কোরবানির পশু ক্রয়-বিক্রয়ে সাবধানতা by ডা. মো. ফজলুল হক
বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকেই কোনো সরকার গবাদি প্রাণীর ক্ষেত্রে রোগ প্রতিরোধকল্পে সঙ্গনিরোধ (Quarantine act) বাস্তবায়িত না করায় গবাদি প্রাণী বিভিন্ন রোগবালাই নিয়ে প্রবেশ করছে নির্দ্বিধায়। সামনে ঈদুল আজহা (কোরবানির ঈদ)। ইতিমধ্যেই হাজার হাজার পশু বাজারে আসতে শুরু করছে।
শত শত কিলোমিটার দূর থেকে বাজারজাতকৃত প্রাণী, বিশেষ করে গরু ও মহিষের হঠাৎ স্থান ও আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দ্রুত হ্রাস পায়। ফলে খুরারোগসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এ ক্ষেত্রে কোরবানির জন্য ক্রয়কৃত প্রাণীটি বাসায় অবস্থিত সুস্থ প্রাণী থেকে দূরে রাখা প্রয়োজন। চামড়া সংগ্রহের সময় সতর্ক থাকতে হবে, যাতে চামড়ায় কোনো ক্ষতের কারণে গুণগত মান নষ্ট না হয়। তাই বিক্রেতা, ক্রেতা ও ভোক্তা সবার প্রতি জ্ঞাতব্য বিষয় নিম্নরূপ।
বিক্রেতার করণীয় : (১) সুস্থ পশু বাজারজাত করুন। (২) বাজারের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার আগে পশুকে অর্ধপেট খাবার দিন। কারণ পেটভর্তি খাবারের কারণে যাত্রাপথে পেট ফুলে পশু ক্ষতিগ্রস্ত, এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। বাজারে পেঁৗছানোর পর পরিমিত খাবার দিন। (৩) পশুকে ভাত, চালের জাউ, ভাতের মাড়, পাউরুটি, মিষ্টি আলু, গোল আলু, কুমড়া, টমেটো ইত্যাদি খাওয়ানো থেকে বিরত থাকুন। এতে বিষক্রিয়া হয়ে পশুর মৃত্যু হতে পারে (৪) তরলজাতীয় খাবার বাঁশের চোঙা বা বোতলের সাহায্যে জোরপূর্বক খাওয়াবেন না। কারণ অনেক সময় খাদ্যদ্রব্য শ্বাসনালিতে প্রবেশের মাধ্যমে পশুর মৃত্যুও হতে পারে (৫) অতিরিক্ত ঠাণ্ডা বা গরম খাদ্য খাওয়ানো ভালো নয়। পশুকে ছায়াযুক্ত স্থানে রাখা উত্তম (৬) নাক-মুখ শুকনো থাকলে ও খাওয়া ছেড়ে দিলে ভেটেরিনারি সার্জনের পরামর্শ নিন। অসুস্থ পশু বিক্রি থেকে বিরত থাকুন। (৭) গাভির গর্ভ পরীক্ষা সনদপত্র সরকারি ভেটেরিনারি ডাক্তারের কাছ থেকে সংগ্রহ করে তারপর বিক্রি করুন।
ক্রেতার করণীয় : (১) সুস্থ পশু কিনুন। গাভির ক্ষেত্রে গর্ভ পরীক্ষা সার্টিফিকেট ছাড়া ক্রয় করা অনুচিত। (২) অসুস্থ পশুর লক্ষণ যেমন- খাওয়া ছেড়ে দেওয়া, পেট ফাঁপা, জাবর না কাটা, নাক-মুখ শুকনো থাকা, নাক-মুখ দিয়ে লালা বা শ্লেষ্মা পড়া, খুঁড়িয়ে হাঁটা, পাতলা পায়খানা করা, পায়ে-মুখে ঘা, প্রস্রাব বন্ধ ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রয়োজনে ভেটেরিনারি সার্জনের পরামর্শ নিন। (৩) শিং ভাঙা বা কাটা, লেজ ভাঙা, কান কাটাসহ ত্রুটিপূর্ণ যেকোনো পশু ক্রয় থেকে বিরত থাকুন। (৪) পশু কেনার পর ধীরে ধীরে হাঁটিয়ে বাসায় নিন। কোনো অবস্থায়ই দৌড়ানো ভালো নয়। কারণ নতুন স্থানে পশুটি উত্তেজিত হয়ে পা ভাঙা, পেট ফাঁপা ও পেটের ব্যথায় অসুস্থ হতে পারে। (৫) কোরবানির জন্য ক্রয়কৃত পশুটি অন্যান্য পালিত গাভি বা গরু থেকে অনেক দূরে রাখুন। কারণ খুরারোগসহ অন্যান্য সংক্রামক রোগে আপনার খামারের পশু আক্রান্ত হতে পারে। (৬) অনেক সময় বুড়িয়ে যাওয়া পশুকে বিক্রির জন্য দাঁত উঠিয়ে বিক্রি করা হয়।
