এশীয় সংহতির চেতনায় আঞ্চলিক সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে- কুয়েতে এসিডি শীর্ষ সম্মেলনে রাষ্ট্রপতি

রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমান বলেছেন, এশিয়ার দেশগুলোর অভিন্ন ভবিষ্যত কল্যাণের লক্ষ্যে সম্মিলিতভাবে এশীয় সংহতির চেতনার ভিত্তিতে এই অঞ্চলের সর্বোচ্চ সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো প্রয়োজন।


তিনি বলেন, “এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বাড়াতে দৃশ্যত আমাদের মধ্যে যেসব মতভেদ রয়েছে তা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।’’ রাষ্ট্রপতি ৩২টি দেশের সমন্বয়ে গঠিত এশিয়ার সর্ববৃহৎ ফোরাম এশীয় সহযোগিতা সংলাপ (এসিডি)-এর প্রথম শীর্ষ সম্মেলনে ভাষণ দিচ্ছিলেন। খবর বাসসর।
এশিয়ার দেশগুলোকে নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন অথবা আফ্রিকান ইউনিয়নের মতো একটি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জোট গঠনের লক্ষ্যে আলোচনায় অংশ নিতে কুয়েতের আমীরের আমন্ত্রণে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমান এসিডির অন্যান্য দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে দু’দিনের এ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন।
এর আগে কুয়েতের আমীর মঙ্গলবার সকালে তেলসমৃদ্ধ উপসাগরীয় দেশটির রাজধানীর লিবারেশন কনফারেন্স বিল্ডিংয়ে এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। তিনি সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। জিল্লুর রহমান বলেন, এই একবিংশ শতাব্দীতে বিশ্ব ভবিষ্যত সমৃদ্ধ ও নেতৃত্বের জন্য এশিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। তিনি বলেন, অবাধে সীমান্ত অতিক্রমের সুযোগ প্রদানের মাধ্যমে এসিডির দেশগুলোতে জনগণের মধ্যে যোগাযোগের সুযোগ দেয়া প্রয়োজন। তাহলেই কেবল আমরা ধারণা, বুদ্ধিমত্তা, সৃজনশীলতা ও প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে যোগাযোগ গড়ে তুলতে পারব।
রাষ্ট্রপতি উল্লেখ করেন, মানুষের মধ্যে যোগাযোগ পারস্পারিক সহযোগিতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে মৌলিক ভূমিকা পালন করে। সশরীরে ও মানবিক যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে আমাদের বৈচিত্র্যকে আমরা অগ্রাধিকারে পরিণত করতে পারি। আমি আশাবাদী যে, এশীয় দেশগুলোর মধ্যে যোগাযোগের উন্নতি বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করার ক্ষেত্রে সুফল বয়ে আনবে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অবকাঠামোগত যোগাযোগ জোরদার করার ক্ষেত্রে নীলনকশা প্রণয়নে থাই সরকারের প্রস্তাবকে বাংলাদেশ স্বাগত জানাচ্ছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, নৈকট্য ও অভিন্ন সংস্কৃতির কারণে এশীয় এক দেশ অপর দেশে বিনিয়োগ করে দূরবর্তী দেশগুলোর চেয়ে বেশি লাভবান হতে পারে। এশীয় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বৃহত্তর সহযোগিতা এশীয় উন্নয়নে উদ্বৃত্ত অর্থের অর্থবহ সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারে।
তিনি বলেন, কৃষি ও অবকাঠামোগত ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বৃদ্ধি খাদ্য নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান, শিল্পায়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, এসিডির সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক ও মানব সম্পদ এবং বিশাল বাজার গড়ে তুলতে হবে।
রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমান উল্লেখ করেন, এশিয়া বিশ্বের সবচেয়ে বড় এবং জনবহুল মহাদেশ। পৃথিবীর মোট আয়তনের শতকরা ৩০ ভাগ এবং জনসংখ্যার শতকরা ৬০ ভাগ এর অন্তর্ভুক্ত হলেও এ মহাদেশকে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, খাদ্য ও জ্বালানি খাতে নিরাপত্তাহীনতা ও সন্ত্রাসবাদসহ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে।
‘‘জ্বালানি, খাদ্য উৎপাদন ও সরবরাহ এবং সন্ত্রাসবাদবিরোধী সহযোগিতা এশীয় দেশগুলোর জন্য লাভজনক হতে পারে’’ উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘এশিয়ার অনেক দেশ জ্বালানি খাতে সমৃদ্ধ হলেও অনেক দেশে জ্বালানির চাহিদা রয়েছে। অনেক এশীয় দেশ খাদ্যের প্রধান রফতানিকারক হলেও অন্য দেশগুলো খাদ্য আমদানির ওপর নির্ভরশীল।’
এশিয়ার অনেক দেশ আধুনিক প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি করেছে উল্লে¬খ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, এশীয় দেশগুলোর মধ্যে এই প্রযুক্তি বিনিময় লাভজনক হতে পারে। রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, জনগণের মধ্যে আন্তঃযোগাযোগ নিশ্চিত করতে এসিডির উচিত এ ধরনের প্রকল্পের প্রতি গুরুত্বারোপ করা।

No comments

Powered by Blogger.