সাক্ষাৎকা-বাংলাদেশের পত্রিকায় গ্রামীণ সংবাদ গুরুত্ব পায় by নারায়ণ দত্ত
সাক্ষাৎকার গ্রহণ :রাজীব নন্দী সমকাল :কত দিন পর ঢাকা এলেন? কেমন লাগছে? নারায়ণ দত্ত :সে প্রায় ২২ বছরের মতো। এরশাদ সরকারের পতন দাবিতে বাংলাদেশের সব শ্রেণী-পেশার মানুষ তখন আন্দোলনে। ঢাকা তখন আন্দোলনের নগরী।
পার্টি আর পত্রিকা সম্পাদকের নির্দেশে ঢাকায় এসেছিলাম। মূলত এরশাদের পতন সংবাদটি কাভার করতেই আমার ঢাকা আসা। এখন আর সেই ঢাকা নেই। অনেক সুউচ্চ ইমারত, বহু মানুষ গিজগিজ করছে এখনকার শহরে। অনেক কিছুই ভালো লেগেছে। কিন্তু যানজটে শহরটি স্থবির হয়ে পড়েছে। কলকাতায় যানজট থাকলেও এমন ভয়াবহ অবস্থা থাকে না।
সমকাল :আপনি যখন সর্বশেষ ঢাকায় এসেছিলেন, সেই থেকে আজ অবধি বাংলাদেশের সংবাদপত্রগুলো প্রকৌশল ও প্রযুক্তিগত উন্নতিতে বহু গুণে এগিয়েছে। আপনি কি খেয়াল করেছেন? কেমন লাগে বাংলাদেশের সংবাদপত্র?
নারায়ণ দত্ত :কলকাতায় বসে আমরা মাঝরাতে বাংলাদেশের সংবাদপত্রগুলোর অন্তর্জাল সংস্করণ (অনলাইন এডিশন) দেখি। বাংলাদেশ প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে সংবাদপত্রকে একটি শিল্পে রূপ দিয়েছে। প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাওয়া কিন্তু কম দক্ষতার ব্যাপার না। তবে প্রযুক্তির ভিত তৈরি হয় ব্যবসায়িক বিনিয়োগকে কেন্দ্র করে। কারণ আপনার টাকা আছে তো সব আছে। ব্যবসায়িক বিনিয়োগ আছে তো প্রযুক্তিকে ভর করে এগিয়ে যাওয়া। আপনাদের এখানে পত্রিকায় প্রযুক্তির ব্যবহারের পাশাপাশি যেটা উল্লেখ করার মতো, তা হলো আপনারা মফস্বলের খবর প্রচুর দিচ্ছেন। গ্রাম-লোকালয়ের এত খবর আসা মানে আপনাদের শিক্ষিত পাঠকও বেড়েছে। এই যে সংবাদপত্র পড়ার মতো আগ্রহী পাঠক তৈরি করা_ এটাও উন্নতি। পৃষ্ঠাসজ্জায় ব্যতিক্রম খেয়াল করেছি। এক সময় প্রথম পৃষ্ঠায় অনেক কম সংবাদ থাকত। এখন দেখছি প্রথম পৃষ্ঠাজুড়ে অনেক সংবাদ। আমাদের ওখানে কিন্তু প্রথম পৃষ্ঠায় বড়জোর চার থেকে ছয়টি সংবাদ। এখানে অন্য রকম।
সমকাল :বর্তমান প্রযুক্তিগত উন্নতির যুগে ফেসবুক, টুইটার, বল্গগসহ সামাজিক মিডিয়ার দাপট কি পশ্চিমবঙ্গের সংবাদপত্রের প্রচারে কোনো প্রভাব ফেলছে?
