কুড়িয়ে পাওয়া সংলাপ-শিল্পী যোদ্ধা ডিম্ব ও জাঁহাবাজকথা by রণজিৎ বিশ্বাস
: আজ নিয়ম ভাঙব। : নিয়ম ভেঙে কী করবেন? : নিয়ম ভেঙে ভর্তা বানাব। এক কথার মধ্যে আরেক কথা ঢোকাব এবং উল্টোপাল্টা অনেক প্রশ্ন করব। যেমন- শিল্পী, যোদ্ধা, ডিম্ব ও বাজ সম্পর্কে আপনার সাধারণ জ্ঞানের গভীরতা পরখ করব।
: আয়োজন খুব ব্যতিক্রমী মনে হচ্ছে।
: কোনো সন্দেহ নেই। প্রথম প্রশ্ন, আপনি কত রকম শিল্পী চেনেন?
: অজস্র রকম। তবে আমার পরিচিত শিল্পীদের নাম বলার আগে একটি বিষয়ে আমি কথা বলে নেব। আমাকে কখনো কখনো সুভাষণের আশ্রয় নিতে হবে। কিছু কিছু পেশাজীবী শ্রেণীর সঙ্গে আমি শিল্পী শব্দটি উপসর্গের মতো জুড়ে দেব দুটি কারণে। আমি তাঁদের ক্রুদ্ধ করতে চাই না এবং তাঁদের সম্মাননায় আমার আগ্রহ আছে।
: ঠিক আছে। আপনি শিল্পীদের নামের ঝাঁপি ঝেড়েঝুড়ে আমাদের ডালায়-ডুলায় ঢেলে দিন।
: যাঁদের আমি বেশি সম্মান দেখাতে চাই, তাঁদের কথা আগে বলি। হরণশিল্পী- যিনি জিনিসপত্র হরণ করেন, হনন শিল্পী যিনি শিল্পসম্মতভাবে মানুষের প্রাণের বোঁটা ছিঁড়ে ফেলেন; এঁরা মানবজীবনের নির্বাপণ শিল্পী। নির্বাপণ শিল্পীরা আলোর মধ্যে কালো নিয়ে আসেন। ছেদনশিল্পী- এঁরা খুব পাকা হাতে মানুষের বুক-পিঠ ছ্যাঁদা করে দিতে পারেন। মারণশিল্পী- এঁরা হননশিল্পীর কখনো দোসর, কখনো ফার্স্ব কাজিন। চৌর্যশিল্পী- এঁরা জিনিসপত্র সরায়, চুরি করে; হরণশিল্পীর ছোট ভাই। ভোজনশিল্পী- এঁরা পর্যাপ্ত ভোজনে পারঙ্গম। কর্তন শিল্পী- এঁরা মানবসহ বিভিন্ন প্রাণীদেহের প্রত্যঙ্গ কেটেকুটে সরিয়ে দিতে এক্সপার্ট। উৎকোচশিল্পী- এঁরা অন্যের অর্থকে নিজের অর্থ মনে করেন। 'আত্মানাং সর্বভূতেষু' এঁদের বীজমন্ত্র। সবার মধ্যে এঁরা নিজেকে দেখেন ও নিজেকে আবিষ্কার করেন। নিন্দক শিল্পী- এঁরা জুগুপ্সাপ্রিয়; অন্যের নিন্দা ও অনুপস্থিত ব্যক্তির চরিত্র বিশ্লেষণ এঁদের প্রিয় কাজ। ভজনশিল্পী ও তাঁর ছোট ভাই তোষণ শিল্পী এঁরা ভজনা করেন ও তোষামোদ করে আমোদ পান। প্রমোদশিল্পী- এঁরা মানুষকে আমোদ ও প্রমোদের মধ্যে রাখেন। এ ছাড়া আছে সন্ত্রাস শিল্পী, ঝাপটা শিল্পী (হাইজ্যাকার), পীড়নশিল্পী, বঞ্চনশিল্পী, লাঞ্ছনশিল্পী, মন্থনশিল্পী, পেষণশিল্পী, পোষণশিল্পী, লালনশিল্পী, রগড়শিল্পী, বিকারশিল্পী ইত্যাদি।
: ক'ধরনের যোদ্ধা আপনি চেনেন?