পশু জবাইয়ের আগে ও পরে সবার করণীয় : (১) পশুটিকে ১০-১২ ঘণ্টা আগে থেকে পানি ছাড়া সব ধরনের খাবার দেওয়া বন্ধ করে দিন। (২) জবাইয়ের আগে পশুটিকে সাবান-পানি দিয়ে গোসল করান। (৩) ধারালো চাকু দ্বারা জবাই করুন। এ ক্ষেত্রে জবাই করার মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে শরীর থেকে সম্পূর্ণ রক্ত বের করা। জবাইয়ের সময় চাকুর মাথা দিয়ে ঘাড়ের মেরুদণ্ডের স্পাইনাল কর্ড কাটবেন না। এতে পশুটি তাড়াতাড়ি নিস্তেজ হবে। ফলে রক্তক্ষরণ সঠিকভাবে সম্পূর্ণ হবে না। জবাই করার ১০-১৫ মিনিট পর পায়ের রগ কাটুন এবং চামড়া ছাড়াতে শুরু করুন। (৪) ছামড়া ছাড়ানোর সময় প্রথমে মুখের দুই চোয়ালের মাঝ বরাবর কাটার স্থান থেকে নাভি, অণ্ডকোষ বা ওলানের মধ্য বরাবর লাইন করে চামড়া কেটে ছাড়ানো শুরু করুন। অতিরিক্ত মাংস ও চর্বিজাতীয় কোষ চামড়া থেকে ছাড়ানো ভালো। (৫) জবাই শেষে রক্ত, হাড়ের টুকরো, পায়খানা ইত্যাদি যথাস্থানে রাখুন (শহর বা সিটি করপোরেশনের ক্ষেত্রে) এবং গ্রামগঞ্জের ক্ষেত্রে মাটিতে পুঁতে রাখুন। কারণ এ থেকে পরিবেশদূষণ ও রোগ ছড়াতে পারে। (৬) জবাইসহ মাংস তৈরির স্থান ধুয়ে ফেলুন এবং বি্লচিং পাউডার ছড়িয়ে দিন। এলাকার পরিবেশ স্বাস্থ্যসম্মত রাখুন। নিজে সুস্থ থাকুন, অন্যকে সুস্থ থাকতে সহযোগিতা করুন। গোশত ও চর্বির কারণে শিল্প-কারখানার পরিবেশ নষ্ট হয়।
সঠিক পথে ও আইনের আওতায় পশু আমদানি এবং সঙ্গনিরোধ আইন সঠিকভাবে বাস্তবায়ন আমাদের সবার প্রত্যাশা। অন্যথায় লাভবান না হয়ে দেশকে লোকসানের ঘানি টানতে হবে, যা কারো কাম্য নয়।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর।
fhoque.hstu@gmail.com
বিক্রেতার করণীয় : (১) সুস্থ পশু বাজারজাত করুন। (২) বাজারের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার আগে পশুকে অর্ধপেট খাবার দিন। কারণ পেটভর্তি খাবারের কারণে যাত্রাপথে পেট ফুলে পশু ক্ষতিগ্রস্ত, এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। বাজারে পেঁৗছানোর পর পরিমিত খাবার দিন। (৩) পশুকে ভাত, চালের জাউ, ভাতের মাড়, পাউরুটি, মিষ্টি আলু, গোল আলু, কুমড়া, টমেটো ইত্যাদি খাওয়ানো থেকে বিরত থাকুন। এতে বিষক্রিয়া হয়ে পশুর মৃত্যু হতে পারে (৪) তরলজাতীয় খাবার বাঁশের চোঙা বা বোতলের সাহায্যে জোরপূর্বক খাওয়াবেন না। কারণ অনেক সময় খাদ্যদ্রব্য শ্বাসনালিতে প্রবেশের মাধ্যমে পশুর মৃত্যুও হতে পারে (৫) অতিরিক্ত ঠাণ্ডা বা গরম খাদ্য খাওয়ানো ভালো নয়। পশুকে ছায়াযুক্ত স্থানে রাখা উত্তম (৬) নাক-মুখ শুকনো থাকলে ও খাওয়া ছেড়ে দিলে ভেটেরিনারি সার্জনের পরামর্শ নিন। অসুস্থ পশু বিক্রি থেকে বিরত থাকুন। (৭) গাভির গর্ভ পরীক্ষা সনদপত্র সরকারি ভেটেরিনারি ডাক্তারের কাছ থেকে সংগ্রহ করে তারপর বিক্রি করুন।
