অর্থনীতি- দুর্নীতি, সুশাসনের অভাব বনাম উন্নয়নের স্বপ্ন by ফারুক মঈনউদ্দীন

দেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর তথা ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে, এই স্বপ্ন ও প্রত্যাশা জাতি হিসেবে আমরা কয়েক বছর ধরে অন্তরে লালন করে আসছি। আর সে লক্ষ্যেই পরিচালিত হওয়া উচিত আমাদের সব কর্মকৌশল। অথচ অতিসম্প্রতি বাংলাদেশের দ্রুত ও টেকসই প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা ও


চ্যালেঞ্জ নিয়ে বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে মাননীয় অর্থমন্ত্রী স্বীকার করেছেন যে এই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার জন্য যে পরিমাণ বিদেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন, তা আকৃষ্ট করতে কিংবা প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ ও দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। দেশে বিনিয়োগের আরও যে বাধাগুলোর কথা অর্থমন্ত্রী অকপটে স্বীকার করেছেন, তার মধ্যে রয়েছে পর্যাপ্ত অবকাঠামোর অভাব, ভূমির অপর্যাপ্ততা এবং সুশাসনের অভাব। দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করা, পর্যাপ্ত অবকাঠামো সৃষ্টি করা, প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ—এসব পূর্বশর্ত অস্তিত্বশীল করতে সম্পদ কিংবা অর্থের প্রয়োজন হয়। আবার ভূমির অপ্রতুলতার যে কথা অর্থমন্ত্রী স্বীকার করেছেন, সেই সীমাবদ্ধতা দূর করা অর্থ বা সম্পদ দিয়ে সম্ভব নয়। কারণ, আমরা জানি আমাদের ভূমির অভাব একটি অমোচনীয় সমস্যা। জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধি, নগরায়ণ ও শিল্পায়নের ফলে সেই সমস্যাটি দিনে দিনে আরও প্রকট হবে। বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পরিবেশ সৃষ্টিতে ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে অর্থমন্ত্রী একটি ধন্যবাদার্হ কাজ করেছেন। কারণ, আমাদের দেশের সংস্কৃতিতে সরকার বা তার নেতারা কখনোই ব্যর্থতার কথা স্বীকার করেন না। কিন্তু সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য যে দুর্বলতার কথাটি মাননীয় মন্ত্রী স্বীকার করেছেন, সেটি হচ্ছে সুশাসনের অভাব। সুশাসনের অভাবকে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বলার কারণ এই যে, এটি নিশ্চিত করতে অর্থ বা সম্পদের প্রয়োজন হয় না। অথচ উল্লিখিত অন্য দুর্বলতাগুলো কাটানোর জন্য প্রয়োজন বড় অঙ্কের তহবিল।
মনোযোগী পাঠকের স্মরণে থাকার কথা, প্রায় আট বছর আগে, ২০০৪ সালের এপ্রিলে টাইম ম্যাগাজিন-এ অরবিন্দ আদিগা বাংলাদেশের তৎকালীন পরিস্থিতি সম্পর্কে একটা চরম নেতিবাচক রিপোর্ট লিখেছিলেন। বাংলাদেশের জন্য অসম্মানজনক এই রিপোর্টটির কারণে সেই সংখ্যাটিকে সম্ভবত নিষিদ্ধও করা হয়েছিল সে সময়। ব্যাপক চাঁদাবাজি, মুক্তিপণের বিনিময়ে ব্যবসায়ী অপহরণ, সাংবাদিক নিপীড়ন ও নিধন, হুমায়ুন আজাদের ওপর হামলা, গুপ্তহত্যা—এসব দৃষ্টান্ত তুলে ধরে আদিগা তাঁর বক্তব্যের সমর্থনে যথাযথ একটা আবহ তৈরি করার চেষ্টা করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে ২০০৮ সালে তাঁর উপন্যাস হোয়াইট টাইগার বুকার পুরস্কারে ভূষিত হলে এ রকম কাহিনি রচনার বিষয়ে তাঁর দক্ষতা প্রমাণিত হয়। অবশ্য তিনি তাঁর সেই রিপোর্টটিতে বাংলাদেশের দারিদ্র্য দূরীকরণ, জন্মশাসন, রপ্তানি বাজারে তৈরি পোশাকশিল্পের সাফল্য—ইত্যাকার কিছু অগ্রগতি ও সাফল্যের কথাও স্বীকার করেছিলেন।
