ফিরে ফিরে আসছে সেই হোয়াইটওয়াশের স্মৃতি by নোমান মোহাম্মদ

চাইলে দুই দলের মুখোমুখি একমাত্র টোয়েন্টি টোয়েন্টিতে ১০ উইকেটের বিধ্বংসী জয়ের কথা মনে করিয়ে দিতে পারতেন। কিংবা পাল্টা জবাব হিসেবে এই বিশ্বকাপের অন্যতম ফেভারিট ভারতকে টুর্নামেন্ট শুরুর দিন কয়েক আগে হারানোটাও। অথবা মরিয়া হয়ে গড়গড় মুখস্থ বলে যেতে পারতেন পাল্লেকেলেতে নিজেদের শতভাগ সাফল্যের রেকর্ড।


মার্টিন গাপটিল ওসব পথে হাঁটলেন না। বরং পাল্লেকেলে স্টেডিয়ামের সংবাদ সম্মেলন কক্ষে চোখ-মুখ শক্ত করে ইংরেজিতে যা বললেন, সেটির একটি বঙ্গানুবাদ হয় বটে। তবে ভাবানুবাদটি হয় এর চেয়েও যুঁতসই, 'ভাই রে, আমি তো ওই দলে ছিলাম না! আমাকে কেন ওসব বলে বিব্রত করা?'
বিব্রত বলতে বিব্রত! বাংলাদেশের কাছে ওয়ানডে সিরিজের ওই হোয়াইটওয়াশ যে হয়ে আছে কিউই ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে কলঙ্কজনক অধ্যায়। ২০১০ সালের অক্টোবরের ০-৪ ব্যবধানে হারের ধাক্কায় হাঁড়িকাঠে মাথা দিতে হয়েছিল ড্যানিয়েল ভেট্টোরিকে। ছাড়তে হয়েছিল অধিনায়কত্ব। নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের জেনারেল ম্যানেজার জিওফ অ্যালটও টিকে থাকতে পারেননি পদে। সেই ম্যাচের স্মৃতি উসকে দিলে কিউইরা তো বিব্রত হবেনই। তা তিনি দলের অংশ থাকুন কিংবা না থাকুন!
বছর দুয়েক আগে ঢাকার সেই আশ্চর্য বিকেলগুলোর পর ক্রিকেট-ভূগোলে আর দেখা হয়নি দুই দলের। হচ্ছে আগামীকাল। পাল্লেকেলের সমরযুদ্ধে এবারের টোয়েন্টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ মিশন শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ডের। প্রেরণার জন্য তাই ইতিহাসের চেয়ে বড় আশ্রয় হতে পারে না বাংলাদেশের। মুখে স্বীকার না করলেও প্রতিশোধের উপলক্ষ তো কিউইদের জন্যও। পাহাড়ি উপত্যকায় ছবির মতো সুন্দর পাল্লেকেলের স্টেডিয়ামে কাল সকাল-বিকেল দুই বেলা অনুশীলন করল দুই দল। সেখানে কান পাতলে তাই বাতাসের ফিসফিসানিতে ২০১০-এর সিরিজের আলোচনা শোনা যাওয়াটা বাধ্যতামূলকই!
তা বাংলাদেশের জন্য সেই দিনগুলো গেছেও বটে! তামিম ইকবাল ও মোহাম্মদ আশরাফুল ছিলেন না স্কোয়াডে। প্রথম ম্যাচেই ইনজুরিতে পড়ে ছিটকে যান মাশরাফি বিন মুর্তজা। আরেকটি অবধারিত সিরিজ হারের চোখরাঙানি। অথচ এরপরই যেন ক্রিকেট দেবতা আশীর্বাদের অবিরাম বৃষ্টি ঝরিয়ে দেন সাকিব-মুশফিক-মাহমুদ উল্লাহদের ওপর। অদম্য বাংলাদেশ তাই চিড়েচ্যাপ্টা করে ফেলে নিউজিল্যান্ডকে। সেই 'বাংলাওয়াশ'-এ আটপৌরে মধ্যবিত্ত বাঙালি ক্রিকেট সেদিন আকাশছোঁয়া এক লাফে উঠে গেল অভিজাতদের আসনে। এর আগে ভগ্নশক্তির ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের সাক্ষ্য দেবে রেকর্ডবুক। তবে সমানে-সমান লড়াইয়ে সেই প্রথম কোনো অভিজাতকে গিলোটিনে চড়িয়েছিল বাংলাদেশের ক্রিকেট-সেনারা। তাতে অনুচ্চে উচ্চারিত হয়েছিল ক্রিকেট-রেনেসাঁর!
এরপর বাংলাদেশ সেই রেনেসাঁর পরিপূর্ণতা দিতে পারেনি কেন, সেটি ভিন্ন প্রসঙ্গ। বাংলাদেশ দলের কাছে এখন 'প্রসঙ্গ' একটিই, কিউই পাখি শিকার! রাজহাঁসের ধোয়া পালকের মতো আকাশের নিচে কাল রিচার্ড পাইবাসের শিষ্যদের অনুশীলনের প্রতিটি পদক্ষেপে যেন ফুটে উঠছিল সেই প্রতিজ্ঞা। সবচেয়ে বেশি ছিল কি সাকিবের চোখে-মুখে! সেবার ৪ ম্যাচে ৭১ গড়ে ২১৩ রান এবং ১৫.১৯ গড়ে ১১ উইকেট নিয়ে কেবল ম্যান অব দ্য সিরিজই হননি; স্থায়ী হয়ে আছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসের পৌরানিক নায়কের মর্যাদায়। সেই মর্যাদা ধরে রাখার মিশন যে এটি!
২০১০-এর ওই সিরিজ জয়ের পর প্রধানমন্ত্রী ডেকে সংবর্ধনা দিয়েছেন বিজয়ী বীরদের। অর্থ পুরস্কার, গাড়ি, প্লট এসেছে দেদারসে। কাল নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ে এসবের কিছুই হয়তো হবে না। তবে টোয়েন্টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার এইটে ওঠার পথে দীর্ঘ এক পদক্ষেপ তো এঁকে দিতে পারবে মুশফিকুর রহিমের দল।
এই প্রাপ্তিও-বা কম কিসে!

No comments

Powered by Blogger.