নারায়ণ দত্ত :তরুণদের মধ্যে এই নিউ মিডিয়ার প্রভাব ব্যাপক। কিন্তু তা সংবাদপত্রের প্রতিদ্বন্দ্বী নয়। দেখা যাচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনেক কথা তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে কমেন্ট আকারে জানাচ্ছেন। অনেকেই তার উত্তর দিচ্ছেন। এখন সাংবাদিক হিসেবে আমাদের কাজ ফেসবুককে সংবাদের উৎস হিসেবে দেখা। সংবাদপত্রের আলাদা মেজাজ। সংবাদপত্র তার আগের জায়গাতেই আছে। ফেসবুক-টুইটার সংবাদপত্রকে চাপে রাখবে না, রাখছে না। তবে সমান্তরালভাবে দুটি মিডিয়াই এগিয়ে যাচ্ছে।
সমকাল :পশ্চিমবঙ্গের সর্বশেষ নির্বাচনে বামফ্রন্টের ভরাডুবি হয়েছিল। দীর্ঘ সময় বিপুল জনপ্রিয়তা নিয়ে সরকারের দায়িত্ব পালন করার পরও কেন এই হার?
নারায়ণ দত্ত :আমাদের কৌশলে ভুল ছিল। আমরা সংশোধন করে আবার গ্রামে যাচ্ছি। আমাদের কমরেডরা ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে আবার রাজনীতি শুরু করেছেন। পশ্চিমবঙ্গে বামেরা কিন্তু ৪১ ভাগ ভোট পেয়ে হেরেছে। বামফ্রন্টকে ঠেকাতে এখানে উগ্র বাম থেকে শুরু করে উগ্র ডান_ সবাই জোট বেঁধেছে। সঙ্গে যুক্ত ছিল সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্ত। আমরা আমাদের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যাব। জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে।
সমকাল :বর্তমান ঢাকা-দিলি্ল সম্পর্ক নিয়ে কিছু বলুন_
নারায়ণ দত্ত :ঢাকা-দিলি্ল সম্পর্ক ভালো। একে আরও ভালো করতে হবে। অনেক সমস্যা আছে দুই দেশে। এগুলো পুষে না রেখে দুই সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। এ ক্ষেত্রে ভারত সরকারকেই সবচেয়ে বেশি আন্তরিকতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। সীমান্তে বেশ কিছু নির্মম ঘটনা ঘটছে। আমি মনে করি, বাণিজ্যচুক্তি, সীমান্ত পরিস্থিতি ও তিস্তা ইস্যুতে ফলপ্রসূ আলোচনা হওয়া উচিত। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাদেশে এসে জলের ভাগ নিয়ে কোনো বক্তব্য রাখছেন না। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের। তিস্তার পানি চুক্তির ব্যাপারে বামফ্রন্ট মমতাকে সব ধরনের সহযোগিতা করতে চায়। জ্যোতি বসুর মতো নেতা ফারাক্কা নিয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে চুক্তি করেছেন। মমতার তরফ থেকে রাজনৈতিক স্বচ্ছতা চাই।
সমকাল :ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির (মার্কসবাদী) মুখপত্র হিসেবে গণশক্তি পরিচালিত ও প্রকাশিত হয়। সংবাদপত্র কি পার্টিজান হতে পারে? এতে কি সংবাদপত্রের নিরপেক্ষ চরিত্র ক্ষুণ্ন হয় না?
