পবিত্র আশুরা-কারবালার মহান শাহাদাত by এ জেড এম শামসুল আলম
হজরত হুসাইন (রা.) এবং হজরত আলী (রা.)-এর পরিবারের ১৭ জন শিশু-কিশোর-যুবকসহ মোট ৭৮ জন মুমিন ফোরাত নদীর বিন্দু পরিমাণ পানি থেকে বঞ্চিত হয়ে কারবালার মরু প্রান্তরে শাহাদাতের পেয়ালা পান করেন। ইমাম হুসাইন (রা.)সহ ৭২ জন শহীদের পবিত্র মস্তক দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ইয়াজিদের গভর্নর কুফা প্রদেশের আমির দুরাচার নরাধম ওবায়দুল্লাহ বিন জিয়াদের দরবারে পাঠানো হয়েছিল।
কেন ছিল এই মহান ত্যাগ এবং শাহাদাত? এগুলো কি ছিল ইয়াজিদের হাত থেকে খিলাফত কেড়ে নেওয়ার জন্য? না, তা নয়। ইমাম হুসাইন (রা.)-এর যাত্রীদলে সেদিন ছিল ৭৮ জন কিশোর-যুবক-বৃদ্ধ। বিপরীত দিকে ছিল হাজার হাজার ইয়াজিদ সেনা। এই অসম যুদ্ধে পরাজয় এবং মৃত্যু ছিল নিশ্চিত। তবু কেন তাঁরা স্বেচ্ছায় এই আত্মত্যাগ করলেন? ইয়াজিদের গভর্নর কুফা প্রদেশের আমির ওবায়দুল্লাহ বিন জিয়াদের দেওয়া শর্ত ছিল_হয় ইয়াজিদের আনুগত্য স্বীকার করো, না হয় যুদ্ধ করে মৃত্যুবরণ করো।
আনুগত্য এমন জিনিস নয় যে একবার স্বীকার করলে আর তা প্রত্যাহার করা যায় না। হিকমতের পথ অবলম্বন করে ইমাম হুসাইন (রা.) হয়তো সেদিন আনুগত্য স্বীকার করতে পারতেন। ইয়াজিদের আদর্শবিচ্যুতি এত বেশি ছিল যে যেকোনো সময় যেকোনো কারণ দেখিয়ে হজরত হুসাইন (রা.) ওই আনুগত্য প্রত্যাহার করতে পারতেন। হিকমত অবলম্বন করে রাসুল (সা.) তো হিজরতও করেছিলেন। তখন হিজরত না করে কাফিরদের সঙ্গে সম্মুখ-লড়াইয়ে অবতীর্ণ হলে মুসলিম বিশ্ব আজ জাহিলিয়াতের মধ্যে হয়তো আকণ্ঠ নিমজ্জিত থাকত।
হজরত হুসাইন (রা.) এবং আহলে বাইয়াতের অন্যান্য সদস্য সেই পথ অবলম্বন করলেন না কেন? তিনি যে একক আত্মদান করলেন, তা নয়। যুদ্ধে প্রথমে তিনি অবতীর্ণ হয়ে শাহাদাত বরণ করলে পরিবারের অন্যান্য যুবকের কেউ কেউ হয়তো নিহত হতেন, কেউ কেউ বন্দি হতেন এবং অনেকেই বেঁচে যেতেন। কিন্তু তা না করে তিনি একজন একজন করে যুবককে যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠালেন। তাঁদের শাহাদাত স্বচক্ষে অবলোকন করলেন। তারপর নিজে শাহাদাতের অমৃত বারি পান করলেন। কী মাহাত্ম্য ছিল এই মহাত্যাগের? কী তাৎপর্য ছিল এই মহাশাহাদাতের?
