ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল-তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার পক্ষে ছিলেন সংখ্যাগরিষ্ঠ অ্যামিকাস কিউরি by এম বদি-উজ-জামান

সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের মামলায় শুনানিতে বেশির ভাগ আদালত বন্ধুই (অ্যামিকাস কিউরি) তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল রাখার পক্ষে মত দিয়েছিলেন। আদালতে তাঁরা বলেছিলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার গণতন্ত্র ও সুষ্ঠু রাজনৈতিক অবস্থা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ।


তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নে অভিমত দেওয়ার জন্য দেশের আট বিশিষ্ট আইনজীবীকে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে নিয়োগ দেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। ওই অ্যামিকাস কিউরিরা হলেন সাবেক বিচারপতি টি এইচ খান, ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, ড. এম জহির, মাহমুদুল ইসলাম, ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ ও ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিধানসংবলিত ত্রয়োদশ সংশোধনী চ্যালেঞ্জ করে করা এক মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় গত রবিবার রাতে
প্রকাশ করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। রায়টি ঘোষণা করা হয় ২০১১ সালের ১০ মে। এই রায়ে সাত বিচারপতি রবিবার সই করার পর তা প্রকাশ করা হয়। রায়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতি তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের পক্ষে রায় দেন। একই সঙ্গে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীকে অবৈধ বলে ঘোষণা করেন। তবে বিশিষ্ট আইনজীবীরা আদালতে যেসব বক্তব্য দিয়েছিলেন তা রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। অ্যামিকাস কিউরিদের সেসব বক্তব্য সংক্ষিপ্তভাবে পাঠকদের সামনে তুলে ধরা হলো।
টি এইচ খানের বক্তব্য : ১৯৯০ সালের ডিসেম্বরের প্রথমে বাংলাদেশের ক্ষমতার পট পরিবর্তন ও বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণের ঘটনা উল্লেখ করে সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণ আইনজীবী ও সাবেক বিচারপতি টি এইচ খান বলেন, দেশে তখনকার প্রচণ্ড অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে জনগণের স্বার্থে ত্রয়োদশ সংশোধনী পাস হয়। জনগণ তা সানন্দে গ্রহণও করে। সেই আইনটিই এখন সংবিধান পরিপন্থী অজুহাতে অবৈধ ঘোষণার বেআইনি আবেদন করা হয়েছে। তিনি বলেন, নিরপেক্ষ ও স্বাধীন নির্বাচন ছাড়া গণতন্ত্র কল্পনাও করা যায় না। গণতন্ত্রের সঙ্গে নির্বাচন অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। দেশের জনগণের স্বার্থে ও গণতন্ত্রের স্বার্থে ত্রয়োদশ সংশোধন সংবিধানের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছিল। তিনি বলেন, ১৯৯১ সালের সাধারণ নির্বাচনসহ তিনটি নির্বাচন বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতিরা সফলভাবে পরিচালনা করেছেন। তিনি বলেন, জনগণ তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধির মাধ্যমে তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ করে। এ কারণে নির্বাচনও সংবিধানের একটি মৌলিক কাঠামো। তিনি বলেন, ভোট ছিনতাই রোধ করার জন্যই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল।
