ধসের এক বছর আজ-পতনের বৃত্ত ভাঙেনি শেয়ারবাজারে by রাশেদুল তুষার,
পুঁজিবাজারে তখন রমরমা অবস্থা। শেয়ারের দাম আর সূচক বাড়ছিল হু হু করে। প্রতিদিনই লাভ_এই মানসিকতায় সঞ্চয় ভেঙে তখন শেয়ারবাজারমুখী মানুষের স্রোত। ঢাকা ও চট্টগ্রাম শেয়ারবাজারের প্রতিদিনের গড় লেনদেন তখন তিন হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। ঠিক সে সময়ে আজকের দিনে অর্থাৎ গত বছরের ৬ ডিসেম্বর শেয়ারবাজারে ছন্দপতন ঘটে। এদিন দেশের শেয়ারবাজারে পতনের যে মড়ক লেগেছিল সে ধারা থেকে এক বছরেও বেরিয়ে আসা
সম্ভব হয়নি।পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসইসি, বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থমন্ত্রী ব্যর্থ হওয়ার পর প্রায় মৃত এই বাজারকে নতুন জীবন দিতে শেষ পদক্ষেপ হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নেওয়া হয়েছে একগুচ্ছ প্রণোদনা প্যাকেজ। তবে এসব পরিকল্পনায় বাজার স্থিতিশীল না হয়ে উল্টো পতন হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা এই প্যাকেজ বাস্তবায়ন হলে দীর্ঘমেয়াদে শেয়ারবাজারে সুফল বয়ে আনবে বলে আশ্বাস দিচ্ছেন। কিন্তু আপাত বাজার পতনে হতাশ সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
জানা গেছে, ২০১০ সালের ৬ ডিসেম্বর এসইসি থেকে তৎকালীন চেয়ারম্যান জিয়াউল হক খন্দকারের অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা সদস্য মনসুর আলম দুটি নির্দেশনা জারি করেন। একটি নির্দেশনায় জানানো হয়, ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকের গ্রাহকরা তাঁদের হিসাবে চেক জমা দেওয়ার পর ক্লিয়ারিং হয়ে নগদ টাকা জমা না হওয়া পর্যন্ত ওই টাকায় শেয়ার কেনা যাবে না। একই দিনে নেটিং সুবিধার অপব্যবহার-সংক্রান্ত আরেকটি নির্দেশনা ডিএসইর ওয়েবসাইটে প্রদর্শন করা হয়। সেদিনই ডিএসইতে লেনদেনের একপর্যায়ে সাধারণ সূচক ৫৪৬ পয়েন্ট পড়ে যায়।
গত এক বছরের দিকে ফিরে তাকালে যে চিত্র পাওয়া যায়, তা শুধুই হতাশার। বিনিয়োগকারীরা প্রতিদিন দেখেছেন, তাদের পোর্টফোলিও ছোট হয়ে আসছে। লোপাট হয়ে যাচ্ছে টাকা। ব্রোকারেজ হাউসগুলোয়ও দিন দিন বিনিয়োগকারীদের আনাগোনা কমতে থাকে। এই কমার হার বর্তমানে ১০ শতাংশের ১ শতাংশে নেমে এসেছে।
গত বছরের ৫ ডিসেম্বর সিএসইতে শেয়ার লেনদেন হয়েছিল ৩১৭ কোটি টাকার। সেখানে এক বছরের ব্যবধানে গতকাল লেনদেন হয়েছে মাত্র সাড়ে ৩২ কোটি টাকা। সার্বিক সূচকও এ সময় কমেছে প্রায় ১০ হাজার পয়েন্ট। আর বাজার মূলধন কমেছে প্রায় ৯৫ হাজার কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে শেয়ারবাজার থেকে হারিয়ে গেছে প্রায় ৪০ হাজার বিনিয়োগকারী।
