স্টিফেন এল স্পিয়েগেল-গাজা সংকটকে কী করে কূটনৈতিক প্রতিশ্রুতিতে রূপান্তর করা যায়
এ যাত্রায় গাজায় সংকট সৃষ্টি হয় ইসরায়েলের অভ্যন্তরে হামাসের ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করার পর থেকে। ইসরায়েল প্রতিশোধ নিতে গিয়ে হামাসের মিলিটারি-প্রধান আহমেদ জাবারিকে হত্যা করে এবং ড্রোন হামলা চালিয়ে হামাসের সবচেয়ে বড় ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা ধ্বংস করে দেয়। এখন প্রশ্ন হলো, এ সহিংসতা বিস্তারের অবসানের উপায় কী?
হামাসের আক্রমণও বন্ধ হয়নি। ১৯৯১ সালের উপসাগরীয় যুদ্ধের শুরুতে সাদ্দাম হোসেন ইসরায়েলে যে আক্রমণ করেছিলেন, সে সময় তেল-আবিবে সর্বশেষ ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছিল। তারপর এবার আবার প্রথম নিক্ষিপ্ত হলো। ফলে যুদ্ধবিরতি চুক্তি ফিরিয়ে আনতে দু-তিন দিন আরো বেশি পিছিয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি হামাসের সঙ্গে কোনো আলোচনা করবে না। কারণ যুক্তরাষ্ট্র সংগঠনটিকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন বলে ঘোষণা করেছে। এখন একটি মাত্র দেশই পারে যুদ্ধবিরতি ফিরিয়ে আনতে। আর সে দেশটি হলো মিসর। প্রেসিডেন্ট মোরসি তাঁর নতুন ইসলামী সরকারকে সেটা করতে দিতে রাজি নন বলেই মনে হয় এবং মিসরের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ কোনোভাবে ইসরায়েলকে কোনো সহযোগিতা দানের বিপক্ষে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য প্রেসিডেন্ট মোরসিকে মধ্যস্থতা করতে রাজি করানো একটি বড় চ্যালেঞ্জ, যাতে হামাস ও গাজা রক্ষা পাবে এবং একটি যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত হবে এবং ইসরায়েল যাতে আর সামনে বাড়তে না পারে। ইসরায়েল যদি আক্রমণ করেই বসে (স্থল আক্রমণ), তাহলে তাদের সামনে তিনটি বিকল্প থাকবে- গাজা পুনরায় দখল, হামাসকে উৎখাত, যার ফলে প্যালেস্টাইন কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে আসবে। হামাসকে দুর্বল করার উদ্দেশ্যে ২০০৮-৯ ডিসেম্বর অপারেশন কাস্ট লিড পরিচালনা করা হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল গাজা দখল না করে হামাসের স্থাপনা ভেঙে দেওয়া। হামাসকে উৎখাত করা না গেলে সামনের দিনগুলোতে হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ একইভাবে চলতে থাকবে। প্রশ্ন হলো, তখন ধ্বংসের পরিমাণ কী রকম হবে, আর রাজনৈতিক পরিস্থিতি কী হবে, সেটা নির্ভর করছে ইসরায়েলের সামরিক কৌশল এবং হামাসের ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের পরিণাম কী হয়, এর ওপর।
দুই পক্ষেরই হতাহতের সংখ্যা গোনার পাশাপাশি দুই পক্ষই হিসাব করবে লক্ষ্য অর্জনের পথে কতটা লাভ-ক্ষতি হলো। এই দফা মধ্যপ্রাচ্য আরব বসন্তের আন্দোলনের কারণে অনেক বেশি জটিল অবস্থায় রয়েছে। মিসরের নতুন ইসলামী সরকার নিজেদের নাটকীয়ভাবে ইসরায়েলের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখছে। জর্দান নিজেদের সংকটের ঠিক মাঝখানে অবস্থান করছে। আরবের এ দুই রাষ্ট্রের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক