আরেক আলোকে-জয়তু মালালা ইউসুফজাই by ইনাম আহমদ চৌধুরী
'এই গানটি তোমার জন্যে, উৎসর্গ করলাম_মালালা ইউসুফজাই।' এক ক্রন্দনরতা ম্যাডোনা_ বিশ্বসেরা পপ গায়িকা। 'হিউম্যান নেচার' গাইতে গিয়ে ঘোষণা করলেন। অসংখ্য শ্রোতার কাছে উচ্চস্বরে আবেদন জানালেন_ মালালার সংগ্রামে যোগ দাও_ শিক্ষাকে সমর্থন করো, নারীর অধিকারের জন্য করো যুদ্ধ।
শুধু সারা পাকিস্তান নয়, বিশ্বজুড়ে মানুষ প্রতিবাদ জানাল মালালার ওপর এর জঘন্য হামলার বিরুদ্ধে, সমর্থন জানাল, নীরবে প্রার্থনা করল মালালার জীবনের জন্য। তার বেঁচে থাকার জন্য।
মালালা ইউসুফজাই। এই অকুতোভয় বীরশ্রেষ্ঠা কিশোরীর জীবনের শঙ্কা মুক্তির জন্য প্রেসিডেন্ট ওবামা থেকে শুরু করে ইন্দোনেশিয়ার প্রত্যন্ত দ্বীপের সুরখদীন, মরক্কোর মরুপ্রান্তের যাযাবর যুবক আবদুল্লাহ বাকি, আর আলম আটার কলেজছাত্রী আলেমোভা_ সবাই জানাল দোয়া ও শুভ কামনা। পাকিস্তানের সুনি্ন ইত্তেহাদ কাউন্সিলের ৫০ জন ইসলামী চিন্তাবিদ মালালার ওপর হামলাকে ইসলামবিরোধী বলে আখ্যায়িত করে পরবর্তী জুমাবারে নিন্দা দিবস পালন করার আহ্বান জানালেন। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী শুধু সহানুভূতি ও সমর্থন নয়, সহ-সংগ্রামের প্রতিশ্রুতি দিলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রব্বানি খার মালালার ওপর হামলা এবং এর প্রতিবাদকে গণজাগরণের বার্তা বলে উল্লেখ করে এ ধরনের আক্রমণের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানালেন। তালেবানবিরোধী ফতোয়ায় ইসলামী চিন্তাবিদরা বলেন_ তালেবান নেতারা ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে নিজেরাই অন্ধ, বিপথগামী ও ইসলামবিরোধী বলে নিজেদের প্রতিপন্ন করেছেন। হিনা রব্বানি আরও বললেন, 'মালালার ওপর আক্রমণ পাকিস্তানের জনগণকে জেগে ওঠার ডাক দিয়েছে। অজস্র বোমা ও ড্রোন যা করতে পারেনি, এক মালালা তার চেয়েও বেশি শক্তভাবে তালেবানকে প্রত্যাখ্যান করেছে।' জয়তু মালালা।
আশ্চর্য, মালালার বাবা-মা কি তাদের শিশুসন্তানের ভবিষ্যতের রূপ জন্ম-পূর্বেই বুঝতে পেরেছিলেন? তারা নবজাত শিশুর নামকরণ করেছিলেন_ এক অসমসাহসী পাঠান নারী মালালাই আন্নার নামে, যিনি শুধু একজন পশতু লোককবিই ছিলেন না, ১৯ বছরেরও কম বয়সে তিনি সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ১৮৮০ সালে প্রত্যক্ষ লড়াইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। তার সাহসিকতা তাকে পশতুনদের মধ্যে এক কিংবদন্তিতে রূপান্তর করেছে। আফগান ইতিহাসের এই জননন্দিত নারী তরুণী প্রাণ দিয়েছিলেন স্বাধীনতার সংগ্রামে; কিন্তু তার আত্মদান অনুপ্রাণিত করেছে উপমহাদেশের অগণিত স্বাধীনতাকামী ঔপনিবেশিকতাবিরোধী যোদ্ধাদের। শতাধিক বছর ধরে উদ্বুদ্ধ করেছে বিশ্বজোড়া সাহসী নারী সংগ্রামীদের। মালালা ইউসুফজাইয়ের অবিস্মরণীয় সংগ্রামের শুরু কিশোর বয়স থেকেই। আজ তিনি মৃত্যুর বিরুদ্ধে লড়ছেন। কিন্তু তার সংগ্রামের বাণী হলো ধর্মান্ধতা, শিক্ষা-বিরোধিতা, কূপমণ্ডূকতা, নারী অধিকার খণ্ডনকারীদের বিরুদ্ধে। আলোকিত মন ও সভ্যতার অগ্রগতির স্বপক্ষে।
পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে পশ্চিম হিমালয়ান রেঞ্জের শেষ প্রান্তে হিন্দুকোষ ও কারাকোরাস পর্বতারাজির কোল-ঘেঁষে অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সোয়াত উপত্যকা। বর্তমান পাকিস্তানের খাইবার-পাখতুন খাওয়া প্রদেশে। পৃথিবীতে বোধকরি এর চেয়ে নয়নাভিরাম স্থান খুব কমই আছে। প্রায় চার হাজার বছর আগে যখন আর্যরা মধ্য এশিয়া থেকে আফগানিস্তানের পর্বতাকীর্ণ অঞ্চল পেরিয়ে অধিকতর অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ সন্ধান মানসে খাইবার গিরিবর্ত্ন অতিক্রম করে পূর্বদিকে এগোলেন, একটি আশ্চর্য সুন্দর উপত্যকা তাদের নজরে এলো, সংস্কৃত ভাষায় এই পরম প্রশান্তির উপত্যকা ও বহমানা নদীর নাম দিলেন তাদের ভাষায় 'সোয়াস্তি' (স্বস্তি) অর্থাৎ নিরাপত্তাজনিত শান্তি। ওই নাম থেকেই শান্তি বা স্বস্তির এলাকা হিসেবে 'সোয়াত'-এর উদ্ভব। শতাব্দী শতাব্দী ধরে এক অপূর্ব শান্তিপূর্ণ স্থান হিসেবে যার সুখ্যাতি, সেই স্বর্গরাজ্যেই ২০০৭ সালে জারি হলো তালেবানের শ্বাসরুদ্ধকারী অসভ্য নিয়ন্ত্রণ। তারা নিষিদ্ধ করে দিল মেয়েদের মুক্ত গতিবিধি_ বন্ধ করে দিল সব স্কুলের দ্বার। সঙ্গীত, নাটক, সিনেমা হলো নিষিদ্ধ। কিন্তু কিশোরী মালালা এই অন্যায়-অবিচার-অসদাচার কিছুতেই মেনে নিতে পারল না। ২০০৯ সালে সে বিবিসি উর্দুতে শুরু করল লেখালেখি_ জঙ্গিদের এই বর্বরোচিত ব্যবস্থার বিরুদ্ধে। ছন্দনাম 'গুল মাকাই' নামে বেরোতে থাকে তার ডায়েরি। এ ডায়েরি দ্বিতীয় মহাযুদ্ধকালে নাৎসি অধিকারের বেষ্টনীতে থাকা কিশোরী অ্যান ফ্রাঙ্কের ডায়েরি থেকে অধিকতর চিত্তাকর্ষক, বর্ণনামূলক, সাহসী ও উদ্দীপনাকারী। ৩ জানুয়ারি, ২০০৯ সালে লেখা মালালার ডায়েরি_ "মিলিটারি হেলিকপ্টার আর তালেবানদের নিয়ে আমার ভয় হচ্ছে। কাল রাতে ভয়ঙ্কর একটা স্বপ্ন দেখেছি। আম্মুর বানিয়ে দেওয়া নাশতা খেয়ে স্কুলে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমার ভয় হচ্ছিল, কারণ তালেবানরা মেয়েদের স্কুল যাওয়া বন্ধ করেছে। কিন্তু তাতে তো আমি স্কুল আসা বন্ধ করব না। আজ ২৭ জন ছাত্রীর মধ্যে মাত্র ১১ জন এসেছিল। তালেবানদের ভয়ে বাকিরা আসতে পারেনি...। স্কুল থেকে ফেরার পথে একজন বলল_ 'আমি তোকে হত্যা করব। আমি হাঁটার গতি বাড়ালাম। কিছুক্ষণ পরে ফিরে দেখলাম, লোকটা পিছু নিয়েছে কিনা! বাঁচা গেল। লোকটা ফোনে কথা
বলছিল। হয়তো ফোনেই কাউকে হুমকি দিচ্ছিল।" (অনূদিত)