পতনের দিক দিয়ে ২০১১ সালের পতন ১৯৯৬ সালের কেলেঙ্কারিকেও ছাড়িয়ে গেছে বলে মনে করেন সিএসইর সদ্য সাবেক সভাপতি ফখর উদ্দিন আলী আহমেদ। তুলনা করতে গিয়ে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'দুটোই কেলেঙ্কারির ঘটনা হলেও পার্থক্য ছিল এর চরিত্রে। '৯৬ সালে যে কেলেঙ্কারি হয়েছে, তা ছিল সেকেন্ডারি মার্কেটে। সে সময় জালিয়াতির মাধ্যমে কাগজের শেয়ার বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছিল। আর ২০১১ সালের জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে প্রাইমারি মার্কেটে। প্লেসমেন্ট ও বুকবিল্ডিং পদ্ধতির নামে হাজার হাজার কোটি টাকা সেকেন্ডারি মার্কেটে আসার আগেই লোপাট হয়ে গেছে। তৎকালীন নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসইসির যথাযথ পর্যবেক্ষণের অভাবেই এই ধরনের অপকর্ম হয়েছে।'
সাম্প্রতিক শেয়ারবাজারের হাল বর্ণনা করতে গিয়ে ইনভেস্টরস ফোরাম অব চিটাগাংয়ের আহ্বায়ক আছলাম মোরশেদ বলেন, 'বাজার পরিস্থিতি কতটা খারাপ হলে শেষ কোরামিন হিসেবে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীকে হস্তক্ষেপ করতে হয়, তা সহজেই অনুমেয়। এমন অনেক বিনিয়োগকারী আছেন, যাঁরা চিরতরে শেয়ারবাজার থেকে হারিয়ে গেছেন। তবে আমরা এ ধরনের পরিস্থিতিতে আর পড়তে চাই না। পুঁজিবাজারকে একটা জবাবদিহির মধ্যে আসতে হবে। এখানে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। উত্থান এবং পতনে আমরা একটা সামঞ্জস্যতা দাবি করি।'
তিনি বলেন, 'অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হলো, তদন্ত কমিটি যাদের দায়ী করে প্রতিবেদন দিয়েছিল, তাদের শাস্তি না দিয়ে বরং ক্ষেত্র বিশেষে পুরস্কৃত করা হয়েছে। এভাবে পুঁজিবাজারে স্বচ্ছতা আনা যাবে না।'
গত এক বছরের শেয়ারবাজার বিশ্লেষণ করতে গিয়ে হাসান শেয়ারস অ্যান্ড সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসাইন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'যেভাবে সূচক আর দর বেড়েছে, তাতে পতন ছিল অবশ্যাম্ভাবী। কিন্তু তাই বলে টানা এক বছর দরপতন হবে, এটা কোনোভাবেই স্বাভাবিক নয়। এ সময়ে বাজারের আচরণ ছিল অস্বাভাবিক। মাঝেমধ্যে দুয়েক দিন সূচক যাও বা বেড়েছে, তাতেও শৃঙ্খলা ছিল না। আসলে এই এক বছরের শেয়ারবাজারের আচরণকে কোনো তত্ত্বের মধ্যে ফেলা যায় না। প্রথম প্রথম অনেকে ভেবেছে একটি যৌক্তিক পর্যায়ে সংশোধন হয়ে শেয়ারবাজার আবার ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু আদতে তা হয়নি। বরং বাজারকে স্থিতিশীল করার নামে এসইসির একের পর এক পদক্ষেপ উল্টো বুমেরাং হয়েছে।'
জানা গেছে, ২০১০ সালের ৬ ডিসেম্বর এসইসি থেকে তৎকালীন চেয়ারম্যান জিয়াউল হক খন্দকারের অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা সদস্য মনসুর আলম দুটি নির্দেশনা জারি করেন। একটি নির্দেশনায় জানানো হয়, ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকের গ্রাহকরা তাঁদের হিসাবে চেক জমা দেওয়ার পর ক্লিয়ারিং হয়ে নগদ টাকা জমা না হওয়া পর্যন্ত ওই টাকায় শেয়ার কেনা যাবে না। একই দিনে নেটিং সুবিধার অপব্যবহার-সংক্রান্ত আরেকটি নির্দেশনা ডিএসইর ওয়েবসাইটে প্রদর্শন করা হয়। সেদিনই ডিএসইতে লেনদেনের একপর্যায়ে সাধারণ সূচক ৫৪৬ পয়েন্ট পড়ে যায়।
গত এক বছরের দিকে ফিরে তাকালে যে চিত্র পাওয়া যায়, তা শুধুই হতাশার। বিনিয়োগকারীরা প্রতিদিন দেখেছেন, তাদের পোর্টফোলিও ছোট হয়ে আসছে। লোপাট হয়ে যাচ্ছে টাকা। ব্রোকারেজ হাউসগুলোয়ও দিন দিন বিনিয়োগকারীদের আনাগোনা কমতে থাকে। এই কমার হার বর্তমানে ১০ শতাংশের ১ শতাংশে নেমে এসেছে।