নিম্নগামী, অথচ এ দুই রাষ্ট্রের সঙ্গে ইসরায়েলের শান্তিচুক্তি রয়েছে। এদিকে হিজবুল্লাহ ২০০৬ সালে ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতের সময় হাজার হাজার অস্ত্র পেয়েছিল। মনে হয় না তারা ইসরায়েলে হামলা করে তাদের সেই মূল্যবান অস্ত্র এখন ব্যবহার করার ঝুঁকি নেবে। কারণ একদিকে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ চলছে, অন্যদিকে ওই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো কাজে লাগবে, যদি ইসরায়েল ইরান আক্রমণ করে। কিন্তু এর পরও তারা আক্রমণ করতে পারে এবং ইসরায়েল হিজবুল্লাহকে ছোট করে দেখছে না। যতই সংঘাত চলতে থাকবে, ততই বিপদের আশঙ্কা এখন বাড়তে থাকবে।
১৯৮২ সালে যখন লেবানন-ইসরায়েল যুদ্ধ বাধে, তখন যে সিকোয়েন্স তৈরি হয়েছিল, সেটা ইসরায়েল মনে রাখবে।
গাজায় হামাস এবং অন্য মৌলবাদী ইসলামী সংগঠনগুলোর সামনেও রয়েছে বড় চ্যালেঞ্জ। নেতানিয়াহু সরকার শত মূল্য দিয়ে হলেও সামনের জানুয়ারির নির্বাচনে ইসরায়েলের জনগণের দুর্দশা চিরকালের জন্য ঘোচাতে একটি সুযোগ পেতে পারে। যদি তা-ই হয়, তাহলে অন্যদিকে হামাসকে বড় ধরনের ক্ষতি মেনে নিতে হবে, এমনকি হামাস ক্ষমতা থেকেও উৎখাত হয়ে যেতে পারে। ফিলিস্তিনের মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বাধীন ফাতাহর বিরুদ্ধে সম্প্রতি হামাসের রাজনৈতিক অবস্থান ভালো হয়েছে। সামনে মাহমুদ আব্বাসের জাতিসংঘে পর্যবেক্ষক রাষ্ট্রের মর্যাদা প্রায় সফল হয়ে উঠেছে। সেটা হামাসের অবস্থানকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। সত্যিই একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ফাতাহকে ধ্বংস করতে হামাস ইসরায়েলে আক্রমণ বৃদ্ধি করে থাকতে পারে। এদিকে এ সংকট একটি নতুন সংশয় সৃষ্টি করেছে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল এবং কিছু ইউরোপীয় দেশের জন্য। তারা প্যালেস্টাইন অথরিটির আবেদনের বিরোধিতা করছে। কারণ এটি সম্মিলিতভাবে শান্তি প্রক্রিয়ার চেহারাকে পাল্টে দেবে। এটা পাওয়া গেলে জাতিসংঘের বিভিন্ন কমিটিতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ফিলিস্তিনের একটি সুযোগ সৃষ্টি হবে। যেমন আন্তর্জাতিক ক্রিমিনাল কোর্ট।
এসব জটিলতার কারণে যুক্তরাষ্ট্র একটি কূটনৈতিক অভ্যুত্থানের দিকে ঝুঁকতে পারে।
ইসরায়েলকে তারা এককভাবে সমর্থন দিয়ে যেতে পারে, মিসরের প্রেসিডেন্টকে প্রলোভিত করতে পারে একটি যুদ্ধবিরতির জন্য এবং আবু মাজেনের সঙ্গে একটি অর্থনৈতিক চুক্তিতে যেতে পারে জাতিসংঘে তাদের প্রার্থিতা বিলম্ব করার বিনিময়ে। ইসরায়েলের হাতে যদি হামাস বড় আকারের পরাজয়ের সম্মুখীন হয় তাহলে আর জাতিসংঘে আবেদনের প্রয়োজনীয়তাই থাকবে না।
লেখক : ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক।
হাফিংটন পোস্ট থেকে সংক্ষিপ্ত ভাষান্তর : মহসীন হাবিব