হজরত হুসাইন (রা.)-এর সামনে কি শুধু এই প্রশ্ন ছিল যে তিনি খলিফা হবেন, না ইয়াজিদ খলিফা হবে? না, তা নয়। এ ছিল একটি নীতির প্রশ্ন। প্রশ্নটি ছিল, গায়ের জোরে ক্ষমতা দখল করা সংগত, নাকি অসংগত? বল প্রয়োগে জনগণের আনুগত্য আদায় করা সংগত, নাকি অসংগত? ইয়াজিদ যে পদ্ধতিতে খলিফার আসনে অধিষ্ঠিত ছিল, তা কি ইসলামী পদ্ধতি? এগুলো ছিল মৌলিক প্রশ্ন।
দ্বিতীয় খলিফা হজরত উমর (রা.)-এর একটি বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছিলেন, 'জোরপূর্বক যারা ক্ষমতা দখল করে এবং ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকে, তাদের এবং তাদের সমর্থকদের হত্যা করো।'
ইয়াজিদ এবং উমাইয়া বংশের রাজন্যবর্গ উপাধিতে খলিফা হলেও বস্তুত তারা ছিল রাজা-বাদশাহর অনুরূপ। উমাইয়াদের খিলাফত ছিল রাজতন্ত্র। তাদের চাল-চলন, শান-শওকত, রীতি-নীতি_সবই ছিল রাজা-বাদশাহদের অনুরূপ; এবং এর শুরু হয়েছিল ইয়াজিদের অভিষেক থেকে।
নিজে খলিফা হওয়া নয়, ইয়াজিদকে খলিফা মেনে নিয়ে হজরত হুসাইন (রা.) ইসলামের মৌলিক রাষ্ট্রনীতি সাধারণতন্ত্র পরিহার করে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রতি আনুগত্য ও সমর্থন জানাবেন, নাকি জানাবেন না_এ প্রশ্নই ছিল হজরত হুসাইন (রা.)-এর সামনে। খলিফা নির্বাচন এবং অপসারণে হজরত আবু বকর (রা.)-এর প্রতিষ্ঠিত নীতি হজরত উমর (রা.), হজরত উসমান (রা.) এবং হজরত আলী (রা.)-এর পরও প্রচলিত থাকবে, নাকি থাকবে না_এসব মৌলিক বিষয়ই ছিল ইমাম হুসাইন (রা.)-এর সামনে। তাঁর কাছে এর জবাব ছিল অত্যন্ত সুস্পষ্ট। জনগণের রায় এবং বাইয়াত ছাড়া ইসলামী খিলাফত হতে পারে না।
মৌলিক নীতির প্রশ্নে আপস হয় না। এই মহাসত্য প্রতিষ্ঠার জন্য ছিল কারবালার মহাশাহাদাত। এ বিষয়টি সম্পর্কে নিঃসন্দেহ হওয়ার জন্য আরো একটু অতীতে ফিরে যেতে হয়।
রাসুল (সা.)-এর ওফাতের পর আরব দেশে বহুসংখ্যক ভণ্ড নবীর আবির্ভাব হয়েছিল। রাসুল (সা.)-এর মহাসাফল্য অবলোকন করে কেউ কেউ মনে করল, নবুয়ত সমাজে প্রতিষ্ঠা অর্জনের রাজপথ। ফলে মুসলিম শক্তির সঙ্গে তাদের সংঘাত অনিবার্য হয়ে উঠল। যখন ইমানদাররা রাসুল (সা.)-এর বিয়োগজনিত শোকে মুহ্যমান, তখন এসব ভণ্ড নবীর দল আরবের বুক থেকে ইসলামী আদর্শ উৎখাত করার জন্য সংঘবদ্ধ হলো এবং একযোগে মদিনা অবরোধ করে বসল।
সিরীয়দের সঙ্গে বিখ্যাত মুতার যুদ্ধে রাসুল (সা.)-এর প্রিয় পাত্র হজরত জায়িদ ইবনে হারিসা (রা.) শহীদ হয়েছিলেন। রাসুল (সা.) সিরীয়দের বিরুদ্ধে তাঁর ১৭ বছর বয়সী কিশোরপুত্র হজরত উসামা (রা.)-এর নেতৃত্বে এক অভিযান পাঠালেন। মুজাহিদ বাহিনী মদিনা থেকে বেরিয়ে খবর পেল, রাসুল (সা.) অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁর শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে আরো নিশ্চিত হওয়ার জন্য উৎকণ্ঠিত মনে মুজাহিদ বাহিনী মদিনার অদূরে শিবির সংস্থাপন করল। প্রতিদিন তাঁরা রাসুল (সা.)-এর শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে খোঁজ নিতে লাগলেন।
