আলোচিত তিন মন্ত্রীর দপ্তর বদল-*সুরঞ্জিত : রেল *ওবায়দুল কাদের : যোগাযোগ -*জি এম কাদের : বাণিজ্য *ফারুক খান : বিমান ও পর্যটন -*আবুল হোসেন : তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি -*ইয়াফেস ওসমান : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়

সৈয়দ আবুল হোসেনকে শেষ পর্যন্ত সরে যেতে হয়েছে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে। বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী জি এম কাদের সরকারের গত তিন বছরে নানা কারণে আলোচনায় ছিলেন। গতকাল সোমবার এ দুই সিনিয়র মন্ত্রীর দপ্তরও অদলবদল হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদে নতুন করে অন্তর্ভুক্ত দুজনের দপ্তর বণ্টনেরও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এসেছে।


গতকাল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রজ্ঞাপন জারি করে জানায়, মন্ত্রিপরিষদে সদ্য অন্তর্ভুক্ত সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে নবগঠিত রেলপথ মন্ত্রণালয়, ওবায়দুল কাদেরকে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় এবং সৈয়দ আবুল হোসেনকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে আরো জানানো হয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী জি এম কাদের পেয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। আর বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খানকে দেওয়া হয়েছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়।
গত রবিবার বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ভেঙে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় গঠন করা হয়। ইয়াফেস ওসমান থাকছেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে। এ ছাড়া গত রবিবার যোগাযোগ মন্ত্রণালয়কেও দুই ভাগ করা হয়। রেলপথকে আলাদা মন্ত্রণালয় করা হয়।
জানা গেছে, নবনিযুক্ত এবং দপ্তর বদল হওয়া মন্ত্রীরা আগামীকাল বুধবার নতুন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। গতকাল জি এম কাদের, ফারুক খান ও সৈয়দ আবুল হোসেন তাঁদের পুরনো মন্ত্রণালয়েই কাজ করেছেন। তাঁরা বিভিন্ন বিষয়ে জমে থাকা কাজ শেষ করেছেন।
গতকাল আবুল হোসেন যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সব বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কাছ থেকে বিদায় নিয়েছেন। আবুল হোসেন সকাল ৮টায় সচিবালয়ে গিয়ে কিছু সময় পর যান রেলভবনে। সেখানে কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিদায় পর্ব সেরে যান সড়ক ভবনে। সেখান থেকে আবুল হোসেন যান মহাখালীতে সেতু বিভাগে। তারপর ফিরে আসেন যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে, যোগ দেন একটি সভায়।
সেতু বিভাগ থেকে ফিরে দুপুর পৌনে ১২টার দিকে দপ্তরে যাওয়ার সময় আবুল হোসেনকে মনভার অবস্থায় দেখা যায়। নতুন মন্ত্রণালয়ে কবে যোগ দিচ্ছেন_জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, 'দেখি, কবে দিই।'
এ বছরের মাঝামাঝিতে বেহাল মহাসড়ক নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন আবুল হোসেন। সংসদ ও সংসদের বাইরে নিজ দলের সদস্যরাও তাঁর বিরুদ্ধে মুখর ছিলেন। এরপর দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন স্থগিত করলে নতুন করে সমালোচনার মুখে পড়েন আবুল হোসেন। তবে আবুল হোসেন তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ বরাবরই প্রত্যাখ্যান করে আসছেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে ফারুক খান সব সময় আলোচনায় ছিলেন। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে 'কম খাওয়ার পরামর্শ' দিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। রদবদলের বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, 'গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় দপ্তর বদল স্বাভাবিক। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় সবার সহযোগিতায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে তিন বছর কাজ করেছি। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে যে দায়িত্ব আমার ওপর অর্পণ করা হয়েছে, তা আমি একইভাবে নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে যাব।'
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নতুন দায়িত্ব পাওয়া জি এম কাদের মহাজোট শরিক জাতীয় পার্টির নেতা এবং দলটির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের ভাই। বিভিন্ন বিষয়ে তিনিও আলোচনায় ছিলেন। মতবিরোধের কারণে সরকার থেকে সরে দাঁড়ানোর হুমকিও দিয়েছিলেন। সর্বশেষ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা সরঞ্জাম সংগ্রহ নিয়েও সরকারের সঙ্গে তাঁর মতবিরোধ সৃষ্টি হয়। তাঁর সঙ্গে বিমান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির মতবিরোধ ছিল। নতুন মন্ত্রণালয়কে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও গোলাম কাদেরের সাফল্য চেয়েছেন। গতকাল প্রধানমন্ত্রী জি এম কাদেরকে বলেছেন, 'বাণিজ্যে বসতি লক্ষ্মী_এ প্রবাদ আপনাকে প্রমাণ করতে হবে।' গতকাল প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমারের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন। ঢাকা ছাড়ার আগে শাহজালাল বিমানবন্দরে জি এম কাদেরকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
গত রাতে জি এম কাদের কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের চেয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে জনসম্পৃক্ততা বেশি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আরো বেশি মানুষের সেবা করা যাবে। আমি এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিচ্ছি।'
নবম সংসদ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট নিরঙ্কুশ বিজয় লাভের পর ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন, গঠন করেন ৩২ সদস্যের মন্ত্রিসভা। এর ১৮ দিন পর মন্ত্রিসভায় আরো ছয়জন যোগ হন। ওই বছর ৩১ জুলাই আবারও কলেবর বাড়ে মন্ত্রিসভার। সেদিন নতুন একজন মন্ত্রী ও পাঁচজন প্রতিমন্ত্রী শপথ নেন।

No comments

Powered by Blogger.