অসাম্প্রদায়িক চেতনা মহান সাধকের জীবনদর্শন শিল্পকর্মে- ছেঁউড়িয়ায় লালনকে নিয়ে প্রথম আর্ট ক্যাম্প by মোরসালিন মিজান
অজ্ঞানী অসুর চারপাশে। ধর্মের নামে অধর্ম হচ্ছে প্রতিনিয়ত। মানুষ হয়ে ওঠার যুদ্ধে আজ পরাভূত মানুষ। এ অবস্থায় বার বার যিনি সামনে চলে আসেন তিনি লালন। অসাম্প্রদায়িক চেতনার এ মহান পুরুষ শতাধিক বছর আগে প্রাসঙ্গিক ছিলেন।
আজকের এই আধুনিক বিশ্বেও তাই। মুক্তিকামী মানুষ লালনের দেখানো পথে আলোর সন্ধান করছেন এখনও। নানাভাবে লালনকে, লালনের দর্শনকে তুলে ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে। অনেক লেখা হয়েছে তাঁকে নিয়ে। চলচ্চিত্র হয়েছে। হ্যাঁ, ছবিও আঁকা হয়েছে যথেষ্টই। তবে লালনকে, লালনের দর্শনকে তুলে ধরতে আর্ট ক্যাম্পের আয়োজন করা হলো প্রথমবারের মতো। গত ১২ সেপ্টেম্বর খ্যাতিমান চার শিল্পীকে নিয়ে কুষ্টিয়ায় আর্ট ক্যাম্পের আয়োজন করে শিল্পকলা একাডেমী। শিল্পীরা লালনের আখড়ায় বসে লালনকে আঁকেন। লালনের দর্শনকে তুলে ধরার চেষ্টা করেন। অনবদ্য এ আয়োজন শেষে ছবিগুলো এখন প্রদর্শিত হচ্ছে কুষ্টিয়ায়। মাত্র দশটি ছবি হলেও আয়োজনটি এবারের লালন উৎসবে ভিন্নতা এনে দিয়েছে। আর্ট ক্যাম্পে অংশ নিয়ে ছবি আঁকেন শিল্পী আব্দুল মান্নান, সমীরণ চৌধুরী, শাহজাহান আহমেদ বিকাশ ও প্রদ্যোৎ কুমার দাস।
আব্দুল মান্নানের একটি ক্যানভাসে ধ্যানমগ্ন লালন। এ্যাক্রিলিকে গড়া এ শিল্পকর্মে মহান সাধকের চিন্তার জগৎ। নিজের মধ্যে ডুব দিয়েছেন লালন। জীবনের গভীরতর বোধগুলোর সন্ধান করছেন। এ ছবি যেন বলে দেয় ‘কিরূপ সাধনের বলে অধর ধরা যায়।’ মহান সাধক লালনের দেখানো পথে হেঁটে এখনও মুক্তির সন্ধান করছেন অগণিত ভক্ত। রূপ থেকে অরূপের সন্ধানে ছুটছেন তাঁরা। সেই তাঁদেরই একজনকে পাওয়া যায় শিল্পীর দ্বিতীয় ক্যানভাসে। এখানে গ্রামের মেঠো পথে একতারা হাতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বাউল। আপন মনে গাইছেন। শিল্পী সমীরণ চৌধুরী লালনের অদ্ভুত ক্ষমতায় মুগ্ধ। বিস্মিত। সেই অনুভূতির কথাই রংতুলিতে বলার চেষ্টা করেছেন তিনি। এ্যাক্রিলিকে সাজানো শিল্পীর ক্যানভাসে ত্রিকাল দৃষ্টা ঋষির চেহারায় খুঁজে পাওয়া যায় লালনকে। অসাম্প্রদায়িক চেতনার এ মহান সাধক জাতপাতের নামে বিভক্তি মেনে নিতে পারেননি। বিরুদ্ধ একসময়ে দাঁড়িয়ে তিনি এর প্রতিবাদ করেছিলেন। লালনের জন্মবীজ হতে মুক্ত হওয়ার দর্শন সমীরণ ধারণ করার চেষ্টা করেছেন অন্য একটি ক্যানভাসে। এ্যাক্রিলিকে গড়া এ শিল্পকর্মে নবজাতক শিশু কোলে লালন। শিল্পীর তৃতীয় ছবিতে সুরে সুরে নিজের দর্শন প্রচার করতে দেখা যায় লালনকে। সমীরণের চতুর্থ ছবিতে আধা শোয়ার ভঙ্গিতে শেষ বয়সী লালন। শ্মশ্রুম-িত সৌম্য শান্ত চেহারার লালন দেখে মন ভাল হয়ে যায়, সত্যি। শিল্পী শাহজাহান