মুহাম্মদ আমির রানা-আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ
বিশ্বনেতারা আজ (৫ ডিসেম্বর) জার্মানির বন শহরে আরো একবার আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করতে বসেছেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে ২০১৪ সালের পর আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততা এবং তালেবানদের সঙ্গে ঐকমত্যের বিষয় আলোচনা এ সম্মেলনের প্রধান বিষয়। যদিও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় অবকাঠামো উন্নয়ন, অর্থনীতি, নিরাপত্তা ও সামাজিক খাতে বিশাল অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করেছে, তার পরও রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে বিশেষ কোনো অগ্রগতি
আসেনি এবং বিভক্ত হয়ে থাকা আফগান সমাজকে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর আওতায় আনা যায়নি। তালেবানরা এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়েছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বুঝতে পারেনি যে বিষয়টি তারা কিভাবে 'ডিল' করবে। বেশ কয়েক বছর ধরে তালেবানদের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করতে চেষ্টা করেও এখন পর্যন্ত তেমন সফলতা অর্জন করা যায়নি। এর প্রধান কারণ হচ্ছে, যুদ্ধ ময়দানে দুই পক্ষের সংঘাতে কোনো সফলতা অর্জন ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র তালেবানদের সঙ্গে শান্তিপ্রক্রিয়ায় যেতে দ্বিধান্বিত হয়ে আছে।
বন সম্মেলনেও তালেবানদের কোনো প্রতিনিধিত্ব থাকছে না। গত মাসে ইস্তাম্বুল কনফারেন্সে এবং কাবুলের লয়া জিরগায়ও তালেবানদের কোনো প্রতিনিধিত্ব ছিল না। তাই সংঘাতের একটি প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ দল হিসেবে তাদের অনুপস্থিতির মধ্য দিয়ে পশ্চিমারা কোনো শান্তির দোরগোড়ায় পেঁৗছতে পারবে না।
২০১৪ সালের আগে, এখনই সময় একটি কার্যকর কৌশল অবলম্বন করা। একটি যুদ্ধবিরতির ঘোষণা এ ক্ষেত্রে কার্যকর হয়ে উঠতে পারত। পাকিস্তান একটি যুদ্ধবিরতি চায় এবং মনে করে যে যুদ্ধ সমাপ্তির এটি প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র এ আইডিয়া নিয়ে গভীরভাবে ভাবছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন তাঁর সর্বশেষ পাকিস্তান সফরের সময় বলেছিলেন, আফগান যুদ্ধ অবসানের কথা তাঁরা চিন্তা করতে শুরু করবেন। এ অঞ্চলের ওপর প্রখ্যাত বিশেষজ্ঞ গিলস ডরোনসোরো মনে করেন, শান্তির আলোচনার জন্য এখানে যুদ্ধবিরতির ঘোষণাই হলো সর্বশেষ পন্থা। যদি কিছু তালেবান মেনেও নেয় এবং কিছু তালেবান মেনে না নেয়, সেটাকেও একটি অগ্রগতি বলা যাবে।
