একান্ত সাক্ষাৎকারে ইইউ রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম হানা-আমরা চাই যথাসময়ে অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন by মেহেদী হাসান
রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য আগামী সংসদ নির্বাচন যথাসময়ে হওয়া গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধিদলের প্রধান উইলিয়াম হানা। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন কার অধীনে হবে বা কে জয়ী হবে, এর চেয়ে বড় বিষয় হলো নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হওয়া।
ইইউসহ উন্নয়ন সহযোগীরা নির্বাচন কমিশন শক্তিশালীকরণে সহযোগিতা এবং প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপে উৎসাহিত করে যাচ্ছে। বাংলাদেশে ইইউ জোটভুক্ত ২৭টি দেশের প্রতিনিধিদের নেতৃত্ব দেওয়া এই রাষ্ট্রদূত গতকাল বুধবার সকালে ঢাকায় তাঁর কার্যালয়ে কালের কণ্ঠকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন।
রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম হানা বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অনুকূল পরিবেশ, সর্বোপরি দেশের ভাবমূর্তি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তিনি মনে করেন, মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নে বাংলাদেশের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের উন্নয়নে পদ্মা সেতুসহ আঞ্চলিক অবকাঠামোগুলোর ওপরও গুরুত্বারোপ করেন তিনি। সাক্ষাৎকারের শুরুতেই রাষ্ট্রদূত হানার কাছে তাঁর বাংলায় অনর্গল কথা বলার সাধনার অগ্রগতি জানতে চাওয়া হলে আইরিশ এই রাষ্ট্রদূত বলেন, 'গত রাতেও আমি বাংলায় কথা বলার চর্চা করছিলাম। উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় কয়েকটি জেলায় আমি আগামী সপ্তাহে সফর করব। আমি যখন দেশের বিভিন্ন এলাকা সফর করব তখন আমি বাংলায় কথা বলব। এ কারণে আমাকে বাংলায় কথা বলায় আরো দক্ষ হতে হবে। আমার সফরসঙ্গী আমার স্ত্রী আমার চেয়েও ভালো বাংলা বলতে পারে।' উল্লেখ্য, বাংলায় কথা বলা শেখার বিষয়ে এই রাষ্ট্রদূতের লেখা একটি নিবন্ধ ব্রিটিশ পত্রিকায় প্রকাশিতও হয়েছে।
উইলিয়াম হানা জানান, আগামী সপ্তাহে তিনি গ্রাম আদালত, জীবিকা উন্নয়ন ও খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ে প্রকল্প দেখতে কয়েকটি জেলা সফর করবেন। গ্রাম আদালতের ব্যাপারে তিনি বেশ আগ্রহী। তাঁর সঙ্গে কথোপকথনে বাংলাদেশের বেশ কিছু আলোচিত প্রসঙ্গ ওঠে। যেমন_
মানবাধিকার পরিস্থিতি : এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত হানা বলেন, 'গত মে মাসে ইইউ-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের চার দশক পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আমি বলেছি, আমাদের পররাষ্ট্রনীতিতে মানবাধিকার ইস্যুটি ক্রমেই জোরালো হয়ে উঠছে। ব্রাসেলসে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ইইউ রাষ্ট্রদূতদের সম্মেলনেও এ বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। ইউরোপীয় পার্লামেন্টে বিপুলসংখ্যক সংসদ সদস্যের অংশগ্রহণে একটি পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন হয়েছে। সেখানে স্পষ্ট করেই বলা হয়েছে, মানবাধিকারই ইইউর প্রধান অগ্রাধিকার। তারা মানবাধিকার পরিস্থিতি এবং আমরা কী করছি, পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে কি না_এ ধরনের বিষয়ে জানতে চেয়েছে। আমি পার্লামেন্টে প্রশ্নের উত্তরে বলেছি, আমরা বাংলাদেশ নিয়ে কাজ করছি। সেখানে করণীয় আছে অনেক কিছু। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে সহযোগিতা করাসহ এ খাতে আমরা কাজ করছি।'
