ছাত্রলীগের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী নিয়োগ!-জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা

দেশ পরিচালনা করছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, দেশটির জাতীয় নিরাপত্তার কিছুটা দায়িত্ব তো দলটির ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ওপর পড়বেই! সরকার জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) উপসহকারী পরিচালক (ডিএডি) পদে ১৪২ জনকে নিয়োগ দিচ্ছে, এর মধ্যে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীর সংখ্যা মাত্র ৩৭ জন! সবগুলো পদে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের নিয়োগ না দিয়ে সরকার তো একধরনের উদারতার পরিচয়ই দিল!


সরকারকে সাধুবাদ জানাতে আমাদের কি কার্পণ্য করা উচিত? অতীতে বিএনপি সরকারের আমলে পুলিশসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দলীয় লোকজনদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু এনএসআইয়ের মতো একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব অনেক। শুধুমাত্র মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতেই এই প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দেওয়া উচিত। ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকা যদি বিশেষ ‘মেধা ও যোগ্যতা’ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে ছাত্রলীগের কর্মীরা নিয়োগ পাবেন এটাই স্বাভাবিক। আর সরকারি দল যদি মনে করে যে জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় ছাত্রলীগের কর্মীরাই সবচেয়ে উপযুক্ত ও যোগ্য, তবে তাঁদের তো নিয়োগ দিতেই হয়। কিন্তু এ রকম কিছু করতে হলে নিয়োগবিধি ও নিয়ম-কানুনে কিছু পরিবর্তন করা জরুরি ছিল। ‘আবেদনকারীদের অবশ্যই ছাত্রলীগের কর্মী হতে হবে’—এ রকম একটি বিধান জুড়ে দিলে পুরো বিষয়টি জায়েজ হয়ে যেত। দুই দিক সামাল দিতে গিয়েই ঝামেলা হয়েছে।
ছাত্রলীগের বর্তমান নেতৃত্ব অবশ্য ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী পরিচয়ে কেউ এনএসআইয়ে ডিএডি পদে নিয়োগ পেয়েছেন, এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে ছাত্রলীগের এক সাবেক নেতা স্বীকার করেছেন যে তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ৫২ জনের একটি তালিকা পাঠিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমরা নেতা-কর্মীদের জন্য কাজ করি। তাঁদের জন্য কিছু করার চেষ্টা করি। যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করছেন কিন্তু পদ-পদবি পাননি এবং যাঁদের পারিবারিক সমস্যা রয়েছে, তাঁদের নিয়ে তালিকাটি করা হয়েছিল।’ দেখা যাচ্ছে, ছাত্রলীগের প্যাডে পাঠানো এই তালিকার ২৪ জন নিয়োগ পেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর নিশ্চয়ই ছাত্রলীগের এই অনুরোধের প্রতি সম্মান দেখিয়েছে।
ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছেন কিন্তু পদ-পদবি পাননি এমন নেতা-কর্মীর অভাব নেই দেশে। তাঁদের জন্য ‘কিছু’ করা যদি সরকার দায়িত্ব মনে করে, তবে সরকারি নিয়োগে ছাত্রলীগের কর্মীদের জন্য কোটা নির্ধারণ করে আইন পাস করলেই সমস্যার অনেকটা সমাধান হয়ে যায়। সংসদে তো সরকারি দলের সেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছেই! কিন্তু সরকার যেহেতু এখনো সে পথে যায়নি, তাই এ ধরনের নিয়োগ গ্রহণযোগ্যতা পাবে না।

No comments

Powered by Blogger.