হালের ‘বন্ধু বাণিজ্য’ এবং বন্ধুত্বের অর্থনীতি by সৈয়দ মিজানুর রহমান রাজু
অর্থনীতি যদি সীমিত সম্পদের সুষম বা সর্বোচ্চ ব্যবহারের বিজ্ঞান হয়
তাহলে বন্ধুত্বকে মহা সম্পদের স্থানে বসিয়ে তার অর্থনৈতিক মূল্য বিশ্লেষণের
দিন এখন। বন্ধুত্ব যে কত বড় মহাসম্পদের রূপ ধারণ করেছে তা বাজার অর্থনীতির
চলমান ‘বন্ধু-বাণিজ্য’ দেখলেই বোঝা যায়।
সোশ্যাল নেটওয়ার্কের নামে
যা হচ্ছে তার পাশাপাশি মোবাইল কোম্পানিগুলোর মুনাফা অর্জনের সর্বাধিক
গুরুত্বপ্রাপ্ত দিক হচ্ছে এখন ‘বন্ধুত্ব’। শুধু এফএনএফ ভাবনায় অবিরাম কথা
বলিয়ে বিল পরিশোধে বাধ্য করানো নয়। উপরন্তু হাজার মানুষের ভীড় থেকে তাকে
তুলে নিয়ে একাকিত্বের মাঝে বদ্ধ ঘরে নিজেকে আটতে রেখে বন্ধুত্ব খোঁজার জন্য
মোবাইল কোম্পানিগুলোর শতশত লোভনীয় অফার এখন ঘিরে আছে সবাইকে।
একাকিত্বের
মাঝে বন্ধুত্বের নামে মিথ্যাচারের সর্বশ্রেষ্ঠ দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে
আজকের অসংখ্য তরুণ-তরুণী চূড়ান্ত বিচারে আসলে চিরদিনের জন্য বন্ধুহীন হয়ে
পড়ছে। এই ধারণা আমাদের কাছে স্পষ্ট। স্পষ্ট ধারনার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দেবার
জন্যই আজ আপনাদের কাছে এ লেখার অবতারণা।
সাথে এটাও বলে রাখি যে, সর্বস্তরের জনসমক্ষে প্রকাশের জন্য এটাই আমার প্রথম লেখা। একটু খেয়াল করলেই দেখবেন চায়ের দোকানের সেই আড্ডাগুলো হাজার বছরের সামাজিক রাজনৈতিক শিক্ষালয় হিসাবে চলে আসছিলো। আর এটা সম্ভব ছিল শুধুমাত্র বন্ধুত্বের শক্তি দিয়ে। প্রকৃত বন্ধুত্বের কারণেই দেখেছি তর্ক-বিতর্ক ভূল বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে সেই বন্ধুত্বের আড্ডাগুলো পরমত সহিষ্ণু সমাজে আমাদের ধন্য করে রেখেছিলো বিপর্যয়ের মাঝেও।
প্রগতিশীল চিন্তার আধার হিসেবে কোনো অংশেই কলকাতার ‘কফি হাউজের’ চেয়ে নাটিয়াবাড়ী, পাবনার অতুড়ালয় কম নয়। এ ভূখণ্ডের আনাচে কানাচে বন্ধুত্বের মোহে মানুষ উৎসর্গ করেছে ’ইগো’ নামক ব্যক্তিক ও সামাজিক শত্রুকে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে, মহা মূল্যবান সেই বন্ধুত্বে ক্রম অবসান ঘটে চায়ের দোকানগুলোর টিভি-ভিসিআর-ডিভিডি এবং পরবর্তীতে স্যাটেলাইট টিভির আগমনে। এখানে তথাকথিত চলচিত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে বন্ধুত্বের অবসান ঘটেছে। নির্বিকার মানুষগুলো চা খাওয়ার নামে ছবি দেখতে গিয়ে কখন যে মুখের বদলে পকেটে চা ঢেলে দেয়, তা সে শুধু তখনই বুঝতে পারে নিস্তেজ শরীরে যখন গরম ছ্যাকা লাগে। শুধু ছ্যাকা লাগে না মনে। পাশে বসে থাকা বন্ধুটির মনোযোগও হারিয়েছে আজ পরস্পর।
যদিও মনোযোগ হারানোর এই দৃশ্যটি এখন প্রায় প্রতি মা-বাবার কাছেই পরিচিত। যে সন্তানটি কাজ শেষে বাড়ি ফেরা বাবা মায়ের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তো তার আজ টিভি পর্দা থেকে চোখ ফেরানোর সময় নেই। সন্তানের বন্ধুত্ব হারালেন জনক-জননী। আপনারাই বলুন, অর্থনীতির ছাত্র হিসাবে এই দূষ্প্রাপ্যতাকে যদি অর্থনীতির আওতায় না আনি তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে মরণোত্তর মহাপাপের পুরষ্কার কি আমি এড়াতে পারবো?