তবে আদিগার রিপোর্টটিতে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনার সত্যতা থাকলেও সেসব নিয়ে ঢালাও মন্তব্য করা প্রতিবেদন প্রকাশ করা একটি প্রথম সারির আন্তর্জাতিক সাময়িকীর পক্ষে সমীচীন হয়নি। কারণ, আদিগা অকার্যকর বা ব্যর্থ রাষ্ট্র এবং সুশাসনের ঘাটতিসংবলিত রাষ্ট্রের ধারণাকে গুলিয়ে ফেলেছিলেন।
ব্যর্থ বা অকার্যকর কিংবা ভঙ্গুর রাষ্ট্র নিয়ে বিশ্বের কয়েকটি সংগঠন থেকে বিভিন্ন সূচকের সাহায্যে জরিপ চালানোর প্রক্রিয়া চালু হয়েছে এক দশকেরও আগে থেকে। যেমন, ওয়াশিংটনভিত্তিক সংগঠন ফান্ড ফর পিস থেকে প্রতিবছর ১২টি সূচকের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক পরিস্থিতি, মানবাধিকার, জনস্বাস্থ্য ইত্যাদি নির্দেশক থেকে ব্যর্থ রাষ্ট্রের বছরওয়ারি যে তালিকা প্রকাশ করা হয়, সেটি শুরু হয়েছিল নব্বই দশকের মাঝামাঝি থেকে। ২০১২ সালের জুনে প্রকাশিত রিপোর্টে দেখা গেছে, সেই তালিকায় বাংলাদেশ আগের বছরের তুলনায় সূচকের ২৫তম স্থান থেকে ২৯তম অবস্থানে উন্নীত হয়েছে, অর্থাৎ বাংলাদেশের পরিবেশ-পরিস্থিতি অপেক্ষাকৃত উন্নত হয়েছে। অর্থাৎ ২০১১ সালের তুলনায় চার ধাপ এগিয়ে এসেছি আমরা। বাংলাদেশের সঙ্গে একই ক্রমে অবস্থান করছে শ্রীলঙ্কাও। জরিপকৃত ১৭৮টি দেশের মধ্যে সোমালিয়ার অবস্থান প্রথম। ক্রমানুসারে পরের কয়েকটি দেশ হচ্ছে কঙ্গো, সুদান, চাদ, জিম্বাবুয়ে, আফগানিস্তান। বহুল আলোচিত জলদস্যুতা, চরম আইনশৃঙ্খলাহীনতা, বিদ্রোহ, সন্ত্রাসবাদ, সুশাসনের অভাব—এসবই সোমালিয়ার শীর্ষ ব্যর্থ রাষ্ট্র হওয়ার কারণ।
ফান্ড ফর পিস এই সূচক তৈরিতে যে নির্দেশনাগুলো ব্যবহার করে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে: জনসংখ্যার চাপ, খাদ্য উৎপাদন, বাসস্থান, ভূমি ব্যবহার, পরিবেশ, পরিবহন ব্যবস্থা, শরণার্থী কিংবা ভাসমান জনগোষ্ঠী এবং তার কারণে সৃষ্ট খাদ্য ও পানিসংকট, মহামারি ইত্যাদির সঙ্গে মানবিক বিপর্যয়, অতীত কিংবা ঐতিহাসিক কোনো নিপীড়নের প্রতিশোধপরায়ণ গোষ্ঠীর সহিংসতা, বহির্গামী অভিবাসন বা দেশান্তরি হওয়া, বিভিন্ন মানুষ ও গোষ্ঠীর মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য, দ্রুত অর্থনৈতিক অধোগতি ও অর্থনৈতিক দুরবস্থা, সরকারি দল বা শাসকগোষ্ঠীর ব্যাপক দুর্নীতি, জনগণকে সেবা দেওয়া কিংবা সন্ত্রাস থেকে নিরাপত্তা দেওয়ার ব্যর্থতা, মানবাধিকার লঙ্ঘন, ব্যক্তিমানুষের রাজনৈতিক বা সামাজিক অধিকার হরণ ইত্যাদি।
আবার বিশ্বব্যাংকের ওয়ার্ল্ডওয়াইড গভর্নেন্স ইন্ডিকেটর অনুযায়ী ছয়টি নির্দেশক দিয়ে সুশাসনের বিষয়টি সূচকায়িত করা হয়। এগুলো হচ্ছে: অধিকার ও জবাবদিহি, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সহিংসতা, সরকারের কার্যকারিতা, নিয়ন্ত্রণের গুণগত মান, আইনের শাসন এবং দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ।
