নির্মাণযজ্ঞ চলছে কাতারে, কর্মী পাঠানোর বড় সুযোগ by শরিফুল হাসান
২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের সেরা দেশ হতে চায় কাতার। এটি তাদের জাতীয় লক্ষ্য। আর ২০২২ সালের বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজকও তারা। এই দুই অবস্থা মিলিয়ে আধুনিক সব স্টেডিয়ামসহ বিশাল নির্মাণযজ্ঞ চলছে কাতারে।
ফলে দেশটিতে এখন বিপুলসংখ্যক শ্রমিকের চাহিদা তৈরি হচ্ছে।
রাজধানী দোহা ঘুরে দেখা গেছে, কেবল রাজধানীতেই তিনটি স্টেডিয়ামের নির্মাণকাজ চলছে। মোট নয়টি নতুন স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হবে। আর পুরোনো তিনটি স্টেডিয়াম সংস্কার করা হবে বিপুলভাবে।
জনশক্তি রপ্তানিকারক, কাতারের বাংলাদেশ দূতাবাস ও প্রবাসী বাংলাদেশিরা বলছেন, ২০২২ ও ২০৩০ সাল সামনে রেখে কাতারে নতুন যে শ্রমবাজার সৃষ্টি হয়েছে, তা কাজে লাগাতে পারলে আগামী কয়েক বছরে সেখানে কয়েক লাখ লোকের কর্মসংস্থান হতে পারে।
তেলসমৃদ্ধ কাতারের মানুষের মাথাপিছু আয় এক লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলারের ওপরে। মোট জনসংখ্যা মাত্র তিন লাখ। এ ছাড়া সে দেশে কর্মসূত্রে ১৫ লাখ বসবাস করেন। এর মধ্যে বাংলাদেশির সংখ্যা প্রায় দেড় লাখ। এঁদের ৭৫ ভাগই আছেন নির্মাণ খাতের কাজের সঙ্গে যুক্ত। তাঁরা মাসে গড়ে বেতন-বোনাস মিলিয়ে অন্তত দুই হাজার রিয়াল (১ রিয়ালে ২৩ টাকা) আয় করেন।
দোহা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেই কথা হয় কুমিল্লার মিজানুর রহমানের সঙ্গে। পেশায় গাড়িচালক মিজান জানালেন, তাঁর মাসে আয় গড়ে ৫০ থেকে ৭৫ হাজার টাকা। দেশটির সরকারি পরিবহনসেবা প্রতিষ্ঠান কারওয়া মাওয়া সালাতের ছয় হাজার ট্যাক্সিচালকের মধ্যে অন্তত দুই হাজারই বাংলাদেশি।
বাংলাদেশি কর্মীদের মধ্যে বেশ কিছু দক্ষ কর্মীও রয়েছেন এ দেশে। ৩০০-এর বেশি স্নাতক প্রকৌশলী আর ৭০০-এর মতো ডিপ্লোমা প্রকৌশলী আছেন। কাতারের এক হাজার ৪০০ মসজিদের মধ্যে অন্তত ৭০০ মসজিদের ইমাম আছেন বাংলাদেশি। এ ছাড়া কাতারের বোরকা আর কোর্তার মূল ব্যবসাও বাংলাদেশিদের নিয়ন্ত্রণে।
কাতারের একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন মেহেদি হাসান। কম্পিউটার প্রকৌশলী মেহেদি আলাপকালে বললেন, মাসে তিনি পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা আয় করেন। তাঁর মতে, কাতারের পরিবেশ ভালো। এখানে কোনো অপরাধ নেই।
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) হিসাব অনুযায়ী, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজার যখন নানা সংকটে, তখন গত কয়েক বছরে কাতারে বাংলাদেশিদের যাওয়ার সংখ্যা বেড়েছে।
বিএমইটির তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭৬ থেকে ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক লাখ ৫৮ হাজার বাংলাদেশি কাতারে গেছেন। এর মধ্যে প্রায় এক লাখ লোকই গেছেন গত পাঁচ বছরে। এ বছরের জানুয়ারি থেকে প্রতি মাসেই কাতারে লোক যাওয়ার পরিমাণ বেড়েছে। সর্বশেষ সেপ্টেম্বরে কাতারে গেছেন তিন হাজার লোক।