এই ফাঁকে ছোট করে বলে রাখি বাতাসও পানি কিন্তু এখনো অর্থনীতির ভাবনায় ফ্রি গুডস। বিশ্বকে যার মূল্য দিতে হচ্ছে প্রাকৃতির বিশ্ব বিপর্যয়ের মাধ্যমে। আমি মনে করি, বন্ধুত্বের অর্থনীতি আলোচনায় না এলে বিশ্ব হারাবে মানুষ ও মানবতাকে। যার নজীর আমরা দেখতে পাই বর্তমান রাজনৈতিক অঙ্গনে।
মনে রাখবেন, বর্তমান দুনিয়ার সবচেয়ে মক্তিশালী মুরুব্বী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা যখন ফেসবুক ব্যবহারে তার কন্যারত্নদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আনেন তখনই কিন্তু আমার দেশের হাজারো তরুণ-তরুণী বদ্ধ ঘরে একাকিত্বের উৎসবে মেতে উঠছে তথাকথিক বিশ্ব জয়ের নেশায়। যে মানুষ নিজেকে হারিয়ে ফেলে নিজের কাছ থেকেই তার কাছে যে সবই অধরা থেকে যাবে তা এই অপরিণামদর্শীদের কে বোঝাবে।
একদিন সেই অমোঘ সত্যই চাপা পড়ে বাজার অর্থনীতির অনৈতিক ও অতি মুনাফালোভী মন ভোলানো প্রপাগন্ডায়।
সামাজিক যোগাযোগের বিরুদ্ধে নই আমি। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগের নামে অসামাজিক অনৈতিক ও আত্মঘাতী মানসিকতা নিয়ে চিন্তিত তথাকথিত ফ্রি আসলে যে ক্রীতদাসগিরি এটা ভূলে থাকার মধ্যেই সকল শঙ্কা আমার। কেননা আমাদের ইন্টারনেট বিলের বড় অংশটাই যে মার্কিন জিডিপি বাড়ায় সেটা আসলে কয়জন বোঝেন? যাই হোক, অন্যের দোষ ধরা আমার কাজ নয় বরং নিজের ও নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় মনোযোগ দিতে চাই।
যে দেশে গায়ে গায়ে লেগে আছে মানুষ, ছড়িয়ে আছে বন্ধুত্বের সংস্কৃতি, সামাজিক পুঁজি, সেই দেশে টাকার বিনিময়ে বন্ধুত্বের নামে একাকিত্বের সংস্কৃতি চাপিয়ে দেবার পথে বাধা দিতে চাই। কেননা নিরপেক্ষ মানুষ ও ছাগলের কোনো পার্থ্যক্য আছে বলে মনে করি না আমি।
বন্ধুত্বের মাধ্যমেই দূর হতে পারে লিঙ্গ বৈষম্য। রাজনৈতিক কলহসহ নিয়ন্ত্রণে থাকতে পারে উচ্চ রক্তচাপ ও ডাযাবেটিকস। বন্ধু বন্ধুত্বের জন্য রোগমুক্তি ঘটেছে অনেক জনের।
বন্ধুত্বের মাধ্যমে দুর হতে পারে বেকারত্ব ও দারিদ্র। বন্ধুত্বের উৎকর্ষে ভেসে যেতে পারে অসহিঞ্চুতার রাজত্ব। যা প্রায় অর্ধগ্রাস করেছে পৃথিবীকে। বন্ধুত্বের কাছে যদি কুকুর-সিংহ সরীসৃপ পোষ মানে বন্ধুত্বের কারণে যদি শালিক-টিয়া কথা শেখে-- মানুষ কেন পারবে না মানুষের কাছে জয়ী হতে! মানুষ কেন পারবে