ক্রেতার করণীয় : (১) সুস্থ পশু কিনুন। গাভির ক্ষেত্রে গর্ভ পরীক্ষা সার্টিফিকেট ছাড়া ক্রয় করা অনুচিত। (২) অসুস্থ পশুর লক্ষণ যেমন- খাওয়া ছেড়ে দেওয়া, পেট ফাঁপা, জাবর না কাটা, নাক-মুখ শুকনো থাকা, নাক-মুখ দিয়ে লালা বা শ্লেষ্মা পড়া, খুঁড়িয়ে হাঁটা, পাতলা পায়খানা করা, পায়ে-মুখে ঘা, প্রস্রাব বন্ধ ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রয়োজনে ভেটেরিনারি সার্জনের পরামর্শ নিন। (৩) শিং ভাঙা বা কাটা, লেজ ভাঙা, কান কাটাসহ ত্রুটিপূর্ণ যেকোনো পশু ক্রয় থেকে বিরত থাকুন। (৪) পশু কেনার পর ধীরে ধীরে হাঁটিয়ে বাসায় নিন। কোনো অবস্থায়ই দৌড়ানো ভালো নয়। কারণ নতুন স্থানে পশুটি উত্তেজিত হয়ে পা ভাঙা, পেট ফাঁপা ও পেটের ব্যথায় অসুস্থ হতে পারে। (৫) কোরবানির জন্য ক্রয়কৃত পশুটি অন্যান্য পালিত গাভি বা গরু থেকে অনেক দূরে রাখুন। কারণ খুরারোগসহ অন্যান্য সংক্রামক রোগে আপনার খামারের পশু আক্রান্ত হতে পারে। (৬) অনেক সময় বুড়িয়ে যাওয়া পশুকে বিক্রির জন্য দাঁত উঠিয়ে বিক্রি করা হয়।
পশু জবাইয়ের আগে ও পরে সবার করণীয় : (১) পশুটিকে ১০-১২ ঘণ্টা আগে থেকে পানি ছাড়া সব ধরনের খাবার দেওয়া বন্ধ করে দিন। (২) জবাইয়ের আগে পশুটিকে সাবান-পানি দিয়ে গোসল করান। (৩) ধারালো চাকু দ্বারা জবাই করুন। এ ক্ষেত্রে জবাই করার মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে শরীর থেকে সম্পূর্ণ রক্ত বের করা। জবাইয়ের সময় চাকুর মাথা দিয়ে ঘাড়ের মেরুদণ্ডের স্পাইনাল কর্ড কাটবেন না। এতে পশুটি তাড়াতাড়ি নিস্তেজ হবে। ফলে রক্তক্ষরণ সঠিকভাবে সম্পূর্ণ হবে না। জবাই করার ১০-১৫ মিনিট পর পায়ের রগ কাটুন এবং চামড়া ছাড়াতে শুরু করুন। (৪) ছামড়া ছাড়ানোর সময় প্রথমে মুখের দুই চোয়ালের মাঝ বরাবর কাটার স্থান থেকে নাভি, অণ্ডকোষ বা ওলানের মধ্য বরাবর লাইন করে চামড়া কেটে ছাড়ানো শুরু করুন। অতিরিক্ত মাংস ও চর্বিজাতীয় কোষ চামড়া থেকে ছাড়ানো ভালো। (৫) জবাই শেষে রক্ত, হাড়ের টুকরো, পায়খানা ইত্যাদি যথাস্থানে রাখুন (শহর বা সিটি করপোরেশনের ক্ষেত্রে) এবং গ্রামগঞ্জের ক্ষেত্রে মাটিতে পুঁতে রাখুন। কারণ এ থেকে পরিবেশদূষণ ও রোগ ছড়াতে পারে। (৬) জবাইসহ মাংস তৈরির স্থান ধুয়ে ফেলুন এবং বি্লচিং পাউডার ছড়িয়ে দিন। এলাকার পরিবেশ স্বাস্থ্যসম্মত রাখুন। নিজে সুস্থ থাকুন, অন্যকে সুস্থ থাকতে সহযোগিতা করুন। গোশত ও চর্বির কারণে শিল্প-কারখানার পরিবেশ নষ্ট হয়।
সঠিক পথে ও আইনের আওতায় পশু আমদানি এবং সঙ্গনিরোধ আইন সঠিকভাবে বাস্তবায়ন আমাদের সবার প্রত্যাশা। অন্যথায় লাভবান না হয়ে দেশকে লোকসানের ঘানি টানতে হবে, যা কারো কাম্য নয়।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর।
fhoque.hstu@gmail.com
No comments