এবার বসুন্ধরায় খাদ্যসম্ভার নিয়ে আসছেন মা by সুকুমার সরকার

দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালন হচ্ছে মা দুর্গার প্রধান ব্রত। আবহমানকাল থেকে আমরা মা দুর্গার কাছ এ বাণী শুনে আসছি। এবার বসুন্ধরায় মা আসছেন উদার হাত নিয়ে। অর্থাৎ হাতির পিঠে করে মা দুর্গার আগমণ ঘটছে মর্তে। তাই সঙ্গে করে নিয়ে আসছেন প্রচুর খাবার-দাবার।

এজন্য বসুন্ধরায় এবার কোন খাদ্য কষ্ট দেখা দেবে না। কেউ অনাহারে থাকবেনা। আমাদের এ পৃথিবীতে আগামী বছরটা প্রচুর খাদ্য-শষ্য, ফল-মুলে ভরপুর  থাকবে।
মর্ত্যে সন্তানদের নিয়ে ৫ দিন থেকে মা দুর্গা স্বামীর গৃহ কৈলাশে ফিরবেন দোলায় অর্থাৎ নৌকায় চেপে। এজন্য সামান্য বৃষ্টি-বাদল হতে পারে।
DURGA
তবে এতে বসুন্ধরা হবে উর্বরা। ফলবে প্রচুর ফসল। এ মর্তে থাকবে না খাদ্যের জন্য কোন হাহাকার। স্বভাবতই মানুষের মধ্যে বিরাজ করবে স্বস্তি। কমবে হিংসা আর হানাহানি। দশভূজা মা দুর্গার কামনাই তাই। তার সন্তানরা যেন বসুন্ধরায় হানাহানি ছেড়ে সুখে-শান্তিতে থাকে।

কিন্তু কিছু মানুষ যে তার স্বভাব না পাল্টিয়ে সব সময় অন্যের শান্তি কেড়ে নেওয়ার জন্য কুচিন্তা করে- তার ফল তাকে ভোগ করতেই হয়।

কারণ মা কখনো তার শান্তিপ্রিয় সন্তানদের বিপদে রাখেন না। তাকে সেই বিপদ থেকে উদ্ধার করেন। রামচন্দ্র তো মাকে বন্দনা করে সেই বিপদ থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন। প্রাণ হারিয়েছিল দুষ্ট অসুর।

মা এ থেকে তার সন্তানদের এ শিক্ষাই গ্রহণ করতে বলেছেন।

এদিকে সব মণ্ডপে দেবী দুর্গার প্রতিমা গড়ার কাজ চলছে বেশ জোরে শোরে। প্রতিমা গড়ার কারিগররা দারুণ ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা গড়তে।

এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলেও এবার পুজোর আয়োজন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সেখানে প্রতিমা গড়ার কাজও শেষ হয়ে গিয়েছে। এখন শুধু বাকি পুজো দেওয়ার পালা। 

মাকে মর্তে কাছে পেয়ে পুজো দিতে তার মর্তের সন্তানরা এবারও ব্যাপক আয়োজন করেছে। এরমধ্যে রয়েছে-
মহাষষ্ঠীতে (২০ অক্টোবর) শনিবার সকাল ০৯টা ৩৭ মিনিট ১৫ সেকেন্ডে ষষ্ঠ্যাদি কল্পারম্ভ। সায়ংকালে দেবীর বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাস।

মহাসপ্তমী (২১ অক্টোবর) রোববার সকাল ০৮টা ১৫ মিনিট ৩১ সেকেন্ডে দেবীর নব পত্রিকায় প্রবেশ, স্থাপন সপ্তমাদি কল্পারম্ভ ও বিহিত পুজো।

মহাষ্টমী (২২ অক্টোবর) সোমবার সকাল ০৯টা  ৫৭ মিনিট ২৩ সেকেন্ডে দেবীর মহাষ্টমী কল্পারম্ভ ও বিহিত পুজো। এদিন সন্ধি পুজো আরম্ভ হবে রাত ১২টা ৪৬ মিনিট ৫৪ সেকেন্ডে এবং শেষ হবে রাত ১টা ৩৪ মিনিট ৫৪ সেকেন্ডে।

মহানবমী (২৩ অক্টোবর) মঙ্গলবার সকাল ৯টা ৫৭ মিনিট ২৮ সেকেন্ডে শুরু হবে দেবীর মহানবমী কল্পারম্ভ ও বিহিত পুজো।

বিজয় দশমী (২৪ অক্টোবর) বুধবার সকাল ৭টা ৫৫ মিনিট ৩৪ সেকেন্ডে দেবীর দশমী বিহিত পুজো সমাপন ও দর্পন বিসর্জন।

শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে মহানগর সার্বজনীন পুজো কমিটি ৫ দিনব্যাপী ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। তাদের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- স্বেচ্ছায় রক্তদান, ভক্তিমূলক সংগীতানুষ্টান, দুঃস্থদের মাঝে বস্ত্র বিতরণ, মহাপ্রসাদ বিতরণ, আরতি প্রতিযোগিতা বিবিধ।

মহানগর সার্বজনীন পুজো কমিটির সভাপতি বাসুদেব ধর এবং সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জি শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তারা বলেন, পুজোর সার্বিক প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন।
DURGA
পুজোর প্রাক প্রস্তুতি হিসেবে শুভ মহালয়া হয়েঝে গত সোমবার। এদিন থেকেই শুরু হয়েছে দেবীপক্ষ। দেবী দুর্গাকে মর্ত্যে আবাহণের মাধ্যমে দেবীর শুভাগমনের আনুষ্ঠানিক প্রতীক্ষাও শুরু হয়ে গেছে এদিন থেকেই।

এদিন থেকেই দেশের বিভিন্ন মন্দির-মণ্ডপে দেবী দুর্গার আগমনী বার্তায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ঘরে ঘরে উৎসবের আমেজ বইতে শুরু করেছে। দুর্গা পুজোর বাজনা বেজে ওঠে সারাদেশে।

সারাদেশের ২৮ হাজার আর ঢাকা মহানগরের ২০২টি পুজো মণ্ডপে সোমবার ভোর ৬টায় মহালয়ার ঘট স্থাপন ও সকাল ৯টায় বিশেষ পুজো অনুষ্ঠিত হয়।

ভোরে পিতৃ তর্পণ ও চণ্ডীপাঠের মাধ্যমে দেবীকে আবাহন করেন হিন্দু ধর্মের অনুসারীরা। পূজার্থীরা আনুষ্ঠানিকভাবে দুর্গা পুজোর দিন গণনাও শুরু করেন শুভ মহালয়ার মাধ্যমে।

এছাড়া রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠ, সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দির, মিরপুর কেন্দ্রীয় মন্দির, কলাবাগান পুজোমণ্ডপ, বনানী পুজোমণ্ডপসহ বিভিন্ন মণ্ডপে দেবীবন্দনার আমেজ বইছে।

চণ্ডীপাঠ আর অমাবশ্যায় হৃদয়ে নাচন তুলে ঢাকে পড়েছে কাঠি। দেবী দুর্গার আগমনে বিভিন্ন মণ্ডপে ধূপের ধোঁয়ায় ঢাক-ঢোলক, কাঁসর, মন্দিরের  চারপাশে পুরোহিতের ভক্তিকণ্ঠে- ‘যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরুপেন সংস্থিতা-নমন্তৈস্য নমন্তৈস্য নমোঃ নমোঃ’ মন্ত্র উচ্চারণ অনুরিত হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.