রাষ্ট্রদূত হানা বলেন, 'এখানে অনেক করণীয় আছে। আজ সকালেও পত্রিকায় পড়ছিলাম, মানবাধিকার কমিশনের প্রতিবেদনে বিচারবহির্ভূত হত্যা, নিখোঁজ হওয়া, সংখ্যালঘুদের অধিকার, পার্বত্য চট্টগ্রামের বাসিন্দাদের অধিকারের কথা বলা হয়েছে। আমি খুশি যে বাংলাদেশেই এ প্রশ্ন উঠছে। এসব ইস্যু নিয়ে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এ ছাড়া সরকারের মুখ্য ভূমিকা পালনের সুযোগ আছে বলে আমি মনে করি।'
নির্বাচন ও সংলাপ : রাষ্ট্রদূত হানা বলেন, সম্প্রতি তাঁর ব্রাসেলস সফরের সময় গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি যে ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে তা হলো বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন। তিনি বলেন, 'অতীতের মতো আগামী নির্বাচন আমাদের পর্যবেক্ষণ করা উচিত কি না_এ প্রশ্ন নিয়ে ইতিমধ্যে আমরা ভাবতে শুরু করেছি। নির্বাচনে বাংলাদেশি ও বিদেশি_উভয় ধরনের পর্যবেক্ষক দ্বারা পর্যবেক্ষণ হওয়া উচিত, এটাই সাধারণ রীতি। বেশির ভাগ পর্যবেক্ষক থাকবেন বাংলাদেশের ভেতরের। আমি মনে করি, এ নিয়ে আগামী দিনগুলোতে আলোচনা করব। আমরা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে চাই।'
হানা বলেন, 'যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান আমাদের সবার কাছেই বড় অগ্রাধিকার। আমি জোর দিয়ে বলব, ফলাফল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে কোন দল জয়ী হলো আর কোন দল হলো না_সেটি আমার কাছে ফলাফল নয়। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হওয়াই আমার কাছে ভালো ফল। সাধারণ জনগণ যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে এবং তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চা করতে পারে, সেটিই আমরা চাই। সেটি কিভাবে হবে তা নিয়ে তাদের (রাজনৈতিক দলগুলোর) আলোচনা করা দরকার।'
হানা আরো বলেন, 'আমি আগেও বলেছি, বাংলাদেশে কার অধীনে নির্বাচন হওয়া উচিত_তা আমরা বলব না। এটি বাংলাদেশ, বাংলাদেশের জনগণ ও সংবিধানের বিষয়। এখানে আমাদের কিছু বলার নেই।'
ভাবমূর্তি সংকট : গত এপ্রিলে ইইউ-বাংলাদেশ সম্পর্কের ৪০ বছর উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ইইউ সদস্য দেশগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছিল, এ দেশের ভাবমূর্তি সংকট আছে। সেটা এখনো আছে কি না জানতে চাইলে উইলিয়াম হানা বলেন, 'ওই সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্যগুলো ছিল অনেকটা বিস্ময়কর। ওই দিন সংবাদ সম্মেলন হচ্ছিল আর বাইরে রাজপথে অস্থিরতা চলছিল। আমি মনে করি, তা ছিল একটি জেগে ওঠার মতো বার্তা।'
