দূরদেশ- কোন দিকে যাবে ওহাইও অঙ্গরাজ্য? by আলী রীয়াজ
যুক্তরাষ্ট্র এবং তার বাইরে যাঁরা মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের খবর রাখেন, তাঁদের কাছে ওহাইও অঙ্গরাজ্যের ১৮টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট কেন গুরুত্বপূর্ণ, এটা এখন স্পষ্ট। এখন পর্যন্ত জনমত জরিপগুলোতে প্রেসিডেন্ট ওবামা এবং রিপাবলিকান প্রার্থী মিট রমনির মধ্যে যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস মিলছে,
তাতে প্রয়োজনীয় ২৭০ ভোটের নিশ্চয়তা কারোরই নেই, ফলে অন্য আরও কয়েকটি দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যের ভোটের মতোই দরকার ওহাইওর ভোটগুলো।
ওহাইও জেতা নিয়ে খানিকটা আবেগ ও ইতিহাসও আছে। সাধারণভাবে বলা হয়, ওহাইও যে দিকে যায়, দেশ যায় সে দিকেই। ওহাইও জয় না করে কোনো রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট পদে বিজয়ী হননি, অন্যদিকে জন এফ কেনেডি ১৯৬০ সালে ওহাইওর সমর্থন ছাড়াই বিজয়ী হয়েছিলেন। তবে সেটাই শেষবার, যখন ওহাইও পরাজিত প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ১৯৪৪ সালের পর সেটাই একমাত্র ব্যতিক্রম। ১৯৪৪ সালে ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট ওহাইও না জিতেও প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন। পাশাপাশি স্মরণ করা যেতে পারে, ১৯৮০ সাল থেকে ওহাইওর ভোটাররা সব সময়ই কমপক্ষে পর পর দুবার একই দলের প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন। ১৯৮০ থেকে তিনবার দিয়েছেন রিপাবলিকানদের, ১৯৯২ ও ১৯৯৬ সালে দিয়েছেন ডেমোক্র্যাটদের, ২০০০ ও ২০০৪ সালে দিয়েছেন রিপাবলিকানদের। সর্বশেষ নির্বাচনে ওবামা ওহাইওতে বিজয়ী হয়েছিলেন। ফলে দুই প্রার্থীরই আশা যে ওহাইও তাঁর পক্ষেই আসবে। এটা ডেমোক্র্যাট বারাক ওবামার জন্য যতটা দরকার, তার চেয়ে বেশি দরকার রিপাবলিকান মিট রমনির। কেননা, ওহাইও না জিতে তিনি নির্বাচনে বিজয়ী হতে পারবেন বলে অনেকেই মনে করেন না। ওবামা অন্য কয়েকটা রাজ্য ধরে রাখতে পারলে পুনর্নির্বাচিত হতেও পারেন।
কিন্তু ৬ নভেম্বরের রাতে যদি অবস্থা এই দাঁড়ায় যে ওহাইওর ভোটই চূড়ান্ত নির্ধারক, যেমনটি হয়েছিল ২০০০ সালে ফ্লোরিডার ভোট নিয়ে এবং সেখানে যদি দুই প্রার্থীর ভোটের ব্যবধান হয় সামান্য, তবে ৭ নভেম্বরে এ কথা বলা সম্ভব না-ও হতে পারে যে নির্বাচনে কে বিজয়ী হয়েছেন। কেননা, ওহাইওর আইন অনুযায়ী কিছু ভোটারের ভোট ১৭ নভেম্বরের আগে গণনা করা যাবে না। কারা এই ভোটার? অন্য অনেক রাজ্যের মতো ওহাইওতেও ডাকযোগে ভোট দেওয়া যায়। ডাকযোগে