বিভিন্ন সংস্থার জরিপের মাধ্যমে ব্যর্থ বা অকার্যকর রাষ্ট্রের সংজ্ঞা নির্ধারণ ও তালিকা প্রণয়ন নিয়ে সচেতন মানুষ এবং গবেষকদের মধ্যে বিতর্ক ও মতানৈক্য রয়েছে। তবে জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক উইলিয়াম জার্তম্যানের দেওয়া সংজ্ঞাটিকে অনেকেই গ্রহণযোগ্য মনে করেন। তাঁর মতে, রাষ্ট্র ব্যর্থ বলে প্রতিপন্ন হয় তখনই, যখন রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িত্ব ও কর্তব্যগুলো আর কাজ করে না। তিনি বলেন, তবে নিছক দাঙ্গা, বিদ্রোহ বা অভ্যুত্থানের চেয়েও আরও গভীর ধারণা এটি। এটি এমনই এক অবস্থার প্রতি ইঙ্গিত করে, যেখানে কাঠামো, বৈধ কর্তৃত্ব, আইন এবং রাজনৈতিক শৃঙ্খলা ভেঙেচুরে পড়েছে।
আমরা জানি, এমন অবস্থায় বাংলাদেশ কখনোই পৌঁছায়নি যাতে দেশকে ব্যর্থ বা অকার্যকর রাষ্ট্র বলা যাবে। তবু আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে মাঝে মাঝে বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক কিছু রিপোর্ট প্রকাশিত হয়, যার মাধ্যমে আমাদের দেশের প্রকৃত দুর্বলতাকে অতিরঞ্জিত করে তুলে ধরা হয়। ২০০৪ সালের আদিগার রিপোর্টটির পরের বছরই ইকোনমিস্ট পত্রিকায় বাংলাদেশে ইসলামি মৌলবাদের উত্থান নিয়ে এক চরম নেতিবাচক রিপোর্ট ছাপা হয়েছিল। এটির বিরুদ্ধেও তৎকালীন সরকার যথারীতি কথা বলেছিল, অস্বীকার করেছিল, কিন্তু বিদেশি পাঠকদের কাছে বাংলাদেশ সম্পর্কে ভুল বার্তাটি ঠিকই পৌঁছে গিয়েছিল।
কিন্তু মোটা দাগে মর্যাদাহানিকর এসব রিপোর্টকে অবিশ্বাসে কিংবা অবহেলায় উড়িয়ে দিলেও কিছু কিছু বিষয় যেমন অস্বীকার করার মতো নয়, তেমনি উদ্বেগজনকও বটে। যেমন, আদিগার রিপোর্টটি যখন ছাপা হয়, তার সপ্তাহ খানেক আগেই চট্টগ্রামে ধরা পড়েছে বাংলাদেশে প্রবেশ করা অবৈধ অত্যাধুনিক অস্ত্রের সবচেয়ে বড় চালানটি। এই ১০ ট্রাক অস্ত্র পাচারের ঘটনাটি উদ্ঘাটনের আগেই আদিগার রিপোর্টটি জমা দেওয়া হয়েছিল বিধায় বিষয়টি বোধগম্য কারণে তাঁর রিপোর্টে সন্নিবেশিত হয়নি। আবার আদিগার রিপোর্টটি প্রকাশিত হওয়ার চার মাস পরই ঢাকায় ঘটে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা। পরবর্তীকালে ১০ ট্রাক অস্ত্র এবং গ্রেনেড হামলা—উভয় ঘটনাকে যে কায়দায় ধামাচাপা দেওয়ার রাষ্ট্রীয় প্রয়াস চালানোর চেষ্টা করা হয়েছিল, সেসব উল্লেখ করার সুযোগ হলে আদিগার রিপোর্টটির চেহারা কী হতো আমরা জানি না।
বিদেশি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশের সম্পর্কে নেতিবাচক প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে সেসব অস্বীকার করলেও অল্পবিস্তর যেসব সত্য উদাহরণ থাকে, সেসবের প্রতিকারের কোনো প্রয়াস আমরা কখনোই দেখতে পাই না। তাই সুশাসনের যে অভাব রয়েছে, সে সত্য আমরা কিছুতেই অস্বীকার করতে পারি না এবং এটি যে সব সময় সরকারি তরফের ব্যর্থতা, সেটি ভাবার কোনো অবকাশ নেই। আমাদের জাতীয় সংসদে নব্বই দশকের প্রথম থেকে বিরোধী দলের সংসদ বর্জনের যে ধারা দেখা গেছে এবং প্রতিটি সংসদে এই বর্জনের দিনসংখ্যা যে ক্রমাগত হারে বাড়ছে, এটিও সুশাসনের অভাবের পরিচায়ক।
কিছুদিন আগে (নভেম্বর ৩) ইকোনমিস্ট সাময়িকীতে বাংলাদেশের দারিদ্র্য দূরীকরণের প্রয়াস এবং সাফল্য সম্পর্কে একটা ইতিবাচক নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে বটে, তবে সেখানেও বলা হয়েছে শোচনীয় ও অকার্যকর রাজনীতির কথা। আর দারিদ্র্য দূরীকরণের প্রয়াস কিংবা জন্মশাসনের কৃতিত্বের সিংহভাগ দেওয়া হয়েছে এনজিওগুলোকে। ফলে এটি যে পরিপ্রেক্ষিত এবং দৃষ্টিকোণ থেকে লেখা, তাতে খুব উল্লসিত হওয়া উচিত নয়।