একটি শঙ্কা: কাতারের প্রবাসী বাংলাদেশিরা অভিযোগ করেছেন, এ দেশে আসতে একেকজনের তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকা খরচ পড়ে। এর অন্যতম কারণ ভিসা-বাণিজ্য। দীর্ঘদিন ধরে আছেন এমন কিছু বাংলাদেশি কাতারের নাগরিকদের কাছ থেকে কাজের অনুমতিপত্র বের করে সেগুলো অতিরিক্ত দামে বিক্রি করে দেন। এভাবে মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণেই খরচ বহু গুণ বেড়ে যায়। কাতার সরকার এই ভিসা-বাণিজ্য পছন্দ করে না।
জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বায়রার মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্বকাপ সামনে রেখে কাতারে যে বিপুল পরিমাণ শ্রমিক লাগবে, তা আমাদের জানা আছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে আছেন এমন কিছু বাংলাদেশিই কাতারে ভিসা-বাণিজ্য করছেন। কাতারের বাজারটিকে ভালো করে ধরার জন্য কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করার আহ্বান জানান তিনি।
কাতারে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব ও শ্রম কাউন্সিলর মাকসুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০৩০ সালের জাতীয় লক্ষ্যমাত্রা আর ২০২২ সালের বিশ্বকাপ সামনে রেখে কাতারে যে নির্মাণযজ্ঞ চলছে, তা অবিশ্বাস্য। এখানে বাংলাদেশি কর্মীদের সুনাম রয়েছে। কাতারের সঙ্গে আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্কও অনেক ভালো। তাই আমরা আশা করছি, সম্পর্কের ধারাবাহিকতায় সামনের দিনগুলোতে কাতার বাংলাদেশ থেকে আরও বিপুলসংখ্যক লোক নেবে। তবে কোনোভাবেই যেন এই বাজার ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারেও আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’
রাজধানী দোহা ঘুরে দেখা গেছে, কেবল রাজধানীতেই তিনটি স্টেডিয়ামের নির্মাণকাজ চলছে। মোট নয়টি নতুন স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হবে। আর পুরোনো তিনটি স্টেডিয়াম সংস্কার করা হবে বিপুলভাবে।
জনশক্তি রপ্তানিকারক, কাতারের বাংলাদেশ দূতাবাস ও প্রবাসী বাংলাদেশিরা বলছেন, ২০২২ ও ২০৩০ সাল সামনে রেখে কাতারে নতুন যে শ্রমবাজার সৃষ্টি হয়েছে, তা কাজে লাগাতে পারলে আগামী কয়েক বছরে সেখানে কয়েক লাখ লোকের কর্মসংস্থান হতে পারে।
তেলসমৃদ্ধ কাতারের মানুষের মাথাপিছু আয় এক লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলারের ওপরে। মোট জনসংখ্যা মাত্র তিন লাখ। এ ছাড়া সে দেশে কর্মসূত্রে ১৫ লাখ বসবাস করেন। এর মধ্যে বাংলাদেশির সংখ্যা প্রায় দেড় লাখ। এঁদের ৭৫ ভাগই আছেন নির্মাণ খাতের কাজের সঙ্গে যুক্ত। তাঁরা মাসে গড়ে বেতন-বোনাস মিলিয়ে অন্তত দুই হাজার রিয়াল (১ রিয়ালে ২৩ টাকা) আয় করেন।
দোহা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেই কথা হয় কুমিল্লার মিজানুর রহমানের সঙ্গে। পেশায় গাড়িচালক মিজান জানালেন, তাঁর মাসে আয় গড়ে ৫০ থেকে ৭৫ হাজার টাকা। দেশটির সরকারি পরিবহনসেবা প্রতিষ্ঠান কারওয়া মাওয়া সালাতের ছয় হাজার ট্যাক্সিচালকের মধ্যে অন্তত দুই হাজারই বাংলাদেশি।