ব্যালট ফেরত পাঠানোর শেষ তারিখ হলো ৫ নভেম্বর। অর্থাৎ ৫ নভেম্বরে তা পোস্ট করা যাবে। একজন ভোটারকে যদি ডাকযোগে ব্যালট পাঠানো হয়, তিনি তা ডাকযোগে না পাঠিয়ে হাতে করে এনে ভোটের দিন জমা দিতে পারেন। কিন্তু যদি তাঁর সঙ্গে তাঁর কাছে পাঠানো ব্যালট না-ও থাকে, তিনি ভোট দিতে পারবেন। তবে তাঁকে যে ব্যালট দেওয়া হবে, তাকে বলা হয় প্রভিশনাল ব্যালট। এই ভোটগুলো ১৭ নভেম্বরের আগে গণনা করা যাবে না। এই আইনের উদ্দেশ্য হলো, যাতে করে একজন লোক দুবার ভোট দিতে না পারেন। একবার ডাকযোগে ব্যালট চাইলে এবং তা হারিয়ে ফেললে যেন তিনি ভোট দেওয়া থেকে বঞ্চিত না হন, সেটাও এর লক্ষ্য। এই আইন তৈরি করা হয় ২০০০ সালে ফ্লোরিডায় অনেক ভোটারকে ভোট দেওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করার পর।
ওহাইওর মোট ভোটার সংখ্যা হলো ৭৭ লাখ। এর মধ্যে ১৩ লাখ ২০ হাজার ভোটার অনুপস্থিত বা ডাকযোগে ভোটের ব্যালট চেয়েছেন। ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত যে হিসাব পাওয়া গেছে তাতে দেখা যায় যে আনুমানিক ৬৪ হাজার ব্যালট ফেরত আসেনি, সংখ্যা এর বেশিও হতে পারে। অনুমান করা হচ্ছে যে এ ধরনের ব্যালটের সংখ্যা ভোটের দিন যত ঘনিয়ে আসবে, ততই বাড়বে। কিন্তু নির্বাচনী কর্মকর্তারা বলছেন যে তাঁদের অনুমান, এর একটা বড় অংশই নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রে এসে ভোট দিতে চাইবেন। তাঁদের এই অনুমানের ভিত্তি হচ্ছে ২০০৮ সালের নির্বাচন। সে সময় কম করে হলেও দুই লাখ ভোটার প্রভিশনাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দিয়েছিলেন।
২০০৮ সালে আইনের বিভিন্ন ফাঁকফোকরের কারণে ১৪ হাজার প্রভিশনাল ব্যালট বাতিল করে দেওয়া হয়েছিল। অনেক আইনি লড়াইয়ের পর আইনের সেই অংশ যার কারণে এটা সম্ভব হয়েছিল, তা ২০১২ সালে এসে বাতিল হয়ে যায়। সে সময় ওবামা এবং জন ম্যাককেইনের ইলেকটোরাল ভোটের ব্যবধান এত বেশি ছিল যে ওহাইওর এই ভোটগুলো নিয়ে কাউকে দুশ্চিন্তা করতে হয়নি। ওবামা সেখানে মোট ভোটেও জিতেছিলেন, তাঁদের ব্যবধান ছিল দুই লাখ ৬২ হাজার। কিন্তু জর্জ বুশ এবং জন ক্যারির মধ্যে ওহাইও বিজয়ের বিষয়টি নির্ধারিত হয়েছিল এক লাখ ২০ হাজার ভোটে। ওহাইওতে জন ক্যারি যদি এই ভোটগুলো পেতেন, তা হলেই তিনি প্রেসিডেন্ট পদে বিজয়ী হতেন। কেননা, সে সময় ওহাইওর ইলেকটোরাল ভোট ছিল ২০টি। সারা দেশে ক্যারি পেয়েছিলেন ২৫১টি ভোট। এটাও মনে রাখা দরকার, জন ক্যারি ওহাইওর একটি কাউন্টিতে হারার কারণেই ওহাইও হেরেছিলেন।