আমরা জানি, অকার্যকর বা ব্যর্থ রাষ্ট্রের সংজ্ঞা নির্ধারণে উল্লিখিত নির্দেশকসমূহের অধিকাংশই আমাদের দেশের জন্য প্রযোজ্য নয়, কিন্তু কোনো কোনোটি যথার্থভাবেই খাটে। তার মধ্যে আছে সুশাসনের অভাব এবং দুর্নীতি। দুর্নীতির বিষয়টি আজ আর কোনো গোপন বিষয় নয়, সরকারের উচ্চপর্যায়ের আমলা এবং মন্ত্রী পর্যায়ের সবাই নির্দ্বিধায় স্বীকার করেন এটির ব্যাপক অস্তিত্বের কথা। এই স্বীকারোক্তির মধ্যে একদিকে যেমন দুর্নীতির বিষয়টি সরকারিভাব স্বীকৃত হয়, তেমনি নিশ্চিত হয় সুশাসনের অভাব। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল কর্তৃক উপর্যুপরি কয়েক বছর দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকার শীর্ষে অবস্থান করলেও আমাদের সরকারগুলো মৃদু প্রতিবাদ ছাড়া কার্যকর কোনো ব্যবস্থাই নিতে পারেনি। বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের সাবেক এক কান্ট্রি ডিরেক্টর মন্তব্য করেছিলেন যে আমাদের সরকার যদি দেশের দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ বা প্রতিরোধ করতে পারত তাহলে দারিদ্র্য দূরীকরণের হার দ্বিগুণ হওয়া সম্ভব ছিল।
দুর্নীতি এবং সুশাসনের অভাব যে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত, সেটি বেশি ব্যাখ্যার দাবি রাখে না। কারণ, দুর্নীতি যেমন সুশাসনের অভাবকে প্রকটিত করে, তেমনি সুশাসন রহিত হয় দুর্নীতির মাধ্যমে। যদিও সুশাসনের বিষয়টি সাধারণ মানুষ এবং সরকারি মানুষের মানসিকতার সঙ্গেও সম্পর্কিত, তবু সেই মানসিকতাটি আরও বিকৃত হয়ে ওঠে, যদি সেটিকে প্রশ্রয় দিতে দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়ার সুযোগ থাকে। যেমন, আমরা প্রায়ই দেখি ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় রাজউকের অনুমোদিত নির্দিষ্ট উচ্চতার চেয়ে আরও বেশি উঁচু ভবন তৈরি করে ফেলা হয় এবং সেটি সংবাদমাধ্যমের কল্যাণে জানাজানি হলেও কোনো প্রতিকার বা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। এমন প্রকাশ্য দুর্নীতিটি সংঘটিত হয় সুশাসনের অভাবেই। কারণ, এটি রাতারাতি বা গোপনে ঘটে না, ফলে কী কারণে ঘটে সেটিও আর গোপন কোনো বিষয় নয়। সুতরাং এটি যেমন সুশাসনের অভাব নির্দেশ করে, তেমনি প্রমাণ করে খোলামেলা দুর্নীতিও। অথবা আমাদের সড়কগুলোতে নিয়ন্ত্রণহীন অননুমোদিত যানবাহন চলাচল এবং ট্রাফিকব্যবস্থা ভেঙে পড়ার বিষয়টির কথা উল্লেখ করা যায়। নছিমন করিমন নামের বিকৃত যান্ত্রিক যানগুলোর অননুমোদিত এবং দুর্ঘটনাবহুল চলাচল, ট্রাফিক আইনের প্রতি চালকদের বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন এবং পুলিশের নির্বিকার আচরণ—এসবও সুশাসনের অভাব এবং দুর্নীতির বিষয়টিকে এক করে দেয়। অবশ্য তার সঙ্গে আমাদের গড়পড়তা মানুষের মানসিকতা ও মূল্যবোধেরও একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
সুশাসনের অভাবের সঙ্গে দুর্নীতির নিবিড় যোগাযোগের আরও বহু দৃষ্টান্ত তুলে ধরা যায়, কিন্তু এই স্বল্প পরিসরে সেটি সম্ভব নয়। কিন্তু একটি বিষয় প্রমাণ করা যায় যে সুশাসন এবং দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত না করলে কিংবা আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন না ঘটলে আমাদের টেকসই উন্নয়নের স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে।
 ফারুক মঈনউদ্দীন: লেখক ও ব্যাংকার।
fmainuddin@hotmail.com

No comments

Powered by Blogger.