রাসুল (সা.)-এর ওফাতের পর এই বাহিনী মদিনায় ফিরে আসে। খলিফা হজরত আবু বকর (রা.)-কে অনেকেই পরামর্শ দিলেন, এ সময় সিরিয়ায় কোনো অভিযান যেন পাঠানো না হয়। বিশেষ করে ভণ্ড নবী এবং বিদ্রোহী কর্তৃক মদিনা আক্রমণের সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু যেহেতু উসামা (রা.)-এর নেতৃত্বে বাহিনী পাঠানো ছিল রাসুল (সা.)-এর শেষ নির্দেশ, সেহেতু খলিফা আবু বকর (রা.) সবার অভিমত উপেক্ষা করে সিরিয়ায় অভিযান পাঠালেন। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কিশোর উসামা (রা.)-এর পরিবর্তে একজন সম্মানিত সাহাবিকে সেনাপতি করার প্রস্তাবও তিনি প্রত্যাখ্যান করলেন।
ভণ্ড নবীরা যখন মদিনা অবরোধ করল, তখন মদিনা ছিল অনেকটা বীরশূন্য। সাহাবিদের অনেকেই প্রমাদ গুনলেন। তাঁরা বিদ্রোহী এবং ভণ্ড নবীদের সঙ্গে আলোচনা চালালেন। দীর্ঘ আলোচনা, তাবলিগি দাওয়াত এবং মেহনতের পর তাদের আল্লাহর রাস্তায় আনতে অনেকটা সক্ষম হলেন। তারা নবুয়তের দাবি এবং লোভ-লালসা ত্যাগ করে তাওহিদের পতাকাতলে ফিরে আসতে রাজি হলো। তবে শর্ত মাত্র একটি। আর তা হলো_তারা জাকাত দান ছাড়া ইসলামের সব অনুশাসনই মেনে নেবে।
এ সম্পর্কে আলোচনার জন্য হজরত আবু বকর (রা.) মজলিসে শূরার বৈঠক আহ্বান করলেন। শূরা বা আলোচনা সভা আহ্বান করা ব্যক্তিগত মত বা মর্জি নয়, কোরআনি নির্দেশ। রাসুল (সা.) নিজেও শূরা ডেকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতেন।
মজলিসে শূরায় সবাই নিজস্ব বক্তব্য রাখলেন। একমাত্র হজরত আব্বাস (রা.) ছাড়া সবাই বিদ্রোহীদের এই নূ্যনতম দাবি মেনে নেওয়ার পক্ষে ছিলেন। হজরত উমর (রা.) চুপ করে ছিলেন। খলিফা হজরত আবু বকর (রা.) তখন হজরত উমর (রা.)-কে তাঁর অভিমত ব্যক্ত করতে বললেন। হজরত উমর (রা.) বললেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে মনে হয় বিদ্রোহীদের নূ্যনতম দাবি মেনে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
হজরত উমর (রা.)-এর বক্তব্য শুনে খলিফা হজরত আবু বকর (রা.) উঠে দাঁড়ালেন। নিঃশব্দ পদক্ষেপে তিনি হজরত উমর (রা.)-এর দিকে এগিয়ে গেলেন। তাঁর সুন্দর বদন ক্ষোভে-ক্রোধে রক্তিম হয়ে উঠেছিল। হজরত উমর (রা.)-এর গুণমুগ্ধ খলিফা পরম স্নেহাস্পদে দাড়ি চেপে ধরলেন এবং চেহারা এদিক-সেদিক ঘোরালেন। তারপর উমর (রা.)-কে, বস্তুত সবাইকে লক্ষ করে বললেন, 'উমর, আল্লাহ্র ওপর ইমান আনার আগে তোমাকে দেখেছি নির্ভীকচিত্ত, সাহসী। আর এখন দেখছি তাওহিদ তোমাকে দুর্বলচিত্ত, ভীত মেষশাবকে পরিণত করেছে। আল্লাহর কসম! বিদ্রোহীরা অর্ধহাত খেজুরদড়ির মূল্যসম অর্থ জাকাত দিতে অস্বীকার করলেও আমি তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করব।' কারণ মৌলিক নীতির প্রশ্নে কোনো আপস হতে পারে না।