আহমেদ বিকাশের ক্যানভাসে সন্ধান মেলে মানুষের। তিনটি ক্যানভাসে কেবল মানুষকেই বিষয় করেছেন তিনি। জাতি গোত্রের উর্ধে উঠে যে মানুষ হওয়ার তাগিদ দিয়েছিলেন লালন, সে একই তাগিদ শিল্পীর ক্যানভাসে। তেল রঙে আঁকা ছবিগুলো চমৎকার। তবে একটু আলাদা করে বলতেই হবে প্রদ্যোৎ কুমার দাসের কথা। শিল্পকলা একাডেমীর কর্মকর্তা হওয়ায় তাঁর শিল্পী পরিচয়টা মাঝে মধ্যেই আড়ালে চলে যায়। অন্যকে দিয়ে ছবি আঁকিয়ে নেয়ার কাজে বেশি সময় দেন তিনি। একই কাজ করতে কুষ্টিয়া গিয়েছিলেন। তবে একপর্যায়ে রংতুলি হাতে নিতে হয়। ব্যস, হয়ে যায় আরও একটি ছবি। তবে এ ছবি দেখে বোঝার উপায় নেই, শিল্পী হঠাৎ সিদ্ধান্তে রংতুলি হাতে নিয়েছিলেন। বরং ধারণা হবে, বহুকাল আগেই মনে এভাবে লালনকে এঁকে রেখেছিলেন তিনি। তাঁর ছবিতে লালনের সেই অচিন পাখি আর কাঁচা বাঁশে তৈরি খাঁচা। এ খাঁচা ভেঙ্গে পাখি ওড়ে গেছে। অদ্ভুত সুন্দর ক্যানভাসের দিকে একটু গভীর দৃষ্টি নিয়ে তাকালে চোখ ভিজে যাবে যে কারও। কানে বেজে উঠবে সেই অমোঘ সুর মন ত্ইু রইলি খাঁচার আশে/ খাঁচা যে তোর কাঁচা বাঁশে/ কোনদিন খাঁচা পড়বে খসে/ফকির লালন কেঁদে কয়...। এভাবে নানা চিন্তার প্রকাশ ঘটিয়েছেন শিল্পীরা।
শিল্পকলা একাডেমী সূত্র জানায়, ছবিগুলো আঁকা শেষ করে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসকের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। বর্তমানে ছবিগুলো প্রদর্শিত হচ্ছে ছেঁউড়িয়ার লালন আখড়ায়। আয়োজন সম্পর্কে শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী বলেন, লালনকে নিয়ে নতুন কিছু করার চিন্তা থেকেই এ আর্ট ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়। এর ফলে বেশ কিছু ভাল ছবি আমরা পেয়েছি। ছবিগুলোর মাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন অভিধায় লালনকে প্রকাশ করা সম্ভব হয়েছে। চলমান লালন উৎসবে ছবিগুলো ভিন্নমাত্রা যোগ করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
নিজস্ব সংবাদদাতা কুষ্টিয়া থেকে জানান, উৎসবমুখর পরিবেশে কুষ্টিয়ায় পালিত হচ্ছে মরমি সাধক বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের ১২২তম মৃত্যুবার্ষিকী। এ উপলক্ষে লালনের চারণভূমি ও সাধন-ভজনের তীর্থস্থান কুমারখালী উপজেলার আখড়াবাড়ি চত্বরে সমাবেশ ঘটেছে লালনভক্ত অনুসারী, দর্শক-শ্রোতা আর বাউল-বাউলানীদের। ‘আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হোক আমাদের দিন বদলের অনুপ্রেরণা’ এই সেøাগান নিয়ে মঙ্গলবার থেকে (১ কার্তিক) এখানে শুরু হয়েছে টানা পাঁচদিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা। প্রথমদিন সন্ধ্যায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে পাঁচদিনব্যাপী এ আয়োজনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ। অনুষ্ঠানকে ঘিরে পুরো ছেঁউড়িয়া গ্রামটিই সেজেছে যেন উৎসবপল্লীতে। সাংস্কৃতিকবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সার্বিক সহযোগিতায় ও কুষ্টিয়া লালন একাডেমীর আয়োজনে প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থাকছে লালনের জীবনাদর্শন ও স্মৃতিচারণ করে আলোচনা, সঙ্গীতানুষ্ঠান এবং লালন মেলা। দেশের দূর-দূরান্ত থেকে অসংখ্য ভক্ত-অনুসারী, নারী-পুরুষ সাঁইজির টানে এখন ছেঁউড়িয়ায়। অনুষ্ঠানকে ঘিরে নেয়া হয়েছে র্যাব-পুলিশের কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
আব্দুল মান্নানের একটি ক্যানভাসে ধ্যানমগ্ন লালন। এ্যাক্রিলিকে গড়া এ শিল্পকর্মে মহান সাধকের চিন্তার জগৎ। নিজের মধ্যে ডুব দিয়েছেন লালন। জীবনের গভীরতর বোধগুলোর সন্ধান করছেন। এ ছবি যেন বলে দেয় ‘কিরূপ সাধনের বলে অধর ধরা যায়।’ মহান সাধক লালনের দেখানো পথে হেঁটে এখনও মুক্তির সন্ধান করছেন অগণিত ভক্ত। রূপ থেকে অরূপের সন্ধানে ছুটছেন তাঁরা। সেই তাঁদেরই একজনকে পাওয়া যায় শিল্পীর দ্বিতীয় ক্যানভাসে। এখানে গ্রামের মেঠো পথে একতারা হাতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বাউল। আপন মনে গাইছেন। শিল্পী সমীরণ চৌধুরী লালনের অদ্ভুত ক্ষমতায় মুগ্ধ। বিস্মিত। সেই অনুভূতির কথাই রংতুলিতে বলার চেষ্টা করেছেন তিনি। এ্যাক্রিলিকে সাজানো শিল্পীর ক্যানভাসে ত্রিকাল দৃষ্টা ঋষির চেহারায় খুঁজে পাওয়া যায় লালনকে। অসাম্প্রদায়িক চেতনার এ মহান সাধক জাতপাতের নামে বিভক্তি মেনে নিতে পারেননি। বিরুদ্ধ একসময়ে দাঁড়িয়ে তিনি এর প্রতিবাদ করেছিলেন। লালনের জন্মবীজ হতে মুক্ত হওয়ার দর্শন সমীরণ ধারণ করার চেষ্টা করেছেন অন্য একটি ক্যানভাসে। এ্যাক্রিলিকে গড়া এ শিল্পকর্মে নবজাতক শিশু কোলে লালন। শিল্পীর তৃতীয় ছবিতে সুরে সুরে নিজের দর্শন প্রচার করতে দেখা যায় লালনকে। সমীরণের চতুর্থ ছবিতে আধা শোয়ার ভঙ্গিতে শেষ বয়সী লালন। শ্মশ্রুম-িত সৌম্য শান্ত চেহারার লালন দেখে মন ভাল হয়ে যায়, সত্যি। শিল্পী শাহজাহান আহমেদ বিকাশের ক্যানভাসে সন্ধান মেলে মানুষের। তিনটি ক্যানভাসে কেবল মানুষকেই বিষয় করেছেন তিনি। জাতি গোত্রের উর্ধে উঠে যে মানুষ হওয়ার তাগিদ দিয়েছিলেন লালন, সে একই তাগিদ শিল্পীর ক্যানভাসে। তেল রঙে আঁকা ছবিগুলো চমৎকার। তবে একটু আলাদা করে বলতেই হবে প্রদ্যোৎ কুমার দাসের কথা। শিল্পকলা একাডেমীর কর্মকর্তা হওয়ায় তাঁর শিল্পী পরিচয়টা মাঝে মধ্যেই আড়ালে চলে যায়। অন্যকে দিয়ে ছবি আঁকিয়ে নেয়ার কাজে বেশি সময় দেন তিনি। একই কাজ করতে কুষ্টিয়া গিয়েছিলেন। তবে একপর্যায়ে রংতুলি হাতে নিতে হয়। ব্যস, হয়ে যায় আরও একটি ছবি। তবে এ ছবি দেখে বোঝার উপায় নেই, শিল্পী