এবার যদি এই অবস্থা হয় তবে প্রভিশনাল ভোটগুলো হবে দুই পক্ষের আশা-নিরাশার ব্যাপার। শুধু তাঁদের জন্যই নয়, কারও ভোট যেন অবহেলা করা না হয়, সে বিবেচনায়ও এই ভোটগুলো গুনতে হবে। সব মিলে বলা যায় যে ওহাইও যদি প্রার্থীদের শেষ ভরসা হয়, তবে ৭ নভেম্বর নতুন প্রেসিডেন্টের নাম জানার ভরসা না করাই ভালো।
আলী রীয়াজ: যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের অধ্যাপক।
ওহাইও জেতা নিয়ে খানিকটা আবেগ ও ইতিহাসও আছে। সাধারণভাবে বলা হয়, ওহাইও যে দিকে যায়, দেশ যায় সে দিকেই। ওহাইও জয় না করে কোনো রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট পদে বিজয়ী হননি, অন্যদিকে জন এফ কেনেডি ১৯৬০ সালে ওহাইওর সমর্থন ছাড়াই বিজয়ী হয়েছিলেন। তবে সেটাই শেষবার, যখন ওহাইও পরাজিত প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ১৯৪৪ সালের পর সেটাই একমাত্র ব্যতিক্রম। ১৯৪৪ সালে ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট ওহাইও না জিতেও প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন। পাশাপাশি স্মরণ করা যেতে পারে, ১৯৮০ সাল থেকে ওহাইওর ভোটাররা সব সময়ই কমপক্ষে পর পর দুবার একই দলের প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন। ১৯৮০ থেকে তিনবার দিয়েছেন রিপাবলিকানদের, ১৯৯২ ও ১৯৯৬ সালে দিয়েছেন ডেমোক্র্যাটদের, ২০০০ ও ২০০৪ সালে দিয়েছেন রিপাবলিকানদের। সর্বশেষ নির্বাচনে ওবামা ওহাইওতে বিজয়ী হয়েছিলেন। ফলে দুই প্রার্থীরই আশা যে ওহাইও তাঁর পক্ষেই আসবে। এটা ডেমোক্র্যাট বারাক ওবামার জন্য যতটা দরকার, তার চেয়ে বেশি দরকার রিপাবলিকান মিট রমনির। কেননা, ওহাইও না জিতে তিনি নির্বাচনে বিজয়ী হতে পারবেন বলে অনেকেই মনে করেন না। ওবামা অন্য কয়েকটা রাজ্য ধরে রাখতে পারলে পুনর্নির্বাচিত হতেও পারেন।
কিন্তু ৬ নভেম্বরের রাতে যদি অবস্থা এই দাঁড়ায় যে ওহাইওর ভোটই চূড়ান্ত নির্ধারক, যেমনটি হয়েছিল ২০০০ সালে ফ্লোরিডার ভোট নিয়ে এবং সেখানে যদি দুই প্রার্থীর ভোটের ব্যবধান হয় সামান্য, তবে ৭ নভেম্বরে এ কথা বলা সম্ভব না-ও হতে পারে যে নির্বাচনে কে বিজয়ী হয়েছেন। কেননা, ওহাইওর আইন অনুযায়ী কিছু ভোটারের ভোট ১৭ নভেম্বরের আগে গণনা করা যাবে না। কারা এই ভোটার? অন্য অনেক রাজ্যের মতো ওহাইওতেও ডাকযোগে ভোট দেওয়া যায়। ডাকযোগে ব্যালট ফেরত পাঠানোর শেষ তারিখ হলো ৫ নভেম্বর। অর্থাৎ ৫ নভেম্বরে তা পোস্ট করা যাবে। একজন ভোটারকে যদি ডাকযোগে ব্যালট পাঠানো হয়, তিনি তা ডাকযোগে না পাঠিয়ে হাতে করে এনে ভোটের দিন জমা দিতে পারেন। কিন্তু যদি তাঁর সঙ্গে তাঁর কাছে পাঠানো ব্যালট না-ও থাকে, তিনি ভোট দিতে পারবেন। তবে তাঁকে যে ব্যালট দেওয়া