সেদিন যদি হজরত আবু বকর (রা.) এই যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত না নিতেন, তাহলে ইসলামের বাস্তব সুরত যে কী দাঁড়াত, তা কল্পনা করা যায় না। জাকাতের প্রশ্নে আপসপ্রক্রিয়া একবার শুরু হলে সালাতের ব্যাপারে হয়তো আপস হতে পারত। অন্য এক খলিফা হয়তো সিয়ামের ব্যাপারে আপস করতেন। কখনো হজের ব্যাপারে, এমনকি ইমানের ব্যাপারেও আপস করতে পারতেন, যেমনটি হয়েছে নাসারাদের ক্ষেত্রে। তারা তো তাওহিদ থেকে ফিরে গিয়ে এখন ত্রিত্ববাদের অনুসারী হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কারবালার মর্মান্তিক ঘটনা বিশ্ব মুসলিম মানস এবং চেতনায় যতটা নাড়া দিয়েছে, ইতিহাসের অন্য কোনো ঘটনা ততটা করেনি। খিলাফতকে রাজতন্ত্র ও স্বৈরতন্ত্রে রূপান্তরের সন্ধিক্ষণে যখন তৎকালীন জীবিত অন্য কোনো সাহাবিও অসি ধারণ করেননি, তখন ইতিহাসের ক্রান্তিলগ্নে ইমাম হুসাইন (রা.) এক রুগ্ণ বালক জয়নাল আবেদীন ছাড়া আহলে বাইয়াতের যুবক-বৃদ্ধ-শিশুকে এক এক করে সত্য ও ন্যায়ের পথে কোরবানি দেন।
ইমাম হুসাইন (রা.)-এর যে শিশুটি ১০ মহররম কারবালায় জন্মগ্রহণ করেছিল, সেও তাঁরই কোলে তীরবিদ্ধ হয়ে শাহাদাত বরণ করে। আহলে বাইয়াতের যুবক-কিশোর-বৃদ্ধ নিজেদের রক্ত দিয়ে এক মহাসত্যের অনির্বাণ শিখা প্রজ্বলিত রেখে গেছেন। তাঁদের রক্তে স্নাত হয়ে ইসলাম পুনরায় জীবিত হয়েছে। মাওলানা মুহাম্মদ আলীর ভাষায় বলতে গেলে, 'কতলে হুসাইন আসল মে মরগেয়ি হ্যায় ইয়াজিদ; ইসলাম জিন্দা হোতা হ্যায়, হার কারবালা কি বাদ।'
কারবালার প্রান্তরে রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচন, রাষ্ট্র পরিচালনা এবং জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকা জায়েজ, নাকি নাজায়েজ_এই মৌলিক প্রশ্নের ফয়সালা হয়েছিল। হুসাইন (রা.)-এর ছেলে আলী আকবার (রা.) পিতাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, 'আমরা কি সত্য পথে কায়েম নই?' ইমাম হুসাইন (রা.) বলেছিলেন, 'নিশ্চয়ই আমরা সত্যপথে আছি।' জওয়াব শুনে আলী আকবর (রা.) চিৎকার করে বললেন, 'তাহলে মৃত্যুকে ভয় কিসের?'
কারবালা প্রান্তরে সর্বশেষ শহীদ ছিলেন হজরত হুসাইন (রা.) নিজে। আদর্শের প্রতি কতটা গভীর প্রত্যয় এবং ইয়াকিন থাকলে নিজ হাতে শুধু সঙ্গী নয়, একই শোণিত যাদের শিরায় প্রবাহিত, তাদেরও যে নিশ্চিত মৃত্যুর কোলে ঠেলে দেওয়া যায়, তা বিস্ময়কর। নিজ পুত্র আলী আকবর, আবদুল্লাহর শাহাদাত তিনি প্রত্যক্ষ করলেন। ভাই হাসান (রা.)-এর তিন ছেলে, হজরত আলী (রা.)-এর ভাই আকিলের পাঁচ ছেলে, পিতা আলী (রা.)-এর অন্য পাঁচ ছেলে, আবদুল্লাহ বিন জাফরের দুই ছেলে_এঁরা সবাই তাঁর অতি নিকটাত্মীয়, আপনজন ছিলেন। তিনি জানতেন, এই অসম যুদ্ধে তাঁরা শাহাদাত লাভ করবেন।
যাঁরা শত নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও তাঁর সঙ্গ ছাড়তে রাজি হননি, তাঁদের শহীদি দরজা পার করে দেওয়ার আগে তিনি শাহাদাত বরণ করেননি। হজরত ইব্রাহীম (আ.) আল্লাহ্র নির্দেশ পালনের জন্য নিজের এক পুত্রের গলায় ছুরি চালিয়েছিলেন। আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছা ছিল ভিন্ন। হজরত ইমাম হুসাইন (রা.) স্বেচ্ছায় স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে সংগ্রামে, জনগণের নির্বাচিত খিলাফত