নারায়ণ দত্ত :নিরপেক্ষ শব্দটাই অলীক শব্দ। সমাজে যখন শোষণ চলছে, তখন আপনি হয় শোষক, নয়তো শোষিত_ এই দুই শ্রেণীর বাইরে থাকতে পারেন না। শ্রেণীবিভক্ত সমাজে পত্রিকারও একটি চরিত্র থাকে। গলা ফাটিয়ে যারা নিরপেক্ষতার দাবি করে, তারাই আসলে সবচেয়ে বেশি কোনো না কোনো পক্ষের। সমাজে মেহনতকারীদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে সমাজটিকে আমূল পাল্টানোর জন্য আদর্শিক সংগ্রামে থাকাটাই সময়ের দাবি। গণশক্তি কিন্তু পার্টি পত্রিকা না। এটি একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ পত্রিকা। সমাজে বৈষম্য বাড়লে গণশক্তি তা দেখায়। সমাজে ভুল হলে গণশক্তি পথ দেখায়। তবে আমরা সংবাদের ওপর নিজেদের দলীয় মতামত চড়িয়ে দিই না। মতামতের জন্য আলাদা জায়গা আছে সংবাদপত্রে। সেটা খবরের মধ্যে নয়।
সমকাল : সরকারি পত্রিকা হলে বা সরকারঘেঁষা পত্রিকা হলে পাঠক কোনোভাবেই বাংলাদেশে গ্রহণ করে না। বাম, ডান_ কোনো মহলের পত্রিকাকেই বাংলাদেশে পাঠক ঘরে নিয়মিত ঠাঁই দেয়নি। গণশক্তির অভিজ্ঞতা কী?
নারায়ণ দত্ত :পাঠকদের সচেতনতাই মুখ্য। গত ৩৪ বছরে আমাদের কেউ সরকারঘেঁষা বলতে পারেনি। কারণ আমরা দলের মুখপত্র হলেও সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করেছি। এমন অনেক সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছি, যা কট্টর বিরোধী দলের পক্ষ থেকে করা হয়েছিল। তবে আমরা মেহনতি মানুষের সুখ-দুঃখের পাশে থাকাটাই কর্তব্য মনে করেছি। সেটাকে কেন্দ্র করে সংবাদ ছাপিয়েছি। সংবাদপত্রে গণমানুষের স্বার্থের কথা প্রতিফলিত হলে গণমানুষই সংবাদপত্রটিকে গ্রহণ করে; আপন করে তোলে।
সমকাল :বাংলাদেশে একটি বামপন্থি শক্তির উত্থান প্রত্যাশা করে অনেকেই। কিন্তু বামদের শক্তির ওপর আস্থা রাখে না। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের কী ভবিষ্যৎ দেখছেন?
নারায়ণ দত্ত :বাংলাদেশের জনগণই চাইবে কোন দলের শাসন তারা মেনে নেবে। তবে আমি চাইব, বিকল্প শক্তির যদি উত্থান ঘটাতেই হয়, তবে তা অবশ্যই বামেদের নেতৃত্বে। একটি বিষয় হলো_ বাম গণতান্ত্রিক বিকল্প, এরপর বামফ্রন্ট। এই দুই ঐক্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতিকে আমি দেখতে চাই। যেভাবে কেরালা, পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরাতে আমরা এগিয়েছি।
সমকাল : এই মুহূর্তে পৃথিবীব্যাপী বামপন্থিদের সবচেয়ে বড় সুখবর_ ভেনিজুয়েলা নির্বাচনে ফের হুগো শাভেজের জয়। ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে চতুর্থবারের মতো জয়ী হয়েছেন হুগো শাভেজ। বাংলাদেশে জনগণের কাতারে থেকে বামপন্থিরা বছরজুড়ে আন্দোলন-সংগ্রাম করলেও ভোটের রাজনীতিতে পিছিয়ে থাকে। আপনার অভিমত কী?