আরেকদিন সে লিখেছিল, 'মাঝে মধ্যে কল্পনা করি, আমি রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি। তালেবানরা আমার পথরোধ করছে আর আমি জুতো খুলে তাদের মুখে চপেটাঘাত করছি, আর বলছি তোমরা ভুল করছ। শিক্ষা আমাদের অধিকার। সেটা তোমরা কেড়ে নিতে পার না। যদি সত্যি তারা আমাকে হত্যা করে তবে মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে আমি তাদের বলব, তোমরা যা করছ তা ভুল।' বালিকা মালালার এই অসমসাহসী দৃপ্ত ঘোষণা বিশ্ববাসীকে বিস্ময়াবত করেছিল। আজ সে মৃত্যুপথযাত্রী এবং বাস্তবিকই বিদ্যার্জনের পথেই এসেছে এই আঘাত। ২০০৯ সালে তালেবানদের নিয়ন্ত্রণ থেকে সোয়াত মুক্ত হলে সবাই ফিরে এলো। অনেক ধ্বংসপ্রাপ্ত স্কুল নবনির্মিত হলো। একটা স্কুলের নাম হলো মালালার নামেই। মালালা বিশ্বে পরিচিতি লাভ করল নারী শিক্ষার কণ্ঠস্বর হিসেবে। তার অবদান ও সাহসী ভূমিকাকে মূল্যায়ন করে পাকিস্তান সরকার গত বছর তাকে জাতীয় শান্তি পুরস্কার প্রদান করে। ওই বছরই আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পায় মালালা। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশ হতে থাকে মালালার বীরগাথা। বহু ডকুমেন্টারি তৈরি হতে থাকে তার কাহিনী অবলম্বনে। তালেবানরা ভাবে এই মেয়েটা তো আদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাচ্ছে। অবশ্যই একে খতম করো। তালেবানের সর্বাধিক ভীতিপ্রদ কমান্ডার মওলানা ফজলুল্লাহ হিটম্যান পাঠিয়ে মৃত্যুভয় দেখাতে শুরু করে। কিন্তু অকুতোভয় মালালা তো দমবার নয়। তাই তো কাপুরুষোচিত তালেবানের হাতে এই নিরস্ত্র-নিরীহ সত্য সৈনিক কিশোরী মালালার এই পরিণতি। কিন্তু মালালার তো হার হয়নি। বিশ্ববাসী আজ তার গুণগান করছে। বহু রাষ্ট্রনায়কসহ জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল বান কি মুন মালালা ও তার অপরাজেয় আদর্শ ও লক্ষ্যের জয়গান গেয়ে তাকে সমর্থন জানিয়েছেন। মালালার বাণী যে অবিনশ্বর হয়ে গেল। মালালার যদি কিছু হয়। তার চিন্তা, তার সাহস, তার মানবিকতা, শিক্ষা-সভ্যতার নিশান নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার দৃঢ় সংকল্প দৃষ্টান্ত হয়ে দিকনির্দেশনা দেবে আলোকের পথে পৃথিবীর অভিযাত্রীদের। মালালার গভীর শিক্ষানুরাগ, অবিচল নিষ্ঠা ও অসমসাহসিকতা তাকে বিশ্বনন্দিত করে তুলেছে। তার হৃদয়কাড়া সরল হাসি এবং ইস্পাতদৃঢ় সংকল্প আজ অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছে তালেবানি ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে সংগ্রামী মানুষকে। ৯ অক্টোবর (২০১২) তার শহর মিঙ্গোরাতে স্কুল থেকে বাড়ি আসার বাসে ঘাতক কাপুরুষোচিত গুলি চালিয়ে পালিয়ে গেল। এই জঘন্য ঘটনার দায়িত্ব স্বীকার করল পাকিস্তানের তাহরিকে তালেবান। তালেবানদের মুখপাত্র ইসানউল্লাহ ইসান জানাল, 'অনেকবার তালেবানবিরোধী ও নারীর অধিকার বিষয়ে কথা বলা থেকে বিরত থাকতে হুশিয়ারি দেওয়া সত্ত্বেও মালালা তাতে কান দেয়নি। সে তার আরব্ধ কাজ চালিয়েই গেছে। তাই এই তার পরিণাম, সে যদি এখন বেঁচে ওঠে। তবে আবার তালেবানরা তাকে হত্যার চেষ্টা করবে। ধর্মনিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গির জন্যই হয়েছে তার ওপর হামলা। প্রয়োজনবোধে আরও হবে।' মালালার বাবা জিয়াউদ্দিন