: আমি যাঁদের চিনি, তাঁদের বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যার কাজটি করব না। এতে অনেক সময় লেগে যায়। আমি শুধু নামগুলো বলে যাব। প্রয়োজন মনে করলে আপনি টুকে নিতে পারেন। যেমন- ধর্মযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধা, ভর্তি যোদ্ধা, তর্কযোদ্ধা, শক্তিযোদ্ধা, বুদ্ধিযোদ্ধা, চুক্তিযোদ্ধা (যাঁরা চুক্তিতে যুদ্ধ করেন), লম্ফযোদ্ধা (যাঁরা লাফিয়ে লাফিয়ে যুদ্ধ করেন) ঝম্ফযোদ্ধা (যাঁরা যুদ্ধ করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েন), জন্ম যোদ্ধা (যাঁরা জন্ম থেকেই যুদ্ধরত) ইত্যাদি।
: এবার ডিম্ব নিয়ে আসুন।
: আসব। তবে হংসডিম্ব, কুক্কুটডিম্ব, কোয়েলডিম্ব ইত্যাদির কথা আমি বলব না। আমি বলব, সেসব ডিম্বের কথা, যেসব ডিম্ব দিয়ে ব্যঞ্জন রন্ধন হয় না এবং যেসব ডিম্ব দিয়ে অমলেট বানানো সম্ভবপর হয় না। পলান্ডু ও হরিৎ লঙ্কা সহযোগে সেগুলো দিয়ে কোনো স্বাদু ব্যঞ্জনও রচিত হয় না। যেমন- অশ্বডিম্ব। ঘোড়ার ডিম। এই ঘোড়ার ডিমকে তোড়ায় বেঁধে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নিয়ে যাওয়া মুশকিল শুধু নয়, অসম্ভব। আরো কিছু ডিম আছে দৃশ্য ও অদৃশ্য। খাতার ডিম যে ডিম পরীক্ষার খাতায় পাওয়া যায়, হাতের ডিম, পায়ের ডিম, চোখের ডিম ইত্যাদি।
: এবারে শেষ জিজ্ঞাসা, বাজ কত প্রকার?
: বাজ একটি পাখির নাম, বাজ আবার একটি অনুসর্গও বটে। এই 'বাজ' যুক্ত অগণন' শব্দের মধ্যে আছে জাঁহাবাজ, চাঁদাবাজ, ধর্মবাজ, আড্ডাবাজ, চাপাবাজ, সন্ত্রাসবাজ ইত্যাদি। এবার কি আপনি আমাকে ছেড়ে দেবেন?
: দেব। যদি বলেন, কোন 'বাজ' সবচেয়ে নষ্টবাজ? কোন বাজ সবচেয়ে ক্ষতিকর ও ভ্রষ্টবাজ?
: চিনে রাখুন ও মনে রাখুন, তার নাম 'ধর্মবাজ'।
লেখক : শ্রমজীবী কথাসাহিত্যিক
: কোনো সন্দেহ নেই। প্রথম প্রশ্ন, আপনি কত রকম শিল্পী চেনেন?
: অজস্র রকম। তবে আমার পরিচিত শিল্পীদের নাম বলার আগে একটি বিষয়ে আমি কথা বলে নেব। আমাকে কখনো কখনো সুভাষণের আশ্রয় নিতে হবে। কিছু কিছু পেশাজীবী শ্রেণীর সঙ্গে আমি শিল্পী শব্দটি উপসর্গের মতো জুড়ে দেব দুটি কারণে। আমি তাঁদের ক্রুদ্ধ করতে চাই না এবং তাঁদের সম্মাননায় আমার আগ্রহ আছে।
: ঠিক আছে। আপনি শিল্পীদের নামের ঝাঁপি ঝেড়েঝুড়ে আমাদের ডালায়-ডুলায় ঢেলে দিন।
: যাঁদের আমি বেশি সম্মান দেখাতে চাই, তাঁদের কথা আগে বলি। হরণশিল্পী- যিনি জিনিসপত্র হরণ করেন, হনন শিল্পী যিনি শিল্পসম্মতভাবে মানুষের প্রাণের বোঁটা ছিঁড়ে ফেলেন; এঁরা মানবজীবনের নির্বাপণ শিল্পী। নির্বাপণ শিল্পীরা আলোর মধ্যে কালো নিয়ে আসেন। ছেদনশিল্পী- এঁরা খুব পাকা হাতে মানুষের বুক-পিঠ ছ্যাঁদা করে দিতে পারেন। মারণশিল্পী- এঁরা হননশিল্পীর কখনো দোসর, কখনো ফার্স্ব কাজিন। চৌর্যশিল্পী- এঁরা জিনিসপত্র সরায়, চুরি করে; হরণশিল্পীর ছোট ভাই। ভোজনশিল্পী- এঁরা পর্যাপ্ত ভোজনে পারঙ্গম। কর্তন শিল্পী- এঁরা মানবসহ বিভিন্ন প্রাণীদেহের প্রত্যঙ্গ কেটেকুটে সরিয়ে দিতে এক্সপার্ট। উৎকোচশিল্পী- এঁরা অন্যের অর্থকে নিজের অর্থ মনে করেন। 