গত বছরের ৫ ডিসেম্বর সিএসইতে শেয়ার লেনদেন হয়েছিল ৩১৭ কোটি টাকার। সেখানে এক বছরের ব্যবধানে গতকাল লেনদেন হয়েছে মাত্র সাড়ে ৩২ কোটি টাকা। সার্বিক সূচকও এ সময় কমেছে প্রায় ১০ হাজার পয়েন্ট। আর বাজার মূলধন কমেছে প্রায় ৯৫ হাজার কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে শেয়ারবাজার থেকে হারিয়ে গেছে প্রায় ৪০ হাজার বিনিয়োগকারী।
পতনের দিক দিয়ে ২০১১ সালের পতন ১৯৯৬ সালের কেলেঙ্কারিকেও ছাড়িয়ে গেছে বলে মনে করেন সিএসইর সদ্য সাবেক সভাপতি ফখর উদ্দিন আলী আহমেদ। তুলনা করতে গিয়ে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'দুটোই কেলেঙ্কারির ঘটনা হলেও পার্থক্য ছিল এর চরিত্রে। '৯৬ সালে যে কেলেঙ্কারি হয়েছে, তা ছিল সেকেন্ডারি মার্কেটে। সে সময় জালিয়াতির মাধ্যমে কাগজের শেয়ার বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছিল। আর ২০১১ সালের জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে প্রাইমারি মার্কেটে। প্লেসমেন্ট ও বুকবিল্ডিং পদ্ধতির নামে হাজার হাজার কোটি টাকা সেকেন্ডারি মার্কেটে আসার আগেই লোপাট হয়ে গেছে। তৎকালীন নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসইসির যথাযথ পর্যবেক্ষণের অভাবেই এই ধরনের অপকর্ম হয়েছে।'
সাম্প্রতিক শেয়ারবাজারের হাল বর্ণনা করতে গিয়ে ইনভেস্টরস ফোরাম অব চিটাগাংয়ের আহ্বায়ক আছলাম মোরশেদ বলেন, 'বাজার পরিস্থিতি কতটা খারাপ হলে শেষ কোরামিন হিসেবে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীকে হস্তক্ষেপ করতে হয়, তা সহজেই অনুমেয়। এমন অনেক বিনিয়োগকারী আছেন, যাঁরা চিরতরে শেয়ারবাজার থেকে হারিয়ে গেছেন। তবে আমরা এ ধরনের পরিস্থিতিতে আর পড়তে চাই না। পুঁজিবাজারকে একটা জবাবদিহির মধ্যে আসতে হবে। এখানে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। উত্থান এবং পতনে আমরা একটা সামঞ্জস্যতা দাবি করি।'
তিনি বলেন, 'অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হলো, তদন্ত কমিটি যাদের দায়ী করে প্রতিবেদন দিয়েছিল, তাদের শাস্তি না দিয়ে বরং ক্ষেত্র বিশেষে পুরস্কৃত করা হয়েছে। এভাবে পুঁজিবাজারে স্বচ্ছতা আনা যাবে না।'
গত এক বছরের শেয়ারবাজার বিশ্লেষণ করতে গিয়ে হাসান শেয়ারস অ্যান্ড সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসাইন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'যেভাবে সূচক আর দর বেড়েছে, তাতে পতন ছিল অবশ্যাম্ভাবী। কিন্তু তাই বলে টানা এক বছর দরপতন হবে, এটা কোনোভাবেই স্বাভাবিক নয়। এ সময়ে বাজারের আচরণ ছিল অস্বাভাবিক। মাঝেমধ্যে দুয়েক দিন সূচক যাও বা বেড়েছে, তাতেও শৃঙ্খলা ছিল না। আসলে এই এক বছরের শেয়ারবাজারের আচরণকে কোনো তত্ত্বের মধ্যে ফেলা যায় না। প্রথম প্রথম অনেকে ভেবেছে একটি যৌক্তিক পর্যায়ে সংশোধন হয়ে শেয়ারবাজার আবার ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু আদতে তা হয়নি। বরং বাজারকে স্থিতিশীল করার নামে এসইসির একের পর এক পদক্ষেপ উল্টো বুমেরাং হয়েছে।'
No comments