হবে, তাকে বলা হয় প্রভিশনাল ব্যালট। এই ভোটগুলো ১৭ নভেম্বরের আগে গণনা করা যাবে না। এই আইনের উদ্দেশ্য হলো, যাতে করে একজন লোক দুবার ভোট দিতে না পারেন। একবার ডাকযোগে ব্যালট চাইলে এবং তা হারিয়ে ফেললে যেন তিনি ভোট দেওয়া থেকে বঞ্চিত না হন, সেটাও এর লক্ষ্য। এই আইন তৈরি করা হয় ২০০০ সালে ফ্লোরিডায় অনেক ভোটারকে ভোট দেওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করার পর।
ওহাইওর মোট ভোটার সংখ্যা হলো ৭৭ লাখ। এর মধ্যে ১৩ লাখ ২০ হাজার ভোটার অনুপস্থিত বা ডাকযোগে ভোটের ব্যালট চেয়েছেন। ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত যে হিসাব পাওয়া গেছে তাতে দেখা যায় যে আনুমানিক ৬৪ হাজার ব্যালট ফেরত আসেনি, সংখ্যা এর বেশিও হতে পারে। অনুমান করা হচ্ছে যে এ ধরনের ব্যালটের সংখ্যা ভোটের দিন যত ঘনিয়ে আসবে, ততই বাড়বে। কিন্তু নির্বাচনী কর্মকর্তারা বলছেন যে তাঁদের অনুমান, এর একটা বড় অংশই নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রে এসে ভোট দিতে চাইবেন। তাঁদের এই অনুমানের ভিত্তি হচ্ছে ২০০৮ সালের নির্বাচন। সে সময় কম করে হলেও দুই লাখ ভোটার প্রভিশনাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দিয়েছিলেন।
২০০৮ সালে আইনের বিভিন্ন ফাঁকফোকরের কারণে ১৪ হাজার প্রভিশনাল ব্যালট বাতিল করে দেওয়া হয়েছিল। অনেক আইনি লড়াইয়ের পর আইনের সেই অংশ যার কারণে এটা সম্ভব হয়েছিল, তা ২০১২ সালে এসে বাতিল হয়ে যায়। সে সময় ওবামা এবং জন ম্যাককেইনের ইলেকটোরাল ভোটের ব্যবধান এত বেশি ছিল যে ওহাইওর এই ভোটগুলো নিয়ে কাউকে দুশ্চিন্তা করতে হয়নি। ওবামা সেখানে মোট ভোটেও জিতেছিলেন, তাঁদের ব্যবধান ছিল দুই লাখ ৬২ হাজার। কিন্তু জর্জ বুশ এবং জন ক্যারির মধ্যে ওহাইও বিজয়ের বিষয়টি নির্ধারিত হয়েছিল এক লাখ ২০ হাজার ভোটে। ওহাইওতে জন ক্যারি যদি এই ভোটগুলো পেতেন, তা হলেই তিনি প্রেসিডেন্ট পদে বিজয়ী হতেন। কেননা, সে সময় ওহাইওর ইলেকটোরাল ভোট ছিল ২০টি। সারা দেশে ক্যারি পেয়েছিলেন ২৫১টি ভোট। এটাও মনে রাখা দরকার, জন ক্যারি ওহাইওর একটি কাউন্টিতে হারার কারণেই ওহাইও হেরেছিলেন।
এবার যদি এই অবস্থা হয় তবে প্রভিশনাল ভোটগুলো হবে দুই পক্ষের আশা-নিরাশার ব্যাপার। শুধু তাঁদের জন্যই নয়, কারও ভোট যেন অবহেলা করা না হয়, সে বিবেচনায়ও এই ভোটগুলো গুনতে হবে। সব মিলে বলা যায় যে ওহাইও যদি প্রার্থীদের শেষ ভরসা হয়, তবে ৭ নভেম্বর নতুন প্রেসিডেন্টের নাম জানার ভরসা না করাই ভালো।
আলী রীয়াজ: যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের অধ্যাপক।
No comments