'আত্মানাং সর্বভূতেষু' এঁদের বীজমন্ত্র। সবার মধ্যে এঁরা নিজেকে দেখেন ও নিজেকে আবিষ্কার করেন। নিন্দক শিল্পী- এঁরা জুগুপ্সাপ্রিয়; অন্যের নিন্দা ও অনুপস্থিত ব্যক্তির চরিত্র বিশ্লেষণ এঁদের প্রিয় কাজ। ভজনশিল্পী ও তাঁর ছোট ভাই তোষণ শিল্পী এঁরা ভজনা করেন ও তোষামোদ করে আমোদ পান। প্রমোদশিল্পী- এঁরা মানুষকে আমোদ ও প্রমোদের মধ্যে রাখেন। এ ছাড়া আছে সন্ত্রাস শিল্পী, ঝাপটা শিল্পী (হাইজ্যাকার), পীড়নশিল্পী, বঞ্চনশিল্পী, লাঞ্ছনশিল্পী, মন্থনশিল্পী, পেষণশিল্পী, পোষণশিল্পী, লালনশিল্পী, রগড়শিল্পী, বিকারশিল্পী ইত্যাদি।
: ক'ধরনের যোদ্ধা আপনি চেনেন?
: আমি যাঁদের চিনি, তাঁদের বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যার কাজটি করব না। এতে অনেক সময় লেগে যায়। আমি শুধু নামগুলো বলে যাব। প্রয়োজন মনে করলে আপনি টুকে নিতে পারেন। যেমন- ধর্মযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধা, ভর্তি যোদ্ধা, তর্কযোদ্ধা, শক্তিযোদ্ধা, বুদ্ধিযোদ্ধা, চুক্তিযোদ্ধা (যাঁরা চুক্তিতে যুদ্ধ করেন), লম্ফযোদ্ধা (যাঁরা লাফিয়ে লাফিয়ে যুদ্ধ করেন) ঝম্ফযোদ্ধা (যাঁরা যুদ্ধ করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েন), জন্ম যোদ্ধা (যাঁরা জন্ম থেকেই যুদ্ধরত) ইত্যাদি।
: এবার ডিম্ব নিয়ে আসুন।
: আসব। তবে হংসডিম্ব, কুক্কুটডিম্ব, কোয়েলডিম্ব ইত্যাদির কথা আমি বলব না। আমি বলব, সেসব ডিম্বের কথা, যেসব ডিম্ব দিয়ে ব্যঞ্জন রন্ধন হয় না এবং যেসব ডিম্ব দিয়ে অমলেট বানানো সম্ভবপর হয় না। পলান্ডু ও হরিৎ লঙ্কা সহযোগে সেগুলো দিয়ে কোনো স্বাদু ব্যঞ্জনও রচিত হয় না। যেমন- অশ্বডিম্ব। ঘোড়ার ডিম। এই ঘোড়ার ডিমকে তোড়ায় বেঁধে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নিয়ে যাওয়া মুশকিল শুধু নয়, অসম্ভব। আরো কিছু ডিম আছে দৃশ্য ও অদৃশ্য। খাতার ডিম যে ডিম পরীক্ষার খাতায় পাওয়া যায়, হাতের ডিম, পায়ের ডিম, চোখের ডিম ইত্যাদি।
: এবারে শেষ জিজ্ঞাসা, বাজ কত প্রকার?
: বাজ একটি পাখির নাম, বাজ আবার একটি অনুসর্গও বটে। এই 'বাজ' যুক্ত অগণন' শব্দের মধ্যে আছে জাঁহাবাজ, চাঁদাবাজ, ধর্মবাজ, আড্ডাবাজ, চাপাবাজ, সন্ত্রাসবাজ ইত্যাদি। এবার কি আপনি আমাকে ছেড়ে দেবেন?
: দেব। যদি বলেন, কোন 'বাজ' সবচেয়ে নষ্টবাজ? কোন বাজ সবচেয়ে ক্ষতিকর ও ভ্রষ্টবাজ?
: চিনে রাখুন ও মনে রাখুন, তার নাম 'ধর্মবাজ'।
লেখক : শ্রমজীবী কথাসাহিত্যিক
No comments