বাপেক্সের আরেকটি সাফল্য-গ্যাস সংকট নিরসনে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হোক

রাষ্ট্রীয় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কম্পানি বাপেক্স আরো একটি বড় সাফল্য দেখিয়েছে। তিতাস গ্যাসক্ষেত্রে তারা আরো পৌনে তিন ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ) গ্যাসের সন্ধান পেয়েছে। এর মধ্যে উত্তোলনযোগ্য গ্যাসের পরিমাণ প্রায় দুই ট্রিলিয়ন ঘনফুট, যা বর্তমান ব্যবহার অনুযায়ী দুই বছরের ব্যবহৃত গ্যাসের সমান।


এ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পেট্রোবাংলা ও বাপেক্সের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পর্যায়ক্রমে এই গ্যাস উত্তোলন করা হবে এবং কিছু গ্যাস ভবিষ্যতের জন্য রেখে দেওয়া হবে। বর্তমানে বাংলাদেশে গ্যাসের উত্তোলনযোগ্য মজুদ রয়েছে ১৮ টিসিএফ। ২০২১ সালের মধ্যে এই মজুদ ২২ টিসিএফে উন্নীত করার লক্ষ্যে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। আমরা বাপেক্সের এই নতুন সাফল্যকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।
গ্যাস এখন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেছে। শিল্প-কারখানায় ব্যবহারের পাশাপাশি রান্নাবান্না ও যানবাহনেও গ্যাসের ব্যবহার অনেক বেড়েছে। প্রতিদিনই বাড়ছে গ্যাসের চাহিদা। এ অবস্থায় নতুন নতুন মজুদ আবিষ্কার ও উত্তোলন বাড়ানো না গেলে হঠাৎ করেই আমাদের এক মহাবিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হবে। নিকট-অতীতে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে আমরা বিদেশি কম্পানির ওপর প্রায় সম্পূর্ণ নির্ভরশীল ছিলাম। তার অনেক খেসারতও আমরা দিয়েছি। সেদিক থেকে রাষ্ট্রীয় এই কম্পানিটির অব্যাহত অগ্রযাত্রা আমাদের অনেক আশান্বিত করে। ইতিমধ্যে বাপেক্স এ রকম বেশ কিছু উত্তোলনযোগ্য মজুদ আবিষ্কার করেছে। এর মধ্যে নোয়াখালীর সুন্দলপুরে রয়েছে ৫০০ থেকে ৭০০ বিলিয়ন কিউবিক ফুট (বিসিএফ), রশিদপুর গ্যাসক্ষেত্রে সাড়ে তিন টিসিএফ, শ্রীকাইলে ৩০০ বিসিএফ গ্যাসের মজুদ পাওয়া গেছে। সম্ভাব্য মজুদের সন্ধান পাওয়া গেছে নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, পাবনা ও গাজীপুরে। নতুন গ্যাসকূপ স্থাপন ও উত্তোলন বাড়াতেও বাপেক্স ইতিমধ্যে যথেষ্ট সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে। কিন্তু আত্মতুষ্টি লাভ করার কোনো সুযোগ নেই। গ্যাসের চাহিদা যে হারে বাড়ছে উত্তোলন বৃদ্ধি তার সঙ্গে মোটেও সংগতিপূর্ণ নয়। ফলে গ্যাসের অভাবে অনেক শিল্প-কারখানা ঠিকমতো চালানো যাচ্ছে না। গ্যাসের নতুন আবাসিক সংযোগ প্রদান বন্ধ রাখা হয়েছে। পুরনো সংযোগেও ঠিকমতো গ্যাস পাওয়া যায় না। এখনো গ্যাস রেশনিং করতে হয়। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য বাপেক্সকে আরো শক্তিশালী করা প্রয়োজন। পাশাপাশি বিদেশি কম্পানিগুলোকেও বাদ দেওয়া যাবে না। ইতিমধ্যে বঙ্গোপসাগরের বিস্তৃত এলাকায় বাংলাদেশের অধিকার নিশ্চিত হয়েছে। সেখানকার দুটি ব্লকে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের জন্য বহুজাতিক কম্পানি কনোকো-ফিলিপসের সঙ্গে চুক্তিও হয়েছে। আমরা আশা করি, সরকার দেশের স্বার্থ অক্ষুণ্ন রেখে আরো বিদেশি কম্পানির সঙ্গে অনুরূপ চুক্তি সম্পাদন করবে এবং বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের কাজ দ্রুত এগিয়ে নেবে।
শুধু উত্তোলন বাড়ালেই সব সমস্যার সমাধান হবে না। উত্তোলন বাড়ানোর পাশাপাশি গ্যাসের অপচয় বন্ধ করতে হবে, যৌক্তিক ও প্রত্যাশিত ব্যবহার বাড়াতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর চুরি ঠেকাতে হবে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নিজেই জানিয়েছেন, প্রতিদিন প্রায় ১৮ লাখ টাকার গ্যাস চুরি হয়ে যাচ্ছে এবং লক্ষাধিক অবৈধ গ্যাসসংযোগ রয়েছে। তিনি জানান, তাঁরা চুরি ঠেকানোর চেষ্টা করছেন। আমাদের প্রশ্ন, জেনেও এত বড় চুরি ঠেকাতে তাঁরা এমন ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন কেন? অথচ এই চুরি ঠেকানো গেলে সেই অর্থে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটিরই সক্ষমতা অনেক বেশি বাড়ানো যেত এবং তাতে দেশ আরো বেশি উপকৃত হতো। কাজেই এই চুরি ঠেকানোর পাশাপাশি গ্যাসের দীর্ঘস্থায়ী ও পরিকল্পিত ব্যবহার নিশ্চিত করা হোক। গ্যাস সংকট নিরসন করে দেশের অর্থনীতিকে আরো বেশি গতিশীল করা হোক।

No comments

Powered by Blogger.