রূপকথার ফেরিওয়ালা তামান্না তিথী by প্রীতি ওয়ারেছা
ছোট বা বড় যে বয়সেরই হোন না কেন, গল্প শুনতে কে না ভালবাসে! আর রুপকথার গল্প যেন এদেশের প্রতিটা শিশুর নাড়ীর স্পন্দন। আমাদের দেশের শিশুরা ঘুমাতে শেখে গল্প শুনে শুনে, খাওয়ার আগেও তাদের শর্ত থাকে গল্প শুনাতে হবে বলে। আর মায়েরাও এটাকে মহৌষধ ভাবেন কারণ যখন গল্প শেষ তখন খাবারও।
গল্প বলার ঢং যদি হয় শিল্পসম্মত যেটা কাল্পনিক চরিত্রের অবয়ব ধারণ করে তাহলে তো আর কথাই নেই! গল্পে প্রতিটা চরিত্রের রূপদানকালে কন্ঠের পরিবর্তন,স্বরের উঠানামা এই ছোট ছোট বিষয়গুলো শিশুদের টেনে নিয়ে যায় কল্পনার রাজ্যে। অঢেল আত্মিক সম্পদের মালিক হয়ে তারা বিকশিত হয়ে ওঠে চিন্তা চেতনা আর মননে। কল্পনাকে প্রসারিত করে তারা ভাবতে শেখে।আগ্রহী হয়ে ওঠে বই পড়ার প্রতি।
মা খালাদের চিরাচরিত গল্প বলার দায়িত্ব থেকে কিছুটা মুক্তি দিতেই দেশ বিদেশের রুপকথার ভান্ডার নিয়ে শিশুদের কাছে হাজির হয়েছেন গল্পের ফেরিওয়ালা তামান্না তিথী। শাহবাগে অবস্থিত নিজের প্রতিষ্ঠান ‘কল্পরেখা’ তে শিশু শিল্পীদের নিয়ে নিয়মিত গল্প মঞ্চায়িত করছেন। স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল দেশ টিভি তে সুমনা সিদ্দীকার প্রযোজনায় তামান্না তিথীর উপস্থাপনায় ‘কল্পলোকের গল্পকথা’ নামক চমৎকার দৃশ্যায়িত গল্পের অনুষ্ঠান প্রতি শুক্র শনি নিয়মিত প্রচারিত হয়ে আসছে।
তিথী যেন ঠাকুমার ঝুলির সেই ঠাকুমা। ছোট বেলা থেকেই তার শখ ছিল আবৃত্তির।তারপর কন্ঠশীলনে মীর বরকতের কাছে আবৃত্তির হাতেখড়ি। আব্দুল্লাহ আল মামুনের থিয়েটার স্কুলে ১ বছরের একটা কোর্স সম্পন্ন করেছেন সেইসাথে অনেকদিন থিয়েটারে অভিনয় করেছেন। বিটিভির তালিকাভুক্ত উপস্থাপিকা তামান্না তিথী। প্রচুর বিজ্ঞাপনে কন্ঠ দিয়েছেন। ইরানি, ইংরেজি, রাশিয়ান, জাপানিজ সহ আরও বহু ভাষার চলচ্চিত্রের ডাবিংয়ে কন্ঠ দিয়েছেন। মুস্তাফা মনোয়ারের পাপেট শো’ ‘মনের কথা’র পারুল তিনি। প্রায় তিন বছর পারুলের চরিত্রে কন্ঠ দিয়েছেন তিথী। ইটিভির দেশ জুড়ে অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা করেছেন অনেকদিন।
সব মিলেয়ে তিথীর ভালই চলছিল। এরই মধ্যে তিনি এবং মীর বরকত মিলে আবৃত্তি সংগঠন ‘উদ্ভাসন’ প্রতিষ্ঠা করলেন। নিজের সংগঠনের আয়োজনে একদিন আবৃত্তির অনুষ্ঠান চলাকালে হঠাৎ করেই তার মাথায় গল্প বলার ভুত জাগল। আবদার করলেন শিক্ষক মীর বরকতের কাছে। সৃজনশীল কাজে সর্বদা তিথীকে প্রশ্রয় দানকারী মীর বরকত আমতা আমতা করেও শেষাবধি রাজি হয়ে গেলেন। তিথী সেদিন উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরীর ‘টুনটুনি ও নাপিতের কথা’ গল্প শুনিয়েছিলেন দর্শক শ্রোতাদের। সেদিনের স্মৃতি থেকে তিথী বলেন,র‘আমি দীর্ঘদিন ধরে আবৃত্তি করেও সেদিনের মত এত ব্যাপক সাড়া আগে কখনও পাইনি,আমি রীতিমত অভিভুত হয়েছিলাম।’ এরপর থেকেই ভীষন প্রিয় হয়ে উঠল এই মাধ্যমটি।