এমন প্রস্তাবে তালেবানদের সাড়া পাওয়ার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র সন্দিহান। কিন্তু সম্প্রতি অন্তত দুইবার তালেবানরা স্বল্প সময়ের জন্য হলেও যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। একবার জাতিসংঘ সপ্তাহব্যাপী পোলিও ভ্যাকসিন খাওয়ানোর কর্মসূচি গ্রহণ করলে তালেবানরা অস্ত্রবিরতি মেনে নেয়, অন্যবার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশে আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকালে। কোনো প্রার্থীকে লক্ষ্য করে হামলা না চালানো এবং প্রচারের জন্য অফিস খোলায় বাধা সৃষ্টি না করার ব্যাপারে তারা সম্মত হয়।
এ কথা পুরোপুরি বলা যাবে না যে একটি যুদ্ধবিরতি হলে তালেবানরা তা সর্বসম্মতিক্রমে মেনে চলবে। পেছনের পথ দিয়ে তালেবানদের সঙ্গে চুক্তির প্রস্তাব দেওয়া যেতে পারে। গিলস মনে করেন, এমন প্রস্তাবে তালেবানদের কী প্রতিক্রিয়া হয়, সেটা পরীক্ষা করা যেতে পারে। এটা আরো একটি বিষয় যে বুঝতে সহায়তা করবে, তা হলো_তালেবানদের সঙ্গে আল-কায়েদার সম্পর্ক কী রকম আছে। বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের যথেষ্ট উদ্বেগ আছে। যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে তালেবানদের বিভিন্ন উপদলের প্রতিক্রিয়া থেকে বোঝা যাবে, আল-কায়েদার সঙ্গে তাদের সম্পর্কের গভীরতা কতটা এবং সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক থেকে তাদের সরিয়ে আনা কতটা সম্ভব।
তালেবানরা হয়তো সংবিধান সংশোধনের দাবি জানিয়ে আরো অধিক ইসলামী শাসনের কথা বলবে। কিন্তু সে ক্ষেত্রেও আফগানিস্তানে নারী অধিকার, শিশু, ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং আফগান সমাজে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের একটি ভারসাম্য নিয়ে ঐকমত্যে পেঁৗছার সুযোগ
তৈরি হবে।
এ রকম একটি যুদ্ধবিরতির পর আলোচনায় অংশগ্রহণকারী দলগুলোর মধ্যে সমন্বয় নিয়ে যথেষ্ট উদ্বেগ আছে। এ কথাও মনে করা হয়, পাকিস্তান এবং তালেবানরা যদি একসঙ্গে কাজ করে, তাহলে আলোচনার টেবিলে তারা একটি 'ভেটো পাওয়ারে' পরিণত হবে।
এই যুদ্ধবিরতিতে শুধু আফগানিস্তানে অভিযান বন্ধের কথা মনে রাখলেই হবে না, এ ক্ষেত্রে পাকিস্তানে ড্রোন হামলা বন্ধের কথাও বিবেচনা করতে হবে। অন্যথায় যেকোনো শান্তিপ্রক্রিয়ায় পাকিস্তান একটি সমস্যা
হয়ে থাকবে।
লেখক : কনফ্লিক্ট অ্যান্ড পিস স্টাডি নামক গবেষণা জার্নালের সম্পাদক। পাকিস্তানের ডন পত্রিকায় প্রকাশিত নিবন্ধের ঈষৎ সংক্ষিপ্ত ভাষান্তর : মহসীন হাবিব
বন সম্মেলনেও তালেবানদের কোনো প্রতিনিধিত্ব থাকছে না। গত মাসে ইস্তাম্বুল কনফারেন্সে এবং কাবুলের লয়া জিরগায়ও তালেবানদের কোনো প্রতিনিধিত্ব ছিল না। তাই সংঘাতের একটি প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ দল হিসেবে তাদের অনুপস্থিতির মধ্য দিয়ে পশ্চিমারা কোনো শান্তির দোরগোড়ায় পেঁৗছতে পারবে না।
