কোচ-খেলোয়াড় দুই মেরুতে তবু আশা-সনৎ বাবলা,

মালদ্বীপের বিপক্ষে ম্যাচ জয়ের সূত্র খুঁজছে বাংলাদেশ ফুটবল দল। সুবাদে নানামুখী চিন্তার বাতাবরণ চলছে দলের ভেতর। সেগুলো যুগপৎ, অলীক ও বাস্তব। ইলিয়েভস্কিকে কোনোভাবে আজ মাঠে না যাওয়ার ব্যবস্থা করা, তখন সহকারী গোলাম জিলানী সেরা একাদশ খেলিয়ে ম্যাচ বের করে নিয়ে আসবেন। আরেকটা হলো আবু হাসান চৌধুরী প্রিন্স আজমির শরিফ ও নিজাম উদ্দিন আউলিয়ার মাজারে গিয়ে মানত করছেন দলটাকে সেমিফাইনালে তুলে নেওয়ার


জন্য। শেষটা হলো, লেবানন-টনিকে মালদ্বীপ জয়। চিন্তার বৈচিত্র্য দেখলেই বোঝা যায় কতটা অসহায় হয়ে বাংলাদেশ আজকের ম্যাচ জয়ের সূত্র খুঁজছে। আহাজারি করছে সেমিফাইনালের স্বপ্ন ধরে রাখার জন্য।
কে বাতলে দেবে এই সূত্র! যাঁর দেওয়ার কথা সেই মেসিডোনিয়ান কোচই যেন দুই হাত তুলে সারেন্ডার করে দিয়েছেন, 'আমি ঢাকায় থাকতেই বলেছিলাম, এই দল নিয়ে সাফে আশাবাদী নই।' হাবভাবে বুঝিয়ে দিলেন মুখে 'জিততে হবে' বললেও ভেতরে তিনি আশাহীন। যে কোচ এতটাই নৈরাশ্যবাদী তাঁকে তো বাইরে রেখেই ম্যাচ খেলতে যাওয়া উচিত। খেলোয়াড়রাও এই কোচে যারপরনাই বিরক্ত, একেক দিন একেক একাদশের কারণে দলের স্বাভাবিক খেলাটাই ব্যাহত হচ্ছে। শেষ ম্যাচ ভেবে সহকারী কোচ জিলানীকে দিয়ে একটা চেষ্টা করা যেতেই পারে। সাদ্দামের জমানায় ইরাক এমন করত, পছন্দ না হলে টুর্নামেন্টের মাঝপথে গুডবাই জানিয়ে দিত। আমাদের সভ্য বাফুফে এটা করতে পারে না, তাই অলীক চিন্তায় মাথা নষ্ট করে লাভ নেই।
ইলিয়েভস্কিই মাঠে যাবেন এবং তাঁর অধীনেই দল খেলবে। তবে খেলবে বিচ্ছিন্নতাবাদী মন নিয়ে, শুধু ঢাকায় লেবানন-জয়ের ম্যাচের অনুপ্রেরণা সঙ্গে নিয়ে। স্ট্রাইকার মিঠুন এই বিচ্ছিন্নতাকে দারুণভাবে ব্যাখ্যা করেছেন, 'ভুল হলে কোচ সাইড লাইন থেকে চিৎকার করবে, করুক। আমরা যদি লেবানন ম্যাচের মতো খেলে শেষ পর্যন্ত ম্যাচ জিতে আসতে পারি, তাহলে হয়ে গেল। তখন তো কোচের বলার কিছু থাকবে না।' ভালো ব্যাখ্যা, সুতরাং আপাতত লেবানন-টনিকটাই জয়ের মন্ত্র হয়ে যাচ্ছে। টনিকটা ঠিকমতো পুরো দলকে গেলানো গেলে কোচের ওপর বিরক্তি কমে যায় আর সেরা খেলাটা উপহার দিতে পারে দল।