প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলিক নীতি প্রতিষ্ঠার জন্য কিভাবে নিজ প্রাণপ্রতিম সন্তানকে সাজিয়ে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে হয়, তার নজির রেখে গেছেন। তিনি জানতেন, ইয়াজিদের বিরুদ্ধে এই সংগ্রামে মৃত্যুবরণ করবে তাঁর প্রাণপ্রিয় পুত্র আবদুল্লাহ (রা.), ভ্রাতুষ্পুত্র কাসিম (রা.) প্রমুখ। কিন্তু কিয়ামত পর্যন্ত মুসলিম বিশ্বে জন্ম নেবে শত শত আলী আকবার-কাসেম, যাঁরা ন্যায়ের পক্ষে আদর্শ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে স্বৈরতন্ত্র ও স্বেচ্ছাতন্ত্রের বিরুদ্ধে জিহাদে নির্ভীকচিত্তে এগিয়ে আসবেন, আত্মদান করবেন, শাহাদাতের অমৃত পেয়ালা পান করবেন। রাজনৈতিক ক্ষমতার মসনদে প্রতিষ্ঠা নয়, ত্যাগ ও সংগ্রামই হবে তাঁদের সাফল্য এবং কামিয়াবি, শাহাদাতই হবে তাঁদের পুরস্কার।
লেখক : সাবেক সচিব, গবেষক, গ্রন্থকার
আনুগত্য এমন জিনিস নয় যে একবার স্বীকার করলে আর তা প্রত্যাহার করা যায় না। হিকমতের পথ অবলম্বন করে ইমাম হুসাইন (রা.) হয়তো সেদিন আনুগত্য স্বীকার করতে পারতেন। ইয়াজিদের আদর্শবিচ্যুতি এত বেশি ছিল যে যেকোনো সময় যেকোনো কারণ দেখিয়ে হজরত হুসাইন (রা.) ওই আনুগত্য প্রত্যাহার করতে পারতেন। হিকমত অবলম্বন করে রাসুল (সা.) তো হিজরতও করেছিলেন। তখন হিজরত না করে কাফিরদের সঙ্গে সম্মুখ-লড়াইয়ে অবতীর্ণ হলে মুসলিম বিশ্ব আজ জাহিলিয়াতের মধ্যে হয়তো আকণ্ঠ নিমজ্জিত থাকত।
হজরত হুসাইন (রা.) এবং আহলে বাইয়াতের অন্যান্য সদস্য সেই পথ অবলম্বন করলেন না কেন? তিনি যে একক আত্মদান করলেন, তা নয়। যুদ্ধে প্রথমে তিনি অবতীর্ণ হয়ে শাহাদাত বরণ করলে পরিবারের অন্যান্য যুবকের কেউ কেউ হয়তো নিহত হতেন, কেউ কেউ বন্দি হতেন এবং অনেকেই বেঁচে যেতেন। কিন্তু তা না করে তিনি একজন একজন করে যুবককে যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠালেন। তাঁদের শাহাদাত স্বচক্ষে অবলোকন করলেন। তারপর নিজে শাহাদাতের অমৃত বারি পান করলেন। কী মাহাত্ম্য ছিল এই মহাত্যাগের? কী তাৎপর্য ছিল এই মহাশাহাদাতের?
হজরত হুসাইন (রা.)-এর সামনে কি শুধু এই প্রশ্ন ছিল যে তিনি খলিফা হবেন, না ইয়াজিদ খলিফা হবে? না, তা নয়। এ ছিল একটি নীতির প্রশ্ন। প্রশ্নটি ছিল, গায়ের জোরে ক্ষমতা দখল করা সংগত, নাকি অসংগত? বল প্রয়োগে জনগণের আনুগত্য আদায় করা সংগত, নাকি অসংগত? ইয়াজিদ যে পদ্ধতিতে খলিফার আসনে অধিষ্ঠিত ছিল, তা কি ইসলামী পদ্ধতি? এগুলো ছিল মৌলিক প্রশ্ন।
দ্বিতীয় খলিফা হজরত উমর (রা.)-এর একটি বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছিলেন, 'জোরপূর্বক যারা ক্ষমতা দখল করে এবং ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকে, তাদের এবং তাদের সমর্থকদের হত্যা করো।'
ইয়াজিদ এবং উমাইয়া বংশের রাজন্যবর্গ উপাধিতে খলিফা হলেও বস্তুত তারা ছিল রাজা-বাদশাহর অনুরূপ। উমাইয়াদের খিলাফত ছিল রাজতন্ত্র। তাদের চাল-চলন, শান-শওকত, রীতি-নীতি_সবই ছিল রাজা-বাদশাহদের অনুরূপ; এবং এর শুরু হয়েছিল ইয়াজিদের অভিষেক থেকে।