নারায়ণ দত্ত :ভোটের রাজনীতি আর গণমানুষের জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম দুটি সম্পূর্ণ পৃথক। অর্থনীতিবাদী আন্দোলন বছরজুড়ে চলে। মানুষ এতে সমথর্নও দেয়। কিন্তু ভোটের আয়োজনটা এমন_ এখানে অস্ত্র, পেশিশক্তিসহ এমন কিছু বৈশিষ্ট্য কাজ করে, তখন আন্দোলনের মানুষরা অসহায় হয়ে পড়ে। এ ক্ষেত্রে বামপন্থিদের আরও জনগণের কাতারে থাকতে হবে। আরও আস্থা ও ভালোবাসার জায়গায় নিয়ে যেতে হবে নিজেদের। শাভেজ জিতেছেন, কারণ তার সঙ্গে ছিল দেশ ও দেশের মানুষ। তার বিরুদ্ধে ছিল সাম্রাজ্যবাদী শক্তি। কিন্তু জনগণের ভালোবাসা আর আস্থায় তিনি জয়ী হয়েছেন। শাভেজ অবশ্যই এখনকার মুক্তিকামী মানুষের পৃথিবী বানানোর সংগ্রামে পথিকৃৎ।
সমকাল :আপনাকে ধন্যবাদ।
নারায়ণ দত্ত :সমকালের পাঠকদের আমার বিপ্লবী শুভেচ্ছা।
সমকাল :আপনি যখন সর্বশেষ ঢাকায় এসেছিলেন, সেই থেকে আজ অবধি বাংলাদেশের সংবাদপত্রগুলো প্রকৌশল ও প্রযুক্তিগত উন্নতিতে বহু গুণে এগিয়েছে। আপনি কি খেয়াল করেছেন? কেমন লাগে বাংলাদেশের সংবাদপত্র?
নারায়ণ দত্ত :কলকাতায় বসে আমরা মাঝরাতে বাংলাদেশের সংবাদপত্রগুলোর অন্তর্জাল সংস্করণ (অনলাইন এডিশন) দেখি। বাংলাদেশ প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে সংবাদপত্রকে একটি শিল্পে রূপ দিয়েছে। প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাওয়া কিন্তু কম দক্ষতার ব্যাপার না। তবে প্রযুক্তির ভিত তৈরি হয় ব্যবসায়িক বিনিয়োগকে কেন্দ্র করে। কারণ আপনার টাকা আছে তো সব আছে। ব্যবসায়িক বিনিয়োগ আছে তো প্রযুক্তিকে ভর করে এগিয়ে যাওয়া। আপনাদের এখানে পত্রিকায় প্রযুক্তির ব্যবহারের পাশাপাশি যেটা উল্লেখ করার মতো, তা হলো আপনারা মফস্বলের খবর প্রচুর দিচ্ছেন। গ্রাম-লোকালয়ের এত খবর আসা মানে আপনাদের শিক্ষিত পাঠকও বেড়েছে। এই যে সংবাদপত্র পড়ার মতো আগ্রহী পাঠক তৈরি করা_ এটাও উন্নতি। পৃষ্ঠাসজ্জায় ব্যতিক্রম খেয়াল করেছি। এক সময় প্রথম পৃষ্ঠায় অনেক কম সংবাদ থাকত। এখন দেখছি প্রথম পৃষ্ঠাজুড়ে অনেক সংবাদ। আমাদের ওখানে কিন্তু প্রথম পৃষ্ঠায় বড়জোর চার থেকে ছয়টি সংবাদ। এখানে অন্য রকম।
সমকাল :বর্তমান প্রযুক্তিগত উন্নতির যুগে ফেসবুক, টুইটার, বল্গগসহ সামাজিক মিডিয়ার দাপট কি পশ্চিমবঙ্গের সংবাদপত্রের প্রচারে কোনো প্রভাব ফেলছে?
নারায়ণ দত্ত :তরুণদের মধ্যে এই নিউ মিডিয়ার প্রভাব ব্যাপক। কিন্তু তা সংবাদপত্রের প্রতিদ্বন্দ্বী নয়। দেখা যাচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনেক কথা তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে কমেন্ট আকারে জানাচ্ছেন। অনেকেই তার উত্তর দিচ্ছেন। এখন সাংবাদিক হিসেবে আমাদের কাজ ফেসবুককে সংবাদের উৎস হিসেবে দেখা। সংবাদপত্রের আলাদা মেজাজ। সংবাদপত্র তার আগের জায়গাতেই আছে। ফেসবুক-টুইটার সংবাদপত্রকে চাপে রাখবে না, রাখছে না। তবে সমান্তরালভাবে দুটি মিডিয়াই এগিয়ে যাচ্ছে।
সমকাল :পশ্চিমবঙ্গের সর্বশেষ নির্বাচনে বামফ্রন্টের ভরাডুবি হয়েছিল। দীর্ঘ সময় বিপুল জনপ্রিয়তা নিয়ে সরকারের দায়িত্ব পালন করার পরও কেন এই হার?