ড. কামাল হোসেনের ভাষ্য : সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. কামাল হোসেন আদালতে অভিমত দিয়ে বলেন, প্রত্যেকটি মানুষেরই অর্থ, শক্তি, চাপ, নিপীড়ন ও অঙ্গীকারের প্রভাবমুক্ত অবস্থায় নিজের পছন্দমতো ভোট দেওয়ার অধিকার রয়েছে। নির্বাচন কমিশন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে বারবার ব্যর্থ হয়েছে। এ কারণেই একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ধারণা জন্মলাভ করে। তিনি বলেন, কোনো রাজনৈতিক দলকে বাঁচানোর জন্য নয়, সংবিধানকে রক্ষার জন্য ত্রয়োদশ সংশোধনী প্রয়োজন হয়েছিল। এটা ছাড়া তখন আর কোনো উপায়ও ছিল না এবং এটা করা হয়েছিল সব দলের মতানুসারে। সবার সঙ্গে আলোচনাই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ধারণার যৌক্তিক ভিত্তি। তিনি বলেন, সংবিধান (ত্রয়োদশ সংশোধন) আইন, কিভাবে সংবিধানের গণপ্রজাতান্ত্রিক চরিত্র ক্ষুণ্ন করে তা বুঝতে পারছি না। তিনি আরো বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করে। ফলে নির্বাচন অনেক বেশি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যতিরেকে ভোটারদের পছন্দমতো ভোট দেওয়ার স্বাধীনতা থাকে না।
ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের মত : প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক ত্রয়োদশ সংশোধনীর সমালোচনা করলেও তিনি নিরপেক্ষ একটি সরকারের অধীনে নির্বাচনের পক্ষে মত দেন। তিনি বলেন, 'জাতীয় সংসদ ভেঙে যাওয়ার পর নির্বাচন অনুষ্ঠান করার জন্য আমাদের সংবিধানেই এক ধরনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বিদ্যমান রয়েছে। কিন্তু ১৯৯৬ সালে অত্যন্ত সংকটময় পরিস্থিতিতে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি প্রবর্তন করা হয়।' তিনি বলেন, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার অনির্বাচিত ব্যক্তিদের দ্বারা গঠিত। এবং সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি প্রধান উপদেষ্টা হবেন_এ কারণে এটা বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে পারে। ত্রয়োদশ সংশোধনী আইনে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারে প্রধান বিচারপতি ও অন্য বিচারকদের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগের বিধানের কারণে সর্বোচ্চ আদালত হতে স্বাধীন, ন্যায্য ও নিরপেক্ষ সিদ্ধান্ত দেওয়ার ব্যাপারে জনগণের মনে আশঙ্কার উদ্রেক হতে পারে। এ ধরনের আশঙ্কা সর্বোচ্চ আদালতের প্রতি জনগণের সম্মানবোধ ক্ষুণ্ন করতে পারে। বিচারকদের প্রধান উপদেষ্টা বা উপদেষ্টা হওয়া উচিত নয়। তিনি বলেন, নির্দলীয় ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এখনো প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কারণ ক্ষমতাসীন দল বা প্রধান বিরোধী দল সঠিক পথে আচরণ করছে না। তিনি বলেন, 'নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ধারণা আমাদের সংবিধানের মূল কাঠামো বা স্তম্ভের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে আইনের শাসন ও গণতন্ত্রের জন্য এ রকম একটি সরকার সহ্য করতে হয়। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমাদের অবশ্য প্রয়োজনীয়। কিন্তু এটা এমনভাবে পুনর্গঠন প্রয়োজন, যাতে রাষ্ট্রের প্রশাসনে বিচার বিভাগের সরাসরি সম্পৃক্ততা থাকবে না।'
বিপক্ষে মত দেন ড. এম জহির : বিশিষ্ট আইনজীবী ড. এম জহির তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার সমালোচনা করেন তাঁর বক্তব্যে। তবে তিনি অন্যভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনের মত দেন। তিনি বলেন, 'তত্ত্বাবধায়ক সরকার ধারণাটি আমাদের সব রাজনীতিবিদের এবং নির্বাচিত সরকারের সততার ওপর কালিমা লেপন করেছে।' তিনি আরো বলেন, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারসংক্রান্ত বিধানসমূহ, অধ্যায় ২এ এবং ১৪১(ক), (খ) ও (গ) অনুচ্ছেদ একটি বিপজ্জনক সনি্নবেশ। এ ব্যবস্থা গণতন্ত্র এবং আইনের শাসনকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিচ্যুত করে ফেলতে পারে। ড. জহির বলেন, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি জনমনে বিচার বিভাগের ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তিনি বলেন, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পদ্ধতিটি সংসদীয় গণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে যায়। নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে দেশ পরিচালনা করাসংক্রান্ত জাতির প্রত্যাশাকেই কেবল এই ত্রয়োদশ সংশোধনী অকার্যকর করে না, বিচার বিভাগকেও বিতর্কে জড়িয়ে ফেলে। সরকার কর্তৃক নির্বাচন পরিচালনায় অপব্যবহার এড়ানোর জন্য একটি আচরণবিধিসহ অস্ট্রেলিয়া এবং পশ্চিমা দেশগুলোর মতো তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাংলাদেশেও প্রবর্তন করা যেতে পারে।
এম আমীর-উল ইসলামের অভিমত : আরেক সংবিধান বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম বলেন, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সংবিধানের একটি মৌলিক কাঠামো। রাজনৈতিক ন্যায়বিচারের জন্যই অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রয়োজন। গণতন্ত্রের স্বার্থে এখনো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন রয়েছে। এ কারণেই তর্কিত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধন আইনটি বৈধ। তিনি বলেন, অনেক দেশেই নির্বাচনের সময়ের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রয়েছে, যা প্রতিনিধিত্বশীল সরকার নয়। ওই সব দেশে নির্বাচিত সদস্যরাই ওই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে থাকেন। কিন্তু ওই সময়ের জন্য নির্বাচিত সংসদ সদস্য হিসেবে সরকার পরিচালনা করেন না। তাঁরা তাঁদের 'নির্বাচিত' যোগ্যতা বা বৈশিষ্ট্য পরিত্যাগ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সদস্য হিসেবে নির্বাচনের সময়ের জন্য সরকার পরিচালনা করেন।
মাহমুদুল ইসলামের মত : সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ও বিশিষ্ট আইনজীবী মাহমুদুল ইসলাম বলেন, 'আমাদের সংবিধানের ৪৮(১) অনুচ্ছেদ অনুসারে রাষ্ট্রপতি হলেন রাষ্ট্রপ্রধান। তিনি জাতীয় সংসদে জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা নির্বাচিত হয়ে থাকেন। ত্রয়োদশ সংশোধনী দ্বারা ৪৮(১) অনুচ্ছেদের কোনোরূপ পরিবর্তন ঘটানো হয়নি। রাষ্ট্রপতির পদটি এখনো জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা পূরণ হয়ে থাকে এবং সংবিধানের প্রজাতান্ত্রিক বৈশিষ্ট্য ক্ষুণ্ন হয়নি।' তিনি বলেন, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের নির্বাচনে কারচুপি ব্যতিক্রমের পরিবর্তে নিয়মে পরিণত হয়। এটা সত্য যে ত্রয়োদশ সংশোধনীর বিধান দ্বারা সরকারে জনপ্রতিনিধিত্ব স্বল্প সময়ের জন্য স্থগিত থাকে; তবে এটা দেশে গণতন্ত্র চর্চার পথকে সুগম করে। বাংলাদেশের জনগণের বর্তমান রাজনৈতিক পরিপক্বতা অনুযায়ী দেশের ও সংবিধানের গণতান্ত্রিক বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণের নিমিত্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনো বিকল্প নাই। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টার পদটি সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের জন্য ঝুলন্ত মুলা স্বরূপ নিরপেক্ষ বিচার ব্যাহত করার কারণ মনে হতে পারে। কিন্তু এটাকে একজন বিচারকের বিচারকার্যের হস্তক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না। তিনি আরো বলেন, সাম্প্রতিক অতীতে সংবিধান অনুসারে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন প্রক্রিয়ার অপব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু কিছু আইনের অপব্যবহারের কারণে কখনই আইনটি বেআইনি হয়ে যায় না।
