আমেরিকার বর্ণবাদ পরিস্থিতির উন্নতি ঘটছে

এবারের মার্কিন নির্বাচনে যদি প্রেসিডেন্ট ওবামা আর ২০০৮ সালের সিনেটর ওবামার মধ্যে লড়াই হতো তাহলে সম্ভবত কুপোকাত হতে হতো প্রেসিডেন্ট ওবামাকে। ২০০৮ সালের ওবামা একজন অতিমানবের চেহারা নিয়ে এসেছিলেন।


আর আজকের ওবামা একজন নশ্বর মানুষ মাত্র। ২০০৮ সালে ঐতিহাসিক বিজয়ের মধ্য দিয়ে ওবামা যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদটিতে সাদা-কালোর বর্ণবাদী অচলায়তন ভেঙ্গে দিয়েছিলেন। আর এবার? এবার তিনি জিতুন আর নাই জিতুন তাতে অন্তত একটা প্রশ্নের জবাব মিলবে। তাহলো বর্ণগত বা জাতিগত প্রশ্নে দেশটা আসলেই কতদূর এগোতে পেরেছে।
আমেরিকার নিগ্রোদের মধ্যে একটা কথা চালু আছে। তাহলো একজন কৃষ্ণাঙ্গকে সামনে এগিয়ে চলার জন্য একজন শ্বেতাঙ্গের তুলনায় দ্বিগুণ ভাল হতে হবে। কারণ সে কৃষ্ণাঙ্গ। ২০০৮ সালের প্রার্থী ওবামা শুধু যে ভাল ছিলেন তা নয়, তার চেয়ে বেশি কিছু ছিলেন। নানা দিক দিয়েই তিনি ছিলেন চলচ্চিত্র ও সাহিত্যের সেই ঐন্দ্রজালিক ক্ষমতাসম্পন্ন নিগ্রোর মূর্ত প্রতীক।
ঐন্দ্রজালিক ক্ষমতাসম্পন্ন নিগ্রো জ্ঞান ও প্রজ্ঞায় পরিপূর্ণ এক চরিত্র। কখনো কখনো সে অতিপ্রাকৃত শক্তিরও অধিকারী হয়ে ওঠে যার কাজ হলো নিজের ক্ষমতা ও সামর্থ্য পরিপূর্ণ মাত্রায় করায়ত্ত করতে একজন শ্বেতাঙ্গকে সাহায্য করা। মার্ক টোয়েনের ‘হাকলবেরিস ফিন’-এর জিন চরিত্রটি একটা ক্লাসিক চরিত্র। আরও সাম্প্রতিককালে একটি চরিত্র হলো জনপ্রিয় ছায়াছবি দি ‘ম্যাট্রিক্স’-এর মরফিয়াস। মরফিয়াস কিয়ানু রিভসের নিয়োকে লাল রঙের একটা ট্যাবলেট খেতে দেয় যা তাঁর জীবনকে বদলে দেবে।
২০০৮ সালের ওবামা ছিলেন মরফিয়াস এবং আমেরিকা ছিল নিয়ো। বিরাট সম্ভাবনাময় শক্তির অধিকারী আমেরিকা আত্মশক্তি ও আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছিল এবং চারপাশের বাস্তবতা অনুধাবন করতে পারেনি। ওবামা আমেরিকানদের সেই লাল বড়ি খেতে দিয়েছিলেন। অর্থাৎ তাঁকে ভোট দেয়ার সুযোগ দিয়েছিলেন ওদেরকে। আমেরিকানরা সেই বড়ি খেয়েওছিল। ‘দি ম্যাট্রিক্স’ কাহিনীতে লাল বড়ির কাজ মুহূর্তের মধ্যে শুরু হয়েছিল যার ফলে যিশুর মতো ত্রাণকর্তার ভূমিকা নিয়ে অচিরেই নিয়োর আবির্ভাব ঘটেছিল ঠিক যেমনটি চেয়েছিলেন মরফিয়াস। কিন্তু বাস্তবজগতের পরিবর্তনটা তো আর কাহিনীর মতো হয় না, সেটা হয় বেশ ধীরগতিতে। আমেরিকার ক্ষেত্রে পরিবর্তনটা তাই মন্থর গতিতে হয়েছিল। ওবামা প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণের কিছুদিনের মধ্যে আমেরিকানদের মনে হয়েছিল তাদের মাথার ওপর আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে। মঙ্গার কারণে হাজারো সমস্যা চারদিক থেকে তাদের ছেঁকে ধরে। এসব সমস্যার সব ওবামার নিজের তৈরি নয়। তথাপি এগুলোর দায় তাঁকে বহন করতে হয়েছিল। অথচ তিনি সেগুলোর সমাধান দিতে পারেননি। ফলে আমেরিকানদের জন্য পরিস্থিতি বিস্ফোরণোন্মুখ হয়ে ওঠে। এ অবস্থায় তাকে ঐন্দ্রজালিক ক্ষমতাসম্পন্ন অতিমানব নিগ্রো হিসাবে গণ্য করার আর কোন উপায় থাকেনি।
মর্ত্যরে বুকে রূঢ় বাস্তবতায় ওবামাকে অনেক ব্যর্থতার গ্লানি বইতে হয়েছে। ওবামা সেইসব ব্যর্থতার কথা স্বীকারও করেছেন। কিন্তু যাবতীয় ব্যর্থতার গ্লানি বয়ে বেড়ানো সত্ত্বেও ওবামার এখনও নির্বাচনে জয়লাভ করার যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে। সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী রমনি জনপ্রিয়তায় ওবামাকে টপকে গেলেও মনে রাখতে হবে মার্কিন জনমত ও জনঅনুভূতি স্থির নয় বরং নিয়ত পরিবর্তনশীল। কদিন আগেও মার্কিন জনমত ওবামার পক্ষে ছিল।
ক্ষমতাসীন সকল প্রেসিডেন্টের স্বাভাবিক কিছু সুবিধা থাকে। ওবামারও সেই সুবিধা আছে। তবে তাঁর ক্ষেত্রে সেটা দুদিকে ধারওলা তরবারির মতো হয়েছে যা ধারেও কাটে, ভারেও কাটে। প্রেসিডেন্টের দায়িত্বভার গ্রহণের সময় তাঁর কাছে মানুষের প্রত্যাশা এমন দাঁড়িয়েছিল যা কেবল একজন অতিমানবের কাছ থেকেই আশা করা যায়। কাজেই তিনি যে তাঁর অনুসারীদের একাংশকে নিরাশ করেছেন তাতে অবাক হবার কিছু নেই।
সর্বশেষ দুই জনমত জরিপের ফলাফল থেকে তাঁর কিছু না হোক যুক্তরাষ্ট্রের বর্ণগত পরিস্থিতির উন্নতির অতি কৌতূহলো-দ্দীপক চিত্র বেরিয়ে আসে। তাতে দেখা যায় মার্কিন ভোটাররা এমন এক কৃষ্ণাঙ্গকে প্রথমে সাদরে বরণ করে নিয়েছে এবং পরে একটু পিছিয়ে এসেছে যার ঐন্দ্রজালিক ক্ষমতা বলে কিছু নেই। কৃষ্ণাঙ্গরা হীনতর এমন কাল্পনিক ধারণা সংশোধন করার প্রয়োজনীয়তা থেকে ঐন্দ্রজালিক ক্ষমতাসম্পন্ন নিগ্রোর ধারণাটি উৎপন্ন হয়েছিল। যাই হোক ভ্রমপ্রবণ একজন কৃষ্ণাঙ্গ যিনি জনগণকে আকার, বুদ্ধি, শ্রম, আর অভিজ্ঞতা ছাড়া কিছুরই প্রতিশ্রুতি দিতে পারেন না, চার বছর ক্ষমতায় থাকার পরও যাঁর ঝুড়িতে ব্যর্থতা ছাড়া আর কিছুই নেই তাঁর পক্ষে এখনও এত বিপুল ভোট পড়ার অর্থ হচ্ছে শেতাঙ্গ-কৃষ্ণাঙ্গ বর্ণগত দেয়াল অনেকটাই ভেঙ্গে গেছে। বর্ণগত সাম্যের দিকে সে দেশের মানুষ অনেকখানি এগিয়ে গেছে।
চলমান ডেস্ক

No comments

Powered by Blogger.