নারায়ণ দত্ত :আমাদের কৌশলে ভুল ছিল। আমরা সংশোধন করে আবার গ্রামে যাচ্ছি। আমাদের কমরেডরা ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে আবার রাজনীতি শুরু করেছেন। পশ্চিমবঙ্গে বামেরা কিন্তু ৪১ ভাগ ভোট পেয়ে হেরেছে। বামফ্রন্টকে ঠেকাতে এখানে উগ্র বাম থেকে শুরু করে উগ্র ডান_ সবাই জোট বেঁধেছে। সঙ্গে যুক্ত ছিল সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্ত। আমরা আমাদের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যাব। জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে।
সমকাল :বর্তমান ঢাকা-দিলি্ল সম্পর্ক নিয়ে কিছু বলুন_
নারায়ণ দত্ত :ঢাকা-দিলি্ল সম্পর্ক ভালো। একে আরও ভালো করতে হবে। অনেক সমস্যা আছে দুই দেশে। এগুলো পুষে না রেখে দুই সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। এ ক্ষেত্রে ভারত সরকারকেই সবচেয়ে বেশি আন্তরিকতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। সীমান্তে বেশ কিছু নির্মম ঘটনা ঘটছে। আমি মনে করি, বাণিজ্যচুক্তি, সীমান্ত পরিস্থিতি ও তিস্তা ইস্যুতে ফলপ্রসূ আলোচনা হওয়া উচিত। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাদেশে এসে জলের ভাগ নিয়ে কোনো বক্তব্য রাখছেন না। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের। তিস্তার পানি চুক্তির ব্যাপারে বামফ্রন্ট মমতাকে সব ধরনের সহযোগিতা করতে চায়। জ্যোতি বসুর মতো নেতা ফারাক্কা নিয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে চুক্তি করেছেন। মমতার তরফ থেকে রাজনৈতিক স্বচ্ছতা চাই।
সমকাল :ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির (মার্কসবাদী) মুখপত্র হিসেবে গণশক্তি পরিচালিত ও প্রকাশিত হয়। সংবাদপত্র কি পার্টিজান হতে পারে? এতে কি সংবাদপত্রের নিরপেক্ষ চরিত্র ক্ষুণ্ন হয় না?
নারায়ণ দত্ত :নিরপেক্ষ শব্দটাই অলীক শব্দ। সমাজে যখন শোষণ চলছে, তখন আপনি হয় শোষক, নয়তো শোষিত_ এই দুই শ্রেণীর বাইরে থাকতে পারেন না। শ্রেণীবিভক্ত সমাজে পত্রিকারও একটি চরিত্র থাকে। গলা ফাটিয়ে যারা নিরপেক্ষতার দাবি করে, তারাই আসলে সবচেয়ে বেশি কোনো না কোনো পক্ষের। সমাজে মেহনতকারীদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে সমাজটিকে আমূল পাল্টানোর জন্য আদর্শিক সংগ্রামে থাকাটাই সময়ের দাবি। গণশক্তি কিন্তু পার্টি পত্রিকা না। এটি একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ পত্রিকা। সমাজে বৈষম্য বাড়লে গণশক্তি তা দেখায়। সমাজে ভুল হলে গণশক্তি পথ দেখায়। তবে আমরা সংবাদের ওপর নিজেদের দলীয় মতামত চড়িয়ে দিই না। মতামতের জন্য আলাদা জায়গা আছে সংবাদপত্রে। সেটা খবরের মধ্যে নয়।
সমকাল : সরকারি পত্রিকা হলে বা সরকারঘেঁষা পত্রিকা হলে পাঠক কোনোভাবেই বাংলাদেশে গ্রহণ করে না। বাম, ডান_ কোনো মহলের পত্রিকাকেই বাংলাদেশে পাঠক ঘরে নিয়মিত ঠাঁই দেয়নি। গণশক্তির অভিজ্ঞতা কী?
