টাঙ্গাইল-৩ উপনির্বাচন- আজ ভোট, বিএনপির ভোট টানতে দুই প্রার্থীর চেষ্টা by রাজীব নূর ও কামাল হোসেন

জাতীয় সংসদের টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) উপনির্বাচনে অংশ না নিয়েও শেষ মুহূর্তে আলোচনার কেন্দ্রে চলে এসেছে বিএনপি। এলাকাবাসীর ধারণা, বিএনপির সমর্থকদের ভোট যাঁর পক্ষে বেশি পড়বে, আজকের দিন শেষে তিনিই পরবেন জয়ের মালা। এদিকে আজকের এ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ করার ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে সর্বোচ্চ নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে।


শুরু থেকে আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের কাছে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী আমানুর রহমান খান গ্রহণযোগ্যতায় অনেক এগিয়ে ছিলেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের ঘন ঘন সফর, বিদ্রোহী প্রার্থীকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্তে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শহিদুল ইসলাম নির্বাচনী লড়াইয়ে লক্ষণীয়ভাবে ফিরে আসেন। ফলে এই দুই প্রার্থীই নির্বাচন বর্জনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বিএনপির সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছেন। এর আগ পর্যন্ত বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের ভোটকে প্রভাবিত করার ব্যাপারে একমাত্র জাতীয় পার্টির প্রার্থী সৈয়দ আবু ইউসুফ আবদুল্লাহর তৎপরতা ছিল সবচেয়ে বেশি। আমানুর রহমান খানের সমর্থনে সপ্তাহ খানেক আগে থাকতেই টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলামকে সভা-সমাবেশে দেখা যাচ্ছিল। তিনি অবশ্য প্রথম আলোর কাছে একমাত্র মোঘলপাড়ার একটি সমাবেশে উপস্থিত থাকার কথা স্বীকার করেন। তা-ও তিনি ওখানে মিনিবাস মালিকদের কয়েকজনের আমন্ত্রণে গিয়েছিলেন বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, বিএনপির সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত ভোট বর্জনের।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী শহিদুল ইসলামের পক্ষে ঘাটাইল উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইখলাক উদ্দিন খান ওরফে শামীম ও পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাদত হোসেন সরকার ওরফে শামীমকে ভোট চাইতে দেখা গেছে। ইখলাক ভোট চেয়েছেন জামুরিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে এবং শাহাদত ভোট চেয়েছেন পৌরসভার রতনপুর এলাকায়। জামুরিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শহীদুল হেস্টিংস অভিযোগ করেন, ইখলাক ওই এলাকায় নৌকার পক্ষে শুধু ভোটই চাননি, ভোটারদের টাকা দিয়ে প্রভাবিত করেছেন।
জানতে চাইলে ইখলাক বলেন, ‘আসলে ওইটা আমার ইউনিয়ন। সর্বশেষ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আমার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হয়েছেন হেস্টিংস। তাঁর লোকজন যেহেতু আমানুরের পক্ষে নির্বাচনের মাঠে নেমেছেন, সেহেতু আমার কিছু লোকজন শহিদুলের পক্ষে ভোট চাইছেন হয়তো। ভোট দেওয়া না-দেওয়ার বিষয়ে আমি কারও কাছে কোনো নির্দেশ পাঠাইনি।’
শাহাদত নিজে ভোট চাওয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘আমরা বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের ভোট দিতে নিরুৎসাহিত করছি। তার পরও কেউ যদি ভোট দিতে যান, তাঁকে তো জোর করে আটকে রাখা যাবে না।’
টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম ওরফে তোফা প্রথম আলোকে বলেন, এই উপনির্বাচনে তিন প্রার্থীই মহাজোটের। তাঁদের কাউকে বিএনপির কর্মী-সমর্থকেরা ভোট দেবেন না। ভোট বর্জনেই বিএনপির বিজয় নিহিত।
প্রশাসনের প্রস্তুতি: আজ সকাল আটটা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু। টাঙ্গাইল জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আলীমুজ্জামান বলেন, উপনির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে নির্বাচনী এলাকায় ‘নজিরবিহীন নিরাপত্তাব্যবস্থা’ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে ওয়েব ক্যামেরার মাধ্যমে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আজ সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত উপজেলার একটি পৌরসভা, একটি ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড ও ১১টি ইউনিয়নের ৯৬টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ চলবে। ভোটার সংখ্যা দুই লাখ ৭১ হাজার ৩২৯ জন—নারী ভোটার এক লাখ ৩৯ হাজার ৫৪৩ ও পুরুষ এক লাখ ৩১ হাজার ৭৮৬।
র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও আনসারের কয়েক হাজার সদস্য মোতায়েন থাকছেন। গতকালই নির্বাচনী সরঞ্জাম, মালপত্র ও কেন্দ্রভিত্তিক ব্যালট পেপার পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের দিন ঘাটাইলে ৪০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বিভিন্ন কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করবেন। র‌্যাবের চার শতাধিক সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। এ ছাড়া পুলিশের ১৯২ জন সদস্য ২৪টি টিমে এবং বিজিবি ছয়টি টিমে বিভক্ত হয়ে টহল দেবে নির্বাচনী এলাকায়। প্রতি কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য থাকবেন ২৭ জন।
র‌্যাবের সংবাদ সম্মেলন: গতকাল স্থানীয় ডাকবাংলোতে সংবাদ সম্মেলন করেন র‌্যাব-১২-এর পরিচালক লে. কর্নেল এ টি এম আনিছুজ্জামান। নিরাপত্তা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে এমন কোনো ঘটনা র‌্যাব ঘটতে দেবে না। তিনি জানান, ৯৬টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৬৯টি ঝুঁকিপূর্ণ। ৪০টি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় চার শতাধিক র‌্যাব সদস্য মোতায়েন থাকবেন। প্রতিটি ইউনিয়নে র‌্যাবের দুটি করে ভ্রাম্যমাণ দল থাকবে।

No comments

Powered by Blogger.