নৃত্যশিল্পীকে ধর্ষণের চেষ্টা, ছাত্রলীগের দুই নেতার বিরুদ্ধে মামলা

লেজপড়ুয় এক নৃত্যশিল্পীকে শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সাতক্ষীরা সদর থানায় মামলাটি করেন ওই কলেজ ছাত্রী। এদিকে এ ঘটনাসহ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শেখ জুয়েল হাসান ও সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হুদার বিরুদ্ধের একের পর এক অভিযোগের ভিত্তিতে আজ তাঁদের সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়।

বিলুপ্ত করা হয়েছে তাঁদের নেতৃত্বাধীন জেলা কমিটি। শ্লীলতাহানির শিকার ওই নৃত্যশিল্পী প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ও তাঁর স্বামী খুলনার একটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত। ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশন করতে তিনি ও তাঁর স্বামী গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় সাতক্ষীরায় আসেন। সাতক্ষীরার প্যাড বাদক সন্তোষ সরকার ও শিল্পী শরিফুজ্জামান তাঁদের তিন হাজার টাকা চুক্তিতে খুলনা থেকে সাতক্ষীরায় নিয়ে আসেন। বুধবার রাতে সাতক্ষীরা শিল্পকলা একাডেমীর মঞ্চে তাঁরা নৃত্য পরিবেশন করেন। অনুষ্ঠান শেষে রাত সাড়ে ১২টার দিকে খাবার খাওয়ানোর নাম করে ছাত্রলীগের নেতা জুয়েল তাঁদের সাতক্ষীরা শহরের মধ্য কটিয়ায় আরেক নেতা নাজমুল হুদার ভাড়া করা বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে নেওয়ার পর তাঁর স্বামীকে মারধর করে মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে ঘর থেকে বের করে দেন এবং তাঁকে একটি ঘরে আটকে রাখেন। পরে ছাত্রলীগের ওই দুই নেতা তাঁর শ্লীলতাহানি ঘটায় ও ধর্ষণের চেষ্টা করে।

নৃত্যশিল্পীর স্বামী প্রথম আলোকে বলেন, তাঁকে বের করে দেওয়ার পর তিনি সড়কে টহল পুলিশের দেখা পান এবং পুলিশের সহযোগিতা চান। ওই পুলিশদের কাছ থেকে খবর পান সাতক্ষীরা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রতন শেখ। রাত দুইটার দিকে রতন শেখ একদল পুলিশ নিয়ে ছাত্রলীগের নেতা নাজমুলের ভাড়া করা বাড়ি থেকে নৃত্যশিল্পীকে উদ্ধার করে। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ছাত্রলীগের ওই দুই নেতাসহ চারজন গা ঢাকা দেয়।
এ ব্যাপারে নৃত্যশিল্পীকে ধর্ষণচেষ্টা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সদর থানার পরিদর্শক রতন শেখ প্রথম আলোকে বলেন, ‘খবর পেয়ে ওই নৃত্যশিল্পীকে আমরা উদ্ধার করি। প্রাথমিকভাবে মেয়েটির অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।’
যোগাযোগ করলে সাতক্ষীরার শিল্পী শরিফুজ্জামান বলেন, ওই নৃত্যশিল্পীর চুক্তির বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে নৃত্য পরিবেশনের জন্য প্যাড বাদক সন্তোষ সরকার তাঁদেরকে চুক্তি করে আনেন। সন্তোষ সরকারের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় এক নেতা প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্রলীগের ওই দুই নেতার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। এমনকি জুয়েলের বিরুদ্ধে তাঁর এক নিকট আত্মীয়কে ধর্ষণের অভিযোগে গত অক্টোবরে সাতক্ষীরা সদর থানায় মামলা করে। তবু ছাত্রলীগ ও পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আহসানুল্লাহ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাতক্ষীরার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শেখ জুয়েল হাসান ও সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হুদার বিরুদ্ধের অমার্জনীয় অভিযোগ পাওয়ার পর সংগঠন থেকে আজ তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে সাতক্ষীরা জেলা কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।’
আহসানুল্লাহ বলেন, ছাত্রলীগের দুই নেতার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
ধর্ষণচেষ্টা মামলার আসামি বহিষ্কৃত ছাত্রলীগের নেতা শেখ জুয়েল হাসান ও সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হুদার মুঠোফোনে বারবার কল দিলেও তারা ফোন ধরেননি।
সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জয়দেব চৌধুরী বলেন, অসম্মানিত হওয়া নৃত্যশিল্পী ছাত্রলীগের নেতা শেখ জুয়েল হাসান ও নাজমুল হুদার বিরুদ্ধে মামলা করেছে। পুলিশ তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে।

No comments

Powered by Blogger.