বাংলাদেশি কর্মীদের মধ্যে বেশ কিছু দক্ষ কর্মীও রয়েছেন এ দেশে। ৩০০-এর বেশি স্নাতক প্রকৌশলী আর ৭০০-এর মতো ডিপ্লোমা প্রকৌশলী আছেন। কাতারের এক হাজার ৪০০ মসজিদের মধ্যে অন্তত ৭০০ মসজিদের ইমাম আছেন বাংলাদেশি। এ ছাড়া কাতারের বোরকা আর কোর্তার মূল ব্যবসাও বাংলাদেশিদের নিয়ন্ত্রণে।
কাতারের একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন মেহেদি হাসান। কম্পিউটার প্রকৌশলী মেহেদি আলাপকালে বললেন, মাসে তিনি পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা আয় করেন। তাঁর মতে, কাতারের পরিবেশ ভালো। এখানে কোনো অপরাধ নেই।
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) হিসাব অনুযায়ী, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজার যখন নানা সংকটে, তখন গত কয়েক বছরে কাতারে বাংলাদেশিদের যাওয়ার সংখ্যা বেড়েছে।
বিএমইটির তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭৬ থেকে ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক লাখ ৫৮ হাজার বাংলাদেশি কাতারে গেছেন। এর মধ্যে প্রায় এক লাখ লোকই গেছেন গত পাঁচ বছরে। এ বছরের জানুয়ারি থেকে প্রতি মাসেই কাতারে লোক যাওয়ার পরিমাণ বেড়েছে। সর্বশেষ সেপ্টেম্বরে কাতারে গেছেন তিন হাজার লোক।
একটি শঙ্কা: কাতারের প্রবাসী বাংলাদেশিরা অভিযোগ করেছেন, এ দেশে আসতে একেকজনের তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকা খরচ পড়ে। এর অন্যতম কারণ ভিসা-বাণিজ্য। দীর্ঘদিন ধরে আছেন এমন কিছু বাংলাদেশি কাতারের নাগরিকদের কাছ থেকে কাজের অনুমতিপত্র বের করে সেগুলো অতিরিক্ত দামে বিক্রি করে দেন। এভাবে মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণেই খরচ বহু গুণ বেড়ে যায়। কাতার সরকার এই ভিসা-বাণিজ্য পছন্দ করে না।
জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বায়রার মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্বকাপ সামনে রেখে কাতারে যে বিপুল পরিমাণ শ্রমিক লাগবে, তা আমাদের জানা আছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে আছেন এমন কিছু বাংলাদেশিই কাতারে ভিসা-বাণিজ্য করছেন। কাতারের বাজারটিকে ভালো করে ধরার জন্য কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করার আহ্বান জানান তিনি।
কাতারে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব ও শ্রম কাউন্সিলর মাকসুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০৩০ সালের জাতীয় লক্ষ্যমাত্রা আর ২০২২ সালের বিশ্বকাপ সামনে রেখে কাতারে যে নির্মাণযজ্ঞ চলছে, তা অবিশ্বাস্য। এখানে বাংলাদেশি কর্মীদের সুনাম রয়েছে। কাতারের সঙ্গে আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্কও অনেক ভালো। তাই আমরা আশা করছি, সম্পর্কের ধারাবাহিকতায় সামনের দিনগুলোতে কাতার বাংলাদেশ থেকে আরও বিপুলসংখ্যক লোক নেবে। তবে কোনোভাবেই যেন এই বাজার ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারেও আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’
No comments