উইলিয়াম হানা বলেন, 'হরতালে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছিল। তাই আমার সহকর্মীরা বলছিলেন, দেখুন, এ ধরনের পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে কূটনীতিক হিসেবে বিনিয়োগ করতে বলা আমাদের জন্য কঠিন। কারণ তাঁরা রাস্তায় সংঘাত দেখতে পেয়েছেন। তাঁরা বলতে চেয়েছেন, আমাদের কাছে বিনিয়োগ সহযোগিতা চাইলে আপনারা শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষা করে সহযোগিতা করুন। অর্থাৎ আপনারা সহযোগিতা চাইলে আমাদের সহযোগিতা করুন।'
রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে বহির্বিশ্বের কাছে এ দেশ সম্পর্কে নেতিবাচক বার্তা যাচ্ছে কিনা জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত হানা বলেন, 'গত কয়েক দিনে বিশ্বে কী হচ্ছে তা যদি দেখেন তাহলে মনে হবে, বাংলাদেশ অত্যন্ত উদার দেশ। আর বিশ্ববাসী তা-ই দেখছে। এটি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক ভাবমূর্তি। কিন্তু অন্য এক দিন যদি রাস্তায় রাজনৈতিক সংঘাত চলে, মিছিল-সমাবেশে সংষর্ষ হয় তাহলেও বিশ্ব দেখতে পাবে, এখানে কী চলছে। তাই আমরা কূটনীতিকরা এ দেশের ভাবমূর্তি বদলাতে পারি না। আমরা এ নিয়ে কাজ করতে পারি।'
ব্রাসেলস সফরে বার্তা : রাষ্ট্রদূত হানা বলেন, 'ব্রাসেলস সফরে আমি বাংলাদেশ সম্পর্কে বেশ কিছু সুস্পষ্ট বার্তা পেয়েছি। আর সেগুলো হলো_জলবায়ু পরিবর্তন খাতে বাংলাদেশ ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যতম প্রধান কৌশলগত অংশীদার। সবাই এটি বলেছে। জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে কাজ করেন_ব্রাসেলসের এমন কর্মকর্তারা আমাকে বলেছেন যে, জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক আলোচনায় বাংলাদেশ বিশ্বে নেতৃত্ব দিচ্ছে। তাঁরা বাংলাদেশের সঙ্গে এ ব্যাপারে কাজ করার প্রবল আগ্রহ দেখিয়েছেন।'
রাষ্ট্রদূত বলেন, 'ইউরোপে অর্থনৈতিক সংকটের কারণে সাহায্য কতটা কমবে আমরা জানি না। তবে উন্নয়ন সাহায্যের বড় অংশ বাংলাদেশই পাবে_এটি আমি নিশ্চিত করছি। আমরা উন্নয়ন সহযোগিতা অব্যাহত রাখব। আমি আশা করছি, এ সহযোগিতা ভবিষ্যতে আরো বাড়বে।'
রাষ্ট্রদূত হানা বলেন, 'ইউরোপে আমি আরো যে সুস্পষ্ট বার্তাটি পেয়েছি তা হলো, ইউরোপ এশিয়ার দিকে ঝুঁকছে। আগামী ১০ বা ১৫ বছরে বিশ্বের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বড় অংশই হবে এশিয়ায়। আমরা এশিয়ায় আমাদের বিনিয়োগ ও বাণিজ্য বাড়াতে চাই।'
রাষ্ট্রদূত বলেন, 'এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ সরবরাহ ব্যবস্থার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমি মনে করি, এটি বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক বার্তা। একদিকে আমাদের নিজেদের এবং অন্যদিকে আপনাদের ও আমাদের অভিন্ন স্বার্থে আমরা ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এশিয়ার দিকে ঝুঁকছি। ইউরোপীয় কম্পানিগুলো এখানে বিনিয়োগ ও অধিক হারে ব্যবসা করছে। কারণ আমরা জানি, এখানে সামাজিক প্রবৃদ্ধির হার অনেক।'
রাষ্ট্রদূত বলেন, 'গত বছর রুলস অব অরিজিন পরিবর্তন হওয়ায় ইইউ-বাংলাদেশ ব্যবসা-বাণিজ্যে বড় প্রভাব পড়েছে। নিশ্চয়ই এখানে লাভ-লোকসান আছে। কিন্তু তবু এ নিয়ে অনেক আলোচনার পর আমরা ওই পরিবর্তন এনেছি। এর ফলে বাংলাদেশের অবস্থান বদলে গেছে। আমরা এখন শুধু বলছি না যে, বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্য ইউরোপে যাচ্ছে; আমরা বাংলাদেশের অবস্থানের কথা, তুলনামূলক সুবিধা, বাংলাদেশে বিনিয়োগ এবং ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশের নতুন নতুন পণ্য প্রবেশের কথাও জোর দিয়ে বলছি।'
