প্রচ্ছদ রচনা : হারিয়ে গেছে 'পাসওয়ার্ড'-আওয়ামী লীগের 'ডিজিটাল' বাংলাদেশ!
বিজয়ের ৪০তম বছরের ডিসেম্বরে দাঁড়িয়ে পেছন ফিরে তাকালে দেখা যায়, গত চার দশকে বাংলাদেশে প্রায় সব ধরনের সরকারই কায়েম হয়েছে; আধা-গণতান্ত্রিক, লেবাসি-গণতান্ত্রিক, স্বৈরতান্ত্রিক বা আধা-স্বৈরতান্ত্রিক_এ ধরনের বহুবিধ সরকার জনগণের ভাগ্য উন্নয়নের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছে। কিন্তু জনগণ তার গণতান্ত্রিক অধিকার পায়নি। এসব পার করে এবার 'ডিজিটাল' বাংলাদেশ গড়ার কর্মসূচি নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন
মহাজোট সরকার। কিন্তু পূর্বসূরিদের মতো তাদের ব্যর্থতা-অদক্ষতা-দুর্নীতি থেকে জনগণ ও দেশ মুক্তি পাইনি। আওয়ামী লীগের ডিজিটাল কর্মসূচি ও উন্নয়ন নিয়ে এবারের প্রচ্ছদ প্রতিবেদন লিখেছেন শ্রাবণ সরকার
আলটপকা ধাঁচের মন্তব্য হলেও কথা হয়তো মিথ্যে নয়, বাংলাদেশের কাঁধে জুড়ে দেওয়া আওয়ামী লীগের 'ডিজিটাল' শব্দটির শাব্দিক অর্থ ও আ@ি@@@ক মর্মার্থ বোধ করি এ বঙ্গদেশের অনেক মানুষেরই জ্ঞানসীমানার বাইরে; অচেনা পরদেশ থেকে আসা আগন্তুকের মতো তার নাম-পরিচয় ঠিকঠাক ঠাহর হয় না। ৪০ বছর বয়সী বাংলাদেশের প্রায় ১৬ কোটি জনগণের মধ্যে শিক্ষিতের নয়, সাক্ষরতার হারও এখনো পড়ে আছে ৭০-এর নিচেই! সুতরাং বিজ্ঞানালোকিত ও অশিক্ষার অন্ধকার বিলীন একবিংশ শতাব্দীর তামাম পশ্চিমা দুনিয়ার কাছে বাংলাদেশের পরিচিতির অন্যতম অনুষঙ্গ এখনো 'নিরক্ষরতা'। তাই ধারণা করি, 'ডিজিটাল' শব্দটির দ্যোতনা এবং এর মধ্যে নতুনত্বের যে হাতছানি_এ দুয়ের রসায়নে পোড়খাওয়া বাঙালি খুঁজে পেতে চেয়েছে তাদের সত্যিকারের বাংলাদেশের ঠিকানা, বুঝে, না বুঝেই! তবে এর বার্তা কিন্তু পরিষ্কার, মানুষ পরিবর্তন চেয়েছিল, পরিবর্তনের পক্ষে রায় দিয়েছে তারা। তাই নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বা অঙ্গীকার ইশতেহারের কালো অক্ষর থেকে নেতানেত্রী, সংসদ সদস্য-মন্ত্রীদের উচ্চারিত ফেনায়িত শব্দে 'পরিবর্তন'ই যথেষ্ট নয়, পরিবর্তন হতে হবে চাক্ষুষ, দৃশ্যমান; গণমানুষের জীবনে পড়তে হবে তার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব, জনগণের ভোগেই তার সার্থকতা, পরিচয়।
দিন বদলের মধ্য দিয়ে 'ডিজিটাল বাংলাদেশ' গড়ার 'লিখিত' ও 'মৌখিক' অঙ্গীকার করেছে আওয়ামী লীগ। যুগ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে থাকা আজকের 'অসহায়' মাতৃভূমিকে ২০২১ সালের মধ্যে স্বাবলম্বী, স্বনির্ভর করার দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে তারা। আওয়ামী লীগের ইশতেহার থেকে উদ্ধৃতি দিলে ভাষাটি দাঁড়ায়_'সংকটের আবর্তে নিমজ্জমান অবস্থা থেকে দেশকে পুনরুদ্ধার করে একটি উন্নত সমৃদ্ধ সুখী সুন্দর জীবন গড়ে তোলাই হচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একমাত্র ব্রত।' এই ব্রত রক্ষায় তথা দেশের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্য পূরণে একটি সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে তারা। সেই সময়সীমার মধ্যে ধাপে ধাপে নানা খাতে অগ্রগতির একটি সালওয়ারী খতিয়ানও তুলে ধরেছে দলটি। সে অনুযায়ী, ২০১০ সালের মধ্যে প্রাথমিক স্তরে নিট ভর্তির হার হবে ১০০ শতাংশ।
২০১১ সালের মধ্যে দেশের সব মানুষের জন্য নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করা হবে।
২০১১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন পাঁচ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করা হবে।
নির্বাচনপূর্ব সময়ে আওয়ামী লীগের এই 'ডিজিটাল' শব্দটি জাদুকরী মহিমায় দেশবাসীকে অভিভূত করেছিল, এ কথা বললেও হয়তো অতিশয়োক্তি হয় না; 'দিন বদলের' স্লোগানে যেমন আমজনতা একাত্মতা অনুভব করে, তেমনি নিজেদের 'দীর্ঘ দিবস-দীর্ঘ রজনী' ধরে জেঁকে বসা বঞ্চনা-প্রবঞ্চনা অবসানের দিকচিহ্ন যেন দেখতে পায় আগামী দিনের জমিনে, আওয়ামী লীগেরই হাত ধরে! জনমানুষের সেই নিমগ্ন মুগ্ধতা, তরতাজা স্বপ্ন ও বুকভরা আশা কতটা আজ পূরণের পথে, তা খতিয়ে দেখার ভার রাজনীতিক, বিশ্লেষক-বিশেষজ্ঞ, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষিত-সচেতন মহল, গণমাধ্যম এবং সর্বোপরি সে দায়িত্ব খোদ সরকারের, সরকারের কাণ্ডারীদের।
বিশেষভাবে স্মর্তব্য, শেষ বিচারে রায় দেওয়ার মালিক কিন্তু জনগণই। কথাটি সরকার যত বেশি স্মরণে রাখবে, তাতে তাদের বিচ্যুতির আশঙ্কাও তত কমে যাবে।
গোড়ার কথা...!
নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকারের জন্য দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হয় ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। এই 'দীর্ঘ' প্রতীক্ষার দৈর্ঘ্য আসলে আড়েপ্রস্থে দুই বছর_সেনাসমর্থিত অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের 'সংস্কারপ্রবণ' রাজত্বকাল। তাই অযাচিতভাবে গলায় ফুটে থাকা মাছের কাঁটা সরে যাওয়ার মতো আনন্দ ছিল মানুষের মনে_নির্বাচন ঘিরে, গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তনের আসর ঘিরে। আর এই বহুল প্রতীক্ষিত নির্বাচনে বাংলাদেশের ভূতপূর্ব শাসক বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের ভরাডুবি হয়। তাদের আসনসংখ্যা ২০০১ সালের ২১৪ থেকে ধপাস করে ৩৩টিতে নেমে আসে। তাদের অন্তত ১২৯ জন সাবেক সংসদ সদস্য, বেশ কয়েকজন সাবেক মন্ত্রী ও প্রথম সারির নেতা পরাজিত হন। বিপরীতে রীতিমতো মহাবিজয় পায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গঠিত ১৪ দলীয় জোট-মহাজোট। নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পর চিরাচরিত 'ঐতিহ্য' মেনে বিএনপি যথারীতি অভিযোগ করে, তাদের পরাজয়ের কারণ ব্যাপক কারচুপি এবং সরকার ও নির্বাচন কমিশনের পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ। তবে দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকদের মতে, নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। বিপুল মানুষের অংশগ্রহণই নির্বাচনে অনিয়মের সব আশঙ্কা দূর করে দেয়। তাই বিএনপির অভিযোগ ধোপে টেকে না।
গাণিতিক বিশ্লেষণ
সামরিক শাসক এরশাদের পতনের মধ্য দিয়ে 'তথাকথিত' গণতন্ত্রে উত্তরণের পর বাংলাদেশে গত দুই দশকে চারটি সংসদ নির্বাচন হয়েছে। এর মধ্যে ১৯৯১ সালের প্রথম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি এককভাবে পায় ১৪০টি আসন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ঝুলিতে জমা হয় ১৪৬ আসন। পরের নির্বাচনে অর্থাৎ ২০০১ সালে বিএনপি এককভাবে ১৯৩টি এবং চারদলীয় জোট সমবেতভাবে ২১২টি আসনে জয়ী হয়। আর গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এককভাবেই দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি (২৩০টি) আসনে জয়ী হয় এবং মিলিতভাবে মহাজোটের আসনসংখ্যা দাঁড়ায় ২৬২টিতে। সুতরাং এটি সুস্পষ্ট যে গত তিনটি নির্বাচনে সরকারি দল পরাজিত হয়েছে এবং বিরোধী দল ক্রমাগত বেশি আসন পেয়ে জিতেছে। অর্থাৎ মানেটা দাঁড়ায়, ভোটাররা ক্ষমতাসীনদের প্রত্যাখ্যান করেছে; আশায় বুক বেঁধে বিরোধীদের প্রতি আস্থা প্রদর্শন করে তাদের ক্ষমতায় বসিয়েছে। আওয়ামী লীগের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী হওয়ার পেছনে আওয়ামী লীগের কতিত্ব থেকে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের দুঃশাসন, মৌলবাদের উত্থান, সর্বোপরি ঘুষ দুর্নীতিই অন্যতম প্রভাবক শক্তি হিসেবে কাজ করেছে।
ক্ষমসীন আওয়ামী লীগ বিগত বিএনপি সরকারের কাছ থেকে আদৌ কোনো শিক্ষা নিয়েছে কি না তা এই মূহর্তে বোঝা যাচ্ছে না। এ জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরো দুই বছর।
অতীতের মুখেও গণতন্ত্রের মুখোশ!
১৯৯৬ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর আওয়ামী লীগ সরকারও ৯০-এর অঙ্গীকার বাস্তবায়নে তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। উপরন্তু তাদের বিরুদ্ধে দলীয়করণ, সন্ত্রাস ও দুর্নীতির ব্যাপক অভিযোগ ওঠে। তাদের শাসনামলেরই শেষদিকে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে 'পরিচিতি' লাভ করে। এসব দৃশ্যমান বাস্তবতায় কিছুমাত্র ভ্রূক্ষেপ না করে এবং অগণন অভিযোগের প্রতি দৃকপাত না করেই ২০০১ সালের নির্বাচনে অনেক চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ ও সন্ত্রাসীকে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। বলাই বাহুল্য, এর খেসারতও তাদের দিতে হয়েছে কড়ায়-গণ্ডায়, ওই নির্বাচনে তাদের চরম পরাজয় মেনে নিতে হয়।