দুই পক্ষেরই হতাহতের সংখ্যা গোনার পাশাপাশি দুই পক্ষই হিসাব করবে লক্ষ্য অর্জনের পথে কতটা লাভ-ক্ষতি হলো। এই দফা মধ্যপ্রাচ্য আরব বসন্তের আন্দোলনের কারণে অনেক বেশি জটিল অবস্থায় রয়েছে। মিসরের নতুন ইসলামী সরকার নিজেদের নাটকীয়ভাবে ইসরায়েলের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখছে। জর্দান নিজেদের সংকটের ঠিক মাঝখানে অবস্থান করছে। আরবের এ দুই রাষ্ট্রের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক নিম্নগামী, অথচ এ দুই রাষ্ট্রের সঙ্গে ইসরায়েলের শান্তিচুক্তি রয়েছে। এদিকে হিজবুল্লাহ ২০০৬ সালে ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতের সময় হাজার হাজার অস্ত্র পেয়েছিল। মনে হয় না তারা ইসরায়েলে হামলা করে তাদের সেই মূল্যবান অস্ত্র এখন ব্যবহার করার ঝুঁকি নেবে। কারণ একদিকে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ চলছে, অন্যদিকে ওই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো কাজে লাগবে, যদি ইসরায়েল ইরান আক্রমণ করে। কিন্তু এর পরও তারা আক্রমণ করতে পারে এবং ইসরায়েল হিজবুল্লাহকে ছোট করে দেখছে না। যতই সংঘাত চলতে থাকবে, ততই বিপদের আশঙ্কা এখন বাড়তে থাকবে।
১৯৮২ সালে যখন লেবানন-ইসরায়েল যুদ্ধ বাধে, তখন যে সিকোয়েন্স তৈরি হয়েছিল, সেটা ইসরায়েল মনে রাখবে।
গাজায় হামাস এবং অন্য মৌলবাদী ইসলামী সংগঠনগুলোর সামনেও রয়েছে বড় চ্যালেঞ্জ। নেতানিয়াহু সরকার শত মূল্য দিয়ে হলেও সামনের জানুয়ারির নির্বাচনে ইসরায়েলের জনগণের দুর্দশা চিরকালের জন্য ঘোচাতে একটি সুযোগ পেতে পারে। যদি তা-ই হয়, তাহলে অন্যদিকে হামাসকে বড় ধরনের ক্ষতি মেনে নিতে হবে, এমনকি হামাস ক্ষমতা থেকেও উৎখাত হয়ে যেতে পারে। ফিলিস্তিনের মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বাধীন ফাতাহর বিরুদ্ধে সম্প্রতি হামাসের রাজনৈতিক অবস্থান ভালো হয়েছে। সামনে মাহমুদ আব্বাসের জাতিসংঘে পর্যবেক্ষক রাষ্ট্রের মর্যাদা প্রায় সফল হয়ে উঠেছে। সেটা হামাসের অবস্থানকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। সত্যিই একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ফাতাহকে ধ্বংস করতে হামাস ইসরায়েলে আক্রমণ বৃদ্ধি করে থাকতে পারে। এদিকে এ সংকট একটি নতুন সংশয় সৃষ্টি করেছে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল এবং কিছু ইউরোপীয় দেশের জন্য। তারা প্যালেস্টাইন অথরিটির আবেদনের বিরোধিতা করছে। কারণ এটি সম্মিলিতভাবে শান্তি প্রক্রিয়ার চেহারাকে পাল্টে দেবে। এটা পাওয়া গেলে জাতিসংঘের বিভিন্ন কমিটিতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ফিলিস্তিনের একটি সুযোগ সৃষ্টি হবে। যেমন আন্তর্জাতিক ক্রিমিনাল কোর্ট।
এসব জটিলতার কারণে যুক্তরাষ্ট্র একটি কূটনৈতিক অভ্যুত্থানের দিকে ঝুঁকতে পারে।
ইসরায়েলকে তারা এককভাবে সমর্থন দিয়ে যেতে পারে, মিসরের প্রেসিডেন্টকে প্রলোভিত করতে পারে একটি যুদ্ধবিরতির জন্য এবং আবু মাজেনের সঙ্গে একটি অর্থনৈতিক চুক্তিতে যেতে পারে জাতিসংঘে তাদের প্রার্থিতা বিলম্ব করার বিনিময়ে। ইসরায়েলের হাতে যদি হামাস বড় আকারের পরাজয়ের সম্মুখীন হয় তাহলে আর জাতিসংঘে আবেদনের প্রয়োজনীয়তাই থাকবে না।
লেখক : ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক।
হাফিংটন পোস্ট থেকে সংক্ষিপ্ত ভাষান্তর : মহসীন হাবিব
No comments