সব স্তরে জবাবদিহি নিশ্চিত করুন-মাধ্যমিক পরীক্ষায় অব্যবস্থাপনা

গত বুধবার সারা দেশে মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষা শুরুর প্রথম দিনে অব্যবস্থাপনার কারণে বেশ কিছু শিক্ষার্থীর পরীক্ষা ভালো হয়নি। পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের পক্ষ থেকে যে উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে, তা যথার্থ। পুরোনো সিলেবাসের প্রশ্নপত্র সরবরাহ, অদল-বদল প্রশ্নপত্র দিয়ে আবার সেগুলো ফিরিয়ে নিয়ে অন্য প্রশ্নপত্র দেওয়া—এসব কারণে পরীক্ষার্থীদের সময় নষ্ট হয়েছে, মানসিক প্রতিক্রিয়া হয়েছে নেতিবাচক। শুধু ঢাকায় নয়,


কেরানীগঞ্জ, টাঙ্গাইল, ভোলা, কুড়িগ্রাম, মৌলভীবাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রশ্নপত্র সরবরাহে একই ধরনের ভুল হয়েছে। এই গুরুতর ব্যাপারটি এতগুলো এলাকায় কী করে ঘটল, তা তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
বিষয়টি যে গুরুতর, এই উপলব্ধি সংশ্লিষ্ট সবার মধ্যে জাগলে ভালো হবে। শিক্ষাসচিবের কথায় মনে হচ্ছে মন্ত্রণালয় বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গেই নিয়েছে। পরীক্ষার্থীদের যেন কোনো ক্ষতি না হয়, সেদিকেও লক্ষ রাখা হবে বলে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু সেটা কীভাবে করা হবে তা পরিষ্কার নয়। ভালো প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও প্রশ্নপত্র সরবরাহের অব্যবস্থাপনার কারণে যেসব পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা আশানুরূপ হয়নি, তাদের এই ক্ষতি কীভাবে পূরণ করা হবে? তা ছাড়া, অব্যবস্থাপনাটি কী করে ঘটল এটা যেমন তদন্ত করে জেনে নেওয়া প্রয়োজন, তেমনি যাঁরা এর জন্য দায়ী তাঁদের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করাও প্রয়োজন। অব্যবস্থাপনা ঘটে দায়িত্ব পালনে অবহেলার কারণে। শিক্ষা বিভাগের নানা ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনে অবহেলা আছে, অনিয়মের অভিযোগও আছে। কিন্তু পাবলিক পরীক্ষার মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ব্যবস্থাপনায় বিন্দুমাত্র অবহেলার সুযোগ থাকা উচিত নয়; কারণ, পাবলিক পরীক্ষার সঙ্গে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ জড়িত। বুধবারের পরীক্ষার পর বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা বিক্ষোভ করেছেন, সড়ক অবরোধের মতো ঘটনাও ঘটেছে। কোনো কোনো স্থানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-প্রধানের পদত্যাগ দাবি করা হয়েছে।
বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ভুলের কারণে যেসব শিক্ষার্থী প্রবেশপত্র পায়নি, বিশেষ ব্যবস্থায় তাদের পরীক্ষা নেওয়া হোক। যাঁদের অবহেলায় এটা ঘটেছে, তাঁদের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার মধ্য দিয়ে নিশ্চিত করা দরকার ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে। শিক্ষাসচিবের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে কুমিল্লায় দুজন ও বরিশালের পাথরঘাটায় একজন কেন্দ্রসচিবকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সমস্যাটা তো শুধু ওই দুই জেলার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। অন্যান্য জেলার পরীক্ষাকেন্দ্রেও একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। সেগুলোর ক্ষেত্রে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? তা ছাড়া, দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়াই কি এ ধরনের ক্ষেত্রে শাস্তি হিসেবে যথেষ্ট?
প্রশ্নপত্র তৈরি থেকে শুরু করে পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র বিতরণ, পরীক্ষাকেন্দ্রে সঠিক প্রশ্নপত্র যথাসময়ে সরবরাহ করাসহ পরীক্ষার প্রস্তুতির কাজ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো কতটা যত্নের সঙ্গে করছে, সেটা নজরদারি করার ব্যবস্থা থাকলে এ ধরনের ভুলের আশঙ্কা অনেক কমে যায়। বিদ্যালয় থেকে শুরু করে শিক্ষা বোর্ড ও মন্ত্রণালয় পর্যন্ত—সব স্তরে জবাবদিহি বাড়ানোর বিকল্প নেই।

No comments

Powered by Blogger.