আবার ২০০১ সালের নির্বাচনপূর্ব ও নির্বাচন-পরবর্তী ১০০ দিনের কর্মসূচি ঘোষণাকালে জোট সরকার সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে ভীষণভাবে উচ্চকণ্ঠ হয়। কিন্তু বাস্তবে জোট সরকারের শাসনামলে বাংলাদেশ দুর্নীতি, দলীয়করণ, দুর্বৃত্তায়ন ও উগ্রবাদ তথা মৌলবাদের 'স্বর্গরাজ্যে' পরিণত হয়। প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নিজ সন্তানদের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে; একটি-দুটি নয়, হাজারেবিজারে; এবং অনেকেই অভিযোগ করেন, রাষ্ট্রক্ষমতার বিকল্প বা সমান্তরাল আরেকটি কেন্দ্র সৃষ্টি করেছিল খালেদা-তনয়রা। সেই ক্ষমতাকেন্দ্র এক অর্থে 'ভার্চুয়াল' হলেও বহু অর্থে তা ভীষণ রকম সক্রিয় ছিল! এর পর মেয়াদ শেষে পক্ষপাতদুষ্ট একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও অগ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশনের অধীনে ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারিতে একটি পাতানো নির্বাচনের আয়োজন করে জোট সরকার এবং রীতিমতো তা গণ-অনাস্থা ও প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়। এ সত্ত্বেও নেতিবাচক এসব বিষয় উপেক্ষা করে ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে গডফাদার, দুর্নীতিবাজ ও যুদ্ধাপরাধী হিসেবে অভিযুক্ত ও দুর্নাম কুড়ানো ব্যক্তিদের নির্বাচনে মনোনয়ন দেয় বিএনপি। এমনকি এমন দুজন ব্যক্তিকে নির্বাচনের টিকিট দেওয়া হয়, যারা হত্যার অভিযোগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত এবং রাষ্ট্রপতির (বিশেষ) অনুকম্পায় কারামুক্ত। অথচ বিএনপির গঠনতন্ত্র অনুসারেই সমাজবিরোধী ও গণবিরোধী ব্যক্তিদের দলের সদস্যপদ দেওয়া যায় না। পক্ষান্তরে প্রতিপক্ষ মহাজোট অনেক বেশিসংখ্যক নতুন মুখকে মনোনয়ন দেয়, যাঁদের অপেক্ষাকৃত বেশি গ্রহণযোগ্যতা ও পরিচ্ছন্ন ব্যক্তি-ইমেজ জনগণের সামনে প্রতিভাত হয়।
গত নির্বাচনে নেতিবাচক প্রচারণাও বিএনপির পরাজয়ের আরেকটি কারণ বলেও অনেকে মনে করেন। 'দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও'_এই স্লোগানে অনেকের মনেই প্রশ্ন ওঠে, দেশকে কিসের হাত থেকে বাঁচাতে হবে? তবে কি দেশের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে? স্বাধীনতা কি খাদের কিনারে? সুতরাং তাদের স্লোগানের মাধ্যমে প্রতিপক্ষের দেশপ্রেম সম্পর্কে সন্দেহের বায়বীয় আবেগ সৃষ্টি করার অপচেষ্টা বলেই অনেকে মনে করেন তখন। অন্যদিকে মহাজোট তাদের 'সুলিখিত' ইশতেহারে ভোটারদের দিন বদলের স্বপ্ন দেখায়, যা সিংহভাগ মানুষের মনে আশা-ভরসা সঞ্চারে সক্ষম হয়, অন্তত সাময়িকভাবে হলেও। তাই বিশেষভাবে বললে ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচন ছিল চারদলীয় জোট সরকারের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে গণমানুষের অনাস্থা প্রকাশ, যা গণভোটের সমতুল্য_অনেকটা তাদের বিরুদ্ধে 'না' ভোট দেওয়ার শামিল। অবশ্য সংসদ নির্বাচনের আগেই চারদলীয় জোটের পরাজয় ও মহাজোটের বিজয় সম্পর্কে অনেকটা নিশ্চিত হওয়া গিয়েছিল। বিশেষ করে ২০০৮-এর আগস্টে অনুষ্ঠিত চারটি সিটি ও ৯টি পৌরসভা নির্বাচনের ফলাফলেই অনেকটা পরিষ্কার হয়ে যায় সংসদ নির্বাচনের ভবিষ্যৎ। সুতরাং 'অ্যানালগ' অতীত থেকে ভবিষ্যতের 'ডিজিটাল' যুগে বাংলাদেশের প্রবেশ, বলা যায়, অনিবার্য ছিল!
ইশতেহারের ছাপা অক্ষরমালাই হয়ে থাকে!
নির্বাচনের আগে ভোটের পাল্লা ভারী করার জন্য রাজনৈতিক দল যেসব ওয়াদা দিয়ে থাকে, তা ক্ষমতায় যাওয়ার পরের দিন থেকেই ভুলতে বসে। সেই ওয়াদা, রাজনৈতিক অঙ্গীকার, ইশতেহারের ছাপা অক্ষরমালা। 'অ্যানালগ' বা 'ডিজিটাল' যে কালই হোক, বাঙালির আকাল ঘোচে না; প্রাপ্তিযোগ অপরিবর্তিত_শনিতে যা, বৃহস্পতিতেও তাই! বারংবার একই কাহিনী মঞ্চায়িত হয় বাংলার মঞ্চে, বাংলাদেশের বুকের ওপর; কেবল কলাকুশলী ভিন্ন, পাত্রপাত্রী আলাদা। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারও সেই একই কাহিনী মঞ্চায়িত করে চলেছে। যদিও তাদের প্রতিশ্রুতি ছিল 'দিন বদলের সনদ' বাস্তবায়ন, 'ডিজিটাল বাংলাদেশ' গঠন। এর পরও নাকের বদলে নরুন পাওয়ার সেই পুরনো 'যেইস্যা কা তেইস্যা' কাহিনীর মঞ্চায়নই হয়ে চলেছে।
মানুষ একটি প্রকৃত গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থা চায়। বাংলার ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, পঁচাত্তরের পটপরিবর্তনের ফলে ৫০-৬০ দশকের গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও সংগ্রাম এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের বিনিময়ে অর্জিত গণতান্ত্রিক ধারা অনেকাংশে ব্যাহত হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। কালো চশমার সামরিক 'উর্দি-আশ্রিত' মেজর জিয়া তথাকথিত 'বহুদলীয়' গণতন্ত্র পুনরায় চালু করেন বটে, কিন্তু রাজনৈতিক ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার পদ্ধতিও তাঁরই আবিষ্কার। এ দেশে ক্ষমতা দখল করা, দখলদারির রাজনীতি ও অর্থের খেলা, ক্ষমতার অপ ও কু-প্রয়োগ এবং ধর্মান্ধ প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিকে পুনর্বাসনের কাজ শুরু হয় জিয়ার হাতেই। ফলে ৭০-এর দশকের শেষভাগ থেকে এ দেশে রাজনীতি কার্যত গণবিছিন্ন ও গণবিরোধী হয়ে ওঠে; তাতে ভর করে প্রতিক্রিয়াশীলতা ও অনৈতিকতা। এই অপরাজনীতির চাপে নাস্তানাবুদ হয়েছে, নির্যাতিত হয়েছে সাধারণ জনগণ। এই ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতির সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধে আমলাতন্ত্র, জোট বাঁধে দেশি ও বিদেশি বণিকচক্র। সব মিলে দেশের ক্ষমতাকে ঘিরে কালো টাকা, পেশিশক্তির যোগ ঘটে। ক্ষমতা হাতিয়ে নিয়ে জনগণকে শোষণ-নির্যাতন করার হাতিয়ার হয়ে ওঠে 'রাজনীতি'। বিশেষভাবে চারদলীয় জোট আমলে ক্ষমতাসীনদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে জঙ্গি ও ধর্মান্ধ শক্তির উত্থান ঘটায় দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের ষোলকলা পূর্ণ হয়। ভুক্তভোগী মানুষ সত্যিই রাজনীতিবিমুখ হয়ে পড়ে। ভালো ছাত্র ও মেধাবী তরুণরা কার্যত রাজনীতি বর্জন করে। দেশপ্রেম ও সংস্কৃতির অনটন জাতীয় চেতনা ও ঐক্যকে করে প্রশ্নবিদ্ধ। এই ক্ষমতালিপ্সার রাজনীতি, ক্ষমতাধর আমলাতন্ত্র, মদদপ্রাপ্ত বেনেদের দাপটে আমজনতা পরাধীন হয়ে পড়ে। সন্ত্রাসকবলিত ছাত্ররাজনীতি, নেশা-ভাঙ আর দখলদারিত্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসগুলোকে গ্রাস করে। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে বোমা হামলা, বাউলদের মূর্তি অপসারণ ইত্যাদি সাম্প্রদায়িকতার থাবার নিচে বাঙালির হাজার বছরের মানবতাবাদী সমন্বয়ধর্মী সংস্কৃতির ধারা, সৃজনশীলতা আর জীবনবোধ মুমূর্ষু হয়ে পড়ে। ফলে সমাজ হয়ে পড়ে প্রাণহীন, নিস্পন্দ।
কাজেই সেই 'অসুস্থ' সময়ে একরাশ স্বপ্ন দেখিয়ে মানুষের 'মন কেড়ে' নেওয়ার মাধ্যমে গত নির্বাচনের জয়টা মহাজোটের বা আওয়ামী লীগের নয়, গণমানুষের। এ কথাটি কি দেশের বর্তমান রাজরাজন্যরা মনে রেখেছেন? মানুষ তাঁদের ওপর আস্থা রেখেছিল বস্তুত সমাজজীবনে গতিশীলতা ফিরে পাওয়ার জন্য। মানুষকে তো শেষ পর্যন্ত মানুষই হতে হয়। ধনী-গরিব, ছোট-বড়, পদাধিকারী-পদহীন, ক্ষমতাবান-ক্ষমতাহীন_যাই হোক, শেষতক মানুষ হওয়ার সাধনাই তো জীবন! আমাদের সমাজে সেই জায়গাটা অনেকটাই নষ্ট হয়ে গেছে। তাই আজ বড় কাজ হচ্ছে রাজনীতি ও সমাজের শুদ্ধতা আনয়ন। এ জন্য প্রয়োজন সংবেদনা, সামাজিক দায়িত্ববোধ, দেশপ্রেম ও ঐক্য এবং এমন সৃজনশীল রাজনীতি দরকার, যা সমাজের সব মানুষকে শাসনব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করবে, অংশীদারি দেবে।
তাই কেবল সরকারের পারিষদদের বদল নয়, বদলাতে হবে ব্যবস্থা; তবেই দিন বদলাবে, দেশ দুর্নীতিমুক্ত হবে, রাজনীতি মানুষের কল্যাণে আসবে। বিভিন্ন দপ্তরে-কার্যালয়ে, সংস্থায়-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে 'অ-নিরবচ্ছিন্ন' বিদ্যুৎব্যবস্থায় গোটাকতক কম্পিউটার বসিয়ে 'কাগজ-কলমে' প্রযুক্তির প্রসার ইত্যাদিতে আর যা-ই হোক, সত্যিকারের দেশ গঠিত হবে না। তাকে ডিজিটাল বলতে পারেন আপনারা! শেখ হাসিনা যদি মনে করেন, গত সরকার 'স্বেচ্ছায়' ভুল করেছিল, তিনিও একই পথে পা বাড়াবেন, তবে তিনি 'সত্যি' ভুল করবেন। আর এ ভুল শোধরানোর আর সময় পাওয়া যাবে না।
ডিজিটাল সরকারের যাত্রা...
স্বীকার করতেই হবে, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে 'দিন বদলের' সরকার গঠনের শুরুতেই 'চমক লাগানো' মন্ত্রিপরিষদ গঠন করেন শেখ হাসিনা। আর সেই মন্ত্রিপরিষদের যোগ্যতা প্রমাণে ছয় মাসের সময়সীমাও বেঁধে দেন তিনি। সেই ছয় মাস গত হয়ে কত ছয় মাস কালের গর্ভে হারিয়ে গেল, মন্ত্রীদের যোগ্যতা পরিমাপে প্রধানমন্ত্রীর সূচক বা মাপকাঠির ধরন-ধারণের সাক্ষাৎ আজও দেশবাসী পায়নি।
মানুষ মনে করে, মন্ত্রিত্বের জন্য অভিজ্ঞতা যতটা না দরকার, তার চেয়ে বেশি দরকার জনগণের প্রয়োজন ও আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতি সংবেদনশীলতা, মানুষের প্রতি ভালোবাসা ও মমতাবোধ; পাশাপাশি নীতিগতভাবে অটুট একটি অবস্থান, বুদ্ধিমত্তা ও সাহসিকতা। শেখ হাসিনার 'দিন বদলের' মন্ত্রিসভা গঠনের পর অনেকেই তখন বলাবলি করেন, বোধ করি প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি এভাবেই দেখেছেন। এসব গুণ থাকলে (প্রথমবারের মতো ক্ষমতায় বসা) মন্ত্রীরা তাঁদের প্রজ্ঞা ও মেধা দিয়ে সময়মতো দরকারি ও কাজের কাজটি করতে পারবেন। অভিজ্ঞতা না থাকায় তাঁরা কিছু ভুল হয়তো করতে পারেন, তবে সদিচ্ছা থাকলে তা থেকে উত্তরণও কঠিন হবে না নিশ্চয়ই। এ আশাবাদের ভেতর দিয়ে শুরু হয় 'নব্য' গণতান্ত্রিক ডিজিটাল সরকারের যাত্রা।
আর 'নব্য' এই অর্থে যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের দীর্ঘতম জরুরি অবস্থা এবং এর আগে-পরের সময় মিলে টানা দুই বছরের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শাসনব্যবস্থা পেরিয়ে নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠিত হয়।
চ্যালেঞ্জ ও অগ্রাধিকার!