হঠাৎ সিদ্ধান্তে রংতুলি হাতে নিয়েছিলেন। বরং ধারণা হবে, বহুকাল আগেই মনে এভাবে লালনকে এঁকে রেখেছিলেন তিনি। তাঁর ছবিতে লালনের সেই অচিন পাখি আর কাঁচা বাঁশে তৈরি খাঁচা। এ খাঁচা ভেঙ্গে পাখি ওড়ে গেছে। অদ্ভুত সুন্দর ক্যানভাসের দিকে একটু গভীর দৃষ্টি নিয়ে তাকালে চোখ ভিজে যাবে যে কারও। কানে বেজে উঠবে সেই অমোঘ সুর মন ত্ইু রইলি খাঁচার আশে/ খাঁচা যে তোর কাঁচা বাঁশে/ কোনদিন খাঁচা পড়বে খসে/ফকির লালন কেঁদে কয়...। এভাবে নানা চিন্তার প্রকাশ ঘটিয়েছেন শিল্পীরা।
শিল্পকলা একাডেমী সূত্র জানায়, ছবিগুলো আঁকা শেষ করে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসকের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। বর্তমানে ছবিগুলো প্রদর্শিত হচ্ছে ছেঁউড়িয়ার লালন আখড়ায়। আয়োজন সম্পর্কে শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী বলেন, লালনকে নিয়ে নতুন কিছু করার চিন্তা থেকেই এ আর্ট ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়। এর ফলে বেশ কিছু ভাল ছবি আমরা পেয়েছি। ছবিগুলোর মাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন অভিধায় লালনকে প্রকাশ করা সম্ভব হয়েছে। চলমান লালন উৎসবে ছবিগুলো ভিন্নমাত্রা যোগ করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
নিজস্ব সংবাদদাতা কুষ্টিয়া থেকে জানান, উৎসবমুখর পরিবেশে কুষ্টিয়ায় পালিত হচ্ছে মরমি সাধক বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের ১২২তম মৃত্যুবার্ষিকী। এ উপলক্ষে লালনের চারণভূমি ও সাধন-ভজনের তীর্থস্থান কুমারখালী উপজেলার আখড়াবাড়ি চত্বরে সমাবেশ ঘটেছে লালনভক্ত অনুসারী, দর্শক-শ্রোতা আর বাউল-বাউলানীদের। ‘আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হোক আমাদের দিন বদলের অনুপ্রেরণা’ এই সেøাগান নিয়ে মঙ্গলবার থেকে (১ কার্তিক) এখানে শুরু হয়েছে টানা পাঁচদিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা। প্রথমদিন সন্ধ্যায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে পাঁচদিনব্যাপী এ আয়োজনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ। অনুষ্ঠানকে ঘিরে পুরো ছেঁউড়িয়া গ্রামটিই সেজেছে যেন উৎসবপল্লীতে। সাংস্কৃতিকবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সার্বিক সহযোগিতায় ও কুষ্টিয়া লালন একাডেমীর আয়োজনে প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থাকছে লালনের জীবনাদর্শন ও স্মৃতিচারণ করে আলোচনা, সঙ্গীতানুষ্ঠান এবং লালন মেলা। দেশের দূর-দূরান্ত থেকে অসংখ্য ভক্ত-অনুসারী, নারী-পুরুষ সাঁইজির টানে এখন ছেঁউড়িয়ায়। অনুষ্ঠানকে ঘিরে নেয়া হয়েছে র্যাব-পুলিশের কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
No comments