থানায় পুলিশকে মারধর-তারা এত বেপরোয়া কেন?
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের আওতাধীন শাহপরান থানায় ঢুকে পুলিশকে মারধর করার দুঃসাহস ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা কোথা থেকে পেল? গত সোমবার সমকালে 'সিলেটে থানায় ঢুকে পুলিশকে মারধর' শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদটি দেখে এ ধরনের প্রশ্ন জাগাই স্বাভাবিক। আশ্চর্যের বিষয় হলো, ছাত্রলীগেরই পিতৃসংগঠন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোট সরকার যেখানে নারী নির্যাতনকারীদের শাস্তি প্রদানে
বদ্ধপরিকর, সেখানে ছাত্রলীগ নেতারা নারী নির্যাতন মামলায় এক আটককৃতকে থানা থেকে ছাড়িয়ে নিতে ব্যর্থ হয়ে ওই থানার পুলিশের ওপর চড়াও হয়। আসামিকে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তার জিজ্ঞাসাবাদের সময় নিশ্চয়ই ছাত্রনেতাদের থানায় প্রবেশ করা উচিত হয়নি। স্বভাবতই নারী নির্যাতনের ঘটনা হওয়ায় এ ব্যাপারে মিডিয়াও সজাগ থাকবে এবং সরকারের তরফ থেকেও এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নিতে ওপর থেকে পুলিশের কাছে কড়া নির্দেশ এসে থাকবে। তাই পুলিশের পক্ষে নারী নির্যাতনের ঘটনায় আটককৃতকে কোনো চাপের কারণে ছেড়ে দেওয়া কঠিন। কিন্তু ক্ষমতার মদমত্ত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা এই বাস্তবতা মেনে নিতে নারাজ। তারা থানা-পুলিশকে নিজেদের কর্মী ঠাউরে প্রথমে আবেদন-নিবেদন করেছে এবং পরে যখন দেখা গেল নরম কথায় চিড়ে ভিজবে না তখন থানার মধ্যেই পুলিশের ওপর কয়েক ঘা বসাতে কসুর করেনি। এর পরিণতি কী হতে পারে সে ব্যাপারেও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা 'কুছ পরোয়া নেহি' ধরনের মনোভাব নিয়েছিল নিশ্চয়ই। তবে এভাবে ক্ষমতাসীন দলের নাম নিয়ে যারা বিভিন্ন অপকর্ম করে বেড়ায়, তারা আর যাই হোক ক্ষমতাসীন দলের ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করছে না। তদুপরি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে যারা নিয়োজিত তাদের ওপরই যখন ক্ষমতার দাপট দেখানো যায়, তখন সাধারণ মানুষ তো এদের বন্ধু ভাবার পরিবর্তে নাম শুনলেই প্রাণ নিয়ে পালাবে। সিলেট শহরের শাহপরান থানায় ঢুকে পুলিশকে মারধরের ঘটনায় ছাত্রলীগের যে তিনজন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের কঠিন শাস্তি প্রাপ্য। কারণ, তারা দুটি গুরুতর অপরাধ করেছে। নারী নির্যাতন মামলায় আটককৃতকে ছাড়ানোর জন্য থানায় তদবির করতে গিয়ে তারা প্রথম অপরাধটি করে। তাদের দ্বিতীয় অপরাধ, থানার ভেতরেই পুলিশের ওপর চড়াও হওয়া। সরকারের উচিত এ ঘটনার ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নেওয়া।
No comments