ইউসুফজাইয়ের ওপরও দেওয়া হয়েছে তালেবানের সাবধানি হুশিয়ারি। কিন্তু সন্তুষ্টির কথা, শুধু জিয়াউদ্দিন ইউসুফজাই-ই নয় আজ ওই এলাকার অসংখ্য জনগণ দৃপ্তকণ্ঠে বলছে, 'আমরা ভয় পাব না। নারী শিক্ষা ও নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় মালালার প্রচেষ্টাকে আমরা ব্যর্থ হতে দেব না।' বাস্তবিকপক্ষে তালেবানি শাসনের বিরুদ্ধে পশ্চিমা শক্তিবর্গের এত বছরের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের চেয়েও অধিকতর ফলপ্রসূ হয়ে উঠছে মালালার আদর্শভিত্তিক ত্যাগী-নিষ্ঠাবান সংগ্রামী এই ভূমিকা।
মালালা ইউসুফজাই যে আলোকবর্তিকা প্রজ্বলিত করেছে তা নিভে যাওয়ার নয়। সে হয়ে দাঁড়িয়েছে অনুপ্রেরণার উৎস। দুর্ভাগ্যের কথা, আমাদের দেশে এখনও প্রচুর ধর্মান্ধতা রয়েছে। নারীর অধিকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে অস্বীকৃত হচ্ছে। ফতোয়ার মুখে নারীকে দেওয়া হচ্ছে দুররা ও শাস্তি, বিভিন্ন উপায়ে নারীবিরোধী বৈষম্য সৃষ্টি করে নারীর ওপর করা হচ্ছে অন্যায় ও অবিচার। তাকে দেওয়া হচ্ছে না পূর্ণ মর্যাদা ও স্বীকৃতি। দেশের ও সমাজের অগ্রগতি তাতে ব্যাহত হচ্ছে। মালালার দৃষ্টান্ত আমাদেরও অনুপ্রেরণা জাগাতে পারে, উৎসাহিত করতে পারে ধর্মান্ধতা, কূপমণ্ডূকতা, সামাজিক ও আইনি অনুদারতা ও সংকীর্ণমনস্কতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে তা প্রতিহত ও পরাভূত করার প্রচেষ্টায় আরও সুদৃঢ় অবস্থান নিতে। বাংলাদেশে আমরা প্রতিষ্ঠা করতে পারি মালালার নামে কোনো ইনস্টিটিউশন। শুরু করতে পারি কোনো সামাজিক আন্দোলন। পৃথিবীতে আজ জঙ্গিবাদ, ধর্মীয় গোঁড়ামি ও সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াই করার রয়েছে আহ্বান। এমতাবস্থায় মিলিটারি সংঘাত আর আমেরিকান ড্রোনের আক্রমণের চেয়ে মালালা ইউসুফজাইয়ের মতো বীর কিশোরীর দৃষ্টান্তের প্রতি সমর্থন অনেক বেশি ফলপ্রসূ হবে। দেশে দেশে আজ গীত হোক মালালার জয়গান। ম্যাডোনা তো তাই গেয়েছেন। আগামী বছর নোবেল কমিটি মালালা ইউসুফজাইকে প্রদান করুক নোবেল শান্তি পুরস্কার। আর আমরা সবাই বিশ্ববাসী কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করি, মালালা সম্পুর্ণ সুস্থ হয়ে উঠুক। আবার সেই স্বপ্নভরা চোখ আর নিষ্পাপ হাসি নিয়ে সে আবির্ভূত হোক অনগ্রসরতা, ধর্মান্ধতা ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে আপসহীন সংগ্রামে। তার বিজয় হবে তো সভ্যতার, অগ্রগতির। অপূর্ব সৌন্দর্যময় সোয়াত উপত্যকায় বেশ কয়েকবার যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে। মনে পড়ে প্রথম যৌবনে একবার সোয়াত ভ্রমণ শেষে ফিরে এসে বৃত্তান্ত লিখেছিলাম। তখন কাছাকাছি এলাকা কাশ্মীর নিয়ে ফার্সি কবির লিখিত দুটি চরণ উল্লেখ করে বলেছিলাম, 'আগর ফেরদৌস বররুয়ে জমিনাস্ত, হাসিনাস্ত ও হাসিনাস্ত ও হাসিনাস্ত। যদি পৃথিবীর (জমিন) ওপর কোনো ফেরদৌস (স্বর্গ) থাকে, তবে তা হচ্ছে এখানে, এখানে, এখানে। সেই চরণগুলোর অনুরণন হচ্ছে মনে। আরেকবার যেতে খুব ইচ্ছা করছে_ আশ্চর্য সুন্দর সেই সোয়াত তীর্থে। এবার তা দেখা হবে আরেক আলোকে।