২০১৪ সালের আগে, এখনই সময় একটি কার্যকর কৌশল অবলম্বন করা। একটি যুদ্ধবিরতির ঘোষণা এ ক্ষেত্রে কার্যকর হয়ে উঠতে পারত। পাকিস্তান একটি যুদ্ধবিরতি চায় এবং মনে করে যে যুদ্ধ সমাপ্তির এটি প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র এ আইডিয়া নিয়ে গভীরভাবে ভাবছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন তাঁর সর্বশেষ পাকিস্তান সফরের সময় বলেছিলেন, আফগান যুদ্ধ অবসানের কথা তাঁরা চিন্তা করতে শুরু করবেন। এ অঞ্চলের ওপর প্রখ্যাত বিশেষজ্ঞ গিলস ডরোনসোরো মনে করেন, শান্তির আলোচনার জন্য এখানে যুদ্ধবিরতির ঘোষণাই হলো সর্বশেষ পন্থা। যদি কিছু তালেবান মেনেও নেয় এবং কিছু তালেবান মেনে না নেয়, সেটাকেও একটি অগ্রগতি বলা যাবে।
এমন প্রস্তাবে তালেবানদের সাড়া পাওয়ার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র সন্দিহান। কিন্তু সম্প্রতি অন্তত দুইবার তালেবানরা স্বল্প সময়ের জন্য হলেও যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। একবার জাতিসংঘ সপ্তাহব্যাপী পোলিও ভ্যাকসিন খাওয়ানোর কর্মসূচি গ্রহণ করলে তালেবানরা অস্ত্রবিরতি মেনে নেয়, অন্যবার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশে আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকালে। কোনো প্রার্থীকে লক্ষ্য করে হামলা না চালানো এবং প্রচারের জন্য অফিস খোলায় বাধা সৃষ্টি না করার ব্যাপারে তারা সম্মত হয়।
এ কথা পুরোপুরি বলা যাবে না যে একটি যুদ্ধবিরতি হলে তালেবানরা তা সর্বসম্মতিক্রমে মেনে চলবে। পেছনের পথ দিয়ে তালেবানদের সঙ্গে চুক্তির প্রস্তাব দেওয়া যেতে পারে। গিলস মনে করেন, এমন প্রস্তাবে তালেবানদের কী প্রতিক্রিয়া হয়, সেটা পরীক্ষা করা যেতে পারে। এটা আরো একটি বিষয় যে বুঝতে সহায়তা করবে, তা হলো_তালেবানদের সঙ্গে আল-কায়েদার সম্পর্ক কী রকম আছে। বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের যথেষ্ট উদ্বেগ আছে। যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে তালেবানদের বিভিন্ন উপদলের প্রতিক্রিয়া থেকে বোঝা যাবে, আল-কায়েদার সঙ্গে তাদের সম্পর্কের গভীরতা কতটা এবং সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক থেকে তাদের সরিয়ে আনা কতটা সম্ভব।
তালেবানরা হয়তো সংবিধান সংশোধনের দাবি জানিয়ে আরো অধিক ইসলামী শাসনের কথা বলবে। কিন্তু সে ক্ষেত্রেও আফগানিস্তানে নারী অধিকার, শিশু, ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং আফগান সমাজে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের একটি ভারসাম্য নিয়ে ঐকমত্যে পেঁৗছার সুযোগ
তৈরি হবে।
এ রকম একটি যুদ্ধবিরতির পর আলোচনায় অংশগ্রহণকারী দলগুলোর মধ্যে সমন্বয় নিয়ে যথেষ্ট উদ্বেগ আছে। এ কথাও মনে করা হয়, পাকিস্তান এবং তালেবানরা যদি একসঙ্গে কাজ করে, তাহলে আলোচনার টেবিলে তারা একটি 'ভেটো পাওয়ারে' পরিণত হবে।
এই যুদ্ধবিরতিতে শুধু আফগানিস্তানে অভিযান বন্ধের কথা মনে রাখলেই হবে না, এ ক্ষেত্রে পাকিস্তানে ড্রোন হামলা বন্ধের কথাও বিবেচনা করতে হবে। অন্যথায় যেকোনো শান্তিপ্রক্রিয়ায় পাকিস্তান একটি সমস্যা
হয়ে থাকবে।
লেখক : কনফ্লিক্ট অ্যান্ড পিস স্টাডি নামক গবেষণা জার্নালের সম্পাদক। পাকিস্তানের ডন পত্রিকায় প্রকাশিত নিবন্ধের ঈষৎ সংক্ষিপ্ত ভাষান্তর : মহসীন হাবিব
No comments