টিআইবির প্রতিবেদন

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) জাতীয় সংসদ সদস্যদের কর্মকা-ের ওপর একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ১৪৯টি সংসদীয় এলাকায় পরিচালিত জরিপের ওপর ভিত্তি করে যে গবেষণা প্রতিবেদন টিআইবি সম্প্রতি প্রকাশ করেছে তাতে বলা হয়েছে, ১৪৯ জন এমপির মধ্যে শতকরা ৯৭ জন নেতিবাচক কাজে জড়িত।


প্রশাসনিক কাজে প্রভাব বিস্তার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ, উন্নয়ন বরাদ্দের অপব্যবহার, অপরাধমূলক কার্যক্রমে জড়িত হওয়াকে সমর্থন, সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাব বিস্তার, নির্বাচনী আইন লঙ্ঘন, মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্লট বরাদ্দ নেয়া ইত্যাদি কাজকে নেতিবাচক কাজ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। গবেষণার আওতাভুক্ত এমপিদের মধ্যে সরকারী ও বিরোধী দল উভয় দলেরই সদস্য রয়েছেন। অন্যদিকে এই এমপিদের মধ্যে ৫৩.০৭% বিভিন্ন ইতিবাচক কাজও করেছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখিত হয়েছে। ইতিবাচক কাজের মধ্যে রয়েছে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে অবদান, বিরোধীদের সঙ্গে সদ্ভাব, কৃষি ও স্থানীয় অবকাঠামো নির্মাণে অবদান, ব্যক্তিগত কার্যক্রম, আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিত করা, নারীর ক্ষমতায়ন ইত্যাদি। প্রতিবেদনে ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় ধরনের কার্যক্রমেরই ক্ষেত্রওয়ারি বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া হয়েছে।
এদিকে, সরকারী ও বিরোধী দলের সব এমপিই টিআইবির এই প্রতিবেদনকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাঁরা এই রিপোর্টকে বিদ্বেষপূর্ণ ও কল্পনাপ্রসূত বলে আখ্যায়িত করেছেন। অধিকাংশ প্রবীণ সংসদ সদস্যরা বলেছেন, তথ্য-উপাত্ত ও দালিলিক প্রমাণ ছাড়া ঢালাওভাবে সংসদ সদস্যদের চরিত্র হনন করতে টিআইবির এ রিপোর্টের কোন ভিত্তি নেই। সরকারের একজন ক্লিন ইমেজের মন্ত্রী টিআইবিকে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ উপস্থাপনের আহ্বান জানিয়েছেন।
বর্তমান সরকারের কার্যকালের চার বছরের মাথায় টিআইবি প্রকাশিত এই গবেষণা প্রতিবেদনের সত্যাসত্য নির্ধারণ প্রমাণসাপেক্ষ বিষয়। কিছু এলাকার মানুষের গণমতামতের ভিত্তিতে সংসদ সদস্যদের মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের তথা জনপ্রতিনিধিদের সম্পর্কে এ ধরনের ঢালাও অভিযোগ তোলা কতখানি সুবিবেচনা ও যুক্তিযুক্ত তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে। ব্যক্তিগত শুনানি বা সমবেত আলোচনায় অনেক কথা, অনেক সমালোচনা উঠে আসতে পারে; কিন্তু সেই আলোচনা ও সুপারিশের ভিত্তিতে কাউকে কি প্রকাশ্যভাবে মিডিয়ার মাধ্যম দোষী বলে সার্টিফিকেট দেয়া যায়? সংসদ সদস্যদের মধ্যে কেউ কেউ হয়ত নেতিবাচক কার্যক্রমে জড়িত থাকতে পারেন, কিন্তু তা নির্ধারণের জন্য জনমত জরিপ ও সম্পর্কে তার ফল প্রকাশ কি শোভন পন্থা? কিন্তু টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদন প্রণীত হয়েছে অত্যন্ত সহজসাধ্য ও স্থূল পন্থায়। এখানে অপরাধ তদন্তের ক্ষেত্রে অনুসৃত নিবিড় অনুসন্ধান ও বিশ্লেষণী প্রক্রিয়ার পরিবর্তে শুধু কিছুসংখ্যক মানুষের কথা ও ভাষ্যকে প্রাধান্য দেয়া হয় যার মধ্যে সত্যও থাকতে পারে, আবার ব্যক্তিগত রাগ-বিরাগের প্রতিফলনও থাকতে পারে। সুতরাং সেই অভিমতের ওপর ভিত্তি করে প্রণীত প্রতিবেদন দেশব্যাপী ও বিশ্বব্যাপী প্রচারকে ‘উদ্দেশ্যমূলক’ বলে কেউ যদি সমালোচনা করে তাহলে তাকে অযৌক্তিক বলা যায় না।
যা হোক, টিআইবির প্রতিবেদনের প্রক্রিয়া ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে যতই প্রশ্ন থাকুক, সরকারের উচিত হবে এ ব্যাপারে নিবিড় অনুসন্ধান করা।

No comments

Powered by Blogger.