ইনাম আহমদ চৌধুরী : আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ, সাবেক সচিব
মালালা ইউসুফজাই। এই অকুতোভয় বীরশ্রেষ্ঠা কিশোরীর জীবনের শঙ্কা মুক্তির জন্য প্রেসিডেন্ট ওবামা থেকে শুরু করে ইন্দোনেশিয়ার প্রত্যন্ত দ্বীপের সুরখদীন, মরক্কোর মরুপ্রান্তের যাযাবর যুবক আবদুল্লাহ বাকি, আর আলম আটার কলেজছাত্রী আলেমোভা_ সবাই জানাল দোয়া ও শুভ কামনা। পাকিস্তানের সুনি্ন ইত্তেহাদ কাউন্সিলের ৫০ জন ইসলামী চিন্তাবিদ মালালার ওপর হামলাকে ইসলামবিরোধী বলে আখ্যায়িত করে পরবর্তী জুমাবারে নিন্দা দিবস পালন করার আহ্বান জানালেন। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী শুধু সহানুভূতি ও সমর্থন নয়, সহ-সংগ্রামের প্রতিশ্রুতি দিলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রব্বানি খার মালালার ওপর হামলা এবং এর প্রতিবাদকে গণজাগরণের বার্তা বলে উল্লেখ করে এ ধরনের আক্রমণের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানালেন। তালেবানবিরোধী ফতোয়ায় ইসলামী চিন্তাবিদরা বলেন_ তালেবান নেতারা ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে নিজেরাই অন্ধ, বিপথগামী ও ইসলামবিরোধী বলে নিজেদের প্রতিপন্ন করেছেন। হিনা রব্বানি আরও বললেন, 'মালালার ওপর আক্রমণ পাকিস্তানের জনগণকে জেগে ওঠার ডাক দিয়েছে। অজস্র বোমা ও ড্রোন যা করতে পারেনি, এক মালালা তার চেয়েও বেশি শক্তভাবে তালেবানকে প্রত্যাখ্যান করেছে।' জয়তু মালালা।
আশ্চর্য, মালালার বাবা-মা কি তাদের শিশুসন্তানের ভবিষ্যতের রূপ জন্ম-পূর্বেই বুঝতে পেরেছিলেন? তারা নবজাত শিশুর নামকরণ করেছিলেন_ এক অসমসাহসী পাঠান নারী মালালাই আন্নার নামে, যিনি শুধু একজন পশতু লোককবিই ছিলেন না, ১৯ বছরেরও কম বয়সে তিনি সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ১৮৮০ সালে প্রত্যক্ষ লড়াইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। তার সাহসিকতা তাকে পশতুনদের মধ্যে এক কিংবদন্তিতে রূপান্তর করেছে। আফগান ইতিহাসের এই জননন্দিত নারী তরুণী প্রাণ দিয়েছিলেন স্বাধীনতার সংগ্রামে; কিন্তু তার আত্মদান অনুপ্রাণিত করেছে উপমহাদেশের অগণিত স্বাধীনতাকামী ঔপনিবেশিকতাবিরোধী যোদ্ধাদের। শতাধিক বছর ধরে উদ্বুদ্ধ করেছে বিশ্বজোড়া সাহসী নারী সংগ্রামীদের। মালালা ইউসুফজাইয়ের অবিস্মরণীয় সংগ্রামের শুরু কিশোর বয়স থেকেই। আজ তিনি মৃত্যুর বিরুদ্ধে লড়ছেন। কিন্তু তার সংগ্রামের বাণী হলো ধর্মান্ধতা, শিক্ষা-বিরোধিতা, কূপমণ্ডূকতা, নারী অধিকার খণ্ডনকারীদের বিরুদ্ধে। আলোকিত মন ও সভ্যতার অগ্রগতির স্বপক্ষে।
পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে পশ্চিম হিমালয়ান রেঞ্জের শেষ প্রান্তে হিন্দুকোষ ও কারাকোরাস পর্বতারাজির কোল-ঘেঁষে অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সোয়াত উপত্যকা। বর্তমান পাকিস্তানের খাইবার-পাখতুন খাওয়া প্রদেশে। পৃথিবীতে বোধকরি এর চেয়ে নয়নাভিরাম স্থান খুব কমই আছে। প্রায় চার হাজার বছর আগে যখন আর্যরা মধ্য এশিয়া থেকে আফগানিস্তানের পর্বতাকীর্ণ অঞ্চল পেরিয়ে অধিকতর অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ সন্ধান মানসে খাইবার গিরিবর্ত্ন অতিক্রম করে পূর্বদিকে এগোলেন, একটি আশ্চর্য সুন্দর উপত্যকা তাদের নজরে এলো, সংস্কৃত ভাষায় এই পরম প্রশান্তির উপত্যকা ও বহমানা নদীর নাম দিলেন তাদের ভাষায় 'সোয়াস্তি' (স্বস্তি) অর্থাৎ নিরাপত্তাজনিত শান্তি। ওই নাম থেকেই শান্তি বা স্বস্তির এলাকা হিসেবে 'সোয়াত'-এর উদ্ভব। শতাব্দী শতাব্দী ধরে এক অপূর্ব শান্তিপূর্ণ স্থান হিসেবে যার সুখ্যাতি, সেই স্বর্গরাজ্যেই ২০০৭ সালে জারি হলো তালেবানের শ্বাসরুদ্ধকারী অসভ্য নিয়ন্ত্রণ। তারা নিষিদ্ধ করে দিল মেয়েদের মুক্ত গতিবিধি_ বন্ধ করে দিল সব স্কুলের দ্বার। সঙ্গীত, নাটক, সিনেমা হলো নিষিদ্ধ। কিন্তু কিশোরী মালালা এই অন্যায়-অবিচার-অসদাচার কিছুতেই মেনে নিতে পারল না। ২০০৯ সালে সে বিবিসি উর্দুতে শুরু করল লেখালেখি_ জঙ্গিদের এই বর্বরোচিত ব্যবস্থার বিরুদ্ধে। ছন্দনাম 'গুল মাকাই' নামে বেরোতে থাকে তার ডায়েরি। এ ডায়েরি দ্বিতীয় মহাযুদ্ধকালে নাৎসি অধিকারের বেষ্টনীতে থাকা কিশোরী অ্যান ফ্রাঙ্কের ডায়েরি থেকে অধিকতর চিত্তাকর্ষক, বর্ণনামূলক, সাহসী ও উদ্দীপনাকারী। ৩ জানুয়ারি, ২০০৯ সালে লেখা মালালার ডায়েরি_ "মিলিটারি হেলিকপ্টার আর তালেবানদের নিয়ে আমার ভয় হচ্ছে। কাল রাতে ভয়ঙ্কর একটা স্বপ্ন দেখেছি। আম্মুর বানিয়ে দেওয়া নাশতা খেয়ে স্কুলে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমার ভয় হচ্ছিল, কারণ তালেবানরা মেয়েদের স্কুল যাওয়া বন্ধ করেছে। কিন্তু তাতে তো আমি স্কুল আসা বন্ধ করব না। আজ ২৭ জন ছাত্রীর মধ্যে মাত্র ১১ জন এসেছিল। তালেবানদের ভয়ে বাকিরা আসতে পারেনি...। স্কুল থেকে ফেরার পথে একজন বলল_ 'আমি তোকে হত্যা করব। আমি হাঁটার গতি বাড়ালাম। কিছুক্ষণ পরে ফিরে দেখলাম, লোকটা পিছু নিয়েছে কিনা! বাঁচা গেল। লোকটা ফোনে কথা
বলছিল। হয়তো ফোনেই কাউকে হুমকি দিচ্ছিল।" (অনূদিত)
আরেকদিন সে লিখেছিল, 'মাঝে মধ্যে কল্পনা করি, আমি রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি। তালেবানরা আমার পথরোধ করছে আর আমি জুতো খুলে তাদের মুখে চপেটাঘাত করছি, আর বলছি তোমরা ভুল করছ। শিক্ষা আমাদের অধিকার। সেটা তোমরা কেড়ে নিতে পার না। যদি সত্যি তারা আমাকে হত্যা করে তবে মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে আমি তাদের বলব, তোমরা যা করছ তা ভুল।' বালিকা মালালার এই অসমসাহসী দৃপ্ত ঘোষণা বিশ্ববাসীকে বিস্ময়াবত করেছিল। আজ সে মৃত্যুপথযাত্রী এবং বাস্তবিকই বিদ্যার্জনের পথেই এসেছে এই আঘাত। ২০০৯ সালে