কোচ যথারীতি তাঁর কাজ করে যাচ্ছেন। ঐতিহ্য বজায় রেখে ইলিয়েভস্কি গত ম্যাচের একাদশে প্রচুর পরিবর্তন করে নিজের মতো একটি একাদশ দাঁড় করিয়েছেন। সেখানে নতুন ঢুকেছেন সুজন, ইমন বাবু ও মিঠুন। তবে এখানেই শেষ বলা যাবে না, তাঁর মাথায় যে অবিরত চলছে পরীক্ষা। সুবাদে ম্যাচ শুরুর আগেই আরো উলট-পালট হয়ে যেতে পারে। কারণ মুখে কোচ বারবার বলেছেন, 'এটা বাঁচা-মরার লড়াই। খেলোয়াড়রা উজ্জীবিত হয়ে খেলতে পারলে ম্যাচ জেতা যাবে।' সঙ্গে আবার মালদ্বীপে ভয় দেখানো শুরু করেছেন, 'তাঁদের আরিফ ও ইব্রাহিম ফাজল টুর্নামেন্টের সেরা মিডফিল্ডার। এ ছাড়া আলী আশফাক খুব ভালো স্ট্রাইকার।' আশফাক ভালো স্ট্রাইকার, তাঁকে মার্কিংয়ে ফেলে খেলেছে অন্যরাও। বাংলাদেশও তাই করবে। কিন্তু ওই যে সেরা মিডফিল্ডারের গল্প, সেটা স্রেফ তাঁর উর্বর মস্তিষ্কপ্রসূত। এত ভালো হলে তারা কেন এখনো ম্যাচ জিততে পারেনি? বাংলাদেশের বিপক্ষে গত এক যুগে তাদের কোনো জয় নেই। সেই ৯৯ কাঠমান্ডু সাফ গেমসে বাংলাদেশকে হারানোর পর তিনটি ম্যাচ হয়েছে দুই দলের_একটিতে বাংলাদেশ জিতেছে, অন্য দুটি ড্র। আর সব মেলালে বাংলাদেশের চারটি জয়, চারটি ড্র এবং একটি হার। পরিসংখ্যানও বলছে আজকের ম্যাচে লাল-সবুজের ফেভারিটের কথা। মালদ্বীপের কোচ স্তেভান উর্বানিও মনে করেছেন ম্যাচটা খুব কঠিন হবে, 'আমি নেপাল-বাংলাদেশ খেলা দেখেছি। নেপাল প্রাধান্য বিস্তার করে খেললেও শেষ ১০ মিনিটে গোলের অন্তত তিনটি ভালো সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। তারাও সেমিফাইনালে ওঠার জন্য এ ম্যাচে মরিয়া হয়ে খেলবে, খুব প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচ হবে।'
লড়াইয়ে বাংলাদেশ জিতলেই সেমিফাইনালের দুয়ার খুলে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। সে ক্ষেত্রে আগের ম্যাচে নেপালকে জিততে হবে পাকিস্তানের বিপক্ষে, ড্র হলেও বাংলাদেশের আশা থাকবে। তবে পাকিস্তান জিতে গেলে বাংলাদেশের খুলে যাওয়া দুয়ার বন্ধ হয়ে যাবে নিশ্চিতভাবেই। এ পর্যন্ত যেসব খেলা হয়েছে তা দেখে সবার রায় যখন নেপালের জয়ের দিকে যাচ্ছে, তখন অবিশ্বাস্যভাবে বাংলাদেশ কোচ অনুমান করছেন, 'পাকিস্তান জিতবে এই ম্যাচে।' দলের কর্মকর্তারা যখন নিজেদের দলের ও নেপালের জয় কামনায় মাজারে মানত করছেন, তখন ইলিয়েভস্কির এমন ভাবনা দেখে সবাই বিমূঢ়।
এখন কী বলবেন? এই কোচকে বাইরে রাখার চিন্তা করারই তো দরকার! আর দলের জন্য দরকার লেবানন-টনিক।
 

No comments

Powered by Blogger.