তিনি সব সময়ই আমার ছিলেন : কল্পনা কার্তিক by সৈয়দ মাহ্মুদ জামান
ভারতীয় রোমান্টিক ছবিকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন দেব আনন্দ। স্টার ইমেজ কী হতে পারে সেটাও তাঁর বদৌলতেই শিখেছে ভারতের চলচ্চিত্র। কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে তিনি কেমন ছিলেন, সে সম্পর্কে বলেছেন তাঁর চার নায়িকা। তাঁদের মধ্যে আছেন দেব আনন্দের স্ত্রী এবং একসময়ের জনপ্রিয় নায়িকা কল্পনা কার্তিকও। দীলিপভীষণ লাজুক (তাঁর স্ত্রী এবং নায়িকা কল্পনা কার্তিক) : এখনো আমাদের বিয়ের দিনটির কথা মনে আছে।
১৯৫৪ সাল। 'ট্যাঙ্ িড্রাইভার' ছবির শুটিং স্পটে মধ্যরাতের কিছু পরে আমাদের বিয়ে হয়। ছয় দশকের বেশি সময় আমরা একে অপরের সঙ্গী হয়ে কাটিয়ে দিই। সহকর্মী হিসেবে ভীষণ সহযোগিতাপূর্ণ, প্রাণবন্ত এক মানুষ ছিলেন তিনি। এর পাশাপাশি ভীষণ লাজুক প্রকৃতিরও ছিলেন, যা হয়তো অনেকেই জানেন না। অসংখ্য রোমান্টিক ছবিতে অভিনয় করেছেন, অনেক নায়িকাকে ব্রেক দিয়েছেন। তাই তাঁর নামে অনেকবারই শোনা গেছে নানা গুজব। তবে সেই সব গল্পে বিশ্বাস করার প্রশ্নই ওঠেনি। যখনই শুনতাম নতুন নায়িকার প্রেমে পড়ে আমাকে ছেড়ে যাবেন, একচোট হেসে নিতাম। কারণ আমি জানতাম, দেব আমাকে ছেড়ে কখনো যাবেন না। তিনি সব সময় আমার ছিলেন, আজীবন আমারই থাকবেন।
অসাধারণ হাসি (ওয়াহিদা রেহমান) : দেব আনন্দের সঙ্গেই আমার অভিনয়জীবন শুরু 'সিআইডি' ছবিতে। এমন কাজপাগল অভিনেতা আমি খুব কমই দেখেছি। এমন নিয়মানুবর্তিতা ও নিষ্ঠা নিয়ে অভিনয় করতেন ভাবাই যায় না। সবচেয়ে বড় কথা, নতুনদের নতুন হিসেবে দেখতেন না। তাঁর প্রতিটি অভিনয় যেকোনো নতুন অভিনেতার জন্য শিক্ষণীয়। 'সিআইডি'র পর আমরা একসঙ্গে 'কালা বাজার' ও 'বাত এক রাত কি' ছবিতে অভিনয় করেছি। একদিন তিনি বললেন, 'আমাকে এমন এক চরিত্র দেবেন যা ইতিহাস হয়ে থাকবে।' তিনি তাঁর কথা রেখেছেন। আমাকে 'গাইড' ছবিতে নিয়েছিলেন। ছবির 'তেরে মেরে স্বপ্নে' গানটি শুটিং হয়েছিল মাত্র দুই টেকে। আর এ গানে দেবকে স্রেফ দেবদূতের মতো লেগেছে। কী অসাধারণ এক হাসি ছিল তাঁর!
নিজেই তদারক করতেন (নন্দা) : 'কালা বাজার' ছবিতে আমি দেবের বোনের চরিত্রে অভিনয় করি। দেব জানত, আমি বড় পরিবারের মেয়ে। অনুশাসনের মধ্যে বড় হয়েছি। শুটিংয়ে তাই নিজে থেকেই আমার তদারকি শুরু করেন। শুটিং শেষে নিজে বাড়ি পেঁৗছে দিতেন। যদি কোনো দিন কাজে আটকে যেতেন, নিরাপদে ও সময়মতো বাড়িতে আমার পেঁৗছানো নিশ্চিত করতেন। আমাকে নায়িকা করবেন বলেছিলেন। 'হাম দোনো' ছবির মাধ্যমে তিনি তাঁর সেই কথা রেখেছিলেন।
সবার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ছিল (সায়রা বানু) : ১৯৬৬ সালে 'পেয়ার মোহাব্বত' ছবিতে আমরা প্রথম একসঙ্গে কাজ করি। তত দিনে দেব সাহেব পুরো ভারতের তারুণ্যের প্রতীক হয়ে গেছেন। তিনি জানতেন, তাঁর বন্ধু ও সহকর্মী দীলিপ কুমারের সঙ্গে আমার বিয়ে প্রায় ঠিক হয়ে আছে। বয়সে আমি অনেক ছোট হওয়া সত্ত্বেও বন্ধুর হবু স্ত্রী হিসেবেই তিনি আমাকে দেখেছেন এবং সেভাবেই শ্রদ্ধাবোধটাও ছিল। তবে তখন মিডিয়া আমাকে একটু বাঁকা চোখেই দেখত। কিন্তু দেবের ব্যবহারে কোনো পরিবর্তন ছিল না। দীলিপ সাহেবও আমার প্রেমকে একান্তই আমাদের ব্যক্তিগত বিষয় বলে উল্লেখ করেন। আমার মনে আছে, ছবির একটি গানের দৃশ্যের শুটিং হয় স্পিডবোটে। চলন্ত বোটে দাঁড়িয়ে থাকতে ভয় পাচ্ছিলাম বলে দেব আমাকে জড়িয়ে ধরে রাখেন।
No comments