হলমার্ক কেলেঙ্কারি-জড়িয়ে যাচ্ছেন সোনালী ব্যাংকের ৩০ কর্মকর্তা by মোশতাক আহমদ

সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখা থেকে ঋণের নামে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা লোপাটের ঘটনায় শিগগিরই মামলা করতে যাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তদন্তকাজ প্রায় শেষ করে এনেছে দুদক। তদন্তে সোনালী ব্যাংকের ৩০ কর্মকর্তা ফেঁসে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।


দুদকের তদন্তে কয়েক দিনে সোনালী ব্যাংকের প্রায় ২০ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। গতকাল বুধবারও ছয় কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। আজ বৃহস্পতিবার আরো ছয়জনকে জিজ্ঞাসাবাদের কথা রয়েছে। পাশাপাশি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত তদন্ত সংস্থাটি। মামলায় হলমার্ক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তানভীর মাহমুদ, তাঁর স্ত্রী ও গ্রুপের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম, ভায়রা জিএম তুষার আহমেদ, সোনালী ব্যাংকের সাবেক এমডি হুমায়ুন কবীর, ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখার সাবেক ম্যানেজার ও বর্তমানে উপমহাব্যবস্থাপক আজিজুর রহমান, ওএসডি উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মাইনুল হক, আতিকুর রহমানসহ ব্যাংকের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে আসামি করা হতে পারে।
সূত্রে জানা গেছে, ইতিমধ্যে সমাপ্ত তদন্তের ভিত্তিতে সন্দেহভাজনদের গ্রেপ্তারের জন্য যেকোনো মুহূর্তে মামলা দায়েরের কৌশল নিয়েছে দুদক। কখন, কোথায় এ মামলা করা হবে_সে বিষয়ে গোপনীয়তা রক্ষা করা হচ্ছে। মামলার পর পরই আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান পরিচালনার জন্য পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গেও যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। আসামিরা যেন সহসাই জামিন পেতে না পারেন, সে জন্য আইনি লড়াইয়ের প্রস্তুতিও নিচ্ছে দুদক।
দুদক সূত্র জানায়, মামলা দায়েরের প্রস্তুতি হিসেবে এরই মধ্যে হলমার্ক গ্রুপ, ডিএন স্পোর্টস ও সোনালী ব্যাংকের ৪৯ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। হলমার্ক গ্রুপ ও সোনালী ব্যাংক থেকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের যাবতীয় তথ্য ও নথি সংগ্রহ করা হয়েছে। আজ সোনালী ব্যাংকের আরো ছয়জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা করা হবে।
এদিকে সোনালী ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে অর্থ ফেরত দেয়নি হলমার্ক গ্রুপ। এর পরও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে হলমার্কের বিরুদ্ধে ব্যাংক মামলা করছে না। অভিযোগের বিষয়টি দুুদকের এখতিয়ারভুক্ত হওয়ায় এ ক্ষেত্রে হলমার্কের বিরুদ্ধে দুদকই মামলা করবে। আর সোনালী ব্যাংক শুধু অভিযোগ দায়ের করবে।
সূত্র জানায়, সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক ও অ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান এরই মধ্যে তাঁদের মতামত সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে দিয়েছেন। তাতে সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, নিজেরা সরাসরি মামলা না করতে।
অ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান এ ব্যাপারে কালের কণ্ঠকে বলেন, হলমার্ক কেলেঙ্কারির বিষয়ে সম্প্রতি সোনালী ব্যাংক তাঁর কাছ থেকে আইনি মতামত নিয়েছে। তিনি তাতে বলেছেন, হলমার্কের ঋণ কেলেঙ্কারির অভিযোগটি দুদকের তফশিলভুক্ত অপরাধ হওয়ায় আইন অনুযায়ী সোনালী ব্যাংক অভিযোগটি দুদকে পেশ করবে। পরে এ বিষয়ে আইন অনুযায়ী দুদক ব্যবস্থা নেবে।
ব্যাংকের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা জড়িত : দুদকের সিনিয়র উপপরিচালক মীর জয়নাল আবেদীন শিবলীর নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি তদন্তদল গতকাল সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সোনালী ব্যাংকের ছয় কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। দুদক কার্যালয়ে যাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সোনালী ব্যাংকের উপমহাব্যবস্থাপক মোরশেদ আলম ও নেছার আহমেদ, সহকারী মহাব্যবস্থাপক আবদুল মোমিন পাটোয়ারী, শ্যামল কান্তি নাথ, মো. শাহজাহান ও শামিম আখতার।
শ্যামল কান্তি নাথ জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দুদক কার্যালয় থেকে বেরিয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, হলমার্ক কেলেঙ্কারিতে সোনালী ব্যাংকের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা জড়িত। তিনি আরো জানান, ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখার কর্মকর্তারা না জেনে, না বুঝে এত বড় ভুল করেছেন বলে মনে হয় না।
শ্যামল কান্তি বলেন, 'মে মাসে আমরা পত্রিকায় এ অনিয়মের বিষয়টি দেখতে পাই। এরপর সোনালী ব্যাংকের তিন সদস্যের ভিজিল্যান্স অ্যান্ড কন্ট্রোল টিম গঠিত হয়। আমি ওই টিমের সদস্য ছিলাম। ঘটনার তদন্তে রূপসী বাংলা শাখায় গিয়ে অনিয়মের বিষয়টি আমাদের কাছে ধরা পড়ে। বিষয়টি আমাদের আওতার বাইরে চলে যাওয়ায় ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ শাখাকে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করি।'
পরিচালনা পর্ষদকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে : হলমার্ক কেলেঙ্কারি ইস্যুতে সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যানসহ পরিচালনা পর্ষদের সব সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদের প্রস্তুতি নিয়েছে দুদক। মামলার আগে বা পরে যেকোনো সময় তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে। বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করলেও কোথায়, কখন জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে, তা বলতে অস্বীকৃতি জানান দুদকের এক কর্মকর্তা।

No comments

Powered by Blogger.