অ্যাকসিডেন্ট ইজ অ্যাকসিডেন্ট
সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হলে প্রতিবাদ জানানোর কিছু নেই। অ্যাকসিডেন্ট ইজ অ্যাকসিডেন্ট। তবে যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে দুর্ঘটনা ঘটায় তার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পত্রিকায় অনেক কিছুই লেখা হয়। সব সত্যি নয়। গতকাল জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে এ কথা বলেছেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।
তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁর এ কথার প্রতিবাদ জানান সরকারদলীয় সংরক্ষিত আসনের সদস্য তারানা হালিম। তিনি বলেন, সংসদে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে এ বক্তব্য খুবই দুঃখজনক। সৈয়দ আশরাফ সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে একমাত্র স্বতস্ত্র সংসদ সদস্য ফজলুল আজিমের সম্পূরক এক প্রশ্নের উত্তরে দুর্ঘটনা নিয়ে ওই মন্তব্য করেন। এ বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে মাগরিবের নামাজের বিরতির পর পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে তারানা হালিম বলেন, 'আজ (বৃহস্পতিবার) সংসদে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে যে বক্তব্য এসেছে সেটা খুবই দুঃখজনক। এ বক্তব্যের বিষয়ে আমার মনের বেদনার অনুভূতি প্রকাশ করতে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়েছি।' তিনি বলেন, সব সড়ক দুর্ঘটনা নিছক দুর্ঘটনা নয়। অবহেলা, অদক্ষতা ও ইচ্ছকৃতভাবে যে ঘটনা ঘটায় সেটা নিছক দুর্ঘটনা নয়। এটা মর্মান্তিক বিষয়। তারানা হালিম দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারা উল্লেখ করে বলেন, ৩০৪(ক) মতে যে দুর্ঘটনা এড়ানো যায়, তারপরও সেটা ঘটলে তাকে নিছক দুর্ঘটনা বলা যায় না। এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আর যেটা এড়ানো যায় না, ঘটে যায় তাকে দুর্ঘটনা বলা যায়।
আশরাফ টেন্ডারবাজি-চাঁদাবাজিসংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে বলেন, শেখ হাসিনার সরকার চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও দুর্নীতিতে বিশ্বাস করে না। তিনি বলেন, 'সড়কপথে চাঁদাবাজির সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ পেলে আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব।'
নাছিমুল আলম চৌধুরীর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ঢাকা মহানগরীর ভূ-গর্ভস্থ পানির গড় অবস্থান ৫২ মিটারে। ঢাকা মহানগরীতে প্রতিবছর এলাকাভেদে ভূ-গর্ভস্থ পানির অবস্থান প্রায় দুই থেকে তিন মিটার নেমে যাচ্ছে। তিনি আরো জানান, ঢাকা ওয়াসার পানি সরবরাহে ভূ-গর্ভস্থ ও ভূ-উপরিস্থ পানির ওপর নির্ভরশীলতা যথাক্রমে ৮৭ ও ১৩ ভাগ। মোহাম্মদ শাহ আলমের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, উৎপাদকের কাছ থেকে সরাসরি ভোক্তা পর্যায়ে পণ্যের বাজারজাতকরণের লক্ষ্যে চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত সারা দেশে ১১৪টি সমবায় বাজার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এ কে এম রহমতুল্লাহর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঢাকা শহরের পয়োপ্রণালী ব্যবস্থার উন্নয়নে ৮৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩৮ কিলোমিটার পয়োলাইন সংস্কার, ২৩ কিলোমিটার পয়োলাইন নির্মাণ ও দুটি পয়োউত্তোলন কেন্দ্র নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে এ প্রকল্পের ১০ কিলোমিটার লাইনের কাজ চলছে। আরো সাত কিলোমিটার লাইনের কাজ চলতি অর্থবছরে শেষ হবে।
সুকুমার রঞ্জন ঘোষের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, রাজধানীর জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় রায়েরবাজার বধ্যভূমির পাশে প্রায় ১০০ একর জমি অধিগ্রহণ করে নতুন কবরস্থান নির্মাণের কাজ চলছে। নূর-ই-হাসনা লিলি চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ২০১১-১২ অর্থবছরে দেশের পৌরসভাগুলোর জন্য উন্নয়ন সহায়তা থোক বরাদ্দ খাত থেকে ১৮৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তহুরা আলীর প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, গত বছর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পাঁচটি অঞ্চলে মোট দুই হাজার ২৭৪টি বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া একই সময়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে তিন হাজার ২৫৮টি নোটিশ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নোটিশ প্রত্যাহার হয়েছে ৯৯টি। এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ফিউচার কেয়ারের সঙ্গে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন ফুট ওভারব্রিজের নিচে খালি জায়গায় ৫২টি পাবলিক টয়লেট নির্মাণের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হতে যাচ্ছে। আগামী এক বছরের মধ্যে এসব পাবলিক টয়লেট নির্মিত হবে। একই প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী আরো জানান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন ফুট ওভারব্রিজের নিচে খালি জায়গায় ৪০টি পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা হবে।
মো. ইসরাফিল আলমের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী সংসদকে জানান, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে পাঁচ হাজার ২৪০ কোটি ব্যয়ে ১১ হাজার ৬৩৭ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ, এক হাজার ৪৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৮ হাজার ৬০ কিলোমিটার সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ ও দুই হাজার ৯৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে এক লাখ এক হাজার ৬৬৫ মিটার ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। একই প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো জানান, নগর অঞ্চলে তিন বছরে ৫০৫ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ, এক হাজার ৯৩০ কিলোমিটার রক্ষণাবেক্ষণ, এক হাজার ১৮৫ মিটার ব্রিজ নির্মাণ, ৭৫১ মিটার ব্রিজ সংস্কার, ৩৫৪ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ, ১২৪ কিলোমিটার ড্রেন সংস্কার ও ৪৩টি টাউন সেন্টার নির্মাণ ও তিনটি বাস টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়েছে।
No comments