নিজে খলিফা হওয়া নয়, ইয়াজিদকে খলিফা মেনে নিয়ে হজরত হুসাইন (রা.) ইসলামের মৌলিক রাষ্ট্রনীতি সাধারণতন্ত্র পরিহার করে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রতি আনুগত্য ও সমর্থন জানাবেন, নাকি জানাবেন না_এ প্রশ্নই ছিল হজরত হুসাইন (রা.)-এর সামনে। খলিফা নির্বাচন এবং অপসারণে হজরত আবু বকর (রা.)-এর প্রতিষ্ঠিত নীতি হজরত উমর (রা.), হজরত উসমান (রা.) এবং হজরত আলী (রা.)-এর পরও প্রচলিত থাকবে, নাকি থাকবে না_এসব মৌলিক বিষয়ই ছিল ইমাম হুসাইন (রা.)-এর সামনে। তাঁর কাছে এর জবাব ছিল অত্যন্ত সুস্পষ্ট। জনগণের রায় এবং বাইয়াত ছাড়া ইসলামী খিলাফত হতে পারে না।
মৌলিক নীতির প্রশ্নে আপস হয় না। এই মহাসত্য প্রতিষ্ঠার জন্য ছিল কারবালার মহাশাহাদাত। এ বিষয়টি সম্পর্কে নিঃসন্দেহ হওয়ার জন্য আরো একটু অতীতে ফিরে যেতে হয়।
রাসুল (সা.)-এর ওফাতের পর আরব দেশে বহুসংখ্যক ভণ্ড নবীর আবির্ভাব হয়েছিল। রাসুল (সা.)-এর মহাসাফল্য অবলোকন করে কেউ কেউ মনে করল, নবুয়ত সমাজে প্রতিষ্ঠা অর্জনের রাজপথ। ফলে মুসলিম শক্তির সঙ্গে তাদের সংঘাত অনিবার্য হয়ে উঠল। যখন ইমানদাররা রাসুল (সা.)-এর বিয়োগজনিত শোকে মুহ্যমান, তখন এসব ভণ্ড নবীর দল আরবের বুক থেকে ইসলামী আদর্শ উৎখাত করার জন্য সংঘবদ্ধ হলো এবং একযোগে মদিনা অবরোধ করে বসল।
সিরীয়দের সঙ্গে বিখ্যাত মুতার যুদ্ধে রাসুল (সা.)-এর প্রিয় পাত্র হজরত জায়িদ ইবনে হারিসা (রা.) শহীদ হয়েছিলেন। রাসুল (সা.) সিরীয়দের বিরুদ্ধে তাঁর ১৭ বছর বয়সী কিশোরপুত্র হজরত উসামা (রা.)-এর নেতৃত্বে এক অভিযান পাঠালেন। মুজাহিদ বাহিনী মদিনা থেকে বেরিয়ে খবর পেল, রাসুল (সা.) অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁর শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে আরো নিশ্চিত হওয়ার জন্য উৎকণ্ঠিত মনে মুজাহিদ বাহিনী মদিনার অদূরে শিবির সংস্থাপন করল। প্রতিদিন তাঁরা রাসুল (সা.)-এর শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে খোঁজ নিতে লাগলেন।
রাসুল (সা.)-এর ওফাতের পর এই বাহিনী মদিনায় ফিরে আসে। খলিফা হজরত আবু বকর (রা.)-কে অনেকেই পরামর্শ দিলেন, এ সময় সিরিয়ায় কোনো অভিযান যেন পাঠানো না হয়। বিশেষ করে ভণ্ড নবী এবং বিদ্রোহী কর্তৃক মদিনা আক্রমণের সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু যেহেতু উসামা (রা.)-এর নেতৃত্বে বাহিনী পাঠানো ছিল রাসুল (সা.)-এর শেষ নির্দেশ, সেহেতু খলিফা আবু বকর (রা.) সবার অভিমত উপেক্ষা করে সিরিয়ায় অভিযান পাঠালেন। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কিশোর উসামা (রা.)-এর পরিবর্তে একজন সম্মানিত সাহাবিকে সেনাপতি করার প্রস্তাবও তিনি প্রত্যাখ্যান করলেন।
ভণ্ড নবীরা যখন মদিনা অবরোধ করল, তখন মদিনা ছিল অনেকটা বীরশূন্য। সাহাবিদের অনেকেই প্রমাদ গুনলেন। তাঁরা বিদ্রোহী এবং ভণ্ড নবীদের সঙ্গে আলোচনা চালালেন। দীর্ঘ আলোচনা, তাবলিগি দাওয়াত এবং মেহনতের পর তাদের আল্লাহর রাস্তায় আনতে অনেকটা সক্ষম হলেন। তারা নবুয়তের দাবি এবং লোভ-লালসা ত্যাগ করে তাওহিদের পতাকাতলে ফিরে আসতে রাজি হলো। তবে শর্ত মাত্র একটি। আর তা হলো_তারা জাকাত দান ছাড়া ইসলামের সব অনুশাসনই মেনে নেবে।
