জাদুঘর দিবস by মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম
আধুনিক বিজ্ঞানের জগতে নানা ধরনের চিত্তবিনোদনের উপাদান আবিষ্কারের ফলে মানবসমাজ অপসংস্কৃতির বেড়াজালে ক্রমান্বয়ে আবদ্ধ হয়ে হাজার হাজার বছরের নিজেদের অতীত ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে লালনপালনে সক্ষম হচ্ছে না।
বিজ্ঞানের দ্রুত কৌশল পদ্ধতি, উন্নত প্রযুক্তিগত মাধ্যমের গ্রহণযোগ্যতার অনুপাত বৃদ্ধি ও বহুল প্রচার-প্রসারের কারণে মানবসংস্কৃতি মৌলিক ধারা থেকে দূরে সরে গিয়ে আদি শিকড়-বন্ধনকে অবহেলা করে অনাকাঙ্ক্ষিত প্রতিযোগিতার দ্বারপ্রান্তে উপনীত হচ্ছে।
মানবজাতির ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারক-বাহক হচ্ছে দেশের জাদুঘর। বর্তমানে বিজ্ঞানের প্রযুক্তিগত উন্নত ব্যবস্থা ও প্রচার-প্রসারের মৌলিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে নানা প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হওয়ায় জাদুঘর বর্তমান সভ্যতার গঠন ব্যবস্থার গতিপ্রকৃতি ক্রমান্বয়ে মন্থর থেকে মন্থরতর হচ্ছে, যা অনেকটা হুমকির পর্যায়ে বিবেচনা করা যায়। আন্তর্জাতিক জাদুঘর পরিষদ এবারের আন্তর্জাতিক দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে 'অপসংস্কৃতির প্রতিবন্ধকতা রোধে জাদুঘর'।
বর্তমানে বাস্তব অবস্থার প্রেক্ষাপটে দেখা যায়, বাংলাদেশে স্থাপিত জাদুঘরগুলোর স্থাপনা, ভবন নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনায় উল্লেখযোগ্য কোনো স্বীকৃত নীতিমালা নেই। বাংলাদেশে স্থাপিত ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের জাদুঘর, ভিন্ন ভিন্ন পরিচালনা পরিষদ, হরেক রকম নামের পদ, সেসব পদের একটির সঙ্গে অন্যটির কোনো সমতা নেই। জাদুঘরগুলোতে নিদর্শন সংগ্রহের সুনির্দিষ্ট বিধিবিধান নেই। দেশের বাইরে নিদর্শন পাচারকারীদের শাস্তির জন্য প্রচলিত বাংলাদেশ দণ্ডবিধিতে শাস্তির কোনো ধারা বলবৎ নেই, যার কারণে অপরাধীরা আইনের চোখ ফাঁকি দিয়ে অনায়াসে বেরিয়ে আবার অপকর্মে লিপ্ত হয়। এ ধরনের বহু বাস্তবিক সমস্যা দৃশ্যমান চলমান বাংলাদেশের জাদুঘর পরিমণ্ডলে।
জাদুঘরগুলোর ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট ইউনিফর্ম এবং প্রায় একই ধরনের নীতিমালা হওয়া প্রয়োজন; যেখানে পরিচালনা, নিদর্শন সংগ্রহ, গবেষণা প্রকাশনা ও প্রসার-প্রচারের ব্যবস্থা থাকবে। যার মূল লক্ষ্য হবে সর্বস্তরের জনগণের কাছে সুফল পেঁৗছে দেওয়া। শুধু ভবনসর্বস্ব জাদুঘর হলে চলবে না। মূল্যবান নিদর্শন পাচারকারী ও চোর-তস্করদের শাস্তি প্রদানে প্রচলিত বাংলাদেশ দণ্ডবিধিতে একটি ধারা সনি্নবেশন করা অথবা সরকার কর্তৃক এতদসংক্রান্ত আইন পাস করে কঠোর দণ্ডের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। অসাধু ব্যক্তিরা যাতে নিদর্শন দেশের বাইরে পাচার করতে না পারে, সে জন্য বিমানবন্দর, স্থলবন্দর ও নৌবন্দরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিশেষ ক্ষমতা প্রদান করা যায়।
পুরাতাত্তি্বক নিদর্শন আইন ১৯৬৮ হালনাগাদ করে জাতীয় জাদুঘরকে অধিকতর ক্ষমতার্পণ, দেশের পুরনো বৃহত্তর জেলাগুলোর ট্রেজারিতে রক্ষিত নিদর্শনাদি অর্পণের ব্যবস্থা নেওয়া যায়, যাতে অধিকতর দর্শক পরিদর্শন করতে পারে। আর এভাবে মূল্যবান সম্পদ সংরক্ষণ করার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সম্পদ সংরক্ষণ করা সম্ভব।
জাদুঘরগুলোতে নিদর্শন সংগ্রহ করে মজুদঘরে ফেলে না রেখে উপযুক্ত স্তরে গবেষণা, প্রকাশনা ও প্রচার-প্রসারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা আজ সময়ের অন্যতম দাবি। সংগৃহীত নিদর্শনাদির বিস্তারিত তথ্য মানুষকে জাদুঘর পরিদর্শনে আগ্রহী করে তোলে। জাদুঘর এবং মানুষের মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন সৃষ্টি করা জরুরি, যাতে স্বেচ্ছায় যে কেউ জাদুঘরে নিদর্শন হস্তান্তর করতে পারে। কেননা জাদুঘর কোনো নিদর্শন তৈরি করতে পারে না।