শুরুতেই সরকারের সামনে নানা চ্যালেঞ্জ। জনগণের অর্থনৈতিক ভাগ্য ফেরানো, সন্ত্রাস-দুর্নীতির অভিশাপ থেকে মুক্তি, যুদ্ধাপরাধীর বিচার, দেশকে ধর্র্মীয় মৌলবাদের হাত থেকে রক্ষা, শিক্ষাঙ্গণে সুস্থ পরিবেশ প্রতিষ্ঠা ও ছাত্ররাজনীতির নামে মাস্তানির রাজনীতি বন্ধ করা, সিন্ডিকেট ভাঙা, নারী নির্যাতন, শিশুশ্রম রোধ_এ ধরনের হাজারটি সমস্যার প্রতিটিই কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দেয় শেখ হাসিনার ডিজিটাল সরকারের সামনে।
আওয়ামী লীগের ইশতেহারে সর্বাধিক গুরুত্ব পাওয়া অগ্রাধিকারের পাঁচটি বিষয় হলো_
১. দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি প্রতিরোধ এবং বিশ্বমন্দা মোকাবিলায় সার্বিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা; ২. দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা; ৩. বিদ্যুৎ ও জ্বালানি; ৪. দারিদ্র্য ঘোচাও বৈষম্য রোখো এবং ৫. সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা।
বলা বাহুল্য, এই পাঁচটি বিষয়ের মধ্যে তিনটিই সরাসরি অর্থনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কিছুটা কমতেও শুরু করেছিল। তবে সেই মূল্যহ্রাস মূলত বিশ্ববাজারে তেল-চালসহ নানা পণ্যের দাম কমার জন্য ঘটেছিল। তবে ঘটনা যা-ই হোক, একটি বিষয় কিন্তু সুস্পষ্ট ছিল এবং আছে, বর্তমান সরকার তাদের শাসনামলের পাঁচ বছর দ্রব্যমূল্য সহনীয় রাখতে অঙ্গীকারবদ্ধ।
অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারের 'ব্যর্থতা'
সরকার গঠনের পর পরই বিশ্ব ও বাংলাদেশের বাস্তবতায় ৬ শতাংশের ওপর জিডিপির প্রবৃদ্ধি ধরে রেখে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ২০১৩ সালের মধ্যে ৮ শতাংশে নিয়ে যেতে শুরু থেকেই সুপরিকল্পিতভাবে পদক্ষেপ নেওয়ার দরকার ছিল আওয়ামী লীগের। তাই সার্বিক অর্থনীতির গতিশীলতা বৃদ্ধির জন্য সরকারের অনেক আশু পদক্ষেপ নেওয়ার কথা তখন বলেন বিশেষজ্ঞরা। যেমন যথাসময়ে কম দামে কৃষি উপকরণ সরবরাহ নিশ্চিত করা, খাদ্য মজুদ ও সরবরাহ, অবকাঠামোর উন্নয়ন, রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে শিল্প খাতে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করা ইত্যাদি। কৃষি খাতে যথাসময়ে সার সরবরাহ না হওয়া এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানির অভাবে সেচকাজে বিঘ্ন হওয়া এবং এর ফলে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হওয়া সাংবাৎসরিক ঘটনা। তাই কৃষি উপকরণের দাম কমার সুফল কৃষকের কাছে পেঁৗছে দিতে হবে। আশার কথা, সরকার সে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে টিএসপি, এমওপি ও ডিএপি সারের দাম অর্ধেকে নামিয়েও আনে তখন। এর পর পরই ডিজেলের দামও লিটারপ্রতি দুই টাকা কমিয়ে দেওয়া হয়।
কিন্তু আজ এ চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। অর্থনীতির জ্ঞানশূন্য একজন মানুষও জানেন, সার্বিক অর্থনীতির অবস্থা এখন কেমন! একদিকে ভর্তুকি কমাতে গ্যাস-বিদ্যুৎ-জ্বালানির দাম দফায় দফায় বাড়ানো হচ্ছে, অন্যদিকে বলাই বাহুল্য, এর ফলে চাপ গিয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায়।
অর্থনীতির নাজুক অবস্থা বোঝাতে একটি তথ্যই বোধ হয় যথেষ্ট যে গত এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি ছিল গত সেপ্টেম্বরে, সরকারের আড়াই বছরের মাথায়। এখনো এই মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কের ঘরে। আইএমএফসহ বিভিন্ন সংস্থা ও অর্থনীতিবিদদের ধারণা, মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্ক ছাড়িয়ে গেলে তা অর্থনীতির জন্য বিপর্যয় বয়ে আনতে পারে। পাশাপাশি রপ্তানি কমেছে, কমেছে প্রবাসী আয়ও। ব্যাংক থেকে সরকারের নেওয়া ঋণ আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনে সরকারের তৃপ্তির ঢেঁকুর ইতিমধ্যে টক হয়ে গেছে। কিন্তু সরকার এসব সংকট-সমস্যার কথা স্বীকার করছে না।
শেয়ারবাজার নিয়ে যা হয়েছে, হচ্ছে, তার কোনো 'জবাব' নেই। কত সংখ্যক ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর ঘটিবাটি বিক্রির পথে, এর একটা আন্দাজ পাওয়া যায় বটে; তবে বাস্তবতা বোধ হয় আরো কঠিন। এই সরকারের আগের মেয়াদে অর্থাৎ তাদের 'অ্যানালগ' আমলে শেয়ারবাজার নিয়ে ঘটা কারসাজি 'ডিজিটাল' আমলেও পুনর্মঞ্চায়িত।
বিদ্যুৎ সমস্যা কিছুটা সহনশীলতার পর্যায়ে এলেও গ্যাস সংকট এখনো প্রকট। এ খাতসহ অন্যান্য খাতেও বেসরকারি বিনিয়োগ প্রায় নেই বললেই চলে। বিদেশি সাহায্য-সহায়তা পরিস্থিতি এমনিতেই নাজুক। সরকারের 'সফলতম স্বপ্নদ্রষ্টা' মন্ত্রীমহোদয় জনাব সৈয়দ আবুল হোসেনের বিশেষভাবে বিশেষায়িত 'কৃতিত্বের' স্বাক্ষরবহনকারী পদ্মা সেতু বিতর্ক পরিস্থিতি আরো প্রকট করে তুলেছে। ইতিমধ্যে স্বপ্নের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ, ঢাকায় অ্যালিভেটেড এঙ্প্রেসওয়ে, মেট্রো রেলসহ অনেক কিছুই 'মগজে-মননে' সম্পন্ন করেছেন জনাব আবুল। এখন দ্বিতীয় পদ্মা সেতুর পরিকল্পনার কাজে ব্যস্ত তিনি! শিগগিরই সে ঘোষণা শোনার প্রতীক্ষায় প্রহর গুনছে গোটা জাতি!