সুশীল সমাজ : রাষ্ট্রদূত হানা বলেন, 'বাংলাদেশের সুশীল সমাজ অত্যন্ত সমৃদ্ধ। শুরু থেকেই বাংলাদেশের উন্নয়নে সুশীল সমাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। অন্য অনেক দেশে এমনটা দেখা যায় না। গ্রামীণ ব্যাংক, ব্র্যাকের মতো অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান এ দেশে আছে। তারা এ দেশে অত্যাবশ্যক ভূমিকা পালন করছে।'
রাষ্ট্রদূত বলেন, 'আমরা মনে করি, মানবাধিকার ও গণতন্ত্রে সুশীল সমাজের ভূমিকা অপরিহার্য। আমাদের সহযোগিতা কিভাবে জনগণের কাছে পেঁৗছাবে সে ব্যাপারেও তাদের মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা বাংলাদেশে সুশীল সমাজের ভূমিকাকে সহযোগিতা করতে চাই। সুশীল সমাজ ও সরকারের অংশীদারি ভিত্তিতে কাজ করা উচিত।'
ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেন, 'শিশুদের স্কুলে যাওয়াবিষয়ক প্রকল্পও লাল ফিতার দৌরাত্ম্যের কারণে দেরি হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এনজিও ও সরকার_উভয়ের সঙ্গেই কাজ করে। আমরা ওই দুই পক্ষের মধ্যে অংশীদারি দেখতে চাই। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ক্ষুদ্রঋণ যে খাতই হোক না কেন, অংশীদারিই হলো এগিয়ে যাওয়ার উপায়।'
গ্রামীণ ব্যাংক : রাষ্ট্রদূত হানা বলেন, 'গ্রামীণ ব্যাংক সারা বিশ্বেই পরিচিত। গ্রামীণ ব্যাংকের জন্য বাংলাদেশ বিশ্বজুড়ে পরিচিত। বাংলাদেশে আসার ১৫ বছর আগেও আমি গ্রামীণ ব্যাংক সম্পর্কে জানতাম। দুর্গম এলাকায় গ্রামীণ ব্যাংক ছিল সফলতার প্রতীক। বাংলাদেশের উন্নয়নে গ্রামীণ ব্যাংকের অবদান বিশাল। আর এ ভূমিকা অব্যাহত থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ।'
গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ সংশোধনের ব্যাপারে পশ্চিমা দেশগুলোর উদ্বেগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেন, 'গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ কী হবে তা বলা আমাদের কাজ নয়। অতীতের মতো বাংলাদেশের উন্নয়নে ওই ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।'
রাষ্ট্রদূত বলেন, 'ইউরোপে আমাদের অনেক ব্যাংক কেলেঙ্কারির ঘটনা রয়েছে। ব্যাংকগুলো যথাযথভাবে পরিচালিত না হওয়া আমাদের বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটের অন্যতম কারণ। ব্যাংক ঠিকমতো পরিচালিত হওয়া এবং এটি নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। বাংলাদেশে গ্রামীণ ব্যাংক ও অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ড. ইউনূস সারা বিশ্বে সম্মানিত ব্যক্তি। তাঁর জন্যও অনেকে বাংলাদেশকে চেনে।'
রোহিঙ্গা ইস্যু : এই ইস্যুতে রাষ্ট্রদূত হানা বলেন, 'রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বাংলাদেশে অনেক বিতর্ক হয়েছে। এ সংকটের অনেক দিক, জনগণের ভিন্ন ভাবনাও আছে। ব্যাপক বিতর্কের পর আমরা অনুধাবন করছি, রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান মিয়ানমারেই। রোহিঙ্গা সংকটকে আমরা আন্তর্জাতিক সমস্যা বলেই মনে করছি। আর এ সংকট নিয়ে সমস্যা যেমন আছে, তেমনি আছে সুযোগ।'
হানা বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার থেকে পাওয়া তথ্য নিয়ে ব্রাসেলসে আগামী সপ্তাহে বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে। আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনায় রোহিঙ্গা ইস্যু রাখছি এবং মিয়ানমারের ওপর থেকে অর্থনৈতিক অবরোধ ধীরে ধীরে তুলে নেওয়ার সময় কিছু শর্ত দিচ্ছি। তবে এটি সত্যি, এর কোনো সহজ সমাধান নেই। আমি আশা করছি, ভবিষ্যতে ইতিবাচক কিছু দেখতে পাব।'
রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম হানা বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অনুকূল পরিবেশ, সর্বোপরি দেশের ভাবমূর্তি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তিনি মনে করেন, মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নে বাংলাদেশের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের উন্নয়নে পদ্মা সেতুসহ আঞ্চলিক অবকাঠামোগুলোর ওপরও গুরুত্বারোপ করেন তিনি। সাক্ষাৎকারের শুরুতেই রাষ্ট্রদূত হানার কাছে তাঁর বাংলায় অনর্গল কথা বলার সাধনার অগ্রগতি জানতে চাওয়া হলে আইরিশ এই রাষ্ট্রদূত বলেন, 'গত রাতেও আমি বাংলায় কথা বলার চর্চা করছিলাম। উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় কয়েকটি জেলায় আমি আগামী সপ্তাহে সফর করব। আমি যখন দেশের বিভিন্ন এলাকা সফর করব তখন আমি বাংলায় কথা বলব। এ কারণে আমাকে বাংলায় কথা বলায় আরো দক্ষ হতে হবে। আমার সফরসঙ্গী আমার স্ত্রী আমার চেয়েও ভালো বাংলা বলতে পারে।' উল্লেখ্য, বাংলায় কথা বলা শেখার বিষয়ে এই রাষ্ট্রদূতের লেখা একটি নিবন্ধ ব্রিটিশ পত্রিকায় প্রকাশিতও হয়েছে।
উইলিয়াম হানা জানান, আগামী সপ্তাহে তিনি গ্রাম আদালত, জীবিকা উন্নয়ন ও খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ে প্রকল্প দেখতে কয়েকটি জেলা সফর করবেন। গ্রাম আদালতের ব্যাপারে তিনি বেশ আগ্রহী। তাঁর সঙ্গে কথোপকথনে বাংলাদেশের বেশ কিছু আলোচিত প্রসঙ্গ ওঠে। যেমন_
মানবাধিকার পরিস্থিতি : এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত হানা বলেন, 'গত মে মাসে ইইউ-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের চার দশক পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আমি বলেছি, আমাদের পররাষ্ট্রনীতিতে মানবাধিকার ইস্যুটি ক্রমেই জোরালো হয়ে উঠছে। ব্রাসেলসে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ইইউ রাষ্ট্রদূতদের সম্মেলনেও এ বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। ইউরোপীয় পার্লামেন্টে বিপুলসংখ্যক সংসদ সদস্যের অংশগ্রহণে একটি পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন হয়েছে। সেখানে স্পষ্ট করেই বলা হয়েছে, মানবাধিকারই ইইউর প্রধান অগ্রাধিকার। তারা মানবাধিকার পরিস্থিতি এবং আমরা কী করছি, পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে কি না_এ ধরনের বিষয়ে জানতে চেয়েছে। আমি পার্লামেন্টে প্রশ্নের উত্তরে বলেছি, আমরা বাংলাদেশ নিয়ে কাজ করছি। সেখানে করণীয় আছে অনেক কিছু। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে সহযোগিতা করাসহ এ খাতে আমরা কাজ করছি।'