না দারিদ্র দূর করে সর্বাঙ্গ সুন্দর নিজেকে তথা দেশ ও পৃথিবীকে গড়তে। আসুন আমরা বন্ধুত্বকে অর্থনৈতিক মূল্য দিতে শুরু করি। ‘বন্ধু’ একদিন অর্থনৈতিক মুক্তি দেবে পৃথিবীর। কেননা জীবনের অর্থ যেমন শুধুমাত্র টাকা রূপার্থে’ নয়, ঠিক তেমনি অর্থনীতি শুধুমাত্র টাকারূপী অর্র্থের নীতি নয়-- বরং জীবন যাপনের নতুন ভাবনার জন্মদাতা। নিউ ওয়ে অব থিংকিং।
সাথে এটাও বলে রাখি যে, সর্বস্তরের জনসমক্ষে প্রকাশের জন্য এটাই আমার প্রথম লেখা। একটু খেয়াল করলেই দেখবেন চায়ের দোকানের সেই আড্ডাগুলো হাজার বছরের সামাজিক রাজনৈতিক শিক্ষালয় হিসাবে চলে আসছিলো। আর এটা সম্ভব ছিল শুধুমাত্র বন্ধুত্বের শক্তি দিয়ে। প্রকৃত বন্ধুত্বের কারণেই দেখেছি তর্ক-বিতর্ক ভূল বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে সেই বন্ধুত্বের আড্ডাগুলো পরমত সহিষ্ণু সমাজে আমাদের ধন্য করে রেখেছিলো বিপর্যয়ের মাঝেও।
প্রগতিশীল চিন্তার আধার হিসেবে কোনো অংশেই কলকাতার ‘কফি হাউজের’ চেয়ে নাটিয়াবাড়ী, পাবনার অতুড়ালয় কম নয়। এ ভূখণ্ডের আনাচে কানাচে বন্ধুত্বের মোহে মানুষ উৎসর্গ করেছে ’ইগো’ নামক ব্যক্তিক ও সামাজিক শত্রুকে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে, মহা মূল্যবান সেই বন্ধুত্বে ক্রম অবসান ঘটে চায়ের দোকানগুলোর টিভি-ভিসিআর-ডিভিডি এবং পরবর্তীতে স্যাটেলাইট টিভির আগমনে। এখানে তথাকথিত চলচিত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে বন্ধুত্বের অবসান ঘটেছে। নির্বিকার মানুষগুলো চা খাওয়ার নামে ছবি দেখতে গিয়ে কখন যে মুখের বদলে পকেটে চা ঢেলে দেয়, তা সে শুধু তখনই বুঝতে পারে নিস্তেজ শরীরে যখন গরম ছ্যাকা লাগে। শুধু ছ্যাকা লাগে না মনে। পাশে বসে থাকা বন্ধুটির মনোযোগও হারিয়েছে আজ পরস্পর।
যদিও মনোযোগ হারানোর এই দৃশ্যটি এখন প্রায় প্রতি মা-বাবার কাছেই পরিচিত। যে সন্তানটি কাজ শেষে বাড়ি ফেরা বাবা মায়ের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তো তার আজ টিভি পর্দা থেকে চোখ ফেরানোর সময় নেই। সন্তানের বন্ধুত্ব হারালেন জনক-জননী। আপনারাই বলুন, অর্থনীতির ছাত্র হিসাবে এই দূষ্প্রাপ্যতাকে যদি অর্থনীতির আওতায় না আনি তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে মরণোত্তর মহাপাপের পুরষ্কার কি আমি এড়াতে পারবো?