আইএমএফের হিসাবে, ২০০৯-১০ অর্থবছরে সরকারের ভর্তুকি খাতে ব্যয় ছিল ৯ হাজার কোটি টাকা। এটি সরকারের মোট ব্যয়ের ৯ শতাংশ। পরের বছর অর্থাৎ ২০১০-১১ অর্থবছরে ভর্তুকি বেড়ে দাঁড়ায় সাড়ে ১৭ হাজার কোটি টাকা, যা সরকারি ব্যয়ের ১৪ শতাংশ। আর চলতি অর্থবছরে এ ব্যয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩২ হাজার কোটি টাকা, যা মোট ব্যয়ের ১৯ শতাংশ।
সরকারি হিসাবে এবার ভর্তুকি দিতে হবে প্রায় ৪৬ হাজার কোটি টাকা। অথচ পরিকল্পনা ছিল ২০ হাজার কোটি টাকার। স্বাভাবিকভাবেই ভর্তুকির এই চাপ কমাতে পারছে না সরকার। মূলত বিদ্যুৎ, সার, জ্বালানি তেল ও খাদ্য কিনতেই এই অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। ফলে জালানি তেলের দাম বাড়িয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে সরকার। সারের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবও নাকি উঠেছে।
সরকারের অভূতপূর্ব 'ডিজিটালি সাফল্য'!
বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার জেরে মহাজোট সরকারের পক্ষেই সম্ভব অসম্ভবকে সম্ভব করা। এমনকি শাসনতন্ত্রও পরিবর্তন করা তাদের পক্ষে সম্ভব। ইতিমধ্যে সংবিধান সংশোধন করেছে তারা। কিন্তু ৭২-এর মূল চেতনায় ফিরে যাওয়ার নামে যা করা হয়েছে, তা বিশেষজ্ঞদেরই পুরোপুরি বোধগম্য নয়! তবে তাদের এ 'মহৎ' উদ্যোগ থেকে ভোটের রাজনীতির হিসাবটা পরিষ্কার বোঝা যায়! ধর্মনিরপেক্ষ দেশের রাষ্ট্রধর্ম নির্দিষ্ট করে দেওয়ার মতো এমন 'ডিজিটালি প্রহসন' ডিজিটাল সরকারের পক্ষেই সম্ভব! বিশ্বের কোথাও এমন দ্বিতীয় কোনো নজির আছে বলে জানা যায় না।
এ যুগেই মানুষের পরিচয় নির্ধারণে প্রণয়ন করা হয়েছে রাষ্ট্রীয় বিধি! এত দিন তোমরা নিজেদের কোন পরিচয় দিতে? আদিবাসী? না আজ থেকে তা 'বন্ধ'। এখন থেকে তোমরা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী! অথচ আওয়ামী লীগের ইশতেহারের ১৮.২ অনুচ্ছেদের ঘোষণা_'পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। অনগ্রসর অঞ্চলসমূহের উন্নয়নে বর্ধিত উদ্যোগ, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী, আদিবাসী ও অন্যান্য সম্প্র্রদায়ের অধিকারের স্বীকৃতি এবং তাদের ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও জীবনধারার স্বাতন্ত্র্য সংরক্ষণ ও তাদের সুষম উন্নয়নের জন্য অগ্রাধিকারভিত্তিক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হবে।'
নারীর ক্ষমতায়ন প্রশ্নেও আওয়ামী লীগের ইশতেহার অকপট, স্পষ্ট_১২.১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, "নারীর ক্ষমতায়ন, সম-অধিকার ও সুযোগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক প্রণীত 'নারী উন্নয়ন নীতি' পুনর্বহাল করা হবে।" অথচ বাস্তবতা ভিন্ন।
এ ধরনের অসংখ্য বিষয়ে আওয়ামী লীগের ইশতেহার বনাম আওয়ামী লীগ সরকারের বৈপরীত্য বিদ্যমান, চলমান। দ্বিচারিতার অসংখ্য নজির স্থাপন করে চলেছে সরকার। অথচ প্রায় সাত হাজার শব্দের নির্বাচনী ইশতেহারটি কতই না সুখপাঠ্য! দুর্নীতি, দলীয়করণ, অভাব, অশিক্ষা ইত্যাদি সব যেন ভোজবাজির মতো মিলিয়ে যাবে আওয়ামী লীগের জাদুদণ্ডের ছোঁয়ায়!
এ কথা স্বীকার্য যে শাসনতন্ত্রের পরিবর্তন বা সামাজিক-অর্থনীতির পরিবর্তন বাংলাদেশের মতো দারিদ্র্যপীড়িত দেশে দুর্নীতি বিলোপ করা, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা, দ্রব্যমূল্য কমানোসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য সুবিধা ইত্যাদি অবশ্যই কঠিন কাজ। বর্তমান সরকারকে আরেকটি সত্যও মনে রাখতে হবে, মানুষ রাজনৈতিক সরকার চায় সত্যি, কিন্তু মনে বাসনা থাকে সুশাসনের, নিরাপত্তার ও স্বস্তির। গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছরে দ্রব্যমূল্য ইত্যাদি অসহনীয় থাকলেও, সরকারের ওপর মানুষ খুব বিরক্ত ছিল, এ কথা বলা যাবে না। কারণ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, দুর্নীতি দমনে বিশেষ সাফল্য ইত্যাদি কারণে ওই দীর্ঘমেয়াদি তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে নীরব সমর্থন দিয়েছিল মানুষ। তাই এ সব কিছুর বিবেচনায়, সত্যি কথা বলতে, বর্তমান সরকারের ব্যর্থ হওয়া তথা আগের সরকারগুলোর পথে হাঁটার অর্থ হবে ভয়ংকর আত্মঘাতী!