এ সম্পর্কে আলোচনার জন্য হজরত আবু বকর (রা.) মজলিসে শূরার বৈঠক আহ্বান করলেন। শূরা বা আলোচনা সভা আহ্বান করা ব্যক্তিগত মত বা মর্জি নয়, কোরআনি নির্দেশ। রাসুল (সা.) নিজেও শূরা ডেকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতেন।
মজলিসে শূরায় সবাই নিজস্ব বক্তব্য রাখলেন। একমাত্র হজরত আব্বাস (রা.) ছাড়া সবাই বিদ্রোহীদের এই নূ্যনতম দাবি মেনে নেওয়ার পক্ষে ছিলেন। হজরত উমর (রা.) চুপ করে ছিলেন। খলিফা হজরত আবু বকর (রা.) তখন হজরত উমর (রা.)-কে তাঁর অভিমত ব্যক্ত করতে বললেন। হজরত উমর (রা.) বললেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে মনে হয় বিদ্রোহীদের নূ্যনতম দাবি মেনে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
হজরত উমর (রা.)-এর বক্তব্য শুনে খলিফা হজরত আবু বকর (রা.) উঠে দাঁড়ালেন। নিঃশব্দ পদক্ষেপে তিনি হজরত উমর (রা.)-এর দিকে এগিয়ে গেলেন। তাঁর সুন্দর বদন ক্ষোভে-ক্রোধে রক্তিম হয়ে উঠেছিল। হজরত উমর (রা.)-এর গুণমুগ্ধ খলিফা পরম স্নেহাস্পদে দাড়ি চেপে ধরলেন এবং চেহারা এদিক-সেদিক ঘোরালেন। তারপর উমর (রা.)-কে, বস্তুত সবাইকে লক্ষ করে বললেন, 'উমর, আল্লাহ্র ওপর ইমান আনার আগে তোমাকে দেখেছি নির্ভীকচিত্ত, সাহসী। আর এখন দেখছি তাওহিদ তোমাকে দুর্বলচিত্ত, ভীত মেষশাবকে পরিণত করেছে। আল্লাহর কসম! বিদ্রোহীরা অর্ধহাত খেজুরদড়ির মূল্যসম অর্থ জাকাত দিতে অস্বীকার করলেও আমি তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করব।' কারণ মৌলিক নীতির প্রশ্নে কোনো আপস হতে পারে না।
সেদিন যদি হজরত আবু বকর (রা.) এই যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত না নিতেন, তাহলে ইসলামের বাস্তব সুরত যে কী দাঁড়াত, তা কল্পনা করা যায় না। জাকাতের প্রশ্নে আপসপ্রক্রিয়া একবার শুরু হলে সালাতের ব্যাপারে হয়তো আপস হতে পারত। অন্য এক খলিফা হয়তো সিয়ামের ব্যাপারে আপস করতেন। কখনো হজের ব্যাপারে, এমনকি ইমানের ব্যাপারেও আপস করতে পারতেন, যেমনটি হয়েছে নাসারাদের ক্ষেত্রে। তারা তো তাওহিদ থেকে ফিরে গিয়ে এখন ত্রিত্ববাদের অনুসারী হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কারবালার মর্মান্তিক ঘটনা বিশ্ব মুসলিম মানস এবং চেতনায় যতটা নাড়া দিয়েছে, ইতিহাসের অন্য কোনো ঘটনা ততটা করেনি। খিলাফতকে রাজতন্ত্র ও স্বৈরতন্ত্রে রূপান্তরের সন্ধিক্ষণে যখন তৎকালীন জীবিত অন্য কোনো সাহাবিও অসি ধারণ করেননি, তখন ইতিহাসের ক্রান্তিলগ্নে ইমাম হুসাইন (রা.) এক রুগ্ণ বালক জয়নাল আবেদীন ছাড়া আহলে বাইয়াতের যুবক-বৃদ্ধ-শিশুকে এক এক করে সত্য ও ন্যায়ের পথে কোরবানি দেন।
