মাঝিনা-কায়েতপাড়া-ত্রিমোহনী সড়ক প্রকল্প-কাজ বিশ ভাগ বাকিটা লুটপাট by জাফর আহমেদ
ছয় বছরেও মাঝিনা-কায়েতপাড়া-ত্রিমোহনী সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের আট কিলোমিটার রাস্তার কাজ শেষ করতে পারেনি যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সড়ক ও জনপথ অধিদফতর (সওজ)। এ সড়কের পূর্ত কাজে ৬ কোটি ৮৩ লাখ টাকা খরচ করে ১৫ কোটি ২৭ লাখ টাকা তুলে নিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক। এক্ষেত্রে লোপাট হয়েছে প্রায় সাড়ে আট কোটি টাকা। প্রকল্পের ২০ ভাগ কাজ করে বাকি ৮০ ভাগ অর্থই হয়েছে লুটপাট। উন্নয়ন কাজ তদারক সংস্থা বাস্তবায়ন
পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদনে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। ২০০৪ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পটি দুর্নীতির কবলে পড়ে এখন স্থগিত।আইএমইডির প্রতিবেদনমতে, মিথ্যা তথ্য দিয়ে এ প্রকল্প থেকে ৮ কোটি ৪৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। এমনকি ৭৫ মিটারের একটি সেতু ও ৪৫ মিটারের তিনটি কালভার্ট নির্মাণে
গণখাতে ক্রয় আইনকে (পিপিআর) তোয়াক্কা না করে প্রকল্প পরিচালক ইচ্ছামতো ৪৩ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিয়ে প্রকল্পে নানা সংকট তৈরি করেছেন। আর এ সুযোগে নিজে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করেছেন।
সূত্র জানায়, নগরীর ব্যস্ততম যাত্রাবাড়ী-সায়েদাবাদ সড়ক এড়িয়ে ঢাকায় প্রবেশে সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ, ভৈরবসহ পূর্বাঞ্চলের যানবাহনকে নির্বিঘ্ন করতে 'মাঝিনা-কায়েতপাড়া-ত্রিমোহনী সড়ক নির্মাণ' প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়। ২৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পটিতে ২০০৪ সালে নির্মাণ কাজ শুরু করে সওজ। চার বছর মেয়াদে ২০০৭ সালে প্রকল্প শেষ করার কথা থাকলেও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে মেয়াদ আরও দু'বছর বাড়ানো হয়। ২০০৯ সালে বাড়তি মেয়াদ শেষ হলে প্রকল্প পরিচালক সওজের তৎকালীন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (বর্তমানে ঢাকা জোনের সুপারিনটেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার) শাহাব উদ্দীন খান প্রকল্পটির ৮০ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে বলে দাবি করেন। তিনি ২৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকার মধ্যে ১৮ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে পূর্ত কাজ বাবদ ১৫ কোটি ২৭ লাখ আর ভূমি অধিগ্রহণ, জরিপ ও নকশা বাবদ ৩ কোটি ৬ লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হয়।
এদিকে প্রকল্পটিতে সরকারের অর্থ লুটপাটের অভিযোগ এনে আইএমইডির তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রকল্পের কোনো কোনো অংশের কাজ না করেই অর্থব্যয়ের তথ্য দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনমতে, প্রায় ২৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পে পরিচালক ২০০৪ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে ১৮ কোটি ৩৩ লাখ টাকা তুলে নিয়েছেন। আর ব্যয়ের হিসাবে দেখা যায়, পরিচালক শুধু পূর্ত কাজের জন্য ১৫ কোটি ২৭ লাখ টাকা পরিশোধ করেছেন; কিন্তু প্রকল্পের বিল পরিশোধের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, পূর্ত কাজের জন্য বাস্তবে বিল পরিশোধ করা হয়েছে ৬ কোটি ৮৩ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। অর্থাৎ পূর্ত কাজে ৮ কোটি ৪৩ লাখ ৮৯ হাজার টাকা অতিরিক্ত ব্যয় দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া জমি অধিগ্রহণ, মাটির কাজ না করে ও সেতুর আংশিক কাজ করে পুরো কাজ হয়েছে বলে তথ্য দেওয়া হয়েছে। আইএমইডির মতে, প্রকল্পের তিন হেক্টর জমি অধিগ্রহণের জন্য ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ থাকলেও পরিচালক ২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা (অনুমোদনের চেয়ে প্রায় ৫০০ শতাংশ বেশি) ব্যয় করেছেন। ৭৫ মিটারের একটি সেতু নির্মাণে ৫ কোটি ৪২ লাখ টাকার কার্যাদেশ থাকলেও বাস্তবে মাত্র ১৩টি পাইল ছাড়া কিছুই করা হয়নি। এ খাতে ৪ কোটি ২৯ লাখ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। ৪৫ মিটারের তিনটি বক্স কালভার্ট নির্মাণে ৪৫ লাখ টাকা বরাদ্দ থাকলেও পরিচালক তুলে নিয়েছেন ১ কোটি ৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ এ খাতে ৬৪ লাখ টাকা অতিরিক্ত তুলে নিয়েছেন। রাস্তার বাঁধ নির্মাণে ৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা তুলে নিলেও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে ৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। অর্থাৎ এ খাতে ৩ কোটি ৪৫ লাখ অতিরিক্ত অর্থ তুলে নেওয়া হয়েছে।
এসব বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী শাহাব উদ্দীন খান বলেন, দলিল দেখিয়েই ব্যয়কৃত অর্থ ছাড় করা হয়েছে। আইএমইডির তদন্ত কর্মকর্তাকে ভুলবশত সব দলিল দেখানো হয়নি। তাই তিনি লুটপাট হয়েছে বলে মনে করেছেন। তবে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের আন্তঃবিভাগীয় তদন্তে সত্য উঠে আসবে বলে দাবি করেন তিনি।
দীর্ঘ ছয় বছরেও মাত্র আট কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ কেন সম্ভব হয়নি জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ প্রকল্পটির জন্য প্রয়োজন ছিল অন্তত ৭০ কোটি টাকা। কিন্তু কম টাকায় প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চাওয়ায় কোনো কাজই ঠিকমতো করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে ২০১০ সালে এক একনেক সভায় আইএমইডির তৎকালীন সচিব আবদুল মালেক এ দুর্নীতির চিত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের আন্তঃবিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে পুনরায় তদন্ত এবং তার কাছে প্রতিবেদন উপস্থাপন করার নির্দেশ দেন; কিন্তু সে নির্দেশের দেড় বছর পার হলেও এখন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীকে কিছুই জানানো হয়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সড়ক ও জনপথ বিভাগের সচিব এমএএন সিদ্দিক জানান, তিনি এরই মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়ে দিয়েছেন।
তবে আইএমইডি তদন্ত কর্মকর্তা জানান, যোগাযোগ মন্ত্রণালয় ওই প্রতিবেদন পাঠালে অবশ্যই তার বিভাগে কপি আসবে; কিন্তু এ রকম কোনো প্রতিবেদন তারা পাননি।
সংশ্লিষ্টদের ধারণা, এভাবে প্রকল্পটি নিয়ে লুকোচুরি করে সময়ক্ষেপণের উদ্দেশ্য বিষয়টি ঝুলিয়ে দেওয়া হতে পারে।
গণখাতে ক্রয় আইনকে (পিপিআর) তোয়াক্কা না করে প্রকল্প পরিচালক ইচ্ছামতো ৪৩ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিয়ে প্রকল্পে নানা সংকট তৈরি করেছেন। আর এ সুযোগে নিজে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করেছেন।
সূত্র জানায়, নগরীর ব্যস্ততম যাত্রাবাড়ী-সায়েদাবাদ সড়ক এড়িয়ে ঢাকায় প্রবেশে সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ, ভৈরবসহ পূর্বাঞ্চলের যানবাহনকে নির্বিঘ্ন করতে 'মাঝিনা-কায়েতপাড়া-ত্রিমোহনী সড়ক নির্মাণ' প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়। ২৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পটিতে ২০০৪ সালে নির্মাণ কাজ শুরু করে সওজ। চার বছর মেয়াদে ২০০৭ সালে প্রকল্প শেষ করার কথা থাকলেও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে মেয়াদ আরও দু'বছর বাড়ানো হয়। ২০০৯ সালে বাড়তি মেয়াদ শেষ হলে প্রকল্প পরিচালক সওজের তৎকালীন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (বর্তমানে ঢাকা জোনের সুপারিনটেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার) শাহাব উদ্দীন খান প্রকল্পটির ৮০ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে বলে দাবি করেন। তিনি ২৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকার মধ্যে ১৮ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে পূর্ত কাজ বাবদ ১৫ কোটি ২৭ লাখ আর ভূমি অধিগ্রহণ, জরিপ ও নকশা বাবদ ৩ কোটি ৬ লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হয়।