এই ফাঁকে ছোট করে বলে রাখি বাতাসও পানি কিন্তু এখনো অর্থনীতির ভাবনায় ফ্রি গুডস। বিশ্বকে যার মূল্য দিতে হচ্ছে প্রাকৃতির বিশ্ব বিপর্যয়ের মাধ্যমে। আমি মনে করি, বন্ধুত্বের অর্থনীতি আলোচনায় না এলে বিশ্ব হারাবে মানুষ ও মানবতাকে। যার নজীর আমরা দেখতে পাই বর্তমান রাজনৈতিক অঙ্গনে।
মনে রাখবেন, বর্তমান দুনিয়ার সবচেয়ে মক্তিশালী মুরুব্বী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা যখন ফেসবুক ব্যবহারে তার কন্যারত্নদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আনেন তখনই কিন্তু আমার দেশের হাজারো তরুণ-তরুণী বদ্ধ ঘরে একাকিত্বের উৎসবে মেতে উঠছে তথাকথিক বিশ্ব জয়ের নেশায়। যে মানুষ নিজেকে হারিয়ে ফেলে নিজের কাছ থেকেই তার কাছে যে সবই অধরা থেকে যাবে তা এই অপরিণামদর্শীদের কে বোঝাবে।
একদিন সেই অমোঘ সত্যই চাপা পড়ে বাজার অর্থনীতির অনৈতিক ও অতি মুনাফালোভী মন ভোলানো প্রপাগন্ডায়।
সামাজিক যোগাযোগের বিরুদ্ধে নই আমি। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগের নামে অসামাজিক অনৈতিক ও আত্মঘাতী মানসিকতা নিয়ে চিন্তিত তথাকথিত ফ্রি আসলে যে ক্রীতদাসগিরি এটা ভূলে থাকার মধ্যেই সকল শঙ্কা আমার। কেননা আমাদের ইন্টারনেট বিলের বড় অংশটাই যে মার্কিন জিডিপি বাড়ায় সেটা আসলে কয়জন বোঝেন? যাই হোক, অন্যের দোষ ধরা আমার কাজ নয় বরং নিজের ও নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় মনোযোগ দিতে চাই।
যে দেশে গায়ে গায়ে লেগে আছে মানুষ, ছড়িয়ে আছে বন্ধুত্বের সংস্কৃতি, সামাজিক পুঁজি, সেই দেশে টাকার বিনিময়ে বন্ধুত্বের নামে একাকিত্বের সংস্কৃতি চাপিয়ে দেবার পথে বাধা দিতে চাই। কেননা নিরপেক্ষ মানুষ ও ছাগলের কোনো পার্থ্যক্য আছে বলে মনে করি না আমি।
বন্ধুত্বের মাধ্যমেই দূর হতে পারে লিঙ্গ বৈষম্য। রাজনৈতিক কলহসহ নিয়ন্ত্রণে থাকতে পারে উচ্চ রক্তচাপ ও ডাযাবেটিকস। বন্ধু বন্ধুত্বের জন্য রোগমুক্তি ঘটেছে অনেক জনের।
বন্ধুত্বের মাধ্যমে দুর হতে পারে বেকারত্ব ও দারিদ্র। বন্ধুত্বের উৎকর্ষে ভেসে যেতে পারে অসহিঞ্চুতার রাজত্ব। যা প্রায় অর্ধগ্রাস করেছে পৃথিবীকে। বন্ধুত্বের কাছে যদি কুকুর-সিংহ সরীসৃপ পোষ মানে বন্ধুত্বের কারণে যদি শালিক-টিয়া কথা শেখে-- মানুষ কেন পারবে না মানুষের কাছে জয়ী হতে! মানুষ কেন পারবে না দারিদ্র দূর করে সর্বাঙ্গ সুন্দর নিজেকে তথা দেশ ও পৃথিবীকে গড়তে। আসুন আমরা বন্ধুত্বকে অর্থনৈতিক মূল্য দিতে শুরু করি। ‘বন্ধু’ একদিন অর্থনৈতিক মুক্তি দেবে পৃথিবীর। কেননা জীবনের অর্থ যেমন শুধুমাত্র টাকা রূপার্থে’ নয়, ঠিক তেমনি অর্থনীতি শুধুমাত্র টাকারূপী অর্র্থের নীতি নয়-- বরং জীবন যাপনের নতুন ভাবনার জন্মদাতা। নিউ ওয়ে অব থিংকিং।
ডায়িরেক্টর, স্টুডেন্টস অ্যাফেয়ার, ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি
No comments