এক দিন মঞ্চে নাট্যশিল্পী আসাদুজ্জামান নুর পুরো অনুষ্ঠান দেখে মুগ্ধ হলেন এবং দেশ টিভির জন্যে এমন একটি শো’ করতে অনুরোধ করলেন। তারপর থেকে তিথী শিশুদের কল্পনার সেই ঠাকুমা কিংবা আহ্লাদ আবদারের প্রিয় জায়গা সেই খালামনি হয়ে গেলেন। এ পর্যন্ত ৫০ টা পর্বে কমপক্ষে ২০০ টার মত গল্প দেশ টিভিতে প্রচারিত হয়েছে। প্রথমে দেশীয় গল্পের ভান্ডার মঞ্চস্থ করলেও এখন চায়না,রাশিয়া,জাপান এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশের রুপকথা মঞ্চস্থ করছেন। সাফল্য সরুপ ২০১১ সালের ইউনিসেফের সৃজনশীল শাখায় অবদান রাখার জন্য তিনি এবং মীর বরকত একত্রে ৭ম ‘ মিনা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন।
সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে তিথী এখন অটিস্টিক বাচ্চাদের নিয়ে কাজ করার চিন্তা করছেন। অটিস্টিক বাচ্চাদের মূল সমস্যা হল অন্যের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের অক্ষমতা। তাদের মনোজগত এককেন্দ্রিক। এ ধরণের কিছু বাচ্চাকে গল্প অনুশীলনের মাধ্যমে নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিতে চান তিথী। অটিস্টিক শিশুদের কেন্দ্রীভূত মনোযোগকে দুর করে দিতে এই গবেষনা কতখানি সফল হয় সেটা দেখতে চান তিথী। গল্পের বিভিন্ন চরিত্রের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের ক্ষমতা অটিস্টিক শিশুদের মনকে বিকেন্দ্রিকরণ করবে। গবেষণার সফলতা ভাগ্যাহত শিশুদের চিকিৎসা ব্যবস্থাতে বড় অবদান রাখবে বলে তিনি মনে করেন।
নিজের অসীম ইচ্ছাশক্তি ও নিরলস শ্রম দেবার ক্ষমতা থাকার পরেও তিথী এই শিল্প মাধ্যম নিয়ে অনেকটাই নিরাশ। দুঃখ প্রকাশ করে বললেন, পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে থিয়েটারে গল্প নিয়মিত মঞ্চস্থ করতে পারেন না। ভীষণ ভাবে চান সারা দেশব্যাপি গল্পের প্রদর্শনী করতে কিন্তু আর্থিক সামর্থ্যরে কারণে কুলিয়ে উঠতে পারছেন না। নিজের কাজের প্রতি গভীর ভালবাসা থেকে ভেতরের হাহাকার প্রকাশ করে ফেললেন এই বলে, ‘দেশের যে কোন অঞ্চল থেকেই যদি আমাকে আমন্ত্রন করা হয় এবং সম্মানীর কথা বাদ দিলাম শুধু যাতায়াত ব্যয় বহন করলেও আমি পুরো টিম সহ সেখানে গল্পের প্রদর্শনী করার বিষয়ে আগ্রহী।’