তালেবানদের নিয়ন্ত্রণ থেকে সোয়াত মুক্ত হলে সবাই ফিরে এলো। অনেক ধ্বংসপ্রাপ্ত স্কুল নবনির্মিত হলো। একটা স্কুলের নাম হলো মালালার নামেই। মালালা বিশ্বে পরিচিতি লাভ করল নারী শিক্ষার কণ্ঠস্বর হিসেবে। তার অবদান ও সাহসী ভূমিকাকে মূল্যায়ন করে পাকিস্তান সরকার গত বছর তাকে জাতীয় শান্তি পুরস্কার প্রদান করে। ওই বছরই আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পায় মালালা। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশ হতে থাকে মালালার বীরগাথা। বহু ডকুমেন্টারি তৈরি হতে থাকে তার কাহিনী অবলম্বনে। তালেবানরা ভাবে এই মেয়েটা তো আদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাচ্ছে। অবশ্যই একে খতম করো। তালেবানের সর্বাধিক ভীতিপ্রদ কমান্ডার মওলানা ফজলুল্লাহ হিটম্যান পাঠিয়ে মৃত্যুভয় দেখাতে শুরু করে। কিন্তু অকুতোভয় মালালা তো দমবার নয়। তাই তো কাপুরুষোচিত তালেবানের হাতে এই নিরস্ত্র-নিরীহ সত্য সৈনিক কিশোরী মালালার এই পরিণতি। কিন্তু মালালার তো হার হয়নি। বিশ্ববাসী আজ তার গুণগান করছে। বহু রাষ্ট্রনায়কসহ জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল বান কি মুন মালালা ও তার অপরাজেয় আদর্শ ও লক্ষ্যের জয়গান গেয়ে তাকে সমর্থন জানিয়েছেন। মালালার বাণী যে অবিনশ্বর হয়ে গেল। মালালার যদি কিছু হয়। তার চিন্তা, তার সাহস, তার মানবিকতা, শিক্ষা-সভ্যতার নিশান নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার দৃঢ় সংকল্প দৃষ্টান্ত হয়ে দিকনির্দেশনা দেবে আলোকের পথে পৃথিবীর অভিযাত্রীদের। মালালার গভীর শিক্ষানুরাগ, অবিচল নিষ্ঠা ও অসমসাহসিকতা তাকে বিশ্বনন্দিত করে তুলেছে। তার হৃদয়কাড়া সরল হাসি এবং ইস্পাতদৃঢ় সংকল্প আজ অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছে তালেবানি ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে সংগ্রামী মানুষকে। ৯ অক্টোবর (২০১২) তার শহর মিঙ্গোরাতে স্কুল থেকে বাড়ি আসার বাসে ঘাতক কাপুরুষোচিত গুলি চালিয়ে পালিয়ে গেল। এই জঘন্য ঘটনার দায়িত্ব স্বীকার করল পাকিস্তানের তাহরিকে তালেবান। তালেবানদের মুখপাত্র ইসানউল্লাহ ইসান জানাল, 'অনেকবার তালেবানবিরোধী ও নারীর অধিকার বিষয়ে কথা বলা থেকে বিরত থাকতে হুশিয়ারি দেওয়া সত্ত্বেও মালালা তাতে কান দেয়নি। সে তার আরব্ধ কাজ চালিয়েই গেছে। তাই এই তার পরিণাম, সে যদি এখন বেঁচে ওঠে। তবে আবার তালেবানরা তাকে হত্যার চেষ্টা করবে। ধর্মনিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গির জন্যই হয়েছে তার ওপর হামলা। প্রয়োজনবোধে আরও হবে।' মালালার বাবা জিয়াউদ্দিন ইউসুফজাইয়ের ওপরও দেওয়া হয়েছে তালেবানের সাবধানি হুশিয়ারি। কিন্তু সন্তুষ্টির কথা, শুধু জিয়াউদ্দিন ইউসুফজাই-ই নয় আজ ওই এলাকার অসংখ্য জনগণ দৃপ্তকণ্ঠে বলছে, 'আমরা ভয় পাব না। নারী শিক্ষা ও নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় মালালার প্রচেষ্টাকে আমরা ব্যর্থ হতে দেব না।' বাস্তবিকপক্ষে তালেবানি শাসনের বিরুদ্ধে পশ্চিমা শক্তিবর্গের এত বছরের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের চেয়েও অধিকতর ফলপ্রসূ হয়ে উঠছে মালালার আদর্শভিত্তিক ত্যাগী-নিষ্ঠাবান সংগ্রামী এই ভূমিকা।