তবে সরকার কিছু ক্ষেত্রে বাধারও সম্মুখীন হয়েছে। সরকার গঠনের মাস দেড়েকের মাথায় ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় সংঘটিত বিডিআর বিদ্রোহ (বর্তমানে বিজিবি) একটা বড় ধাক্কাই বলা হয়। তবে নারকীয় ওই হত্যাযজ্ঞ মোটামুটি ভালোভাবেই মোকাবিলা করতে সক্ষম হয় সরকার। বর্তমানে এর বিচারকাজ চলছে।
'ফাঁপা' চমক!
তথ্য অধিকারের স্বীকৃতি, মানবাধিকার কমিশন গঠন ইত্যাদি সরকারের কয়েকটি পদক্ষেপ ইতিবাচক সাক্ষ্য বহন করে সত্যি; কিন্তু ক্রমেই প্রমাণিত হতে থাকে, এগুলোর অস্তিত্ব আসলে আইনের সংখ্যা বৃদ্ধিই মাত্র! যেমন সংশোধনী ছাড়া আরটিআইয়ের সুফল মিলবে না। মানবাধিকার কমিশনের শক্তি কেবল 'যাত্রার বিবেকের' মতো সত্যি কথাটি উচ্চারণ করার মধ্যে সীমাবদ্ধ! দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কার্যকারিতার ধরন তুলে ধরতে সংস্থাটির প্রধান নিজেই বলেছেন, এটি নখদন্তহীন বাঘ! এর বাইরে কিছু 'ক্ষত' মুছে ফেলার চেষ্টাও হয়তো মানুষকে আশাবাদী করে_যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ ইত্যাদির বিচার। কিন্তু এর দীর্ঘসূত্রতা, ট্রাইব্যুনালের লোকবল সংকট, সীমিত আর্থিক ক্ষমতা ইত্যাদি স্বস্তি দেয় না। উচ্চ আদালতের রায়ের পর জাতীয় ইতিহাসে কালো অধ্যায়ের কফিনে শেষ পেরেকটি পুঁতে সবার মতামতের ভিত্তিতে সংবিধান সংশোধনও আজ 'দলীয়' সংশোধনীর আরেক নজির হয়ে উঠেছে।
'নিরেট' আওয়ামী কাণ্ড!
চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দলবাজি ইত্যাদি 'বাজি' আগের মতোই সচল, কার্যকর। বরং ছাত্ররাজনীতির নামে ছাত্রলীগের হলদখল, টেন্ডারবাজি, অন্তর্দ্বন্দ্বের ফলে রক্তারক্তি, বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা-মামলা বোধ করি আগের সব রেকর্ড ভেঙেছে। সিন্ডিকেট নামে 'অমিত ক্ষমতাধর' কী এক চক্রের গোষ্ঠীনাশের কথা মানুষ শুনেছে নির্বাচনের আগে। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের কণ্ঠস্বর আর শোনা যায় না এখন। দলীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে থাকা খুন, ডাকাতি, ধর্ষণ, হেন কোনো অপরাধের মামলা নেই, যা সরকার রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রত্যাহার করেনি, করছে না! অর্থাৎ ডিজিটালেও 'অ্যানালগের ভূত' দূর হয়নি।
'ডিজিটাল' বাংলাদেশ ও বিশ্ব প্রেক্ষাপট
তৃতীয় বিশ্বের বার্তাও এখন পলকে পেঁৗছে যায় উন্নত বিশ্বের অন্দরে, এমনই 'সমাজতান্ত্রিকভাবে' বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটেছে বিশ্বে! 'পৃথিবী এখন হাতের মুঠোয়'_এমন কথাও পুরনো হতে চলল বলে! তবু বিজ্ঞানের এমন চরম উৎকর্ষ আর পরম সমৃদ্ধির উজ্জ্বলতর সমাহারেও অন্ধকারে নিমজ্জিত বিশ্বের অগণন মানুষ। বিজ্ঞানসৃষ্ট বিদ্যুতের আলোহীন অন্ধকারে শুধু নয়, বেঁচে থাকার নূ্যনতম মৌলিক অধিকার থেকে আজন্ম বঞ্চনার ঝুপসি-অন্ধকারে খাবি খাচ্ছে তাদের জীবন। তাদের মগজের আগাপাছতলায় চাঁদে বাড়ি নয়, চুলায় হাঁড়ি চড়ানোর 'নির্মোহ' দুশ্চিন্তা ঘুরপাক খায়! দুবেলা দুমুঠো খাবারের জন্য জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি 'অমানবিক' হাড়ভাঙা লড়াই-সংগ্রামই যেন তাদের জীবনের প্রথম ও শেষ কথা! পরিসংখ্যান বলছে, এই কাতারে প্রিয় মাতৃভূমির বাসিন্দাদের সংখ্যাও খুব কম নয়। কর্মক্লান্ত দিনশেষে রাতে তারা খালি পেটে ঘুমাতে যায়, তাদের পরিশ্রান্ত দেহের 'অনুর্বর' মাথায় তখন খেলা করে পরের দিনের খাদ্য জোগানোর চিন্তা।
খাঁটি কথাটি বলে গেছেন কবি সুকান্ত, পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি! পেটে খিদে থাকলে লাল-সবুজ নির্বিশেষে সব রংই চোখে সাদা-কালো ঠেকে। এর পর সত্যিই বলা বাহুল্য, মৌলিক অধিকারের অন্যান্য বিষয়_শিক্ষা, বস্ত্র, চিকিৎসা, বাসস্থান ইত্যাদি আজও কতটা 'অস্পৃশ্য' তাদের জন্য! যেন সোনার হরিণেরই সমনাম মৌলিক অধিকার এবং বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশের অবস্থান এই 'কিছুই নেই' মার্কা গরিবগুর্বো তৃতীয় বিশ্বের অভ্যন্তরে। তো স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে, 'ডিজিটাল' বাংলাদেশ হবে কিভাবে? মানুষকে বাদ দিয়ে শুধু যন্ত্র দিয়ে কি দেশকে ডিজিটাল করা যাবে? নাকি যন্ত্র চালানোর দক্ষতাহীন মানুষ দিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশের বাস্তবায়ন সম্ভব? এই যন্ত্র দিয়ে ডিজিটাল দেশ গড়া মানে প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার। অ্যানালগও প্রযুক্তির একটি টাইপ, তবে ডিজিটাল তার থেকেও আধুনিক, বেশিমাত্রায় মানববান্ধব।
তাই ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন আঁকা চোখের দৃষ্টিশক্তি আসলে শিক্ষা! জনে জনে মানুষ শিক্ষিত না হলে বর্তমান সরকারের এই ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নপরিকল্পনা (রূপকল্প) বাস্তবের জমিন পাবে না, এ কথা বোধ করি হলফ করেই বলা যায়। আর 'কান টানলে মাথা আসে'র মতো ভাত, কাপড়, ওষুধ, বসতি, কাজের ব্যবস্থা না করতে পারার এতটুকুও এদিক-সেদিক কোনো পথ নেই! তাই ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকল্প তত দিন দানা বাঁধবে না, যত দিন না মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো যথাযথভাবে পূরণ হবে!