অফুরন্ত শব্দের ভান্ডার আর আনন্দের উৎসস্থল হল গল্প। গল্পের ভেতর দিয়ে জীবনের নানান স্বাদ গ্রহণ করা যায়।ব াইরের দেশের কল্পকথা নিয়ে তৈরি হয় কত ভিডিও সিডি কিন্তু আমাদের দেশে গল্পের বিশাল সাম্রাজ্য থাকার পরেও আমাদের শিশুরা বাইরের রুপকথার সাথে বেশি পরিচিত হয়ে উঠছে। আমাদের রূপকথা শিশুদের সামনে মেলে ধরার কোন পরিকল্পনা কেউ করেনি। তামান্না তিথীর মত নিবেদিত প্রাণ কোন শিল্পী যদি তা করতে পারেন তবে অবশ্যই সাধুবাদ জানানো উচিত তার এই মহান উদ্যেগকে।
মা খালাদের চিরাচরিত গল্প বলার দায়িত্ব থেকে কিছুটা মুক্তি দিতেই দেশ বিদেশের রুপকথার ভান্ডার নিয়ে শিশুদের কাছে হাজির হয়েছেন গল্পের ফেরিওয়ালা তামান্না তিথী। শাহবাগে অবস্থিত নিজের প্রতিষ্ঠান ‘কল্পরেখা’ তে শিশু শিল্পীদের নিয়ে নিয়মিত গল্প মঞ্চায়িত করছেন। স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল দেশ টিভি তে সুমনা সিদ্দীকার প্রযোজনায় তামান্না তিথীর উপস্থাপনায় ‘কল্পলোকের গল্পকথা’ নামক চমৎকার দৃশ্যায়িত গল্পের অনুষ্ঠান প্রতি শুক্র শনি নিয়মিত প্রচারিত হয়ে আসছে।
তিথী যেন ঠাকুমার ঝুলির সেই ঠাকুমা। ছোট বেলা থেকেই তার শখ ছিল আবৃত্তির।তারপর কন্ঠশীলনে মীর বরকতের কাছে আবৃত্তির হাতেখড়ি। আব্দুল্লাহ আল মামুনের থিয়েটার স্কুলে ১ বছরের একটা কোর্স সম্পন্ন করেছেন সেইসাথে অনেকদিন থিয়েটারে অভিনয় করেছেন। বিটিভির তালিকাভুক্ত উপস্থাপিকা তামান্না তিথী। প্রচুর বিজ্ঞাপনে কন্ঠ দিয়েছেন। ইরানি, ইংরেজি, রাশিয়ান, জাপানিজ সহ আরও বহু ভাষার চলচ্চিত্রের ডাবিংয়ে কন্ঠ দিয়েছেন। মুস্তাফা মনোয়ারের পাপেট শো’ ‘মনের কথা’র পারুল তিনি। প্রায় তিন বছর পারুলের চরিত্রে কন্ঠ দিয়েছেন তিথী। ইটিভির দেশ জুড়ে অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা করেছেন অনেকদিন।
সব মিলেয়ে তিথীর ভালই চলছিল। এরই মধ্যে তিনি এবং মীর বরকত মিলে আবৃত্তি সংগঠন ‘উদ্ভাসন’ প্রতিষ্ঠা করলেন। নিজের সংগঠনের আয়োজনে একদিন আবৃত্তির অনুষ্ঠান চলাকালে হঠাৎ করেই তার মাথায় গল্প বলার ভুত জাগল। আবদার করলেন শিক্ষক মীর বরকতের কাছে। সৃজনশীল কাজে সর্বদা তিথীকে প্রশ্রয় দানকারী মীর বরকত আমতা আমতা করেও শেষাবধি রাজি হয়ে গেলেন। তিথী সেদিন উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরীর ‘টুনটুনি ও নাপিতের কথা’ গল্প শুনিয়েছিলেন দর্শক শ্রোতাদের। সেদিনের স্মৃতি থেকে তিথী বলেন,র‘আমি দীর্ঘদিন ধরে আবৃত্তি করেও সেদিনের মত এত ব্যাপক সাড়া আগে কখনও পাইনি,আমি রীতিমত অভিভুত হয়েছিলাম।’ এরপর থেকেই ভীষন প্রিয় হয়ে উঠল এই মাধ্যমটি।