ইমাম হুসাইন (রা.)-এর যে শিশুটি ১০ মহররম কারবালায় জন্মগ্রহণ করেছিল, সেও তাঁরই কোলে তীরবিদ্ধ হয়ে শাহাদাত বরণ করে। আহলে বাইয়াতের যুবক-কিশোর-বৃদ্ধ নিজেদের রক্ত দিয়ে এক মহাসত্যের অনির্বাণ শিখা প্রজ্বলিত রেখে গেছেন। তাঁদের রক্তে স্নাত হয়ে ইসলাম পুনরায় জীবিত হয়েছে। মাওলানা মুহাম্মদ আলীর ভাষায় বলতে গেলে, 'কতলে হুসাইন আসল মে মরগেয়ি হ্যায় ইয়াজিদ; ইসলাম জিন্দা হোতা হ্যায়, হার কারবালা কি বাদ।'
কারবালার প্রান্তরে রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচন, রাষ্ট্র পরিচালনা এবং জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকা জায়েজ, নাকি নাজায়েজ_এই মৌলিক প্রশ্নের ফয়সালা হয়েছিল। হুসাইন (রা.)-এর ছেলে আলী আকবার (রা.) পিতাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, 'আমরা কি সত্য পথে কায়েম নই?' ইমাম হুসাইন (রা.) বলেছিলেন, 'নিশ্চয়ই আমরা সত্যপথে আছি।' জওয়াব শুনে আলী আকবর (রা.) চিৎকার করে বললেন, 'তাহলে মৃত্যুকে ভয় কিসের?'
কারবালা প্রান্তরে সর্বশেষ শহীদ ছিলেন হজরত হুসাইন (রা.) নিজে। আদর্শের প্রতি কতটা গভীর প্রত্যয় এবং ইয়াকিন থাকলে নিজ হাতে শুধু সঙ্গী নয়, একই শোণিত যাদের শিরায় প্রবাহিত, তাদেরও যে নিশ্চিত মৃত্যুর কোলে ঠেলে দেওয়া যায়, তা বিস্ময়কর। নিজ পুত্র আলী আকবর, আবদুল্লাহর শাহাদাত তিনি প্রত্যক্ষ করলেন। ভাই হাসান (রা.)-এর তিন ছেলে, হজরত আলী (রা.)-এর ভাই আকিলের পাঁচ ছেলে, পিতা আলী (রা.)-এর অন্য পাঁচ ছেলে, আবদুল্লাহ বিন জাফরের দুই ছেলে_এঁরা সবাই তাঁর অতি নিকটাত্মীয়, আপনজন ছিলেন। তিনি জানতেন, এই অসম যুদ্ধে তাঁরা শাহাদাত লাভ করবেন।
যাঁরা শত নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও তাঁর সঙ্গ ছাড়তে রাজি হননি, তাঁদের শহীদি দরজা পার করে দেওয়ার আগে তিনি শাহাদাত বরণ করেননি। হজরত ইব্রাহীম (আ.) আল্লাহ্র নির্দেশ পালনের জন্য নিজের এক পুত্রের গলায় ছুরি চালিয়েছিলেন। আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছা ছিল ভিন্ন। হজরত ইমাম হুসাইন (রা.) স্বেচ্ছায় স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে সংগ্রামে, জনগণের নির্বাচিত খিলাফত প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলিক নীতি প্রতিষ্ঠার জন্য কিভাবে নিজ প্রাণপ্রতিম সন্তানকে সাজিয়ে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে হয়, তার নজির রেখে গেছেন। তিনি জানতেন, ইয়াজিদের বিরুদ্ধে এই সংগ্রামে মৃত্যুবরণ করবে তাঁর প্রাণপ্রিয় পুত্র আবদুল্লাহ (রা.), ভ্রাতুষ্পুত্র কাসিম (রা.) প্রমুখ। কিন্তু কিয়ামত পর্যন্ত মুসলিম বিশ্বে জন্ম নেবে শত শত আলী আকবার-কাসেম, যাঁরা ন্যায়ের পক্ষে আদর্শ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে স্বৈরতন্ত্র ও স্বেচ্ছাতন্ত্রের বিরুদ্ধে জিহাদে নির্ভীকচিত্তে এগিয়ে আসবেন, আত্মদান করবেন, শাহাদাতের অমৃত পেয়ালা পান করবেন। রাজনৈতিক ক্ষমতার মসনদে প্রতিষ্ঠা নয়, ত্যাগ ও সংগ্রামই হবে তাঁদের সাফল্য এবং কামিয়াবি, শাহাদাতই হবে তাঁদের পুরস্কার।
লেখক : সাবেক সচিব, গবেষক, গ্রন্থকার
No comments