রাষ্ট্রদূত হানা বলেন, 'এখানে অনেক করণীয় আছে। আজ সকালেও পত্রিকায় পড়ছিলাম, মানবাধিকার কমিশনের প্রতিবেদনে বিচারবহির্ভূত হত্যা, নিখোঁজ হওয়া, সংখ্যালঘুদের অধিকার, পার্বত্য চট্টগ্রামের বাসিন্দাদের অধিকারের কথা বলা হয়েছে। আমি খুশি যে বাংলাদেশেই এ প্রশ্ন উঠছে। এসব ইস্যু নিয়ে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এ ছাড়া সরকারের মুখ্য ভূমিকা পালনের সুযোগ আছে বলে আমি মনে করি।'
নির্বাচন ও সংলাপ : রাষ্ট্রদূত হানা বলেন, সম্প্রতি তাঁর ব্রাসেলস সফরের সময় গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি যে ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে তা হলো বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন। তিনি বলেন, 'অতীতের মতো আগামী নির্বাচন আমাদের পর্যবেক্ষণ করা উচিত কি না_এ প্রশ্ন নিয়ে ইতিমধ্যে আমরা ভাবতে শুরু করেছি। নির্বাচনে বাংলাদেশি ও বিদেশি_উভয় ধরনের পর্যবেক্ষক দ্বারা পর্যবেক্ষণ হওয়া উচিত, এটাই সাধারণ রীতি। বেশির ভাগ পর্যবেক্ষক থাকবেন বাংলাদেশের ভেতরের। আমি মনে করি, এ নিয়ে আগামী দিনগুলোতে আলোচনা করব। আমরা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে চাই।'
হানা বলেন, 'যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান আমাদের সবার কাছেই বড় অগ্রাধিকার। আমি জোর দিয়ে বলব, ফলাফল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে কোন দল জয়ী হলো আর কোন দল হলো না_সেটি আমার কাছে ফলাফল নয়। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হওয়াই আমার কাছে ভালো ফল। সাধারণ জনগণ যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে এবং তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চা করতে পারে, সেটিই আমরা চাই। সেটি কিভাবে হবে তা নিয়ে তাদের (রাজনৈতিক দলগুলোর) আলোচনা করা দরকার।'
হানা আরো বলেন, 'আমি আগেও বলেছি, বাংলাদেশে কার অধীনে নির্বাচন হওয়া উচিত_তা আমরা বলব না। এটি বাংলাদেশ, বাংলাদেশের জনগণ ও সংবিধানের বিষয়। এখানে আমাদের কিছু বলার নেই।'
ভাবমূর্তি সংকট : গত এপ্রিলে ইইউ-বাংলাদেশ সম্পর্কের ৪০ বছর উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ইইউ সদস্য দেশগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছিল, এ দেশের ভাবমূর্তি সংকট আছে। সেটা এখনো আছে কি না জানতে চাইলে উইলিয়াম হানা বলেন, 'ওই সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্যগুলো ছিল অনেকটা বিস্ময়কর। ওই দিন সংবাদ সম্মেলন হচ্ছিল আর বাইরে রাজপথে অস্থিরতা চলছিল। আমি মনে করি, তা ছিল একটি জেগে ওঠার মতো বার্তা।'
উইলিয়াম হানা বলেন, 'হরতালে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছিল। তাই আমার সহকর্মীরা বলছিলেন, দেখুন, এ ধরনের পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে কূটনীতিক হিসেবে বিনিয়োগ করতে বলা আমাদের জন্য কঠিন। কারণ তাঁরা রাস্তায় সংঘাত দেখতে পেয়েছেন। তাঁরা বলতে চেয়েছেন, আমাদের কাছে বিনিয়োগ সহযোগিতা চাইলে আপনারা শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষা করে সহযোগিতা করুন। অর্থাৎ আপনারা সহযোগিতা চাইলে আমাদের সহযোগিতা করুন।'
রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে বহির্বিশ্বের কাছে এ দেশ সম্পর্কে নেতিবাচক বার্তা যাচ্ছে কিনা জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত হানা বলেন, 'গত কয়েক দিনে বিশ্বে কী হচ্ছে তা যদি দেখেন তাহলে মনে হবে, বাংলাদেশ অত্যন্ত উদার দেশ। আর বিশ্ববাসী তা-ই দেখছে। এটি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক ভাবমূর্তি। কিন্তু অন্য এক দিন যদি রাস্তায় রাজনৈতিক সংঘাত চলে, মিছিল-সমাবেশে সংষর্ষ হয় তাহলেও বিশ্ব দেখতে পাবে, এখানে কী চলছে। তাই আমরা কূটনীতিকরা এ দেশের ভাবমূর্তি বদলাতে পারি না। আমরা এ নিয়ে কাজ করতে পারি।'
ব্রাসেলস সফরে বার্তা : রাষ্ট্রদূত হানা বলেন, 'ব্রাসেলস সফরে আমি বাংলাদেশ সম্পর্কে বেশ কিছু সুস্পষ্ট বার্তা পেয়েছি। আর সেগুলো হলো_জলবায়ু পরিবর্তন খাতে বাংলাদেশ ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যতম প্রধান কৌশলগত অংশীদার। সবাই এটি বলেছে। জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে কাজ করেন_ব্রাসেলসের এমন কর্মকর্তারা আমাকে বলেছেন যে, জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক আলোচনায় বাংলাদেশ বিশ্বে নেতৃত্ব দিচ্ছে। তাঁরা বাংলাদেশের সঙ্গে এ ব্যাপারে কাজ করার প্রবল আগ্রহ দেখিয়েছেন।'
রাষ্ট্রদূত বলেন, 'ইউরোপে অর্থনৈতিক সংকটের কারণে সাহায্য কতটা কমবে আমরা জানি না। তবে উন্নয়ন সাহায্যের বড় অংশ বাংলাদেশই পাবে_এটি আমি নিশ্চিত করছি। আমরা উন্নয়ন সহযোগিতা অব্যাহত রাখব। আমি আশা করছি, এ সহযোগিতা ভবিষ্যতে আরো বাড়বে।'
রাষ্ট্রদূত হানা বলেন, 'ইউরোপে আমি আরো যে সুস্পষ্ট বার্তাটি পেয়েছি তা হলো, ইউরোপ এশিয়ার দিকে ঝুঁকছে। আগামী ১০ বা ১৫ বছরে বিশ্বের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বড় অংশই হবে এশিয়ায়। আমরা এশিয়ায় আমাদের বিনিয়োগ ও বাণিজ্য বাড়াতে চাই।'
রাষ্ট্রদূত বলেন, 'এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ সরবরাহ ব্যবস্থার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমি মনে করি, এটি বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক বার্তা। একদিকে আমাদের নিজেদের এবং অন্যদিকে আপনাদের ও আমাদের অভিন্ন স্বার্থে আমরা ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এশিয়ার দিকে ঝুঁকছি। ইউরোপীয় কম্পানিগুলো এখানে বিনিয়োগ ও অধিক হারে ব্যবসা করছে। কারণ আমরা জানি, এখানে সামাজিক প্রবৃদ্ধির হার অনেক।'
রাষ্ট্রদূত বলেন, 'গত বছর রুলস অব অরিজিন পরিবর্তন হওয়ায় ইইউ-বাংলাদেশ ব্যবসা-বাণিজ্যে বড় প্রভাব পড়েছে। নিশ্চয়ই এখানে লাভ-লোকসান আছে। কিন্তু তবু এ নিয়ে অনেক আলোচনার পর আমরা ওই পরিবর্তন এনেছি। এর ফলে বাংলাদেশের অবস্থান বদলে গেছে। আমরা এখন শুধু বলছি না যে, বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্য ইউরোপে যাচ্ছে; আমরা বাংলাদেশের অবস্থানের কথা, তুলনামূলক সুবিধা, বাংলাদেশে বিনিয়োগ এবং ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশের নতুন নতুন পণ্য প্রবেশের কথাও জোর দিয়ে বলছি।'
সুশীল সমাজ : রাষ্ট্রদূত হানা বলেন, 'বাংলাদেশের সুশীল সমাজ অত্যন্ত সমৃদ্ধ। শুরু থেকেই বাংলাদেশের উন্নয়নে সুশীল সমাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। অন্য অনেক দেশে এমনটা দেখা যায় না। গ্রামীণ ব্যাংক, ব্র্যাকের মতো অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান এ দেশে আছে। তারা এ দেশে অত্যাবশ্যক ভূমিকা পালন করছে।'
