এই বটবৃক্ষের অভাব চলচ্চিত্রশিল্পে বহুকাল অনুভূত হবে- সুভাষ দত্তের প্রয়াণ
কোনো কোনো প্রস্থান প্রয়াণ হয়ে ওঠে, কোনো কোনো মৃত্যু জীবিতদের মনে শোকের ভার তুলে দেয়। ৮২ বছর বয়সে বাংলাদেশের সৃজনশীল চলচ্চিত্রের অগ্রণী পুরুষ সুভাষ দত্তের মৃত্যুতে শোকের পাশাপাশি স্মরণে আসে তাঁর অর্ধশতাব্দী জোড়া কৃতিত্বের আখ্যান। শোক ও শ্রদ্ধায় তাঁকে স্মরণ করি, সমবেদনা জানাই তাঁর পরিবারকে।
বাংলাদেশের বাংলা চলচ্চিত্র সূচনাতেই আলোর ছটা দেখাতে পেরেছিল। কারণ, সুভাষ দত্তরা হাল ধরেছিলেন। সে যুগের অন্যান্য কীর্তিমানের মতো তিনিও শুরু করেছিলেন সামান্য থেকে। চলচ্চিত্রের পোস্টার আঁকতে আঁকতেই শুরু করলেন চলচ্চিত্র নির্মাণ। সে সময় এই দেশে একদিকে ভারতীয় বাংলা ছবি, অন্যদিকে পশ্চিম পাকিস্তানি উর্দু সিনেমার জয়জয়কার। এর মধ্যেই ১৯৬৪ সালে মুক্তি পেল সুভাষ দত্তের প্রথম ছবি সুতরাং। বাঙালিরা পেল গর্ব করার মতো এক চলচ্চিত্র, চলচ্চিত্রশিল্প পেল একজন প্রতিভাবান পরিচালক, সিনেমাপ্রিয় দর্শকেরা পেল ভালোবাসার মতো নায়িকা কবরীকে। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সুতরাং একটি মাইলফলক। দেশে ও বিদেশে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার অর্জন করে নেয় ছবিটি। সুভাষ দত্তের দ্বিতীয় মাইলফলক একাত্তরের মুক্তিসংগ্রাম নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী। একে বলা যায়, একাত্তরের জাতীয় সংগ্রামেরও অগ্নিসাক্ষ্য। আরও পরে তিনি আলাউদ্দিন আল আজাদের বিখ্যাত গল্প ২৩ নম্বর তৈলচিত্র অবলম্বনে নির্মাণ করেন বসুন্ধরা। চলচ্চিত্রটি আজও সমালোচকদের আলোচনায় প্ররোচিত করে। সৃজনশীলতা আর জনপ্রিয়তার যে অসাধারণ ঐক্যসূত্র সুভাষ দত্তের ছবিতে দেখা যায়, সেটাই তাঁর প্রতিভার প্রমাণ। এ ছাড়া আয়না ও অবশিষ্ট, কাগজের নৌকা, পালাবদল, সকাল সন্ধ্যা, ডুমুরের ফুল, সবুজ সাথীর মতো দর্শকনন্দিত অনেক ছবি তিনি নির্মাণ করেছেন।
কৃতিত্বের স্বীকৃতির কোনো অভাব হয়নি সুভাষ দত্তের। ১৯৬৫ সালে ফ্রাঙ্কফুর্ট চলচ্চিত্র উৎসবে সুতরাং দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হিসেবে পুরস্কৃত হয়। এ ছাডা মস্কো চলচ্চিত্র উৎসব (১৯৬৭, ১৯৭৩ ও ১৯৭৯) ও নমপেন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে (১৯৬৮) পুরস্কৃত হন এই পরিচালক। ১৯৭৭ সালে তাঁর বসুন্ধরা চলচ্চিত্রটি সেরা পরিচালক ও প্রযোজকসহ মোট পাঁচটি পুরস্কার লাভ করে। চলচ্চিত্রশিল্পে তাঁর অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত একুশে পদকে ভূষিত হন।
সুভাষ দত্ত বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্পে বটবৃক্ষের মতো। তাঁর অভাব বহুদিন যেমন অনুভূত হবে, তেমনি তাঁর অবদান আরও বহু দিন বন্দিত হতে থাকবে।
কৃতিত্বের স্বীকৃতির কোনো অভাব হয়নি সুভাষ দত্তের। ১৯৬৫ সালে ফ্রাঙ্কফুর্ট চলচ্চিত্র উৎসবে সুতরাং দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হিসেবে পুরস্কৃত হয়। এ ছাডা মস্কো চলচ্চিত্র উৎসব (১৯৬৭, ১৯৭৩ ও ১৯৭৯) ও নমপেন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে (১৯৬৮) পুরস্কৃত হন এই পরিচালক। ১৯৭৭ সালে তাঁর বসুন্ধরা চলচ্চিত্রটি সেরা পরিচালক ও প্রযোজকসহ মোট পাঁচটি পুরস্কার লাভ করে। চলচ্চিত্রশিল্পে তাঁর অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত একুশে পদকে ভূষিত হন।
সুভাষ দত্ত বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্পে বটবৃক্ষের মতো। তাঁর অভাব বহুদিন যেমন অনুভূত হবে, তেমনি তাঁর অবদান আরও বহু দিন বন্দিত হতে থাকবে।
No comments