এই পরিসরে নেপোলিয়ান বোনাপার্টের কথা পাড়া যেতে পারে। শিক্ষা সম্পর্কে তাঁর ভাষাটি এমন, 'আমাকে একটি শিক্ষিত মা উপহার দাও, আমি তোমাদের একটি শিক্ষিত জাতি উপহার দেব।' হক কথা। কিন্তু শিক্ষাসহ অন্যান্য সুবিধাবঞ্চিত এবং অপুষ্টির শিকার হাড় জিরজিরে বাংলাদেশের কিশোরী-মায়েদের কোলজুড়ে যে 'রুগ্ণ' সোনার সন্তানরা আলো ছড়িয়ে আসছে রোজ, তারা কি নূ্যনতম অক্ষরজ্ঞানটুকুও পাচ্ছে? ঢালাওভাবে এ কথা হয়তো সত্যি না, কিন্তু ব্যতিক্রম তো আবার উদাহরণও হতে পারে না! মোদ্দা কথা, শিক্ষিত জাতি তথা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পূর্বশর্ত শিক্ষিত মা-বাবা, শিক্ষিত ভাইবোন, শিক্ষিত আত্মীয়স্বজন, শিক্ষিত প্রতিবেশী_এক কথায়, শিক্ষিত নাগরিক। শিক্ষার আলো না ছড়ালে 'অ্যানালগ' (অনুন্নয়ন)-এর অন্ধকার দূর হয়ে 'ডিজিটাল' (উন্নয়ন) উদ্ভাসিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই!
কুসংস্কারও বড় সমস্যা
মানুষের গাদাগুচ্ছের বঞ্চনার পাশে সমাজের অলিগলিতে এখনো বেঢপ সাইজের নানা কুসংস্কার খাড়া হয়ে আছে; জাতিভেদ, বর্ণবিদ্বেষ, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, শ্রেণীগত ফারাক এবং বিশেষভাবে লিঙ্গবৈষম্য। এসব কুপ্রথা সমাজ-সংসারের কোথাও কোথাও প্রকটভাবেই বিদ্যমান। তাই উন্নত বিশ্বের অবস্থান আমলে নিলে গর্ভাঙ্কটা দাঁড়ায়, বিশ্বের একদিকে কিছু মানুষের আকাশসম সমৃদ্ধির সমাহার এবং অন্যদিকে গরিব দুনিয়ার (বাংলাদেশের মতো দেশের) অনেক মানুষের চূড়ান্ত বঞ্চনার হাহাকার_এমনই বৈপরীত্যময় চেহারা-চরিত্রের অধিকারী আজকের দুনিয়া। সব মিলেঝিলে তার সার্বিক অবস্থা টালমাটাল, অস্থির। তবে এর ভোগান্তির ক্ষেত্র কেবল তৃতীয় ভুবন। অশিক্ষা, দারিদ্র্য, বেকারত্ব...তালিকা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়, প্রাপ্তির দেখা নেই! তৃতীয় ভুবনের তৃতীয় শ্রেণীর বাসিন্দাদের জীবনে শিক্ষা, চিকিৎসা, আইনি সহায়তা ইত্যাদি নাগরিক সুযোগ-সুবিধা এখনো 'কাগুজে' ব্যাপারস্যাপার। এসব গরিবস্য-গরিব মানুষের খাদ্য জোগানোর চিন্তায় কবে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় যোগ হবে, বা বলা ভালো, রাষ্ট্র তার বন্দোবস্ত করতে পারবে, অনুমান করা কঠিন।
চলি্লশে আবার না চালশে লাগে!
তবে বাংলাদেশ যে লক্ষ্যভ্রষ্ট নয়, জোর কদমে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে_অন্ধকারের ভেতর এটুকু আলোর দিশা যে জিইয়ে রাখতেই হবে! আর তা পারে সুশাসন, গণতান্ত্রিক সরকার। ভুল হোক, ভ্রান্তি ঘটুক, তবুও সেই পিচ্ছিলতায় পাল্টি খেতে খেতে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো দিনকে দিন শক্তপোক্ত, উন্নত ও সমৃদ্ধ হবে, মানুষের এই আশা। তারা চায়, বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের পরিচিতির প্রধানতম সূচক_দুর্বল গণতন্ত্র, নিরক্ষরতা, দারিদ্র্য, সামাজিক অসাম্য ইত্যাদি দিনকে দিন কমজোরি হোক। তারপর একদিন ঠিকই নির্মূল হবে।
ডিজিটাল বাংলাদেশের অন্তত মুখরক্ষার জন্য হলেও শিক্ষা, জনশক্তি, কর্মসংস্থান, আইনের শাসন, গণতন্ত্র ইত্যাদি শব্দের বাস্তব ব্যবহারের পরিধি বাড়াতে হবে। একটি রাষ্ট্রের সমৃদ্ধির হাতিয়ার শিক্ষিত ও দক্ষ জনশক্তি। সেই হাতিয়ারসম কর্মবীর মানুষ গড়ে তোলার জন্য সর্বাগ্রে দরকার যুগোপযোগী, বিজ্ঞানভিত্তিক, সংস্কৃতিনির্ভর ও বোধসর্বস্ব শিক্ষাপদ্ধতি ও তার বাস্তবায়ন। বলাই বাহুল্য, আর এর প্রাণভোমরা একটি 'আদর্শ' শিক্ষানীতি, যার জন্য আমাদের অপেক্ষার বয়স আজ ৪০ পেরোতে যাচ্ছে! বিজয়ের এই ৪০তম বছরের বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে দাঁড়িয়েও তাই ভয় করে, চলি্লশে আবার চালশে না লাগে!
No comments