রাষ্ট্রদূত বলেন, 'আমরা মনে করি, মানবাধিকার ও গণতন্ত্রে সুশীল সমাজের ভূমিকা অপরিহার্য। আমাদের সহযোগিতা কিভাবে জনগণের কাছে পেঁৗছাবে সে ব্যাপারেও তাদের মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা বাংলাদেশে সুশীল সমাজের ভূমিকাকে সহযোগিতা করতে চাই। সুশীল সমাজ ও সরকারের অংশীদারি ভিত্তিতে কাজ করা উচিত।'
ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেন, 'শিশুদের স্কুলে যাওয়াবিষয়ক প্রকল্পও লাল ফিতার দৌরাত্ম্যের কারণে দেরি হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এনজিও ও সরকার_উভয়ের সঙ্গেই কাজ করে। আমরা ওই দুই পক্ষের মধ্যে অংশীদারি দেখতে চাই। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ক্ষুদ্রঋণ যে খাতই হোক না কেন, অংশীদারিই হলো এগিয়ে যাওয়ার উপায়।'
গ্রামীণ ব্যাংক : রাষ্ট্রদূত হানা বলেন, 'গ্রামীণ ব্যাংক সারা বিশ্বেই পরিচিত। গ্রামীণ ব্যাংকের জন্য বাংলাদেশ বিশ্বজুড়ে পরিচিত। বাংলাদেশে আসার ১৫ বছর আগেও আমি গ্রামীণ ব্যাংক সম্পর্কে জানতাম। দুর্গম এলাকায় গ্রামীণ ব্যাংক ছিল সফলতার প্রতীক। বাংলাদেশের উন্নয়নে গ্রামীণ ব্যাংকের অবদান বিশাল। আর এ ভূমিকা অব্যাহত থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ।'
গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ সংশোধনের ব্যাপারে পশ্চিমা দেশগুলোর উদ্বেগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেন, 'গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ কী হবে তা বলা আমাদের কাজ নয়। অতীতের মতো বাংলাদেশের উন্নয়নে ওই ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।'
রাষ্ট্রদূত বলেন, 'ইউরোপে আমাদের অনেক ব্যাংক কেলেঙ্কারির ঘটনা রয়েছে। ব্যাংকগুলো যথাযথভাবে পরিচালিত না হওয়া আমাদের বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটের অন্যতম কারণ। ব্যাংক ঠিকমতো পরিচালিত হওয়া এবং এটি নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। বাংলাদেশে গ্রামীণ ব্যাংক ও অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ড. ইউনূস সারা বিশ্বে সম্মানিত ব্যক্তি। তাঁর জন্যও অনেকে বাংলাদেশকে চেনে।'
রোহিঙ্গা ইস্যু : এই ইস্যুতে রাষ্ট্রদূত হানা বলেন, 'রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বাংলাদেশে অনেক বিতর্ক হয়েছে। এ সংকটের অনেক দিক, জনগণের ভিন্ন ভাবনাও আছে। ব্যাপক বিতর্কের পর আমরা অনুধাবন করছি, রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান মিয়ানমারেই। রোহিঙ্গা সংকটকে আমরা আন্তর্জাতিক সমস্যা বলেই মনে করছি। আর এ সংকট নিয়ে সমস্যা যেমন আছে, তেমনি আছে সুযোগ।'
হানা বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার থেকে পাওয়া তথ্য নিয়ে ব্রাসেলসে আগামী সপ্তাহে বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে। আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনায় রোহিঙ্গা ইস্যু রাখছি এবং মিয়ানমারের ওপর থেকে অর্থনৈতিক অবরোধ ধীরে ধীরে তুলে নেওয়ার সময় কিছু শর্ত দিচ্ছি। তবে এটি সত্যি, এর কোনো সহজ সমাধান নেই। আমি আশা করছি, ভবিষ্যতে ইতিবাচক কিছু দেখতে পাব।'
No comments