এদিকে প্রকল্পটিতে সরকারের অর্থ লুটপাটের অভিযোগ এনে আইএমইডির তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রকল্পের কোনো কোনো অংশের কাজ না করেই অর্থব্যয়ের তথ্য দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনমতে, প্রায় ২৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পে পরিচালক ২০০৪ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে ১৮ কোটি ৩৩ লাখ টাকা তুলে নিয়েছেন। আর ব্যয়ের হিসাবে দেখা যায়, পরিচালক শুধু পূর্ত কাজের জন্য ১৫ কোটি ২৭ লাখ টাকা পরিশোধ করেছেন; কিন্তু প্রকল্পের বিল পরিশোধের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, পূর্ত কাজের জন্য বাস্তবে বিল পরিশোধ করা হয়েছে ৬ কোটি ৮৩ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। অর্থাৎ পূর্ত কাজে ৮ কোটি ৪৩ লাখ ৮৯ হাজার টাকা অতিরিক্ত ব্যয় দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া জমি অধিগ্রহণ, মাটির কাজ না করে ও সেতুর আংশিক কাজ করে পুরো কাজ হয়েছে বলে তথ্য দেওয়া হয়েছে। আইএমইডির মতে, প্রকল্পের তিন হেক্টর জমি অধিগ্রহণের জন্য ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ থাকলেও পরিচালক ২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা (অনুমোদনের চেয়ে প্রায় ৫০০ শতাংশ বেশি) ব্যয় করেছেন। ৭৫ মিটারের একটি সেতু নির্মাণে ৫ কোটি ৪২ লাখ টাকার কার্যাদেশ থাকলেও বাস্তবে মাত্র ১৩টি পাইল ছাড়া কিছুই করা হয়নি। এ খাতে ৪ কোটি ২৯ লাখ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। ৪৫ মিটারের তিনটি বক্স কালভার্ট নির্মাণে ৪৫ লাখ টাকা বরাদ্দ থাকলেও পরিচালক তুলে নিয়েছেন ১ কোটি ৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ এ খাতে ৬৪ লাখ টাকা অতিরিক্ত তুলে নিয়েছেন। রাস্তার বাঁধ নির্মাণে ৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা তুলে নিলেও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে ৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। অর্থাৎ এ খাতে ৩ কোটি ৪৫ লাখ অতিরিক্ত অর্থ তুলে নেওয়া হয়েছে।
এসব বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী শাহাব উদ্দীন খান বলেন, দলিল দেখিয়েই ব্যয়কৃত অর্থ ছাড় করা হয়েছে। আইএমইডির তদন্ত কর্মকর্তাকে ভুলবশত সব দলিল দেখানো হয়নি। তাই তিনি লুটপাট হয়েছে বলে মনে করেছেন। তবে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের আন্তঃবিভাগীয় তদন্তে সত্য উঠে আসবে বলে দাবি করেন তিনি।
দীর্ঘ ছয় বছরেও মাত্র আট কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ কেন সম্ভব হয়নি জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ প্রকল্পটির জন্য প্রয়োজন ছিল অন্তত ৭০ কোটি টাকা। কিন্তু কম টাকায় প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চাওয়ায় কোনো কাজই ঠিকমতো করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে ২০১০ সালে এক একনেক সভায় আইএমইডির তৎকালীন সচিব আবদুল মালেক এ দুর্নীতির চিত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের আন্তঃবিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে পুনরায় তদন্ত এবং তার কাছে প্রতিবেদন উপস্থাপন করার নির্দেশ দেন; কিন্তু সে নির্দেশের দেড় বছর পার হলেও এখন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীকে কিছুই জানানো হয়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সড়ক ও জনপথ বিভাগের সচিব এমএএন সিদ্দিক জানান, তিনি এরই মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়ে দিয়েছেন।
তবে আইএমইডি তদন্ত কর্মকর্তা জানান, যোগাযোগ মন্ত্রণালয় ওই প্রতিবেদন পাঠালে অবশ্যই তার বিভাগে কপি আসবে; কিন্তু এ রকম কোনো প্রতিবেদন তারা পাননি।
সংশ্লিষ্টদের ধারণা, এভাবে প্রকল্পটি নিয়ে লুকোচুরি করে সময়ক্ষেপণের উদ্দেশ্য বিষয়টি ঝুলিয়ে দেওয়া হতে পারে।
No comments