্যডান পরিচিতিকে পুরোপুরি বিশ্বাসযোগ্য করতে হিমশিম খাচ্ছেন।
আসলে দেশের মানুষের মধ্যেই এখন মধ্যপন্থা ঝোঁক প্রবল। মানুষ মনে করছে, এভাবে মধ্যপন্থা গ্রহণ করলে দেশে সত্যিকারের উন্নতি সম্ভব। এ কারণে মধ্যপন্থা এবারের নির্বাচনে প্রধান প্রবণতা হিসেবে দেখা দিয়েছে। এই চিন্তাধারার মধ্যে রয়েছে প্রতিরক্ষা ব্যয়ের রাশ টেনে ধরা, কর বৃদ্ধি করা, অবকাঠামোতে বিনিয়োগ করা, শিক্ষা ও গবেষণা এবং ইনস্টিটিউট ট্যাক্স সংস্কার করা, যা এন্টারপ্রিনিয়ারশিপকে বৃদ্ধি করবে। এসব কিছু করতে পারলে দেশের অর্থনীতি পুনরায় ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। অভিবাসন সংস্কারের বিষয়টিও একই সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে থাকছে। আমাদের নতুন জ্বালানি গ্যাস উত্তোলন ও ব্যবহার করার বিষয়।
রমনি যদি বিজয়ী হন তাহলে ভাবতে হবে যে, মানুষ মনে করেছে যে, রমনির পক্ষে এসব কাজ সুচারুরূপে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। তিনি তার চরম দক্ষিণপন্থি অবস্থান ত্যাগ করার যে উদ্যোগ এক মাস আগে নিয়েছিলেন তার প্রতি মানুষের বিশ্বাস জন্মেছে। তিনি রিপাবলিকান দলকে তার নবলব্ধ মধ্যপন্থা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করতে পারবেন। আর ওবামা জিতলে বুঝতে হবে যে, মধ্যবাম এবং মধ্যডানপন্থার মধ্যে এই প্রতীতি জন্মেছে যে, তিনি মধ্যপন্থাকেই তার সার করে দেশ পরিচালনা করতে চেষ্টা করে আসছিলেন। আসলে রিপাবলিকান দক্ষিণপন্থিরাই তাকে নানাভাবে বাধাগ্রস্ত করে কাজ করতে দেয়নি। তাই ওবামাকে তার কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য তাদের পক্ষ থেকে আরও সময় দেওয়া দরকার।
আসলে এ ধরনের আচরণের ফল ভালো হয় না। রমনি যদি বিজয়ী হন তাহলে একইভাবে ডেমোক্র্যাটরা তাকে পদে পদে তার কর্মসূচি বাস্তবায়নের পথে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। এখন যেমন ডেমোক্র্যাটরা বলছেন, রিপাবলিকানরা ওবামার অর্থনৈতিক কর্মসূচিকে জিম্মি করে ফেলেছিল। এ কারণে ওবামা তার কাঙ্ক্ষিত কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে পারেননি। ভবিষ্যতে রমনি বিজয়ী হলে একই অভিযোগ ডেমোক্র্যাটদের বিরুদ্ধেও উঠতে পারে। এ ধরনের দোষারোপের কারণে আমরা কোনো কিছুই সুচারুরূপে করতে পারব না। তবে আমার যেটা মনে হয় সেটা হলো, ডেমোক্র্যাটরা যতটা না অতি বামপন্থার দিকে ঝুঁকবে তার চেয়েও অনেক দ্রুত রিপাবলিকানরা অতি ডানপন্থার দিকে ঝুঁকে পড়বে। আমি মনে করি না যে, রমনি অতিডানদের রাশ টেনে ধরতে পারবেন।
আমি মনে করি, রোনাল্ড রিগানের সময়ের মতো রিপাবলিকানদের এবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পরাজিত হওয়া উচিত। তাহলে ডেমোক্র্যাটরা তাদের অঙ্গীকার বাস্তবায়নের সুযোগ পাবে। পরপর দু'বার ডেমোক্র্যাটরা জিততে পারলে সংস্কার কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। আগামীবার না হয় রিপাবলিকান প্রার্থীর বিষয় ভেবে দেখা যাবে। এবার ওবামা দ্বিতীয় মেয়াদের মতো বিজয়ী হতে পারেন। ক্লিনটনের মতো তিনিও মধ্যডানপন্থাকে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে সক্ষম হবেন। আসলে পার্টিগুলো পরাজয় থেকে শিক্ষা নিতে পারে কিনা, বিশেষ করে দুটি পরাজয় পরপর দরকার। রিপাবলিকানদের তাই পরাজয়ই দরকার শিক্ষা গ্রহণের জন্য।
টমাস এল ফ্রিডম্যান : দু'বার পুলিৎজার বিজয়ী মার্কিন সাংবাদিক; নিউইয়র্ক টাইমস থেকে