জাদুঘরের নিদর্শন সম্পর্কিত সেমিনার, সিম্পোজিয়াম ও চিত্তবিনোদনমূলক অনুষ্ঠান দর্শকদের আকৃষ্ট এবং স্বীয় সংস্কৃতিমনস্ক করে সংস্কৃতির সেতুবন্ধ ও ইতিহাসের মেলবন্ধন সৃষ্টি করে। জাতীয় জ্ঞানের তথ্যভাণ্ডার অধিকতর সমৃদ্ধ করে অপসংস্কৃতির হাত থেকে দেশকে রক্ষা করা যেতে পারে।
মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম :সেক্রেটারি
বাংলাদেশ ন্যাশনাল কমিটি অব আইকম
মানবজাতির ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারক-বাহক হচ্ছে দেশের জাদুঘর। বর্তমানে বিজ্ঞানের প্রযুক্তিগত উন্নত ব্যবস্থা ও প্রচার-প্রসারের মৌলিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে নানা প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হওয়ায় জাদুঘর বর্তমান সভ্যতার গঠন ব্যবস্থার গতিপ্রকৃতি ক্রমান্বয়ে মন্থর থেকে মন্থরতর হচ্ছে, যা অনেকটা হুমকির পর্যায়ে বিবেচনা করা যায়। আন্তর্জাতিক জাদুঘর পরিষদ এবারের আন্তর্জাতিক দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে 'অপসংস্কৃতির প্রতিবন্ধকতা রোধে জাদুঘর'।
বর্তমানে বাস্তব অবস্থার প্রেক্ষাপটে দেখা যায়, বাংলাদেশে স্থাপিত জাদুঘরগুলোর স্থাপনা, ভবন নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনায় উল্লেখযোগ্য কোনো স্বীকৃত নীতিমালা নেই। বাংলাদেশে স্থাপিত ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের জাদুঘর, ভিন্ন ভিন্ন পরিচালনা পরিষদ, হরেক রকম নামের পদ, সেসব পদের একটির সঙ্গে অন্যটির কোনো সমতা নেই। জাদুঘরগুলোতে নিদর্শন সংগ্রহের সুনির্দিষ্ট বিধিবিধান নেই। দেশের বাইরে নিদর্শন পাচারকারীদের শাস্তির জন্য প্রচলিত বাংলাদেশ দণ্ডবিধিতে শাস্তির কোনো ধারা বলবৎ নেই, যার কারণে অপরাধীরা আইনের চোখ ফাঁকি দিয়ে অনায়াসে বেরিয়ে আবার অপকর্মে লিপ্ত হয়। এ ধরনের বহু বাস্তবিক সমস্যা দৃশ্যমান চলমান বাংলাদেশের জাদুঘর পরিমণ্ডলে।
জাদুঘরগুলোর ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট ইউনিফর্ম এবং প্রায় একই ধরনের নীতিমালা হওয়া প্রয়োজন; যেখানে পরিচালনা, নিদর্শন সংগ্রহ, গবেষণা প্রকাশনা ও প্রসার-প্রচারের ব্যবস্থা থাকবে। যার মূল লক্ষ্য হবে সর্বস্তরের জনগণের কাছে সুফল পেঁৗছে দেওয়া। শুধু ভবনসর্বস্ব জাদুঘর হলে চলবে না। মূল্যবান নিদর্শন পাচারকারী ও চোর-তস্করদের শাস্তি প্রদানে প্রচলিত বাংলাদেশ দণ্ডবিধিতে একটি ধারা সনি্নবেশন করা অথবা সরকার কর্তৃক এতদসংক্রান্ত আইন পাস করে কঠোর দণ্ডের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। অসাধু ব্যক্তিরা যাতে নিদর্শন দেশের বাইরে পাচার করতে না পারে, সে জন্য বিমানবন্দর, স্থলবন্দর ও নৌবন্দরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিশেষ ক্ষমতা প্রদান করা যায়।
পুরাতাত্তি্বক নিদর্শন আইন ১৯৬৮ হালনাগাদ করে জাতীয় জাদুঘরকে অধিকতর ক্ষমতার্পণ, দেশের পুরনো বৃহত্তর জেলাগুলোর ট্রেজারিতে রক্ষিত নিদর্শনাদি অর্পণের ব্যবস্থা নেওয়া যায়, যাতে অধিকতর দর্শক পরিদর্শন করতে পারে। আর এভাবে মূল্যবান সম্পদ সংরক্ষণ করার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সম্পদ সংরক্ষণ করা সম্ভব।
জাদুঘরগুলোতে নিদর্শন সংগ্রহ করে মজুদঘরে ফেলে না রেখে উপযুক্ত স্তরে গবেষণা, প্রকাশনা ও প্রচার-প্রসারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা আজ সময়ের অন্যতম দাবি। সংগৃহীত নিদর্শনাদির বিস্তারিত তথ্য মানুষকে জাদুঘর পরিদর্শনে আগ্রহী করে তোলে। জাদুঘর এবং মানুষের মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন সৃষ্টি করা জরুরি, যাতে স্বেচ্ছায় যে কেউ জাদুঘরে নিদর্শন হস্তান্তর করতে পারে। কেননা জাদুঘর কোনো নিদর্শন তৈরি করতে পারে না।
জাদুঘরের নিদর্শন সম্পর্কিত সেমিনার, সিম্পোজিয়াম ও চিত্তবিনোদনমূলক অনুষ্ঠান দর্শকদের আকৃষ্ট এবং স্বীয় সংস্কৃতিমনস্ক করে সংস্কৃতির সেতুবন্ধ ও ইতিহাসের মেলবন্ধন সৃষ্টি করে। জাতীয় জ্ঞানের তথ্যভাণ্ডার অধিকতর সমৃদ্ধ করে অপসংস্কৃতির হাত থেকে দেশকে রক্ষা করা যেতে পারে।
মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম :সেক্রেটারি
বাংলাদেশ ন্যাশনাল কমিটি অব আইকম
No comments