মালালা ইউসুফজাই যে আলোকবর্তিকা প্রজ্বলিত করেছে তা নিভে যাওয়ার নয়। সে হয়ে দাঁড়িয়েছে অনুপ্রেরণার উৎস। দুর্ভাগ্যের কথা, আমাদের দেশে এখনও প্রচুর ধর্মান্ধতা রয়েছে। নারীর অধিকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে অস্বীকৃত হচ্ছে। ফতোয়ার মুখে নারীকে দেওয়া হচ্ছে দুররা ও শাস্তি, বিভিন্ন উপায়ে নারীবিরোধী বৈষম্য সৃষ্টি করে নারীর ওপর করা হচ্ছে অন্যায় ও অবিচার। তাকে দেওয়া হচ্ছে না পূর্ণ মর্যাদা ও স্বীকৃতি। দেশের ও সমাজের অগ্রগতি তাতে ব্যাহত হচ্ছে। মালালার দৃষ্টান্ত আমাদেরও অনুপ্রেরণা জাগাতে পারে, উৎসাহিত করতে পারে ধর্মান্ধতা, কূপমণ্ডূকতা, সামাজিক ও আইনি অনুদারতা ও সংকীর্ণমনস্কতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে তা প্রতিহত ও পরাভূত করার প্রচেষ্টায় আরও সুদৃঢ় অবস্থান নিতে। বাংলাদেশে আমরা প্রতিষ্ঠা করতে পারি মালালার নামে কোনো ইনস্টিটিউশন। শুরু করতে পারি কোনো সামাজিক আন্দোলন। পৃথিবীতে আজ জঙ্গিবাদ, ধর্মীয় গোঁড়ামি ও সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াই করার রয়েছে আহ্বান। এমতাবস্থায় মিলিটারি সংঘাত আর আমেরিকান ড্রোনের আক্রমণের চেয়ে মালালা ইউসুফজাইয়ের মতো বীর কিশোরীর দৃষ্টান্তের প্রতি সমর্থন অনেক বেশি ফলপ্রসূ হবে। দেশে দেশে আজ গীত হোক মালালার জয়গান। ম্যাডোনা তো তাই গেয়েছেন। আগামী বছর নোবেল কমিটি মালালা ইউসুফজাইকে প্রদান করুক নোবেল শান্তি পুরস্কার। আর আমরা সবাই বিশ্ববাসী কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করি, মালালা সম্পুর্ণ সুস্থ হয়ে উঠুক। আবার সেই স্বপ্নভরা চোখ আর নিষ্পাপ হাসি নিয়ে সে আবির্ভূত হোক অনগ্রসরতা, ধর্মান্ধতা ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে আপসহীন সংগ্রামে। তার বিজয় হবে তো সভ্যতার, অগ্রগতির। অপূর্ব সৌন্দর্যময় সোয়াত উপত্যকায় বেশ কয়েকবার যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে। মনে পড়ে প্রথম যৌবনে একবার সোয়াত ভ্রমণ শেষে ফিরে এসে বৃত্তান্ত লিখেছিলাম। তখন কাছাকাছি এলাকা কাশ্মীর নিয়ে ফার্সি কবির লিখিত দুটি চরণ উল্লেখ করে বলেছিলাম, 'আগর ফেরদৌস বররুয়ে জমিনাস্ত, হাসিনাস্ত ও হাসিনাস্ত ও হাসিনাস্ত। যদি পৃথিবীর (জমিন) ওপর কোনো ফেরদৌস (স্বর্গ) থাকে, তবে তা হচ্ছে এখানে, এখানে, এখানে। সেই চরণগুলোর অনুরণন হচ্ছে মনে। আরেকবার যেতে খুব ইচ্ছা করছে_ আশ্চর্য সুন্দর সেই সোয়াত তীর্থে। এবার তা দেখা হবে আরেক আলোকে।
ইনাম আহমদ চৌধুরী : আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ, সাবেক সচিব
No comments