সংক্ষেপিত ভাষান্তর সুভাষ সাহা
আসলে দেশের মানুষের মধ্যেই এখন মধ্যপন্থা ঝোঁক প্রবল। মানুষ মনে করছে, এভাবে মধ্যপন্থা গ্রহণ করলে দেশে সত্যিকারের উন্নতি সম্ভব। এ কারণে মধ্যপন্থা এবারের নির্বাচনে প্রধান প্রবণতা হিসেবে দেখা দিয়েছে। এই চিন্তাধারার মধ্যে রয়েছে প্রতিরক্ষা ব্যয়ের রাশ টেনে ধরা, কর বৃদ্ধি করা, অবকাঠামোতে বিনিয়োগ করা, শিক্ষা ও গবেষণা এবং ইনস্টিটিউট ট্যাক্স সংস্কার করা, যা এন্টারপ্রিনিয়ারশিপকে বৃদ্ধি করবে। এসব কিছু করতে পারলে দেশের অর্থনীতি পুনরায় ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। অভিবাসন সংস্কারের বিষয়টিও একই সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে থাকছে। আমাদের নতুন জ্বালানি গ্যাস উত্তোলন ও ব্যবহার করার বিষয়।
রমনি যদি বিজয়ী হন তাহলে ভাবতে হবে যে, মানুষ মনে করেছে যে, রমনির পক্ষে এসব কাজ সুচারুরূপে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। তিনি তার চরম দক্ষিণপন্থি অবস্থান ত্যাগ করার যে উদ্যোগ এক মাস আগে নিয়েছিলেন তার প্রতি মানুষের বিশ্বাস জন্মেছে। তিনি রিপাবলিকান দলকে তার নবলব্ধ মধ্যপন্থা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করতে পারবেন। আর ওবামা জিতলে বুঝতে হবে যে, মধ্যবাম এবং মধ্যডানপন্থার মধ্যে এই প্রতীতি জন্মেছে যে, তিনি মধ্যপন্থাকেই তার সার করে দেশ পরিচালনা করতে চেষ্টা করে আসছিলেন। আসলে রিপাবলিকান দক্ষিণপন্থিরাই তাকে নানাভাবে বাধাগ্রস্ত করে কাজ করতে দেয়নি। তাই ওবামাকে তার কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য তাদের পক্ষ থেকে আরও সময় দেওয়া দরকার।
আসলে এ ধরনের আচরণের ফল ভালো হয় না। রমনি যদি বিজয়ী হন তাহলে একইভাবে ডেমোক্র্যাটরা তাকে পদে পদে তার কর্মসূচি বাস্তবায়নের পথে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। এখন যেমন ডেমোক্র্যাটরা বলছেন, রিপাবলিকানরা ওবামার অর্থনৈতিক কর্মসূচিকে জিম্মি করে ফেলেছিল। এ কারণে ওবামা তার কাঙ্ক্ষিত কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে পারেননি। ভবিষ্যতে রমনি বিজয়ী হলে একই অভিযোগ ডেমোক্র্যাটদের বিরুদ্ধেও উঠতে পারে। এ ধরনের দোষারোপের কারণে আমরা কোনো কিছুই সুচারুরূপে করতে পারব না। তবে আমার যেটা মনে হয় সেটা হলো, ডেমোক্র্যাটরা যতটা না অতি বামপন্থার দিকে ঝুঁকবে তার চেয়েও অনেক দ্রুত রিপাবলিকানরা অতি ডানপন্থার দিকে ঝুঁকে পড়বে। আমি মনে করি না যে, রমনি অতিডানদের রাশ টেনে ধরতে পারবেন।
আমি মনে করি, রোনাল্ড রিগানের সময়ের মতো রিপাবলিকানদের এবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পরাজিত হওয়া উচিত। তাহলে ডেমোক্র্যাটরা তাদের অঙ্গীকার বাস্তবায়নের সুযোগ পাবে। পরপর দু'বার ডেমোক্র্যাটরা জিততে পারলে সংস্কার কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। আগামীবার না হয় রিপাবলিকান প্রার্থীর বিষয় ভেবে দেখা যাবে। এবার ওবামা দ্বিতীয় মেয়াদের মতো বিজয়ী হতে পারেন। ক্লিনটনের মতো তিনিও মধ্যডানপন্থাকে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে সক্ষম হবেন। আসলে পার্টিগুলো পরাজয় থেকে শিক্ষা নিতে পারে কিনা, বিশেষ করে দুটি পরাজয় পরপর দরকার। রিপাবলিকানদের তাই পরাজয়ই দরকার শিক্ষা গ্রহণের জন্য।
টমাস এল ফ্রিডম্যান : দু'বার পুলিৎজার বিজয়ী মার্কিন সাংবাদিক; নিউইয়র্ক টাইমস থেকে
সংক্ষেপিত ভাষান্তর সুভাষ সাহা
No comments