নারায়ণ দত্ত :পাঠকদের সচেতনতাই মুখ্য। গত ৩৪ বছরে আমাদের কেউ সরকারঘেঁষা বলতে পারেনি। কারণ আমরা দলের মুখপত্র হলেও সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করেছি। এমন অনেক সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছি, যা কট্টর বিরোধী দলের পক্ষ থেকে করা হয়েছিল। তবে আমরা মেহনতি মানুষের সুখ-দুঃখের পাশে থাকাটাই কর্তব্য মনে করেছি। সেটাকে কেন্দ্র করে সংবাদ ছাপিয়েছি। সংবাদপত্রে গণমানুষের স্বার্থের কথা প্রতিফলিত হলে গণমানুষই সংবাদপত্রটিকে গ্রহণ করে; আপন করে তোলে।
সমকাল :বাংলাদেশে একটি বামপন্থি শক্তির উত্থান প্রত্যাশা করে অনেকেই। কিন্তু বামদের শক্তির ওপর আস্থা রাখে না। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের কী ভবিষ্যৎ দেখছেন?
নারায়ণ দত্ত :বাংলাদেশের জনগণই চাইবে কোন দলের শাসন তারা মেনে নেবে। তবে আমি চাইব, বিকল্প শক্তির যদি উত্থান ঘটাতেই হয়, তবে তা অবশ্যই বামেদের নেতৃত্বে। একটি বিষয় হলো_ বাম গণতান্ত্রিক বিকল্প, এরপর বামফ্রন্ট। এই দুই ঐক্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতিকে আমি দেখতে চাই। যেভাবে কেরালা, পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরাতে আমরা এগিয়েছি।
সমকাল : এই মুহূর্তে পৃথিবীব্যাপী বামপন্থিদের সবচেয়ে বড় সুখবর_ ভেনিজুয়েলা নির্বাচনে ফের হুগো শাভেজের জয়। ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে চতুর্থবারের মতো জয়ী হয়েছেন হুগো শাভেজ। বাংলাদেশে জনগণের কাতারে থেকে বামপন্থিরা বছরজুড়ে আন্দোলন-সংগ্রাম করলেও ভোটের রাজনীতিতে পিছিয়ে থাকে। আপনার অভিমত কী?
নারায়ণ দত্ত :ভোটের রাজনীতি আর গণমানুষের জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম দুটি সম্পূর্ণ পৃথক। অর্থনীতিবাদী আন্দোলন বছরজুড়ে চলে। মানুষ এতে সমথর্নও দেয়। কিন্তু ভোটের আয়োজনটা এমন_ এখানে অস্ত্র, পেশিশক্তিসহ এমন কিছু বৈশিষ্ট্য কাজ করে, তখন আন্দোলনের মানুষরা অসহায় হয়ে পড়ে। এ ক্ষেত্রে বামপন্থিদের আরও জনগণের কাতারে থাকতে হবে। আরও আস্থা ও ভালোবাসার জায়গায় নিয়ে যেতে হবে নিজেদের। শাভেজ জিতেছেন, কারণ তার সঙ্গে ছিল দেশ ও দেশের মানুষ। তার বিরুদ্ধে ছিল সাম্রাজ্যবাদী শক্তি। কিন্তু জনগণের ভালোবাসা আর আস্থায় তিনি জয়ী হয়েছেন। শাভেজ অবশ্যই এখনকার মুক্তিকামী মানুষের পৃথিবী বানানোর সংগ্রামে পথিকৃৎ।
সমকাল :আপনাকে ধন্যবাদ।
নারায়ণ দত্ত :সমকালের পাঠকদের আমার বিপ্লবী শুভেচ্ছা।
No comments