রোকন উদ্দিন মাহমুদ যা বলেন : সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ আদালতে বলেন, এ সংবিধান (ত্রয়োদশ সংশোধন) আইনটি আবেগবর্জিতভাবে বিবেচনা করতে হবে। সংবিধান (ত্রয়োদশ সংশোধন) আইনের উদ্দেশ্য হলো কারচুপিহীন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান। স্বীকৃত মতেই বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংবিধানের একটি মৌলিক কাঠামো। প্রশ্ন হচ্ছে, তর্কিত সংবিধান সংশোধন আইনটি বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে কোনোভাবে ক্ষুণ্ন করে কি না। সুপ্রিম কোর্টই সংবিধানের অভিভাবক। সংবিধানের অভিভাবক বিধায় সুপ্রিম কোর্ট সংসদ কর্তৃক প্রণীত আইনের বৈধতা/অবৈধতা ঘোষণা করতে পারে। তিনি বলেন, যেখানে কর্মরত বিচারকরাও বিভিন্ন ধরনের তদন্ত করতে সক্ষম, সেখানে একজন অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির প্রধান উপদেষ্টা হতে বাধা কোথায়? যত জটিলতাই থাকুক না কেন, ওই সময় নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যতীত আর কোনো গ্রহণযোগ্য সমাধান ছিল না।
আজমালুল হোসেন : ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি বলেন, গণতন্ত্র, প্রজাতান্ত্রিক বৈশিষ্ট্য এবং বিচার বিভাগীয় স্বাধীনতা_সংবিধানের এই তিনটি মৌলিক বিষয়কে বিনষ্ট করেছে ত্রয়োদশ সংশোধনী। সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর সঙ্গে তর্কিত সংশোধনীটি এ কারণে সাংঘর্ষিক। তাই এটা বাতিল ঘোষণার যোগ্য। তিনি বলেন, সংবিধানের প্রস্তাবনা, ৭ অনুচ্ছেদ চতুর্থ ভাগের ১ম ও ২য় অধ্যায়ে দেশ কেবলই জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা পরিচালিত হওয়ার প্রত্যাশা করা হয়েছে। প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি সংসদ সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত_সরাসরি জনগণের দ্বারা নির্বাচিত নন। প্রকৃত প্রস্তাবে তাঁর কোনো কার্যকরী নির্বাহী কর্মকাণ্ড নাই। তিনি বলেন, সংবিধানে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাঠামো আমদানি করার পর থেকে সংবিধানে একটি প্রতিনিধিত্বহীন সরকার জনপ্রতিনিধিত্বকারী সরকারের স্থলবর্তী হয়েছে, যা সংবিধানের 'গণতন্ত্র' ও 'প্রজাতান্ত্রিক' বৈশিষ্ট্য দুটির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তিনি আরো বলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা যেকোনো সংবিধানের মৌলিক কাঠামো। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিকে করার বিধান থাকায় ক্ষমতাসীন সরকার তাদের পছন্দের ব্যক্তিকে প্রধান বিচারপতি নিযুক্ত করার চেষ্টা করে। সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগের সময়ও একই লক্ষ্য চিন্তায় রেখে কাজ করা হয়। এ কারণে বিচার বিভাগ স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচারক প্রাপ্তি হতে বঞ্চিত হচ্ছে। প্রধান বিচারপতির পদটিও ক্রমে বিতর্কিত হচ্ছে। আজমালুল হোসেন বলেন, উন্নত দেশগুলোতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় নির্বাচন কমিশনের অধীনে; নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নয়। তিনি আরো বলেন, 'এ ব্যবস্থা থাকায় বেআইনিভাবে ক্ষমতা গ্রহণের মতো ঘটনা ঘটেছে। সেই সুড়ঙ্গ পথ ধরে আইনি আবরণের মাধ্যমে উচ্চাভিলাষীদের ক্ষমতা গ্রহণ করার ব্যবস্থা থেকে যাবে। সেনাবাহিনী সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছরের অভিজ্ঞতা আমাদের সেই আশঙ্কার কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। তাই বাস্তবতার আলোকেই ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল হওয়া আবশ্যক।'

No comments

Powered by Blogger.