এক দিন মঞ্চে নাট্যশিল্পী আসাদুজ্জামান নুর পুরো অনুষ্ঠান দেখে মুগ্ধ হলেন এবং দেশ টিভির জন্যে এমন একটি শো’ করতে অনুরোধ করলেন। তারপর থেকে তিথী শিশুদের কল্পনার সেই ঠাকুমা কিংবা আহ্লাদ আবদারের প্রিয় জায়গা সেই খালামনি হয়ে গেলেন। এ পর্যন্ত ৫০ টা পর্বে কমপক্ষে ২০০ টার মত গল্প দেশ টিভিতে প্রচারিত হয়েছে। প্রথমে দেশীয় গল্পের ভান্ডার মঞ্চস্থ করলেও এখন চায়না,রাশিয়া,জাপান এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশের রুপকথা মঞ্চস্থ করছেন। সাফল্য সরুপ ২০১১ সালের ইউনিসেফের সৃজনশীল শাখায় অবদান রাখার জন্য তিনি এবং মীর বরকত একত্রে ৭ম ‘ মিনা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন।
সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে তিথী এখন অটিস্টিক বাচ্চাদের নিয়ে কাজ করার চিন্তা করছেন। অটিস্টিক বাচ্চাদের মূল সমস্যা হল অন্যের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের অক্ষমতা। তাদের মনোজগত এককেন্দ্রিক। এ ধরণের কিছু বাচ্চাকে গল্প অনুশীলনের মাধ্যমে নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিতে চান তিথী। অটিস্টিক শিশুদের কেন্দ্রীভূত মনোযোগকে দুর করে দিতে এই গবেষনা কতখানি সফল হয় সেটা দেখতে চান তিথী। গল্পের বিভিন্ন চরিত্রের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের ক্ষমতা অটিস্টিক শিশুদের মনকে বিকেন্দ্রিকরণ করবে। গবেষণার সফলতা ভাগ্যাহত শিশুদের চিকিৎসা ব্যবস্থাতে বড় অবদান রাখবে বলে তিনি মনে করেন।
নিজের অসীম ইচ্ছাশক্তি ও নিরলস শ্রম দেবার ক্ষমতা থাকার পরেও তিথী এই শিল্প মাধ্যম নিয়ে অনেকটাই নিরাশ। দুঃখ প্রকাশ করে বললেন, পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে থিয়েটারে গল্প নিয়মিত মঞ্চস্থ করতে পারেন না। ভীষণ ভাবে চান সারা দেশব্যাপি গল্পের প্রদর্শনী করতে কিন্তু আর্থিক সামর্থ্যরে কারণে কুলিয়ে উঠতে পারছেন না। নিজের কাজের প্রতি গভীর ভালবাসা থেকে ভেতরের হাহাকার প্রকাশ করে ফেললেন এই বলে, ‘দেশের যে কোন অঞ্চল থেকেই যদি আমাকে আমন্ত্রন করা হয় এবং সম্মানীর কথা বাদ দিলাম শুধু যাতায়াত ব্যয় বহন করলেও আমি পুরো টিম সহ সেখানে গল্পের প্রদর্শনী করার বিষয়ে আগ্রহী।’
অফুরন্ত শব্দের ভান্ডার আর আনন্দের উৎসস্থল হল গল্প। গল্পের ভেতর দিয়ে জীবনের নানান স্বাদ গ্রহণ করা যায়।ব াইরের দেশের কল্পকথা নিয়ে তৈরি হয় কত ভিডিও সিডি কিন্তু আমাদের দেশে গল্পের বিশাল সাম্রাজ্য থাকার পরেও আমাদের শিশুরা বাইরের রুপকথার সাথে বেশি পরিচিত হয়ে উঠছে। আমাদের রূপকথা শিশুদের সামনে মেলে ধরার কোন পরিকল্পনা কেউ করেনি। তামান্না তিথীর মত নিবেদিত প্রাণ কোন শিল্পী যদি তা করতে পারেন তবে অবশ্যই সাধুবাদ জানানো উচিত তার এই মহান উদ্যেগকে।
No comments